পূর্ব তিমুরে বামপন্থী নিধন
১৭০২ সালে পর্তুগিজরা পূর্ব তিমুরে উপনিবেশ স্থাপন করে, একই সময়ে ডাচরা বর্তমান ইন্দোনেশিয়া জুড়ে উপনিবেশ স্থাপন করতে শুরু করে। তিমুর দ্বীপের কর্তৃত্ব নিয়ে পর্তুগিজ ও ডাচদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। ১৯১৩ সালে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী দ্বীপটির পূর্বাংশ পর্তুগালের ও পশ্চিমাংশ নেদারল্যান্ডসের অধীনস্থ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান তিমুর দ্বীপ দখল করে নেয়। যুদ্ধ শেষে দ্বীপটির পূর্বাংশে পর্তুগালের কর্তৃত্ব পুন:স্থাপিত হয় এবং পশ্চিমাংশ ইন্দোনেশিয়ার হস্তগত হয়। ১৯৬০ এর দশকে পূর্ব তিমুরে স্বাধীনতা আন্দোলনের সৃষ্টি হলেও পর্তুগালের অন্যান্য উপনিবেশের (অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক ও গিনিবিসাউ) মতো এখানে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়নি। ১৯৭৪ সালের এপ্রিলে পর্তুগিজ সশস্ত্র বাহিনীর বামপন্থী অংশ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির ডানপন্থী ও উপনিবেশবাদী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং নতুন পর্তুগিজ সরকার পর্তুগিজ উপনিবেশগুলোকে স্বাধীনতা প্রদানের ঘোষণা দেয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Carnation_Revolution
এসময় পূর্ব তিমুরে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের উত্থান ঘটে - ‘তিমুরিজ গণতান্ত্রিক আন্দোলন’, ‘পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতার বিপ্লবী ফ্রন্ট’ এবং ‘তিমুরিজ জনগণতান্ত্রিক সংস্থা’।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Timorese_Democratic_Union
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Fretilin
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Timorese_Popular_Democratic_Association
প্রথমটি ছিল রক্ষণশীল দল, ফ্রেটিলিন ছিল মধ্য বামপন্থী ও স্বাধীনতাকামী এবং প্রায় জনসমর্থনহীন তৃতীয় দলটি ছিল ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে পূর্ব তিমুরকে অঙ্গীভূত করার পক্ষপাতী। ১৯৭৪ সালে পর্তুগালে সংঘটিত অভ্যুত্থানের পর থেকে ইন্দোনেশিয়া পূর্ব তিমুরের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিল। ইন্দোনেশীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদম মালিক পূর্ব তিমুরকে স্বাধীন হতে দেয়ার পক্ষপাতী ছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Adam_Malik
কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার ক্ষমতাসীন ‘নিউ অর্ডার’ পূর্ব তিমুরকে দখল করে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে অঙ্গীভূত করে নিতে আগ্রহী ছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/New_Order_(Indonesia)
ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৬৫-১৯৬৬ সালে সংঘটিত কমিউনিস্ট বিরোধী গণহত্যা চলাকালে ইন্দোনেশীয় সেনাপ্রধান জেনারেল সুহার্তো ইন্দোনেশিয়ার শাসনক্ষমতা হস্তগত করেন এবং কট্টর কমিউনিস্ট বিরোধী, ডানপন্থী ও পশ্চিমাপন্থী সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এটিই ‘নিউ অর্ডার’ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Indonesian_mass_killings_of_1965%E2%80%9366
১৯৭৪ সালের মাঝামাঝি নাগাদ ইন্দোনেশীয় ‘রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সমন্বয় সংস্থা' পূর্ব তিমুরে আক্রমণ পরিচালনার পরিকল্পনা প্রস্তুত করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/State_Intelligence_Agency_(Indonesia)
ইন্দোনেশীয় সেনাবাহিনীর বিশেষ অপারেশন্স ইউনিট ‘ওপসুস’ এর প্রধান মেজর জেনারেল আলী মুর্তোপো, ‘নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার অপারেশনাল কমান্ড’ এর প্রধান অ্যাডমিরাল সুদোমো, কোপকামতিবের ইন্টেলিজেন্স অপারেশন্স প্রধান মেজর জেনারেল বেনি মুরদানি এবং সুহার্তোর ঘনিষ্ঠ বন্ধু লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়োগা সুগামা ছিলেন সুহার্তোর নিউ অর্ডারের মূল ব্যক্তিত্ব এবং পূর্ব তিমুর আক্রমণের মূল উদ্যোক্তা।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ali_Murtopo#:~:text=Ali%20Murtopo%20(23%20September%201924,Suharto's%20New%20Order%20regime.
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Kopkamtib
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sudomo
https://en.m.wikipedia.org/wiki/L._B._Moerdani
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Yoga_Sugama
১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে পূর্ব তিমুরের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ইউডিটি ও ফ্রেটিলিন জোট সরকার গঠন করে। ফ্রেটিলিনে এসময় মধ্য বামপন্থী ও অতি বামপন্থী দুইটি ধারার আবির্ভাব ঘটে। ইন্দোনেশীয় গুপ্তচররা ফ্রেটিলিনকে ‘কমিউনিস্ট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে পূর্ব তিমুরে ব্যাপক ফ্রেটিলিনবিরোধী প্রচারণা চালাতে শুরু করে। তারা ইউডিটির নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং ফ্রেটিলিনের সঙ্গে জোট ভেঙে দিয়ে এককভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য তাদের প্ররোচিত করে। ১৯৭৫ সালের আগস্টে ইউডিটি জোট ভেঙে দেয় এবং অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একক ক্ষমতা অর্জনের প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু পূর্ব তিমুরে মোতায়েনকৃত ক্ষুদ্র পর্তুগিজ সৈন্যদলের তিমুরিজ সৈন্যদের সিংহভাগ ফ্রেটিলিনের পক্ষে যোগদান করে। পূর্ব তিমুরে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এই গোলযোগের মধ্যে পূর্ব তিমুরের পর্তুগিজ ঔপনিবেশিক প্রশাসন অঞ্চলটি ত্যাগ করে এবং পূর্ব তিমুর স্বাধীন হয়ে পড়ে। ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে গৃহযুদ্ধে ফ্রেটিলিন বিজয়ী হয় এবং পূর্ব তিমুরের সিংহভাগ ভূমির ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে সক্ষম হয়। ইউডিটির নেতারা পালিয়ে ইন্দোনেশিয়ায় আশ্রয় নেয়। ১৯৭৫ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইন্দোনেশীয় সৈন্যরা পূর্ব তিমুরের অভ্যন্তরে আক্রমণ পরিচালনা করতে শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ২৮ নভেম্বর ফ্রেটিলিন আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পূর্ব তিমুরের ঘটনাবলিতে চোখ বন্ধ করে রাখে। ১৯৭৫ সালের ৭ ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ব তিমুরের উপর পূর্ণ শক্তিতে আক্রমণ শুরু করে। ‘অপারেশন লোটাস’ বা ‘অপারেশন কমোডো’ সাঙ্কেতিক নামবিশিষ্ট সামরিক অভিযানটি ছিল স্বাধীন ইন্দোনেশিয়ার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ সামরিক অভিযান।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Indonesian_invasion_of_East_Timor
প্রায় ৩৫,০০০ ইন্দোনেশীয় সৈন্য অভিযানে অংশগ্রহণ করে। জনবল ও অস্ত্রবলের দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া ছিল পূর্ব তিমুরের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী এবং এজন্য ফ্রেটিলিনের পক্ষে ইন্দোনেশীয়দের পরাজিত করা সম্ভব ছিল না। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে ইন্দোনেশিয়া পূর্ব তিমুরে ইউডিটি ও APODETI-র সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্থাপন করে। ফ্রেটিলিন গেরিলা পদ্ধতিতে ইন্দোনেশীয় সৈন্যদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকে এবং এর ফলে ইন্দোনেশীয় সৈন্যদের পক্ষে সহজে পূর্ব তিমুরের সম্পূর্ণ অংশ অধিকার করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৬ সালের ১৭ জুলাই ইন্দোনেশিয়া পূর্ব তিমুরকে তাদের ২৭তম প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করলেও যুদ্ধ অব্যাহত থাকে। ১৯৭৭ সালের প্রথম দিকে ইন্দোনেশিয়া ফ্রেটিলিনকে দমন করার জন্য ‘পরিবেষ্টন ও নিশ্চিহ্নকরণ’ (encirclement and annihilation) নীতি গ্রহণ করে। যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে প্রায় ২,০০০ ইন্দোনেশীয় সৈন্য নিহত হয়, অন্যদিকে ইন্দোনেশীয় সৈন্যদের হাতে ৫০,০০০ থেকে ৮০,০০০ তিমুরিজ নাগরিক প্রাণ হারায়। ১৯৭৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পূর্ব তিমুরের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও ফ্রেটিলিনের কমান্ডার নিকোলাউ লোবাতো ইন্দোনেশীয় সৈন্যদের হাতে নিহত হন এবং ১৯৮০ সাল নাগাদ ফ্রেটিলিনের মূল বাহিনী পরাজিত হয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Nicolau_dos_Reis_Lobato
১৯৮০ ও ১৯৯০ এর দশক জুড়ে ফ্রেটিলিন ইন্দোনেশীয় দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ অব্যাহত রাখে। ১৯৯৮ সালে ইন্দোনেশীয় রাষ্ট্রপতি সুহার্তো ও তার নিউ অর্ডারের পতন ঘটে এবং ১৯৯৯ সালের ২৫ অক্টোবর জাতিসংঘ পূর্ব তিমুরের শাসনভার গ্রহণ করে। জাতিসংঘের উদ্যোগে আয়োজিত গণভোটে পূর্ব তিমুরের সিংহভাগ অধিবাসী স্বাধীনতার পক্ষে রায় প্রদান করে এবং ২০০২ সালের ২০ মে পূর্ব তিমুর পুনরায় স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। পূর্ব তিমুরের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য ইন্দোনেশীয় সৈন্যরা সেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রায় ১,৮০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ মানুষকে হত্যা করেছিল। ফ্রেটিলিন গেরিলারা ছিল বামপন্থী এবং তাদের নেতৃত্বে পূর্ব তিমুরে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে সেটি কমিউনিস্ট ব্লকের ঘাঁটিতে পরিণত হতো। এর ফলে ইন্দোনেশিয়া ‘কমিউনিস্ট হুমকি’র সম্মুখীন হতো এবং কমিউনিস্ট রাষ্ট্রগুলো পূর্ব তিমুরকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিজমের বিস্তার ঘটানোর সুযোগ পেতো। পূর্ব তিমুরে একটি কমিউনিস্ট নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্র স্থাপিত হলে এতদঞ্চলে মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিনগুলোর যাতায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি হতো এবং এটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত সমস্যা হয়ে দাঁড়াতো। ইন্দোনেশীয় সরকারের মতে, পূর্ব তিমুরে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা রোধ করার উদ্দেশ্যে তারা রাষ্ট্রটি আক্রমণ ও দখল করেছিল। ইন্দোনেশীয় সরকারের ধারণা ছিল, স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তাদের সৃষ্ট এই বিবরণ পশ্চিমা বিশ্ব গ্রহণ করবে এবং পূর্ব তিমুরে ইন্দোনেশীয় কার্যকলাপের বিরোধিতা করা থেকে বিরত থাকবে। একই উদ্দেশ্যে তারা পূর্ব তিমুরে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠিত হলে মার্কিন সাবমেরিনগুলোর চলাচল নিয়ে সম্ভাব্য সমস্যার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছিল। কমিউনিজমের ভয়ে ভীত পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে ইন্দোনেশিয়া কর্তৃক পূর্ব তিমুর দখলের প্রতি সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে ইন্দোনেশীয় সরকার এই আক্রমণের কারণ হিসেবে ফ্রেটিলিনের ‘কমিউনিস্ট’ হওয়াকে চিহ্নিত করেছিল।
https://www.researchgate.net/publication/237542395_'Illegally_and_Beautifully'_The_United_States_the_Indonesian_Invasion_of_East_Timor_and_the_International_Community_1974-76
ইন্দোনেশিয়া কর্তৃক পূর্ব তিমুর আক্রমণের আরেকটি কারণ ছিল পূর্ব তিমুরের দক্ষিণে অবস্থিত তিমুর সাগরে খনিজ তেলের মজুদ আবিষ্কার। ইন্দোনেশিয়া সেসময় তেল রপ্তানিকারক রাষ্ট্র ছিল এবং বৃহৎ একটি তেলের ভাণ্ডার ইন্দোনেশিয়ার হস্তগত হলে তাদের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেতো। সুহার্তোর শাসনাধীন ইন্দোনেশিয়া ছিল এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র এবং জাভা দ্বীপ ছিল এর কেন্দ্রস্থল। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা জাভা দ্বীপে অবস্থিত এবং সুহার্তোর অধীনে জাভানিজ অভিজাত সম্প্রদায় ইন্দোনেশিয়ার অন্যান্য প্রান্তিক প্রদেশগুলোকে শোষণ করতো। এমতাবস্থায় ক্ষুদ্র পূর্ব তিমুর স্বাধীন ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে ইন্দোনেশিয়ার খনিজ সমৃদ্ধ পশ্চিম পাপুয়া, আচেহ, রিয়াউ ও কালিমান্তানের মতো অঞ্চলগুলোও যে স্বাধীনতা/স্বায়ত্তশাসনের দাবি উত্থাপন করবে না, এরকম নিশ্চয়তা ছিল না। এজন্য ইন্দোনেশীয় সামরিক শাসকশ্রেণি পূর্ব তিমুরের স্বাধীন অস্তিত্বকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে এটিকে ইন্দোনেশিয়ার অঙ্গীভূত করতে চেয়েছিল।
https://www.theguardian.com/world/2019/aug/30/east-timor-indonesias-invasion-and-the-long-road-to-independence
পূর্ব তিমুর আক্রমণ ও দখলের মধ্য দিয়ে ইন্দোনেশীয় সামরিক শাসকশ্রেণি তাদের জনসমর্থন বৃদ্ধি করতে ইচ্ছুক ছিল। পূর্ব তিমুর অধিকারের মধ্য দিয়ে নতুন ভূমি ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে এবং সেখান থেকে প্রচুর সম্পদ পাওয়া যাবে - ধারণাটি প্রচারের মধ্য দিয়ে ইন্দোনেশীয় শাসকশ্রেণি জনসাধারণের কাছে নিজেদের শাসনকে কার্যকরী হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছিল।
ইন্দোনেশীয় জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদরা ইন্দোনেশিয়া থেকে পূর্ব তিমুরের বিচ্ছিন্নতাকে ঔপনিবেশিক শাসনের ফলে সৃষ্ট ‘কৃত্রিম বিভাজনে’র ফলাফল হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং পূর্ব তিমুর ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার সামুদ্রিক সীমা অসম্পূর্ণ বলে মনে করতেন। অনুরূপভাবে, মুসলিম অধ্যুষিত ইন্দোনেশিয়ার ধর্মভিত্তিক দলগুলো পূর্ব তিমুরের জনসাধারণের মধ্যে বিদ্যমান ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মের বিরুদ্ধে প্রচারণায় লিপ্ত ছিল। এমতাবস্থায় পূর্ব তিমুর দখলের মধ্য দিয়ে ইন্দোনেশীয় সরকার দেশটির জাতীয়তাবাদী ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক শ্রেণিগুলোর সমর্থন আদায় করতে চেয়েছিল। এসময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন এসেছিল। ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয়ের পর যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চল থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছিল এবং এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপের পরিবর্তে স্থানীয় ‘প্রক্সি’দের ওপর নির্ভর করার নীতি গ্রহণ করেছিল। ইন্দোনেশীয় সশস্ত্রবাহিনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘মিত্র’ হতে ইচ্ছুক ছিল।
https://archive.org/details/specterofgenocid00robe
এজন্য ইন্দোনেশীয় সশস্ত্রবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রকে নিজেদের সামরিক সামর্থ্য ও কমিউনিজমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের ‘নিষ্ঠা’র প্রমাণ দিতে চেয়েছিল। এই উদ্দেশ্য তারা পূর্ব তিমুরকে সম্ভাব্য ‘কমিউনিস্ট’ ঘাঁটি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং রাষ্ট্রটির ওপর আক্রমণ চালায়। পূর্ব তিমুরের ওপর আক্রমণ পরিচালনার পেছনে ইন্দোনেশীয় সশস্ত্রবাহিনীর উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা লাভের ধারা অব্যাহত রাখা।
Comments