পেরু পরিস্থিতির উপর বিতর্ক

 


[নিবন্ধটি 'এ ওয়ার্ল্ড টু উইন' ম্যাগাজিনের ৩২ নং সংখ্যায় (২০০৬ সালে) প্রকাশিত একটি রচনা। ১৯৯২ সালে পেরুর মাওবাদী পার্টি (পিসিপি)’র চেয়ারম্যান গনজালোর গ্রেফতার পরবর্তীতে পেরুর গণযুদ্ধ গুরুতর বিপর্যয়ে পড়ে। পার্টিতেই 2LS (Two Line Struggle) শুরু হয়। একপক্ষ ডান সুবিধাবাদী লাইন রোল (ROL - শান্তি লাইন) নিয়ে আসে যা গণযুদ্ধ এগিয়ে নিতে অস্বীকার করে। অন্যপক্ষ ROL থেকে উত্থাপিত সকল প্রশ্নকে লাইনগতভাবে সংগ্রাম না করে তাকে শত্রুর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত বলে এড়িয়ে শুধুমাত্র অনুশীলন বা এ্যাকশনের মাধ্যমে জবাব দিতে চায়। RIM প্রভাবিত আন্তর্জাতিকতাবাদী মাওবাদী পত্রিকা AWTW তাদের ৩২নং সংখ্যায় পেরুর পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করেছে।]

‘রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ উস্কানো’র অভিযোগে এ্যাবিমেল গুজম্যান (চেয়ারম্যান গণজালো) এবং পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিপি)’র আরও ২৩ জন অভিযুক্ত নেতার মামলা যা ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়েছিল সেটা এখনো, এই রচনার সময়কাল ২০০৬ সালের মে মাস পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। তথাপি সরকার ও সামরিক বাহিনী উভয়ের (কার্যক্রম) অনুযায়ী এ বিষয়ে কোন সন্দেহ কখনো ছিল না যে, এর একমাত্র উদ্দেশ্যই হচ্ছে পেরুর বর্তমান বেসামরিক আদালতের মাধ্যমে সেই রায়কে নিশ্চিত করা, যে রায় প্রায় সবক্ষেত্রেই গোপনে ও বিপুল তড়িঘড়ি করে কাজ করা মুখ ঢাকা সামরিক অফিসারদের দ্বারা ১৯৯২ সালে প্রদান করা হয়েছিল। এই নতুন বিচারের আগেই অনেক দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তি অঙ্গিকার করেছিল যে, ৭০ বছর বয়সী প্রধান বিবাদীকে কখনই আর কারাগার থেকে জীবন্ত বের হতে দেয়া হবে না। পেরুর বর্তমান রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় মনে হয় যেন পিসিপি’র বন্দী নেতৃবৃন্দের জন্য সবচেয়ে খারাপ পরিণতির প্রতিশ্রুতিকে দিতে পারে তার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। এটা পুরানো ব্যবস্থার রক্ষকদের প্রতিহিংসাপরায়ণ ঘোরতর অসৎ কাজ ব্যতীত কিছু নয়। বিশেষত ১৯৮০ সালে পেরুতে শুরু হওয়া বিপ্লবী যুদ্ধের মতো গণমানুষের এক উত্থানকে সন্ত্রাসবাদ বলা যাবে না। যারা ন্যায়পরায়ণ তাদের কেউই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত পেরু সরকার কর্তৃক চেয়ারম্যান গনজালো ও অন্যদের একটি গণযুদ্ধ চালানোর জন্য শাস্তি দেয়ার এই পদক্ষেপকে গ্রহণ করতে পারে না, যে সশস্ত্র সংগ্রামটি দেশটির নিগৃহীত ও সবচেয়ে দরিদ্র জনগণের গভীরে প্রোথিত ও তাদের উপর নির্ভরশীল ছিল। বিবাদীগণের বর্তমান চিন্তাধারা/অভিমত যা-ই হোক না কেন, এটাই হলো বিষয়, যার ব্যাপারে এই মামলা ও তার অনিবার্য্য রায় এবং তাকে অবশ্যই বিরোধিতা করতে হবে।প্রতিশোধগ্রহণের জন্য এই উন্মাদণাপূর্ণ তাড়নার রয়েছে এক হিসেবী রাজনৈতিক লক্ষ্য: পেরুর জনগণের বিপুল সংখ্যাগুরুর পরিস্থিতি এখনো বেপরোয়া এবং গণবিক্ষোভের বিস্ফোরণও এমনকি হিংসাত্মক কার্যকলাপ দেখায় যে, তারা তাদের নিয়তির কাছে নিজেদের সঁপে দেননি। গণযুদ্ধের নিস্তেজ হয়ে পড়াকে প্রধানত তাদের (জনগণের) পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন দ্বারা ব্যাখ্যা করা যাবে না। এটা অনুধাবন করা কঠিন নয় যে, দেশটির শাসকরা কেন গণ সশস্ত্র বিদ্রোহ ও বিপ্লবী পরিবর্তনের ধারণাটিকেই ধ্বংস করতে চায় এবং তাকে অপরাধী বানাতে চায়। ১৯৯২ সালে চেয়ারম্যান গণজালোর গ্রেফতারের পরবর্তী বছরগুলোতে গণযুদ্ধ গুরুতর বিপর্যয়ে পড়েছে। লড়াই এর স্তর ও ভৌগলিক বিস্তার নাটকীয়ভাবে নেমে এসেছে, বিশেষত ১৯৯০ দশকের শেষ দিক থেকে। এটা পরিস্কার নয় যে, গণযুদ্ধের বিপুল জোয়ারকালে পার্টি গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের যে বিপ্লবী রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেছিল, সেই প্রকাশ্য 'গণ কমিটি' - যদি তা থেকে থাকে - তার কতগুলো টিকে রয়েছে এবং গোপন :গণ কমিটি' কতগুলো টিকে রয়েছে। ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে, যে তারিখগুলোকে ঘিরে পিসিপি ঐতিহাসিকভাবে প্রধান সামরিক অপারেশনগুলো করতো, (বিগত) কয়েক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো হুয়াল্লাগা জঙ্গল ও আয়াকুচোতে পুলিশ টহলের উপর সফল এ্যামবুশ হয়। প্রথম এলাকাটি পিসিপি শক্তিগুলোর এমন একটি দুর্গ বলে বিবেচিত হয়ে চলেছে, যা কিনা যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য একটি 'রাজনৈতিক সমাধান' তালাশ করছে এবং সংঘর্ষ থেকে 'বেরুবার একটি উপায়' হিসেবে ক্ষমা মঞ্জুরের জন্য সশস্ত্র এ্যাকশনের ভয় দেখিয়ে সরকারকে চাপ দিচ্ছে।


দ্বিতীয় (এলাকা)টি বিবেচিত হয়ে চলেছে তেমন লোকদের ক্রিয়া কেন্দ্ররূপে, যারা (যুদ্ধ) চালিয়ে যেতে চেয়েছে। এই আক্রমণগুলো কি সমন্বিত - কর্তৃপক্ষ যেমনটা দাবী করে? যেহেতু উভয় এ্যাকশনই চেয়ারম্যান গণজালোর নামে চালিত হয়েছে, তাতে এটা বোঝা খুব শক্ত যে, এই দুই পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক লক্ষ্যের কোনটিকে তারা সমর্থন করছে। বেশ কয়েক বছর ধরে পার্টির রাজনৈতিক দিশাকে তুলে ধরে গুরুত্বপূর্ণ কোনো রাজনৈতিক বিবৃতিও হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিকে যা আরো বেশী জটিল করে তুলেছ তা হলো বর্তমানের মামলাটির প্রক্রিয়ায় চেয়ারম্যান গণজালোর আচরণ - যা বেশ কয়েক বছর ধরে বহু বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত গুরুতর ও একই রকম প্রমাণে আরো বেশী জোর সংযোজিত করেছে যে, খুবই সম্ভবত যুদ্ধ সমাপ্ত করার আহ্বানের উৎস ছিলেন তিনি। পিসিপি কীভাবে এই পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করেছে সেটাই বর্তমান পরিস্থিতির বিকাশে কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে রয়েছে। চেয়ারম্যান গণজালো ১৯৯২ এর সেপ্টেম্বরে গ্রেফতার হন, যখন গণযুদ্ধ উত্তাল গতিতে এগিয়ে চলছিল বলে মনে হচ্ছিল। কিন্তু পার্টিতে আরো বড় এক আঘাত আসতে তখনো বাকী। ১৯৯৩ এর অক্টোবরে পেরুর মার্কিন সমর্থিত লৌহমানব এ্যালবার্তো ফুজিমোরী বিজয়ী ভঙ্গিতে ঘোষণা করে যে, এ্যাবিমেল গুজম্যান গণযুদ্ধ সমাপ্ত করতে আলোচনার জন্য তাকে একটি পত্র লিখেছেন। পরবর্তীতে পত্রগুলো পাঠরত চেয়ারম্যান ও এলেনা ইপারাগুয়েরে (কমরেড মিরিয়াম নামে পরিচিত একজন শীর্ষ পার্টি নেতা, চেয়ারম্যান গণজালোর সঙ্গিনী) এর একটি ভিডিও সে প্রকাশ করে। স্থির চিত্রে দু'জনকে বেস্টন করে অন্য বন্দীদেরও দেখা যায়, যাদের কেউ কেউ-ও বিশিষ্ট নেতা হিসেবে পরিচিত। যেসব পার্টি নেতা মুক্ত ছিলেন, তাদের নিয়ে গঠিত পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি এই আহ্বানকে 'ডান সুবিধাবাদী লাইন' (ROL, ‘রোল’) বলে প্রত্যাখ্যান করে। পার্টি বলে যে, “যা নীতির বিরুদ্ধে যায় তাকে গ্রহণ করা যায় না” এবং আরো যোগ করে যে, “এটা এক আন্তর্জাতিক রীতি যে জেলের ভেতরে থেকে কেউ নেতৃত্ব করতে পারে না”। কিন্তু তারা এর চেয়েও বেশী কিছু বলে: এই সমগ্র বিষয়টাই হলো একটা “ষড়যন্ত্র/ভাওতাবাজী”, যা মার্কিন ও বিশ্বাসঘাতক বন্দী (এবং বর্তমানে বহিস্কৃত) পার্টি সদস্যদের একটি “কালো/দুষ্ট চক্র”-র যোগসাজশে শাসকরা চালিয়েছে। চেয়ারম্যান গণজালো এর সাথে যুক্ত থাকতে পারেন এ ধারণা হলো একটা “ষড়যন্ত্র”, গণযুদ্ধের বিরুদ্ধে মার্কিন মদদে “নিচু মাত্রার যুদ্ধ”-র অংশ।  

যে লোককে গণজালোর মতো দেখা গেছে, সে হলো একজন অভিনেতা - জনগণকে পার্টি একথা বলে।যেকোন পার্টিই চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে যদি তার প্রধান (নেতা) পূর্বতন অবস্থানগুলোকে উল্টে দিতে চেষ্টা করে দিশা ও রণনৈতিক ধারণার মৌলিক অবস্থানগুলোকে স্পর্শ করে এবং বিপ্লবী যুদ্ধকে বর্জন করার কথা বলে। এটা পিসিপি’র জন্য আরো বেশী করে প্রযোজ্য ছিল। পার্টিটির ঐতিহাসিক পরিচয়ের কেন্দ্রে ছিল জেফেতুরার ধারণা; এই ধারণা যে, গণজালো পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যানের চেয়েও বেশী কিছু, একজন জেফে (শাব্দিক অর্থে প্রধান, কিন্তু এখানে তা বোঝায় এক বিশেষ ধরণের নেতা), যিনি শুধু পার্টির মাধ্যমেই ভূমিকা রেখেছেন তা নয়, বরং তার বাইরে ও ঊর্ধ্বে তা রেখেছেন। পার্টি সদস্যগণ তার প্রতি ব্যক্তিগতভাবে তাদের নি:শর্ত আনুগত্য প্রদর্শন করেন। এখন মনে হচ্ছে, যে ব্যক্তিটি গণযুদ্ধ পরিচালনা ও বিকাশে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি পার্টিকে বলছেন যুদ্ধ সমাপ্ত করার জন্য ফুজিমোরী সরকারের সাথে একটি শান্তি চুক্তির জন্য সংগ্রাম করতে। যুক্তি দেয়া হলো যে, এরকম এক চুক্তির বিনিময়ে পার্টিকে গণকমিটিগুলো বিলোপ করে দিতে হবে এবং পার্টির নেতৃত্বে বাহিনীকে লোপ করে দিতে হবে। যে সকল নেতৃবৃন্দ আত্মসমর্পণ না করায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, তাদের জন্য সমস্যাটির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটির "সমাধান” এই ধারণাটি যে, সবই “ষড়যন্ত্র” - এটাই মনে হয় একমাত্র উপায় হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বাস্তবে, এই ধারণাটি একটা ফাঁদ হয়ে দেখা দেয়। দু'টো কারণে এটা গণযুদ্ধে লেগে থাকার পার্টি সামর্থ্যের বিরুদ্ধে কাজ করে। প্রথম কারণ, শান্তি চুক্তির আহ্বানের ব্যাপারে পরিস্থিতি সম্পর্কে যদিও প্রথমদিকে অবশ্যই অস্বচ্ছতা ছিল, কিন্তু এটা যে একটা “ষড়যন্ত্র”, সে সম্পর্কে কখনো প্রকৃত কোনো প্রমাণাদি ছিল না। যখন কিনা শান্তি চুক্তির জন্য চেয়ারম্যান গণজালোর আহ্বান বেশী বেশী করে বাস্তব মনে হচ্ছিল, তখন পার্টি সদস্যদের তাদের চোখ বন্ধ রাখার জন্য বলার ভিত্তিতে যুদ্ধ অব্যাহত রাখাটা কীভাবে টিকতে পারে? দ্বিতীয়ত গণযুদ্ধ সমাপ্ত করা কেন প্রয়োজনীয় তার জন্য যে যুক্তিমালা দেয়া হচ্ছিল তাকে বিশ্লেষণ ও পরাজিত করার সমস্যাকে এই মনোভঙ্গি এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করছিল।

চেয়ারম্যান গণজালো ও শান্তিচুক্তি 

“ষড়যন্ত্র” ধারণার পক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি ছিল এই যে, শান্তিচুক্তির জন্য আহ্বান বাস্তবেই চেয়ারম্যান গণজালো আগে যার পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তার বিপক্ষে গিয়েছিল। গ্রেফতারের স্বল্পকাল পরই যখন তাকে একটি পশুর খাঁচায় ভরে সংবাদমাধ্যম এবং এক দঙ্গল গর্জনরত পুলিশ ও অন্য প্রতিক্রিয়াশীলদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছিল, তখন তিনি তাদের বিজয়োল্লাসকে বিদ্রুপ করেছিলেন। চক্করদানরত সামরিক হেলিকপ্টারের মোটরের গর্জন ছাড়িয়ে শোনা যায় এমনভাবে চিৎকার করে তিনি বলেন, এই গ্রেফতার গণযুদ্ধের “রাস্তার একটি বাঁক” ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি পার্টিকে (গণযুদ্ধে) অটলভাবে লেগে থাকতে আহ্বান জানান।

যাহোক, এটা কি বাস্তবেই সত্য ছিল যে, চেয়ারম্যান গণজালো কখনোই তার চিন্তার পরিবর্তন করতে পারেন না এবং ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেন না? এ ধরণের বিষয় যে ঘটতে পারে তা অসম্ভব বলে ঘোষিত হলেও সেটাই ক্রমবর্ধমানভাবে বিচার্যের প্রধান ধারায় পরিণত হয়। সমার্থকভাবে/টটোলজিক্যালি (যুক্তির চক্রবৎ রূপ, যাতে উপসংহারকে গ্রহণ করা হয় সূচনাবিন্দু হিসেবে) এর বিপরীত যেকোন প্রমাণকে নিন্দা করা হলো, কারণ উক্ত অসম্ভাব্যতার প্রেক্ষিতে এসব (প্রমাণ) সত্য হতে পারে না। যখন ভিডিওটি বের হলো, তখন তার উৎসের বিবেচনায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যতীত কেবল তাকে গ্রহণ করে না নেয়াটা স্বাভাবিক ছিল। এরপর প্রবাসে চেয়ারম্যান গণজালোর আত্মীয়-স্বজনরা রিপোর্ট করেন যে, তার নিজ স্বার্থে ফুজিমোরী সরকার তাকে ও ইপারাগুয়েরেকে তাদের (আত্মীয়দের) টেলিফোন করতে এবং কেন শান্তিচুক্তি প্রয়োজনীয় বলে তিনি বিশ্বাস করছেন তাকে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরতে দেয়। একে অস্বীকার করা/উড়িয়ে দেয়া যেতো না বা চক্রবৎ আত্মতৃপ্তি দ্বারা বাতিল করা যেতো না যে, যেহেতু আত্মীয়গণ শান্তিচুক্তির সমর্থকে পরিণত হয়েছেন, তাই তারা তাদের অবস্থানকে ন্যায্য করার জন্য অবশ্যই (এই) ফোন কলের আবিস্কারটা করেছেন। ‘রোল’ এর পেছনে চেয়ারম্যান গণজালো ছিলেন - এ সম্ভাবনাকে বহু লোকের জন্য একটি শক্তিশালী প্রমাণসাধ্য সম্ভাব্যে বদলে দেয়ার ক্ষেত্রে যে ঘটনাটি কাজ করেছে তার রাজনৈতিক ব্যাখ্যাকে বাতিল করার জন্যও একই যুক্তি বিচারকে ব্যবহার করা হয়: মার্গী ক্ল্যাভোর (কমরেড ন্যান্সি নামে পরিচিত) আমূল ঘুরে পড়া, যিনি ছিলেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য এবং যিনি অস্কার রেমিরেজ (কমরেড ফেলিসিয়ানো, যিনি গণজালোর গ্রেফতারের পর পার্টি নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেন) এর সহকারে শান্তি চুক্তি লাইনের বিরোধীদের অন্যতম প্রধান নেতা ছিলেন। ১৯৯৫ সালে তার গ্রেফতারের পর যখন হাতকড়া পরিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে তাকে অল্পসময়ের জন্য দাঁড় করানো হয়েছিল, তখন তিনি ছিলেন নির্ভীক এবং চিৎকার করছিলেন এই বলে যে, গণযুদ্ধে “লেগে থাকো, লেগে থাকো, লেগে থাকো”। এ সত্ত্বেও ছয় মাস পর তাকে টেলিভিশনে দেখা যায়, যখন তিনি একজন সাক্ষাতকার গ্রহণকারীকে বলছেন যে, তাকে চেয়ারম্যান গণজালোর সাথে আলোচনার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং তিনি (গণজালো) চুক্তির প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে তার মাঝে যুক্তি দ্বারা প্রত্যয় উৎপাদন করেছেন। তিনি বলেন যে, তিনি এই মিডিয়া বার্তার সাথে একমত হন যাতে তিনি চেয়ারম্যান গণজালোর আবেদনকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রহণের বদলে যুদ্ধ অব্যাহত রাখার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিকে নেতৃত্বদানে তার ভূমিকার জন্য প্রকাশ্য আত্মসমালোচনা করতে পারেন।

রেমিরেজকে, যিনি ১৯৯৯ সালে গ্রেফতার হন, চেয়ারম্যান গণজালোর পাশের সেলেই রাখা হয়েছিল। তিনিও বলেন যে, গণজালো তার সাথে শান্তি চুক্তি লাইনের জন্য যুক্তিতর্ক করেন, যদিও রেমিরেজের সিদ্ধান্ত ক্ল্যাভোর মতো একই ছিল না। পেরুর প্রেসিডেন্টের নিকট এক চিঠিতে এবং ২০০৪ সালের মে মাসে কোর্টে তিনি বলেন, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, পেরুর বর্তমান “গণতন্ত্র হলো সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবস্থা” এবং প্রথমত বিপ্লবী যুদ্ধ পরিচালনা করাটা ভুল ছিল; (এবং) তিনি চেয়ারম্যান গণজালোকে যুদ্ধ থামিয়ে দেয়ার আহ্বান জানানোর চেয়ে বেশী করে সমালোচনা করেন এ কারণে।  

কমরেড আরটেমিও, যিনি ফেলিসিয়ানোর পর পার্টি নেতৃত্বে আসীন হন এবং যে শক্তিগুলো যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে চাইছিল তাদের প্রধান হন, তিনি পরবর্তীকালে ‘রোল’ এর একজন কট্টর সমর্থকে রূপান্তরিত হন, যদিও তিনি মুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন যে, চেয়ারম্যান গণজালো কারাগার থেকে একটি রেডিও ট্রানসিভারের মাধ্যমে তার সাথে কথা বলেছেন যা কর্তৃপক্ষ গণজালোকে সরবরাহ করেছে এবং যুদ্ধকে সমাপ্ত করা যে প্রয়োজন তা বুঝতে/দেখতে তাকে জয় করেন।

প্রচার হয়েছিল যে, আরটেমিও ব্যাখ্যা করেছেন, কেউই এটা দাবী করতে পারবে না যে তিনি ও অন্যরা গণযুদ্ধকে বজায় রাখতে চেষ্টা করেননি, এমনকি যদিও তা অসম্ভব ছিল। এ সমস্ত পার্টি নেতার মাঝেই কয়েকটি জিনিস ছিল সাধারণ। যখন যুদ্ধ অব্যাহত রাখার সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাদের আস্থা/উপলব্ধি ছিল, তখন তারা বিপ্লবের পক্ষে সাহসের সঙ্গে কাজ করেছেন; আর যখন তারা ভিন্ন উপলব্ধিতে প্রত্যয় এনেছেন তখন তারা ভিন্নভাবে কাজ করেছেন। গণযুদ্ধ সমাপ্ত করার আহ্বান যখন প্রথম এলো তখন তারা বলেছিলেন যে, এই আহ্বানকে চেয়ারম্যান গণজালোর উপর আরোপ করাটা হলো একটা ষড়যন্ত্র এবং যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ও উচিত এবং এটাই তার (গণজালো’র) প্রকৃত অবস্থান। তার সাথে আলোচনার পর তারা সিদ্ধান্তে পৌছেন যে, যুদ্ধ অব্যাহত রাখা যাবে না ও তা করা উচিত নয়; কারণ যাই হোক না কেন, এটাই গণজালোর প্রকৃত অবস্থান [গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটা হলো রেমিরেজ (ফেলিসিয়ানো) একজন স্বঘোষিত কমিউনিস্ট বিরোধীতে পরিণত হন, যখন অন্যরা মাওবাদের নামে কথা বলা অব্যাহত রেখেছেন]। পার্টির সমগ্র পরিচিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কেন গণযুদ্ধ অব্যাহত রাখার বিরুদ্ধে ঘুরে গেছেন তার সম্ভবত সবচেয়ে ভালো ব্যাখ্যা হলো ‘রোল’ এ চেয়ারম্যান গণজালোর ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা। যদিও এসব পার্টি নেতার কার্যকলাপ আমাদের কাছে যা ব্যক্ত করেছে তার সাথে তুলনা করলে ফিকে হয়ে যায়, তথাপি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও অন্যদের দেয়া প্রকাশ্য ও ব্যক্তিগত বিবৃতি সংশ্লিষ্ট আরো ইঙ্গিত রয়েছে। যাদের মাঝে রয়েছেন ইপারাগুয়েরের মাতা (১৯৯৩ সাল থেকে নিজ কন্যার সাথে ও কখনো কখনো চেয়ারম্যান গণজালোর সাথে যার নিয়মিত সংযোগ ছিল) এবং গণজালোর আইনজীবী ম্যানুয়েল ফাজার্দো, যিনি ২০০০ সাল থেকে প্রায়ই তার (গণজালোর) সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। ১৯৯২ সালে এক সামরিক ট্রাইবুনালে চেয়ারম্যান গণজালোকে যে আইনজীবী পক্ষাবলম্বন করেন এবং যাকে প্রায় ১৪ বছর কারাগারে নিগৃহীত হতে হয়েছে, সেই আলফ্রেডো ক্রেসপো ২০০৫ এর ডিসেম্বরে তার মুক্তির অল্প পরে গণজালোর পক্ষের আইনজীবী দলে যুক্ত হন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমি ড. এ্যাবিমেল গুজম্যানের (মামলায়) পক্ষাবলম্বনের কাজ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই কারণে যে, শাইনিং পাথ এর, যা পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি নামেও পরিচিত, এখন এক নতুন রাজনৈতিক লাইন রয়েছে। এটা এখন জাতীয় ঐক্যসাধন ও যুদ্ধ থেকে উদ্ভূত সমস্যাবলীর রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে দাঁড়ায়।”

যে বিষয়টা লক্ষণীয় তা হলো ক্রমাগত স্তুপিকৃত তথ্যের সমাহারটাই নয়, বরং কিছু সংখ্যক ব্যক্তি কর্তৃক সেগুলোকে অব্যাহতভাবে যে একগুঁয়েমীর সাথে বাতিল করা হচ্ছে সেই বিষয়টা। চেয়ারম্যান গণজালোর সাম্প্রতিক কোর্টরুমের উপস্থিতি একটা শান্তি চুক্তির জন্য যুক্তি-তর্ক করায় তার ভূমিকার সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। ২০০৪ সালে তার দ্বিতীয় মামলার টেলিভিশনে প্রচারিত উদ্বোধনী অধিবেশনে, যা ছিল শতাধিক সাংবাদিক দ্বারা প্রত্যক্ষ একটি প্রকাশ্য ঘটনা, চেয়ারম্যান গণজালো ক্ল্যাভোসহ সকলের সাথেই আলিঙ্গন করেন একজন সহ বিবাদী বাদে, যারা সবাই প্রকাশ্যভাবে শান্তি চুক্তি লাইনের সাথে যুক্ত বলে চিহ্নিত (ব্যতিক্রম ছিলেন রেমিরেজ)। তারপর তিনি তাদের একত্রে দাঁড়ানো, তাদের মুষ্ঠি তুলে ধরা এবং ধীরে ও সুচিন্তিতভাবে “পেরুর কমিউনিস্ট পার্টি জিন্দাবাদ! মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ গৌরবান্বিত হোক! পেরুর জনগণ গৌরবান্বিত হোক! গণযুদ্ধের বীরগণ জিন্দাবাদ!” (শ্লোগান) দেয়ায় নেতৃত্ব দেন, যখন কর্তৃপক্ষ শৃংখলা ফিরিয়ে আনার জন্য ক্ষিপ্ততার সাথে চেষ্টা করছিল। এসব শ্লোগানে ‘রোল’ এর সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কিছু নেই। এই কোর্টরুমের ইঙ্গিত, যা কিনা চেয়ারম্যান গণজালোর মতো ক্ষমতার একজন নেতা অবশ্যই পূর্বাহ্নেই সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক বেশী কঠিন পরিস্থিতিতে তিনি যে খাঁচার ভাষণ দিয়েছিলেন তার চেয়ে বেশী বৈশাদৃশ্যপূর্ণ হতে পারতো না। তিনি পার্টিতে দুই লাইনের মধ্যে পার্থক্য করতো এমন একটি শব্দ উচ্চারণ করতে ব্যর্থ হন, শব্দটি হলো “লেগে থাকো!”, যে শব্দটি একদা ক্ল্যাভো চিৎকার করে বলেছিলেন, যখন তার অভিমত জানানোর জন্য মাত্র কয়েকটি সেকেন্ড তিনি পেয়েছিলেন।

বর্তমান মামলাতেও তার অবস্থান ভিন্ন কিছু নয়। যদিও এবার স্বাধীনভাবে ছবি তোলা নিষিদ্ধ ছিল যাতে চেয়ারম্যান গণজালো শাসকদের/সরকারের জন্য আরেকটি ব্যর্থতার সৃষ্টি করতে না পারেন তাকে এড়ানোর জন্য, (কিন্তু) অব্যাহত অডিও জোগানো সাংবাদিকরা পাচ্ছেন। প্রধান উপলক্ষ্যগুলোতে খোদ কোর্ট রুমেই অনেক রিপোর্টার ছিলেন, যদিও নয় মাস পর মিডিয়া সাধারণভাবে একে আর বেশী রিপোর্ট করছে না। তার দুই আইনজীবী ব্যাখ্যা করেছেন যে, চেয়ারম্যান গণজালোর কোর্টরুম কৌশল হলো এই মামলার বৈধতাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করা, নীরব থাকা, অনিবার্য্য রায়ের জন্য অপেক্ষা করা এবং কোস্টারিকায় আন্ত আমেরিকান মানবাধিকার কোর্টে আপিল করার জন্য আশা করা, যা ইতিপূর্বে চেয়ারম্যান গণজালোর গ্রেফতারের পর পরই তাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছিল যে সামরিক ট্রাইব্যুনাল তার বৈধতার প্রতিবাদ করেছিল।

যদি চেয়ারম্যান গণজালো শান্তিচুক্তির জন্য আহ্বানের বিরুদ্ধে থাকতেন, তাহলে তিনি অবশ্যই মামলার অন্য বিবাদীগণের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করা ও তাদের নিন্দা করার সুযোগটিকে গ্রহণ করতেন। অতীতে তিনি যখন কথা বলতে চেয়েছেন, তখন কেউই তাকে থামাতে পারেনি। যখন তাকে খাঁচায় আবদ্ধ করা হয়েছিল তখনও যে লোকটি পৃথিবীর কাছে তার কথা প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, তিনি এখনো নিজেকে প্রকাশ করে চলেছেন।

শান্তি চুক্তি লাইন ও কেন্দ্রীয় কমিটি

প্রকৃতপক্ষে ‘রোল’ যে নিছক আমেরিকান ও পেরুভিয়ান গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দ্বারা তৈরী করা কোনো বিষয় নয়; বরং চেয়ারম্যান গণজালো এর পিছনে ছিলেন, তার সবচেয়ে শক্তিশালী ইঙ্গিত হলো খোদ এই লাইনটা এবং এর পক্ষের দলিলাদি। এগুলো মাওবাদকে, বিপ্লবকে অথবা গণযুদ্ধের প্রয়োজনীয়তাকে স্থূলভাবে বর্জন করাকে পেশ করেনি। এর বদলে সেগুলো পার্টি যেসব প্রকৃত সমস্যাবলীর মোকাবেলা করছিল সেগুলোতে, পিসিপি যাকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-মাওবাদ, গণজালো চিন্তাধারা বলতো তার নীতিমালাকে তুলে ধরা ও প্রয়োগ করার অভিপ্রায়ে দার্শনিক, ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক যুক্তি-তর্ক সুবিন্যস্তভাবে এনেছিল। তারা দুই ধরণের বিচার্য বিষয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে। প্রথমটি হলো বস্তুগত পরিস্থিতি। চেয়ারম্যান গণজালো বন্দী হওয়ার আগেই পিসিপি সোভিয়েত ব্লকের পতনের অব্যবহিত পরের পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতির সাথে জড়িয়ে তার সমাধানের চেষ্টা করা শুরু করেছিল, যাকে এই দলিলগুলোতে 'বিশ্ব বিপ্লবের রণনৈতিক ভাটা' বলে উল্লেখ করা হয়। উপরন্তু, কীভাবে এবং কী শর্তাধীনে কিছু বিপর্যয়ের মুখে গণযুদ্ধ তার অর্জিত সাফল্যকে চালিয়ে যেতে পারতো এবং সে পর্যন্ত তা (গণযুদ্ধ) যেখানে উপনীত হয়েছিল তার স্তরকে কীভাবে ছাড়িয়ে এগিয়ে যেতে পারে তার অনুসারে তত্ত্বগত ও বাস্তব সমস্যাবলী ছিল, মার্কিন হস্তক্ষেপ এবং এমনকি আগ্রাসনের প্রশ্ন ছিল এবং এটা যুক্তফ্রন্টের আরো বিস্তার করার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে কিনা এবং দেশব্যাপী রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলে এগিয়ে যেতে পারে কিনা (সে প্রশ্ন ছিল)। আধা সামন্তবাদ একটি উপাদান হিসেবে কতটা বজায় ছিল সে বিষয়েও বিতর্ক ছিল।১০

সংক্ষেপে, বস্তুগত পরিস্থিতি ও গণযুদ্ধের ভবিষ্যত পথ পরিক্রমার জন্য তার ফলাফলকে পুনর্মূল্যায়ন করার স্বীকৃত জরুরী প্রয়োজনীয়তা ছিল। চেয়ারম্যান গণজালোর গ্রেফতার এমন এক সময়ে ঘটলো যখন বিপ্লব এক সন্ধিক্ষণে উপনীত। এই দলিলাদিতে দ্বিতীয় ধরণের যে বক্তব্য/যুক্তি আনা হলো তা হলো 'নেতৃত্বের সমস্যা': চেয়ারম্যান গণজালোকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল এবং পার্টির দীর্ঘদিনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের বড় অংশ মৃত অথবা কারাগারে। বলা হলো যে, প্রথম কাতারের সমস্যাবলী সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সময় কাঠামোর মধ্যে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মতো কোনো নেতৃত্ব ছিলেন না। ‘রোল’ এর উপসংহার ছিল এই যে, বহুবিধ কারণে, যার মধ্যে প্রধান হলো প্রতিকুল বিশ্ব পরিস্থিতি ও সর্বোপরি 'নেতৃত্ব সমস্যা', গণযুদ্ধ এগিয়ে যেতে পারতো না। এটা করার যেকোন চেষ্টা/পদক্ষেপ শুধুমাত্র পার্টিকে ধ্বংস হওয়ার দিকে নিয়ে যাবে এবং বিদ্যমান পরিস্থিতিতে যদিওবা গণযুদ্ধ চালিয়ে নেয়া যায়, এটা পরিণামে 'লক্ষ্যবিহীন যুদ্ধ'তে পরিণত হবে যার দেশব্যাপী রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের কোনো স্বচ্ছ লক্ষ্য বা সম্ভাবণা থাকবে না এবং সেটা বিক্ষিপ্ত 'ভ্রাম্যমাণ বিদ্রোহী দল' এ অধ:পতিত হবে। আরো বললো, এখন গণযুদ্ধ বন্ধ করার জন্য সংলাপে গিয়ে পার্টি নিজেকে শত্রুর হাতে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে এবং ভবিষ্যতে অধিকতর অনুকুল পরিস্থিতিতে সশস্ত্র সংগ্রাম পুন:পরিচালনা করার জন্য টিকে থাকতে পারবে।১১

এটা কোনো এক পুলিশ কর্তৃপক্ষের শূণ্যগর্ভ বাগাড়ম্বরপূর্ণ বক্তৃতা ছিল না। এটা একটা সুসঙ্গত লাইনকে প্রকাশ করেছিল। এটা যে সমস্ত প্রশ্নাবলী তুলে ধরেছিল তাকে বিশ্লেষণ করা ও উত্তর দেয়ার দরকার ছিল। যে-ই একে প্রথম উপস্থাপন করুন না কেন, এই লাইনটি পার্টি সদস্যদের মাঝে আসন গেড়ে নিতে পারতো, কারণ খোদ জীবন থেকে উত্থিত জরুরী প্রশ্নাবলীর এটা উত্তর পেশ করেছিল - যদিও তা ছিল ভুল উত্তর। এসব যুক্তি/বক্তব্যকে বিপ্লবীদের রাজনৈতিক লাইনের স্তরে, অর্থাৎ বাস্তবতার সঠিক বা বেঠিক প্রতিফলন হিসেবে গ্রহণ করা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য ধারণা হিসেবে চিহ্নিত করা, বিশ্লেষণ করা ও খন্ডন করায় সচেষ্ট হওয়ার প্রয়োজন ছিল। এতে ছিল শক্তির ভারসাম্যের এক বাস্তব (আত্মগত নয়) মূল্যায়ন এটা নির্ধারণ করার জন্য যে, গণযুদ্ধে লেগে থাকাটা বাস্তবিকপক্ষে সম্ভবপর কিনা এবং সে সময়কার নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে প্রতিক্ষেপণের লক্ষ্যে সময় পাওয়ার জন্য সংলাপে প্রবেশ করাটা পার্টির জন্য কোনো টেকসই উপায় ছিল, নাকি বাস্তবে তা ছিল একটা মরণফাঁদ। শান্তি চুক্তির জন্য আহ্বানের অল্পকাল পরে ‘বিপ্লবী আন্তর্জাতিকতাবাদী আন্দোলন’ এর নেতৃত্ব সংস্থা ‘রিম কমিটি’ (করিম) প্রাপ্ত তথ্যাবলী ও দলিলাদি যাচাই করে সেগুলো বোঝার জন্য এবং এক অতি গুরুত্বপূর্ণ লাইন সংগ্রামে অংশ নিতে ‘রিম’কে গাইড করার জন্য যা শুধু পেরুর বিপ্লবের ভবিষ্যতকেই নির্ধারণ করবে তা নয়, বরং ‘রিম’ ও আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের জন্য যার বিরাট গুরুত্ব রয়েছে। ‘কমিটি’ বলে, “এমতাবস্থায়, পেরুর গণযুদ্ধের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখাটাই শুধু নয়, বরং এই দুই লাইনের সংগ্রামে যোগ দেয়াটাও ‘রিম’ এর উপর অর্পিত হয়েছে: যেসকল প্রশ্ন এর সাথে সম্পর্কিত সেসবের উপর একটি সঠিক ও সার্বিক উপলব্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় অনুসন্ধান, অধ্যয়ন, আলোচনা ও সংগ্রামকে হাতে নেয়া এবং তার ভিত্তিতে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী লাইন ও তাকে যে কমরেডগণ পেরুতে এগিয়ে নিচ্ছেন, তাদের প্রতি সর্বোচ্চ শক্তিশালী সমর্থন প্রদান করা।” সে শক্তিগুলো সংলাপের জন্য আহ্বানকে মূল্যায়ন করার জন্য মানদন্ড নির্ধারণ করে: “বিপ্লবী যুদ্ধবিগ্রহের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের কাজকে এগুলো কি সেবা করে” এবং মাও এর কথা মতো, ‘জনগণের স্বার্থ’কে অর্থাৎ গণক্ষমতার অপরিহার্য্য প্রাণকেন্দ্র ও বিপ্লবী সশস্ত্র বাহিনীকে সুরক্ষা করে?” অনুসন্ধান, মূল্যায়ন ও সংগ্রামের এক সুতীব্র প্রক্রিয়ার পর ‘রিম’ অবস্থান গ্রহণ করে যে, শান্তি চুক্তির জন্য আহ্বানকে বিরোধিতা করা উচিত এবং পেরুতে ও আন্তর্জাতিকভাবে ‘ডান সুবিধাবাদী লাইন’ এর বিরুদ্ধে দুই লাইনের সংগ্রাম পরিচালনা করা উচিত। পিসিপি চেয়ারম্যানের ভূমিকা সম্পর্কে সে বলে, “চেয়ারম্যান গণজালোর বর্তমান অভিমতকে নির্ধারণ করার চেষ্টা করাকে অব্যাহত রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রধান/মূল বিষয়টা হলো লাইন, লাইন প্রণেতা নয়।” উপরন্তু, ‘আহ্বান’টি বলে যে, যারা ‘রোল’ এর পক্ষাবলম্বন করেছে তাদের উচিত “এই লাইনকে অস্বীকার করা এবং বিপ্লবী পথকে পুনরায় গ্রহণ করা”।১২

এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ‘করিম’ শান্তি চুক্তি বক্তব্যের একটা বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও সমালোচনা লিখবার জন্য ‘ইউনিয়ন অব ইরানিয়ান কমিউনিস্টস’কে - যা কিনা ইরানের কমিউনিস্ট পার্টিকে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী-মাওবাদী'র পূর্বসূরী, অনুরোধ করে। সেই দলিলটি উপসংহার টানে যে: “গণযুদ্ধ মোটেই শেষ হয়ে যায়নি। আংশিক পরাজয় চূড়ান্ত কোনো পরাজয় নয়।” গণযুদ্ধের অর্জনগুলোকে রক্ষা করা ও পার্টির সমস্যাবলী সমাধানের একমাত্র উপায় হলো এতে (গণযুদ্ধে) অটলভাবে লেগে থাকা। দলিলটি সুস্পষ্ট সতর্কবাণী উত্থাপন করে: একটি গণযুদ্ধ একবার শুরু করলে তাকে পানির ছিপির মতো চালু করা ও বন্ধ করা যায় না, যার অন্যতম কারণ হলো প্রতিক্রিয়াশীলরা নিজেরা বিপ্লবী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য একে ব্যবহার করবে।১৩

বিপ্লবী যুদ্ধকে সমাপ্ত করার আহ্বানের বিরুদ্ধে পিসিপি’র বাকী নেতৃবৃন্দের দৃঢ় অবস্থানের গুরুত্ব ও সাহসকে অতিমূল্যায়ন করা যায় না। পার্টিকে রক্ষা করাটাই ছিল সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - ‘রোল’ এর এই যুক্তি ছিল খুবই ভুল। এর বদলে সেটা লাল রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বিসর্জন দিতে ইচ্ছুক ছিল যাকে গণজালো বলেছিলেন বিপ্লবের “অস্থিমজ্জা”, কারণ এই পথে এটা জনগণের সচেতন বিজড়ন ঘটিয়েছিল এবং সেটা গণবাহিনীকে বিলুপ্ত করতে ইচ্ছুক ছিল, যা ছাড়া মাও যেমন বলেছেন, নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে বা এমনকি নিজেদের জীবন রক্ষার্থে “জনগণের কিছুই নাই”। এ ধরণের এক পদক্ষেপের অর্থ হবে বাস্তবিক ক্ষেত্রে জনগণের আশা ও ত্যাগের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা, যে জনগণ গণযুদ্ধকে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন, যারা একে সমর্থন করেছিলেন এবং বিশ্বব্যাপী যারা এর প্রতি প্রত্যাশা করেছিলেন। মাওবাদের এই কলঙ্কিতকরণ শুধু পরাজয়ের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয় ও নীতিভ্রষ্টতার চেয়ে অনেক অনেক বেশী মাত্রায় খারাপ হবে। এক মূল্যবান উত্তরাধিকার রেখে যাওয়ার বদলে পার্টি যদি এটা করে তাহলে বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের বিপ্লবীদের জন্য পার্টি এক বাধায় রূপান্তরিত হবে, যদি প্রতিক্রিয়াশীলরা পার্টিকে ধ্বংস করে না-ও ফেলে এবং যত বেশী সম্ভব পার্টি সদস্যকে হত্যা করে না-ও ফেলে। অবশ্য, শুধুমাত্র গৌরবময় ও অগৌরবের পরাজয়ের মাঝে বেছে নেয়াটা অনিবার্য্য ছিল - বিষয়টা আদৌ সেরকমটা ছিল না। যে বিষয়টা বিপদাপন্ন ছিল, সেটা ছিল মৌলিক দিশার প্রশ্ন: কমিউনিস্ট লক্ষ্য অনুসারে জনগণের বিপ্লবী স্বার্থের জন্য লড়াই এ লেগে থাকা হবে কি হবে না সে বিষয়টা, যার অর্থ হলো নতুন ও খুব কঠিন এক পরিস্থিতিতে কীভাবে সেটা অব্যাহত রাখা হবে তা চিন্তা করে বের করা। কিন্তু এই অবস্থান, যতটা মৌলিক-ই হোক না কেন, নৈতিক দায়িত্ববোধের চেয়ে অতিরিক্ত কিছুর ভিত্তিতে তাকে স্থাপিত হতে হতো। শেষ পর্যন্ত পিসিপি নেতৃবৃন্দের কার্যকলাপ আমাদের দেখিয়েছে যে, মানুষ যেভাবে বিষয়গুলো বোঝে, যা সম্ভব ও প্রয়োজনীয় বলে তারা মনে করে, তার ভিত্তিতেই কাজ করে। সমস্যার বিশালতা অস্বীকার করা যায় না: বিপ্লবের জন্য লাইন ও রণনীতি বিকাশের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন এমন নেতৃত্বগণ সঠিক দিশায় তা করতে আর পারছিলেন না। বরং তার বদলে দৃশ্যত তারা যে ভিত্তিতে নিজেদের স্থাপিত করেছিলেন সে সমগ্র রণনৈতিক দিশা/দিক নির্দেশ ও নীতিকে পাল্টে ফেলার জন্য আহ্বান রাখছিলেন। কিন্তু যা প্রয়োজনীয় ছিল তার দু:সাধ্যতা তার প্রয়োজনীয়তাকে কোনভাবে কমায়নি। অবশ্যই যারা অবশিষ্ট ছিলেন তাদের জ্বলন্ত প্রশ্নাবলীকে ধাপে ধাপে ও সময়ের প্রয়োজনানুযায়ী উত্তর করতে হতো। সেটা করতে হলে, আসলেই এটা বলা সম্ভব ছিল না যে, “বেশ, আমাদের চেয়ারম্যান আমাদের পক্ষ ত্যাগ করেছেন, তাই চলুন আমরা কিছু করার আগে যা কিছু এতদিন বিশ্বাস করতাম সেগুলোকে পুন:পরীক্ষা করি”। হতে পারে যে, বিপ্লবীরা “ষড়যন্ত্র” লাইনের দ্বারা একে এড়ানোর চেষ্টা করছিলেন। তাদের লেগে থাকতেই হতো এবং কীভাবে সেটা করা যায় তা খুঁজে বের করাটা ছিল নি:শ্বাস নেয়ার মতই প্রয়োজনীয়। কিন্তু যদি গণযুদ্ধ সমাপ্ত করার আহ্বানের পেছনে চেয়ারম্যান গণজালো ছিলেন না এটাই বের হয়ে আসতো, তাহলেও “লেগে থাকা”(পারসিস্ট) শক্তিগুলো যেমনটা দাবী করে যে, তার নেতৃত্বে চিন্তা ও লাইন যতটা বিকশিত হয়েছিল সেটাই গণযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে চালিত করতে যথেষ্ট ছিল। উপরন্তু, সময়ের অগ্রগতিতে ‘রোল’ এর উৎস খুঁজে বের করা এবং নতুন বিশ্লেষণ ও রণনৈতিক ধারণাকে সূত্রবদ্ধ করার জন্য পার্টির লাইন ও অনুশীলন এবং আন্তর্জাতিকভাবে তত্ত্ব ও অভিজ্ঞতাকে পুনর্বিচার না করে গণযুদ্ধে লেগে থাকাটা অসম্ভব হয়ে উঠতো। অন্য কথায়, তত্ত্ব ও অনুশীলনে এক বিরাট উল্লম্ফন না ঘটিয়ে এই বিপ্লব ও যেকোন বিপ্লবের অগ্রগতি ঘটানো যেত না যা ক্ষান্তিহীনভাবে করা দরকার ছিল। এটা যে কারো জন্য খুবই কঠিন হতো এবং সম্ভবত অবশিষ্ট পার্টি নেতৃবৃন্দ এই কর্তব্যের জন্য সমর্থ ছিলেন না - বিশেষত যেহেতু তারা তাদের পার্টির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সম্ভবত যেতে পারতেন না। কিন্তু নিজেদের মাথা ও মাওবাদ সম্পর্কে তাদের উপলব্ধিকে কাজে লাগানো এবং যতটা ভালো সম্ভব প্রকৃত নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করা ব্যতীত তারা আর কী-ই বা করতে পারতেন? কমিউনিস্ট নেতৃত্ব জন্মগত নয়। নেতৃত্বের জন্য বহু বিভিন্ন উপায়ে অর্জিত বিশেষ কর্মদক্ষতার প্রয়োজন এবং তার বিকাশের জন্য সময় প্রয়োজন। কিন্তু এটা হলো মূলত মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক লাইনের (দিশা ও পদ্ধতির) বিষয়। এর অর্থ হলো বিশ্বকে বোঝা ও তাকে রূপান্তরের চেষ্টায় পার্টিকে নেতৃত্বদানের জন্য মাওবাদকে দক্ষতার সাথে কাজে লাগানো। পরিহাসের বিষয় হলো এই যে, অবশিষ্ট পার্টি নেতৃত্বগণ এবং এই পরিস্থিতিতে যেসব নতুন নেতৃত্ব সামনে এগিয়ে এসেছিলেন, যারা সংশ্লিষ্ট লাইন প্রশ্নাবলীর মোকাবেলা করা ও মীমাংসা শুরু করা সহ সকল ফ্রন্টে পার্টি নেতা হিসেবে তাদের নিজেদের স্তরকে বিকশিত করছিলেন, তারা চেয়ারম্যান গণজালোকে ছাড়া অব্যাহত রাখতে অক্ষম ছিলেন - এই তত্ত্বকে বিরোধিতা করার একমাত্র উপায় ছিলেন তারাই। এটাও তুলে ধরা দরকার ‘রোল’ যে অভিযোগ এনেছিল যে, অবশিষ্ট নেতৃত্বগণ ছিলেন "অযোগ্য”, তা বিশেষভাবে যন্ত্রণাকর ছিল, যখন ‘রোল’ নিজেই তা ছিল যা কিনা বিপ্লবের পথে ও যারা তাকে এগিয়ে নিতে চাইছিলেন তাদের সামনে সবচাইতে বড় বাধা তৈরী করেছিল। “ষড়যন্ত্র” ধারণাটি বাস্তবে কমিউনিস্ট পার্টিতে রাজনৈতিক সংগ্রামের এক বিশেষ ধারণার সাথে শক্তভাবে যুক্ত ও তার জন্য বাহন হয়ে পড়েছিল। সিসি শুধু অনুশীলনের মধ্য দিয়ে লেগে থাকার চেষ্টা চালানোর একটি মনোভাবকে গ্রহণ করে (“গণযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ‘রোল’কে ধ্বংস করো”) এবং “কালো বমি” হিসেবে সাধারণভাবে তাকে নিন্দা করার কাজকে ছাড়িয়ে ‘রোল’ এর বিশেষ সারবস্তুকে অস্বীকার করে। যদিও ১৯৯৪ এর ফেব্রুয়ারীতে পিসিপি, সিসি’র বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, “দুই লাইনের সংগ্রামের প্রতি মনোযোগ দিন”, (তা সত্ত্বেও) সেটি তুলে ধরে যে, ‘রোল’ এর অবস্থান তার সদস্যদের “তাদের নিজ স্বাধীন ইচ্ছায় পার্টির বাইরে” নিয়ে গেছে, যেন খোদ পার্টির ভেতরে কোনো ‘রোল’ ছিল না এবং তার বিরুদ্ধে দুই লাইনের সংগ্রাম চালানোর প্রকৃত কোনো প্রয়োজন নেই। কেউ কেউ বললেন, ‘রোল’ এর যুক্তি-তর্ককে বিরোধিতা করার জন্য তাকে হাতে নেয়া ও উদ্যোগ নেয়ার অর্থ হলো শত্রুর ফাঁদে পড়া ও ষড়যন্ত্রকে প্রত্যয়পত্র দেয়া। বলা হলো যে, দুই লাইনের সংগ্রাম বিপ্লবীদের মধ্যে পরিচালনা করতে হবে। ‘রোল’ ও তার “কালো মাথা”গুলোকে প্রয়োজন শুধু শারীরিকভাবে “ধ্বংস করা”। প্রবাসে পিসিপি সমর্থকদের মাঝে এই মনোভাব বিস্তার করলো যে, শান্তি চুক্তি লাইনটা সর্বাধিক গুরুতর সমস্যা নয়, বরং গুরুতর সমস্যা হলো তারা, যারা কিনা “ষড়যন্ত্র” তত্ত্বকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছিলেন। এই মনোভঙ্গির সবচেয়ে উচ্চকন্ঠ প্রবক্তাদের অন্যতম ছিলেন পেরুভিয়ান সাংবাদিক লুই আরসে বোরজা। যখন ‘রিম’ তার অবস্থান “পেরুতে উড্ডীন আমাদের লাল পতাকা রক্ষায় সামিল হোন” - একে গ্রহণ করছিল এবং শান্তি চুক্তির জন্য প্রস্তাবণার বিরুদ্ধে এক বলিষ্ঠ দুই লাইনের সংগ্রামের আহ্বান জানাচ্ছিল, তখন আরসে বোরজা ‘রিম’ ও তার ‘কমিটি’র উপর এই উন্মত্ত আক্রমণ চালায়, যা কিনা কিছু সময়ের জন্য পিসিপি’র কিছু সংখ্যক বন্ধু ও সমর্থককে বিভ্রান্ত করেছিল। তিনি লিখেন, “শান্তি চুক্তিকে পিসিপি’র অভ্যন্তরস্থ সংঘাতের একটি প্রক্রিয়ার অংশ বলে তুলে ধরাটা হলো একে কলঙ্কিত বিভক্তি দ্বারা আকীর্ণ ক্ষয়িষ্ণু একটি সংগঠন রূপে, বিভক্ত ও পায়ের নীচে মাটি সরে যাওয়া একটি সংগঠনরূপে এবং ধ্বংসের প্রান্তে উপনীত একটি সংগঠন রূপে চিত্রিত করা। এই অভিমত বিপ্লবের কট্টর শত্রুদের মতের মতই।”১৪


এর উত্তরে 'এ ওয়ার্ল্ড টু উইন' ম্যাগাজিনে (প্রকাশিত) একটি নিবন্ধ দেখায় যে, সমাজে দ্বন্দ্বরত শ্রেণীগুলোর অস্তিত্ব এবং ফলস্বরূপ বিভিন্ন মতের মধ্যকার সংঘাতের প্রতিফলন স্বরূপ দুই লাইনের সংগ্রাম সকল কমিউনিস্ট পার্টির এক স্থায়ী বৈশিষ্ট্য, যদিও বিভিন্ন সময়ে তার “উচ্চ জোয়ার ও নিচু জোয়ার” রয়েছে। উপরন্তু, এই দুই লাইনের সংগ্রাম “পার্টি সদস্য ও জনগণকে শিক্ষিত করা ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির রূপান্তর সাধনের জন্য পুরোপুরি প্রয়োজনীয়।”১৫

এই বিতর্কে আরসে প্রতিক্রিয়া জানায় আরো ক্ষিপ্তভাবে ‘রিম’ ও অন্য যে কেউ যারা “ষড়যন্ত্র” তত্ত্বকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল তাদের ফুজিমোরী ও সাম্রাজ্যবাদীদের ক্যাম্পে নিক্ষেপ করার মাধ্যমে। জুন, ২০০৪ ব্যাপী “ষড়যন্ত্র” সংক্রান্ত এই অবস্থানটিকে আরসে’র তুলে ধরাটা নথিভূক্ত হয়ে রয়েছে। অকস্মাৎ সেই বছরের নভেম্বরে মামলা চলাকালে সকল “সন্দেহ”র বিরুদ্ধে বিশ্বাসের মহান রক্ষকটি সন্দেহে জর্জরিত হয়ে যান। এক বছর পর আরসে ফেটে পড়েন। চেয়ারম্যান গণজালো একজন “বিশ্বাসঘাতক” এবং অক্টোবর, ১৯৯৩ সাল থেকেই! যা-ই হোক না কেন, তিনি শান্তি পত্রগুলো লিখেছিলেন। কিন্তু এই সাংবাদিকটি ব্যাখ্যা করে একটি শব্দও ফস্কে যেতে দেননি বা তার পূর্বতন অবস্থানের কোনো উল্লেখ পর্যন্ত করেননি। আরসে চেঁচিয়ে অভিযোগ করেন যে, গুজম্যানকে আগেই দোষারোপ না করা ও এখনো পর্যন্ত পেরুভিয়ান রাষ্ট্রের থেকে তাকে রক্ষার জন্য আহ্বান করার কারণে দোষটা ‘রিম’ এরই!১৬

প্রয়োজনীয় দুই লাইনের সংগ্রাম পরিচালনা করার কর্তব্যের মুখোমুখি হতে অস্বীকার করে “পারসিস্ট” (লেগে থাকা) শক্তি নিজেদের শুধুমাত্র খাদের মাঝে গভীর থেকে গভীরতরভাবে ডুবিয়ে দিচ্ছিল। বিশেষত যদি চেয়ারম্যান গণজালোই ‘রোল’ এর প্রধান হয়ে থাকেন, কিন্তু এমনকি যদি তিনি তা না-ও হতেন, বিষয়টা এমন নয় যে, এই লাইনটা কোনো সুচিহ্নিত/স্বেচ্ছাকৃত বিশ্বাসঘাতকতা ও সচেতন অপরাধ ছিল; যেমন কোনো ব্যক্তি, উদাহরণস্বরূপ, নিজ জীবন রক্ষার্থে কমরেডদের বিষয় (শত্রুকে) জানিয়ে দেয় তেমনি। এটা এক ভয়ংকর ভুলকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, বিপ্লবকে রক্ষা করার অর্থে, অথচ বাস্তবে সে তার মৃত্যুর দিকেই তাকে চালিত করছে, একটা ভুল উপলব্ধি ও ভুল লাইন - যা কিনা অতীতে গণজালোর সাথে যুক্ত লাইনে যা কিছু সঠিক তাকেও বাতিল করবে না, আবার ‘রোল’ এর সর্বনাশা ক্ষতির চরিত্রকেও বাতিল করবে না। একটা রাজনৈতিক লাইন সঠিক না বেঠিক তা নির্ধারণে প্রধান প্রশ্নটি এর প্রবক্তারা বিপ্লব চায় কি চায় না সেই আত্মগত ইচ্ছার বিষয় নয়। রাজনৈতিক লাইনকে পরীক্ষা করা প্রয়োজন তা কীসের জন্য ও কী করার জন্য আহ্বান জানায় এবং সেগুলো কোথায় নিয়ে যাবে তার প্রেক্ষিতে। কিছু ব্যক্তি কী চায়, সেটা কোনো বিষয় নয়। যা-ই হোক না কেন, কে এটা পেশ করলো বা কেন, সেটা কোনো বিষয় নয়, ‘রোল’কে একটা লাইন হিসেবে নিতে হবে এবং সেভাবেই তাকে বিরোধিতা করতে হবে। ‘রোল’ এর রাজনৈতিক লাইন এবং তার পিছনকার দিশা ও পদ্ধতির বিরুদ্ধে এক বিরাট দুই লাইনের সংগ্রাম এবং বিগত সময়ের অভিজ্ঞতার এবং পার্টি ও বিপ্লবকে যে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছিল তার এক স্বচ্ছ দৃষ্টির সার সংকলনের সূচনা অন্ততপক্ষে কীভাবে সামনে এগোতে হবে তার এক প্রাথমিক ধারণার দিকে পরিচালিত করতে পারতো। এর অর্থ হতো যে, গণযুদ্ধে অটলভাবে লেগে থাকাটা বিপ্লবী শক্তি গড়ে তোলার কাজের সাথে সংযুক্ত করার ও তাকে সেবা করার জন্য সমাধান করার চেষ্টা করা এবং আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য তাকে দ্রুততর করা ও তার জন্য অপেক্ষা করা - এ উভয়টিই করা, যখন বিশ্ব সর্বহারা বিপ্লবের জন্য ঘাঁটি এলাকা হিসেবে দেশব্যাপী রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা যাবে, যেমনটা মাও বলেছিলেন চীনা গণযুদ্ধের এক কঠিন সময়ে। যদি কেন্দ্রীয় কমিটি এই মনোভঙ্গি গ্রহণ করতো, তাহলে গণযুদ্ধ এগিয়ে যেতে বা এমনকি টিকে থাকতে সক্ষম হতো তার কোনো গ্যারান্টি/নিশ্চয়তা নেই। প্রথমত পার্টি নেতৃত্বের অধিকাংশ ভুল পথ গ্রহণ করেছিল - এই ভয়ংকর সত্যকে কোনভাবে এড়ানো যেত না। দ্বিতীয়ত এটা ঘটেছিল কঠিন বস্তুগত পরিস্থিতির মঞ্চে। কিন্তু বিশেষভাবে যা দু:খজনক তা হলো সিসি’র ভুল মূল্যায়ন সত্ত্বেও তীব্র দুই লাইনের সংগ্রাম ছিল শুধুমাত্র একটি পক্ষ, ‘রোল’ দ্বারা পরিচালিত। যেন কিছুই ঘটেনি, যেন ‘রোল’ কোনো সত্য বিষয় নয়, যেন এর আবির্ভাব বাস্তব সমস্যাবলীর কোনো প্রতিফলন নয় এবং যেন চেয়ারম্যান গণজালো এর সাথে যুক্তভাবে সম্ভবত কিছুই করতে পারতেন না, সেভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে “ষড়যন্ত্র” লাইনটি ও তার সাথে সংযুক্তভাবে দুই লাইনের সংগ্রাম সম্পর্কে ধারণাটি যারা লেগে থাকতে চেয়েছিলেন তাদের ক্রমবর্ধিতভাবে বাস্তবতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে বিশ্লেষণ ও পরিকল্পনার ভিত্তিতে কাজ করায় পরিচালিত করে। পেরুতে গণযুদ্ধের অভিজ্ঞতা এবং তার সাথে যুক্ত বিষয়াবলী ও লাইনগুলো সামগ্রিকভাবে অধ্যয়ন করা প্রয়োজন। গণযুদ্ধ চালানো ও এগিয়ে নেয়ার বিরাট সফলতা এবং তৎপরবর্তী বিপর্যয় চীনে সমাজতন্ত্রের উচ্ছেদের সময় থেকে মাওবাদী আন্দোলনের এক খুবই গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা, এর চমৎকারিত্ব ও বেদনা - উভয় ক্ষেত্রেই তা হলো সমগ্র আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলন ও বিশেষত ‘রিম’ এর সাধারণ উত্তরাধিকারের অংশ। এই সমগ্র জটিল বিষয়াবলীর এক বস্তুবাদী পরীক্ষা/গবেষণা পেরুতে প্রকৃত মাওবাদী শক্তির দ্বারা পিসিপি’র পুন-সজ্জিতকরণ ও পুনর্গঠনের জন্যই শুধু প্রয়োজনীয় তা নয়, বরঞ্চ সেটা তেমন সকলের সাথেই বিজড়িত যারা কিনা অন্যান্য দেশে এবং বিশ্বব্যাপী বিপ্লব পরিচালনা করায় তাদের দায়িত্বকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছেন। বন্দী চেয়ারম্যান গণজালো ও অন্যদের (জীবন) রক্ষা করার কাজ অব্যাহত রাখাটা প্রয়োজনীয়, যারা নিপীড়িতদের এই মহান উত্থানের সূচনা করেছিলেন ও এগিয়ে নিতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, এমনকি যদি তাদের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থানকে উর্ধে তুলে ধরা সম্ভব না-ও হয়। পেরুতে যারা বিপ্লবের বিপর্যয়কে কাটিয়ে তোলার চেষ্টা করেন তাদের প্রতি মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক সহায়তাকে অবশ্যই প্রসারিত করতে হবে। নিজেদের “পুজি”র মূল্য কমে যাওয়া দেখে যারা তাদের ক্ষতি কমাতে চায় ও নতুন বিনিয়োগের তালাশ করে, তাদের চেয়ে বেশী ঘৃণ্য/জঘন্য আর কেউ নেই। গণযুদ্ধ ও পিসিপি-তে দুই লাইনের সংগ্রামের পথ পরিক্রমায় রাজনৈতিক ও মতাদর্শগত লাইনের বহু দিক উঠে এসেছে যার অধ্যয়ন, উপলব্ধি ও আরো সামগ্রিক বিতর্ক প্রয়োজন। সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনের যে রূপান্তর ও অগ্রগতি প্রয়োজনীয়, তার সাথে একত্রে ও তার অংশ হিসেবে পেরুতে নতুন অগ্রগতি আসবে। 

পাদটিকা:

কমরেড আরটিমো হচ্ছেন হুয়াল্লাগা আঞ্চলিক কমিটির নেতা এবং ১৯৯৯ সালের পর পিসিপি’র প্রধান নেতা। দেখুন: বেতার সাক্ষাৎকার (লা রিপাবলিকা প্রতিলিপি), ১৬ এপ্রিল, ২০০৪ এবং তার সাথে ২৮ আগষ্ট, ২০০৪ এর সাক্ষাৎকার। এবং ৭ জানুয়ারি, ২০০৪ এ সম্প্রচারিত ব্রিটিশ টিভি চ্যানেল 4 TV এর সাক্ষাতকার।

১৯৯৩ সালের ৭ অক্টোবর এবং ১৯৯৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত কেন্দ্রীয় কমিটির বিবৃতি। A World to Win পত্রিকার ২১ নং সংখ্যা।

খাঁচার ভাষণ, A World to Win, নং ১৮।

পরবর্তীকালে এটি প্রকাশিত হয় যে, টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি ফুজিমোরির ডানহাত ভ্লাদিমিরো মনটিসিনো’র সহযোগিতায় তৈরী হয়েছিল, যে এই চিত্রায়নকে নজরদারী করেছিল। অনুষ্ঠানটি দেখে মনে হয়েছিল যে, ক্ল্যাভো একটি পূর্ব-প্রস্তুতকৃত বক্তৃতাই পাঠ করছিলেন। এটি বিস্ময়কর নয়, কারণ কর্তৃপক্ষ ও ক্ল্যাভো ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনে সাময়িক কোনো সমঝোতায় উপনীত হয়েছিল।

এই অপ্রকাশিত চিঠির একটি অনুলিপি একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে বিদেশে পাঠানো হয়। চিঠিটির সারমর্ম ২০০৩ সালের ১০ এপ্রিলে প্রকাশিত AWTW পত্রিকার একটি লিখিত সাক্ষাৎকারে পুন:প্রকাশিত হয়।

। ‘লা রিপাবলিকা’ সাক্ষাৎকার, ২৮ আগষ্ট, ২০০৪। ২০০০ সালে ফুজিমোরি সরকারের পতনের পর ‘রোল’ এর পেশ করা কিছু দলিলপত্রে উপসংহার টানা হয় যে, কারাগারের বাহিরে অবস্থানরত কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ফুজিমোরির সাথে সমঝোতায় যেতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে শান্তি চুক্তি আর সম্ভব নয়। তথাপি, একটি ‘রাজনৈতিক সমাধান’ গ্রহণ করতে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করাটাই এখনো লক্ষ্য হয়ে রয়েছে। যার মধ্যে সকল বন্দী ও আরটিমোর মতো যাদের মাথার উপর মূল্য বরাদ্দ রয়েছে তাদের জন্য ক্ষমা অন্তর্ভূক্ত। সরকারের সাথে কয়েক বছরের অঘোষিত/অন্তর্নিহিত অস্ত্রবিরতির পর ২০০৪ সালে আরটিমো ঘোষণা করেন যে, যদি ছয় মাসের মধ্যে “যুদ্ধের রাজনৈতিক সমাধান” অর্জিত না হয় তাহলে তার বাহিনী পুনরায় সশস্ত্র সংগ্রামে ফিরে যাবে।
। Agenciaperu.com, ১৮ ডিসেম্বর, ২০০৫। তিনি ব্যক্তিগত পত্রাবলীতেও এই অবস্থানকে নিশ্চিত করেছিলেন।

যদি কিছু প্রবাসী বিপ্লবী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি চেয়ারম্যান গণজালোর শ্লোগানগুলোকে তার শান্তি চুক্তির বিরোধিতার প্রমাণ বলে গ্রহণ করেন, তবে তারা এটি করবেন পিসিপি’র মধ্যকার দুই লাইনের সংগ্রামের প্রকৃত বিষয়াবলীকে বুঝতে না পারার কারণে যে, এটা বিপ্লবের বিরোধিতাকারী ও তাকে নিন্দাকারীদের মধ্যকার সংগ্রাম ছিল না, বরং তা ছিল চিন্তার দু'টো ধারার মধ্যকার সংগ্রাম - যারা উভয়ই মাওবাদের আচ্ছাদনকে/আবরণকে দাবী করে, যদিও তারা পরস্পর বিরুদ্ধ দু'টো নীতির কথা বলছিল। এ কারণে সংশোধনবাদের থেকে মার্কসবাদকে পৃথক করার জন্য আগে লাইনগুলোকে অধ্যয়ন করা দরকার।

। ‘রেডিও প্রোগ্রামস পেরু’ কর্তৃক নেয়া গণজালোর আইনজীবী ম্যানুয়েল ফাজার্ডোর সাক্ষাৎকার যা ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর সম্প্রচারিত হয়েছিল। ‘অ্যাবিমেল গুজম্যানের প্রাণরক্ষায় আন্তর্জাতিক জরুরী কমিটি (IEC)’র বিশিষ্ট সমর্থকদের দ্বারা ২০০৬ সালের এপ্রিল মাসে প্রবাসে গ্রহণকৃত বেশ কিছু চিঠিতে এই মনোভঙ্গিকে নিশ্চিত করা হয়েছিল। চিঠিগুলো ক্র্যাসপো ও ইপারাগুয়েরে’র স্বাক্ষরযুক্ত ছিল। অন্যান্য চিঠিপত্র ও বিবৃতিতে বিগত বছরগুলোতে তার বক্তব্যের সূত্র ধরে তারা পুনরুক্তি করেন, যাতে লেখা ছিল “রণনৈতিক পরিবর্তন ও রাজনৈতিক সমাধান, যা কিনা আমরা ১৯৯২ সাল থেকে প্রস্তাব করে আসছি।”

১০ এটি ১৯৯২ সালে পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ৩য় প্লেনামে আলোচিত হয়। অন্যান্য যেসকল তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক ও সামরিক সমস্যাবলীর মোকাবেলা পার্টি করছিল, সেসবের উল্লেখের সাথে যুক্তভাবে তৃতীয় প্লেনাম রিপোর্টটি ১৯৯২ সালের মে মাসে পূর্বে আটককৃত পার্টি নেতৃবৃন্দের দ্বারা গৃহীত গুরুতর ক্ষতিকে প্রতিফলিত করেছিল। মূল দলিলটি এখনো অপ্রকাশিত।http://www.redsun.org এ কিছু সংক্ষিপ্ত দলিলপত্র পাওয়া যায়। কিন্তু চেয়ারম্যান গণজালো তার খাঁচার ভাষণে এর কিছু প্রধান বিষয় নিয়ে পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেন। বিশেষত যুদ্ধ সামন্তবাদ বিরোধী বিপ্লবের অন্তর্নিহিত শক্তিকে নি:শেষিত করেছে কিনা এবং তাকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে যেতে হবে কিনা সে প্রশ্নটি।

১১ভিত্তিপ্রস্তরমূলক ‘রোল’ দলিল “নতুন সিদ্ধান্ত ও নতুন সূত্রকে হাতে তুলে নাও ও তার জন্য সংগ্রাম কর” (আসুমীর)। ধারণা করা হয়, চেয়ারম্যান গণজালো কর্তৃক কারাগারে প্রদত্ত একটি বক্তৃতার প্রতিলিপি এটি। কয়েকটি প্রতিলিপি প্রচারিত হয়েছে, যেগুলোর মাঝে কিঞ্চিৎ পার্থক্য রয়েছে। ১৯৯৩ সালের জানুয়ারী মাসে লিমার একটি দৈনিক পত্রিকায় একটি প্রাথমিক ও অপেক্ষাকৃত ছোট সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। এটা AWTW এর ২৩ নং সংখ্যায় পুন:মুদ্রিত হয়েছিল, যাতে পেরুর দুই লাইনের সংগ্রামকে অধ্যয়নের জন্য প্রসঙ্গ দলিল হিসেবে পুন:মুদ্রণ হয়।

১২ “পেরুতে উড্ডীন আমাদের লাল পতাকার সমর্থনে সামিল হোন”, AWTW, ২১ নং সংখ্যা। আরো দেখুন, একই সংখ্যায় প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসেবে মুদ্রিত শান্তি চুক্তির পক্ষ শক্তির ১১ দফা কর্মসূচী।

১৩ “বিদ্রোহ করা ন্যায়সঙ্গত”, AWTW, ২১ নং সংখ্যা। এই দলিলটি অনুসন্ধান ও অধ্যয়ন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে প্রথমে ‘রিম’ এর অভ্যন্তরে প্রচার করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের অক্টোবর মাসে পূর্বোল্লিখিত “পেরুর আকাশে উড্ডীন আমাদের লাল পতাকার সমর্থনে সামিল হোন” শীর্ষক দলিলটির সাথে একত্রে (এটি) প্রকাশিত হয়।
১৪। “ফাঁদওয়ালা সন্ন্যাসীর গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তারে পরিবর্তন: ‘রিম’ এর সার্কাসীয় কসরতের আরেকটি ডিগবাজী”, El Diario International, মার্চ, ১৯৯৫। এই নিবন্ধের মূল পয়েন্টগুলো সহ প্রায় অর্ধেকাংশই AWTW এর ২২ নং সংখ্যায় প্রাসঙ্গিক বিষয় হিসেবে ছাপা হয়েছিল।

১৫। “আরসে বোরজার একটি প্রাথমিক উত্তর: দুই লাইনের সংগ্রামের বিষয়ে মাওবাদী ধারণা সম্পর্কে”, AWTW, ২২নং সংখ্যা।

১৬। “রাজনৈতিক কারবারের লালরক্ষী”, EDI, জানুয়ারী, ২০০৬। লক্ষ্য করুন, আরসে বোরজার একমাত্র দৃঢ়তা হলো ‘রিম’ এর বিরুদ্ধে ঘৃণা এবং বিশেষ ধরণের বিদ্বেষ হলো ‘বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি (আরসিপি, ইউএসএ)’ এর চেয়ারম্যান বব এ্যাভাকিয়ান এর বিরুদ্ধে, যে পার্টি ‘রিম’ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পার্টি। আরো দেখুন, “পেরু: বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে এমন এক বিপ্লবের অবশিষ্টাংশ”।



Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]