গুয়েভারিজম
চে'র বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগের পথ সাম্রাজ্যবাদীদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেনি, বরং যেকোনো গণ আন্দোলনকে বিপথগামী করতে সাম্রাজ্যবাদীরা গুয়েভারিজমকে ব্যবহার করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Guevarism#:~:text=Guevarism%20is%20a%20theory%20of,Leninism%20and%20embraced%20its%20principles.
সাম্রাজ্যবাদীরা গেঞ্জি-জাঙ্গিয়া-ট্যাটু সবকিছুতেই গুয়েভারাকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে। লেনিন তার বড়ো ভাই সম্পর্কে বলেছিলেন দর্শনের বিচ্যুতি সত্ত্বেও তিনি ছিলেন মহান বিপ্লবী। চে সম্পর্কেও একই কথা প্রযোজ্য। চে'র সময় মার্কসবাদ বিকশিত হয়ে লেনিনবাদ-মাও সে তুং এর চিন্তাধারায় পরিণত হলেও চে এই লাইনের বিরোধী নৈরাজ্যবাদী লাইনকে বিপ্লবের পথ হিসাবে সামনে নিয়ে আসেন, যেখানে বিপ্লবী পার্টি এবং জনগণের কোনো ভূমিকা নেই। সমাজতন্ত্রে পৌঁছানোর পথ হিসাবে তিন ধরনের পথ সামনে এসেছে - মার্ক্সবাদ, সংস্কারবাদ ও নৈরাজ্যবাদ। মার্কসবাদ শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্রে উত্তরণ - এই সংস্কারবাদী পথ এবং আবার জনগণ নয়, উন্নত অস্ত্রের সাহায্যে কয়েকজন ব্যক্তি সমাজ বদল ঘটাবে - এই দুই ধরনের সংশোধনবাদী ধারার বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। সংস্কারবাদের মূল প্রবক্তা বার্নস্টাইন। এই মতবাদ শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের কথা বলে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Eduard_Bernstein
বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে ‘তিন শান্তি তত্ত্বের’ মধ্য দিয়ে বার্নস্টাইনের সংস্কারবাদকে তাত্ত্বিক রূপ দেয় ক্রুশ্চেভ।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Peaceful_coexistence
এই তিন শান্তির তাত্ত্বিকদের বিরুদ্ধে মাও এর নেতৃত্বে চিনা কমিউনিস্ট পার্টি, আলজেরিয়ান লেবার্স পার্টি সহ কয়েকটি কমিউনিস্ট পার্টি রুখে দাঁড়ায় এবং মাও এর নেতৃত্বে মতাদর্শগত বিতর্ক চালায় যা 'আন্তর্জাতিক মহাবিতর্ক' নামে পরিচিত।
https://www.marxists.org/history/international/comintern/sino-soviet-split/index.htm
ঊনবিংশ শতাব্দীর আটের দশকে মার্কসবাদকে প্রতিষ্ঠিত হতে হয়েছে সারা ইউরোপ জুড়ে প্রুধোঁর পেটি বুর্জোয়া, নৈরাজ্যবাদী, সংশোধনবাদী, অতিবাম ধারার বিরুদ্ধে লড়াই করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Pierre-Joseph_Proudhon#:~:text=Proudhon%20adopted%20the%20term%20mutualism,their%20products%20on%20the%20market.
পার্টি গঠনের প্রশ্নে, কর্তৃত্ব প্রশ্নে, বিপ্লবে জনগণের বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে কৃষকের ঐক্যের প্রশ্নে প্রুধোঁর নৈরাজ্যবাদী লাইন দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গির বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করে। নৈরাজ্যবাদী ধারার মূল কথা হলো উন্নত অস্ত্রের সাহায্যে ইতিহাস সৃষ্টি করে কয়েকজন ব্যক্তিবিশেষ, জনগণ নয়। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে এই ধারার বিকশিত রূপ দেখা যায় গুয়েভারিজম এর মধ্যে। এই মতবাদগুলোর অনুসারীরা বিপ্লবী পার্টি গড়ার পক্ষে নয়, তাদের মতে কয়েকজনের ফৌজ ছোটো ছোটো আঘাতের মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র শক্তিকে ঘায়েল করবে! মেহনতি জনগণের ভূমিকা এখানে দর্শকের। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন মার্কসবাদ এবং নৈরাজ্যবাদ একই নীতি থেকে উদ্ভূত, পার্থক্য কেবল কৌশলে! এই প্রসঙ্গে স্তালিন বলেছেন-
"নৈরাজ্যবাদই মার্কসবাদের প্রকৃত শত্রু।"
চারু মজুমদার চে'র এই লাইনকে 'নৈরাজ্যবাদী বাম বিচ্যুতি' বলে ব্যাখ্যা করেছেন তার সপ্তম দলিলে। বাম বিচ্যুতি আর সংস্কারবাদী ডান বিচ্যুতি দু'টোই সংশোধনবাদী ধারার একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা প্রুধোঁ ও চে গুয়েভারার দৃষ্টিভঙ্গিকে চিহ্নিত করেছেন ‘সশস্ত্র সংশোধনবাদী ধারা' বলে। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে ক্রুশ্চেভ এর শান্তিবাদ ও গুয়েভারিজমের অস্ত্রবাদ - এই দুই সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সর্বজনীন সত্যের সাথে চীন বিপ্লব ও আন্তর্জাতিক সর্বহারা বিপ্লবের সমন্বয় ঘটিয়ে মাও মার্কসবাদ-লেনিনবাদের দর্শন, রাজনৈতিক অর্থনীতি, সামরিক বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের লাইনকে উচ্চ স্তরে বিকশিত করেন। সংস্কারবাদী তিন শান্তির তত্ত্ব এবং নৈরাজ্যবাদী গুয়েভারিজম- এই দুই সংশোধনবাদী ধারার বিরুদ্ধে লড়াই করে মাও তার সামরিক লাইন যার সার বস্তু হলো দীর্ঘস্থায়ী জনযুদ্ধ, সাংগঠনিক লাইন যার মৌলিক ভিত্তি হলো পার্টি, গণফৌজ এবং যুক্তফ্রন্ট - এই তিন অস্ত্রের গঠন করেন যা মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদে অনন্য অবদান। নৈরাজ্যবাদী গুয়েভারিজমের বিপরীত বিপ্লবী গণলাইন হিসাবে মাও ভূমিহীন ও দরিদ্র কৃষকদের ভূমিকাকে সামনে নিয়ে আসেন। গুয়েভারিজমে ভূমিহীন কৃষকের বিপ্লবে কোনো ভূমিকা নেই, আছে শুধু কয়েকজন ব্যক্তি - যারা বিপ্লব ঘটাবে! অন্যদিকে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী লাইনকে মাও আরো দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন জনযুদ্ধে ব্যাপক জনগণের অংশগ্রহণের লাইনকে সামনে নিয়ে এসে। তিনি প্রমাণ করলেন জনযুদ্ধে জনগণই নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে। ‘প্রত্যেক নাগরিক একজন সৈনিক’ - মাও এর এই স্লোগান গেরিলা যুদ্ধকে গভীরতায় ও ব্যাপকতায় প্রসারিত করে।
...........................................................................
কঙ্গোতে নিজেদের ব্যর্থতাকে দিনলিপিতে চে গুয়েভারা 'এটি একটি ব্যর্থতার গল্প' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ১৯৬৫ সালের ২৪শে এপ্রিল কঙ্গোর বিদ্রোহীদের সাথে যোগদান করতে চে আফ্রিকায় কিউবার একদল যোদ্ধার সাথে গোপনে উপস্থিত হন। ক্যাস্ট্রো তাদের সেখানে পাঠান। তারা তানজানিয়ার টাঙ্গানিকা হ্রদ পার হয়ে কপমগোর পূর্বাঞ্চলে নেমে হ্রদ তীরবর্তী বারাকা শহরেরর দিকে অগ্রসর হন। পূর্বাঞ্চলীয় পর্বতের বিদ্রোহীদের প্রাক্তন প্রধানের ছেলে জোসেফ কাবিলার পার্টির স্থানীয় শাখার নেতা আন্দ্রে শিন্দানো চে'কে স্মরণ করে বলেছিলেন-
"তিনি একজন বন্ধু হয়ে ও বিপ্লবকে ভালোবেসে এখানে এসেছিলেন।"
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Joseph_Kabila
দক্ষিণ কিভু প্রদেশে সিম্বা বিদ্রোহীদের সাথে চে এর সাত মাস ব্যাপী থাকাকালীন সময়ের কথা বলতে গিয়ে শিন্দানো বলেছিলেন-
"আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণকারী গেরিলা আমাদের সাথে কিছুদিন জঙ্গলে কাটান, কিন্তু তিনি দেখলেন যে আমাদের নেতাদের মধ্যে পরিপক্কতার অভাব রয়েছে আর তাই তিনি চলে যেতে মনস্থির করেন।"
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Simba_rebellion
চে তার 'আফ্রিকার স্বপ্ন: কঙ্গোর বিপ্লবী যুদ্ধের ডায়েরি'তে লিখেছেন-
"বারাকা শহরে এর অতীতের সমৃদ্ধশালী অবস্থার চিহ্ন চোখে পড়ে। সেখানে তুলা থেকে সুতা তৈরীর একটি কারখানাও ছিল, কিন্তু যুদ্ধ সবাইকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সেই সাথে ছোট কারখানাটিও বোমায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।"
১৯৬০ সালে বেলজিয়ামের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পাঁচ বছরের মধ্যে কঙ্গো পরপর কয়েকটি বিরোধে জড়িয়ে পড়ে, যার মধ্যে রয়েছে খনিজ সম্পদে পূর্ণ দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ কাতাঙ্গার বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঘোষণা।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Katanga_Province
কঙ্গোর প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী প্যাট্রিস লুমুম্বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। মার্কিনিদের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে সাহায্য চেয়ে শীতল যুদ্ধের প্রাথমিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হন। ১৯৬১ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি নিহত হন। তার হত্যাকাণ্ডের পিছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Patrice_Lumumba
১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র যে এটম বোমাটি হিরোশিমায় ফেলেছিল সেটির ইউরেনিয়াম এসেছিল কঙ্গোর খনি থেকে। এছাড়া কঙ্গো ছিল অস্ত্র শিল্পে ব্যবহৃত কোবাল্টের অপরিহার্য উৎস। চে যখন এসে পৌঁছান, কঙ্গোর অপরিণত প্রজাতন্ত্র তখনো বিপর্যয়ের মধ্যে। কাতাঙ্গা আবার ফিরে আসলেও সিম্বারা যে বিদ্রোহ শুরু করেছিল তা আগের বছর ভেঙ্গে গিয়েছিল। এ বিদ্রোহে সিম্বারা লুমুম্বিস্টদের সাথে মাওবাদীদের যুক্ত করেছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Unified_Lumumbist_Party
বিদ্রোহীরা দেশটির প্রায় এক-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলেও কঙ্গোর মধ্য ও পূর্বাঞ্চলের দু'টি প্রদেশে তারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং ১৯৬৫ সালের এপ্রিল মাসে তারা হেরে যায়; আর এমাসেই চে কঙ্গোতে এসে পৌঁছান। চে লরেন্ট ডেজায়ার কাবিলার সাথে সাক্ষাৎ করতে চাইলেও কাবিলা দেশের বাইরে সফরে ছিলেন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Laurent-D%C3%A9sir%C3%A9_Kabila
ব্রাজাভিলে কাবিলার সাথে কয়েক মাস আগে তার দেখা হয়েছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Brazzaville
কাবিলা ৭ই জুলাই দেশে ফিরে এসে চারদিন থাকেন, আর সেসময় দেশে এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল যাকে চে বলেছেন ‘সুসংগঠিত বিশৃংখলা’। চে লিখেছেন-
“কঙ্গোর মানুষদের প্রধান সমস্যা হলো তারা জানে না কীভাবে গুলি করতে হয়।”
চে সিম্বা বাহিনীতে বিপ্লবী উদ্দীপনার অভাব দেখতে পেয়েছিলেন এবং দেখলেন তারা বিভিন্ন যাদু বিদ্যার আচার অনুষ্ঠান পালন করে এই ভেবে যে এতে করে তারা অজেয় হয়ে উঠবে! বড় ধরনের যুদ্ধ দেখলে পালিয়ে যাওয়ার ঝোঁক ছিল তাদের মধ্যে। তাদের ক্যাম্পগুলো ছিল জঙ্গলের মধ্যে; ঐখানে নারী, শিশু সবাই থাকতো; ভীষণ জোরে বেখাপ্পা গান বাজতো, ঐখানে তারা মদ পান করতো, নাচতো আর খাওয়া দাওয়া করতো। প্রাক্তন বিদ্রোহী টাবু আজিজা বলেছিলেন-
"ক্যাম্পে আমরা একটা ভুট্টা দশজনের মধ্যে ভাগ করে খেতাম।"
প্রাক্তন বিদ্রোহী ও যাজক ফ্লরিবার্ট মিলিম্বা বলেছিলেন-
“তারা আমাদের বলেছিল যে সাদা লোকটি (চে) আমাদের সাহায্য করবে ও আমাদের জন্য আরো অস্ত্র নিয়ে আসবে।"
মিলিম্বা আরও বলেছিলেন-
"চে এর আগমন অনেক আশা বয়ে এনেছিল।"
শিন্দানো স্মরণ করেন-
"যে বিশাল এলাকা জুড়ে কাবিলা যে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন রাজনীতি ও সামরিক কৌশল শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে চে সেই পুরো এলাকা ভ্রমণ করেন।"
প্রাক্তন জেনারেল লোয়েনদেমা দুনিয়া দক্ষিণ কিভুর রাজধানী বুকাভুর একটি কুঁড়েঘরে বসে স্মৃতিচারণ করেন-
“আমি তখন ছিলাম একজন সাধারণ সৈনিক। চে আমাদের শিক্ষা দিয়েছিলেন কীভাবে বিপ্লব করতে হয়। তিনি আমাদের সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন ও রাজনীতি শিক্ষা দিয়েছিলেন।”
https://en.m.wikipedia.org/wiki/South_Kivu
তিনি আরও বলেছিলেন-
"কিন্তু যেদিন থেকে আমরা বিপ্লবী আদর্শকে পায়ে মাড়াতে শুরু করলাম, তারা চলে গেলো।"
আরো ১০০ জন লোক বাড়িয়ে কিউবার সেনাবাহিনীতে বাড়তি শক্তি যুগিয়ে ক্যাস্ট্রো কয়েকটি সংঘর্ষে জয়লাভ করেন। শিন্দানো বলেন-
"সরকারের সেনাবাহিনী তখন অগ্রসর হচ্ছিলো।"
১৯৬৫ সালের অক্টোবরের দিকে চে ক্যাস্ট্রোকে লেখেন-
"এখানে আসলে অস্ত্রের অভাব নেই। এখানে প্রচুর সশস্ত্র লোক আছে, এখানে আসলে যেটির অভাব রয়েছে সেটি হলো সৈনিক।"
শিন্দানো আরো বলেছিলেন-
“চে গুয়েভারা যখন চলে গেলেন সেসময় ব্যাপক যুদ্ধ চলছিল, আমরা পরাজিত হয়ে প্রায় ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলাম।”
সেনাবাহিনীর আক্রমণ ও পশ্চিমা ভাড়াটে সৈনিকদের পরিচালিত বিমান হামলার মুখে বিদ্রোহীরা একের পর এক পরাজিত হতে লাগলো। চে ও তার সঙ্গীরা ২১শে নভেম্বর কঙ্গোর পূর্বাঞ্চল ত্যাগ করে। তিন দিন পর জেনারেল জোসেফ মবুতু ক্ষমতা দখল করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট মবুতু স্বজনপ্রীতি ও স্বৈরাচারী শাসন চালিয়ে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হন। তিনি প্রায় ৩২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mobutu_Sese_Seko
১৯৬৭ সালে চে বলিভিয়ায় নিহত হন। ১৯৯৭ সালের মে মাসে রুয়ান্ডার সহায়তায় বিদ্রোহ ঘটিয়ে কাবিলা মবুতুকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেন। পরে তারা পরাজিত হলে নতুন করে যুদ্ধ শুরু হয়। প্রাক্তন বিদ্রোহী আন্না বিন্তি শাবানি বলেছিলেন-
"চে গুয়েভারাকে ফিরিয়ে আনুন। কঙ্গো আবার নিজের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত এবং শান্তি প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা তার আদর্শ অনুসরণ করে যাবো।"
যারা কিউবাকে সমাজতান্ত্রিক দেশ মনে করেন তাদের উদ্দেশ্যে ক্যাস্ট্রোর বই থেকে কিছু লাইন-
"তিনি যদি জানতেন প্রোডাকশন পদ্ধতি এতটাই দুর্বল এবং অনৈতিক হয়ে পড়েছে যে, সব শ্রমিক মিলে প্রস্তাবিত প্রোডাকশনের অর্ধেক বা এক-তৃতীয়াংশ তৈরি করতে পারেন, তাহলে তিনি বড়ই কষ্ট পেতেন। অর্থই যে আজ মানুষের প্রধান চিন্তায় এবং প্রধানতম অনুপ্রেরণার অংশ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, সেটা জানলে তিনি বেদনাক্রান্ত হতেন। তিনি আমাদের এসব বিষয়ে আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন। কর্মঘন্টা কমিয়ে ওভারটাইমের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে, কোটি কোটি ঘন্টা ওভারটাইমের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। শ্রমিকশ্রেণী ক্রমশই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছিল এবং তাদের মাথায় কেবলমাত্র পেসোর চিন্তাই প্রধান আকার ধারণ করেছে। তিনি যদি জানতেন যে, এভাবে পুঁজিবাদী পথ ধরে ক্রমশই আমরা কম্যুনিজমের পথ থেকে দূরে সরে যাচ্ছি, তাহলে তিনি বড়ই আতঙ্কিত হয়ে পড়তেন। এভাবে ক্রমশই আমরা আমাদের ভ্রাতৃসুলভ মনোভাব এবং আমাদের আন্তর্জাতিকতাবাদী চরিত্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আর এ পথ ধরে কখনোই নতুন মানব, নতুন সমাজ তৈরি করা সম্ভব নয়। তিনি যদি কখনো জানতেন যে, আজ একের পর এক বোনাস দেয়া হচ্ছে সব কিছুর সঙ্গেই, যাদের সঙ্গে মূল প্রোডাকশনের কোনো সম্পর্ক নেই। এভাবে ক্রমশ পুঁজিবাদী পথ ধরে এগিয়ে দেশের কথা, মানুষের কথা, উচ্চ জীবনধারার কথা ভুলে গিয়ে একদিন এদেশের মানুষ কেবলমাত্র অর্থের কথা চিন্তা করবে, এমন জানলে চে মুষড়ে পড়তেন। আখ কেটে আনার মতো শারীরিক পরিশ্রমের কাজ থেকে শুরু করে রেডিও-টেলিভিশনের কাজের মতো বুদ্ধিবৃত্তিক কাজ, এমনকি সার্জারির কাজও যে একদিন এতটা বাণিজ্যিক হয়ে পড়বে, সেটা জানতে পারলে তিনি সন্ত্রস্ত হতেন। কেননা, এগুলো কোনোভাবেই আমাদের কম্যুনিজমের দিকে নেয় না। বরং, আমাদের চেতনার জায়গাটা সংক্রমিত হয় এবং ক্রমেই আমরা পুঁজিবাদের দিকে ঝুঁকতে থাকি। আমি আবারো বলতে চাই যে, এসব পথ ধরে কখনোই আমরা কম্যুনিজমের আগের পর্যায় তথা সমাজতন্ত্রেও উন্নীত হতে পারবো না।"
- 'চে: এ মেমোয়ার', ফিদেল ক্যাস্ট্রো
......................................................................
তাদের বিপ্লব সংক্রান্ত লাইন ও মার্ক্সবাদের সাথে সাংঘর্ষিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও চে এবং ক্যাস্ট্রো উভয়েই বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনে গিয়ে বিপ্লব কায়েমের কল্পনার বিরোধী ছিলেন। চে এর 'Our America and Theirs' বইটি থেকে কিছু লাইন-
"ডিক্লারেশন অব হাভানার সেই সমাবেশে পুরো দেশের মোট জনগণের প্রায় এক-ষষ্ঠমাংশ মানুষ সমবেত হয়ে আকাশের দিকে হাত উঁচিয়ে উচ্চারণ করেছিল:
কিউবার জনগণের জাতীয় সাধারণ পরিষদ দৃঢ়প্রত্যয়ী যে, এটিই লাতিন আমেরিকার সাধারণ জনগণের অভিমত - এইসঙ্গে পুনর্বার ঘোষণা করছে যে, অর্থনৈতিক কতিপয়তন্ত্র, কালোদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণ এবং ক্লু ক্লাক্স ক্লান এর হম্বিতম্বি ইত্যাদি কোনোভাবেই গণতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এবং একইসঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করবার কারণে যেভাবে নির্যাতন করে সরিয়ে দেয়া হয়েছে ওপেনহেইমারের মতো বিজ্ঞানীকে, নিজ দেশে জেলবন্দি করে পুরো পৃথিবীকে শুনতে দেয়া হয়নি পল রবসনের কণ্ঠ, অসংখ্য দেশের সরকার এবং পোপ পায়াস টুয়েলভ সহ শোকার্ত দুনিয়ার তীব্র বিরোধ সত্ত্বেও যেভাবে রোজেনবার্গসকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেয়া হলো, এ সবকিছুই গণতন্ত্রের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। কিউবার জনগণের জাতীয় সাধারণ পরিষদ এইসঙ্গে ঘোষণা দিতে চায় যে, অঢেল ধনবান ভূস্বামী আর পেশাদার রাজনীতিকদের দ্বারা পরিচালিত কাল্পনিক নির্বাচনই গণতন্ত্রের চাবিকাঠি হতে পারে না। বরং জনসাধারণের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরা গড়বার অধিকারের মধ্যেই বেঁচে থাকে গণতন্ত্র, এই অধিবেশনে সাধারণ জনগণ যা করছে। তদুপরি, লাতিন আমেরিকায় গণতন্ত্র কেবল তখনই আসবে এবং স্থায়িত্ব পাবে যখন জনগণ নিজেদের ভালোমন্দ নিজেরা বাছাই করবার স্বাধীনতা পাবে এবং যখন ক্ষুধা, সামাজিক বৈষম্য, নিরক্ষরতা আর আইনী পদ্ধতির অসদ্ব্যবহারের মাধ্যমে গরীব জনগোষ্ঠীকে একেবারে খোজা করে দেয়ার পদ্ধতি বন্ধ হবে।۔۔۔"
Comments