দক্ষিণ কোরিয়ায় কমিউনিস্ট নিধন
১৯৫০ সালে উত্তর কোরিয়া সীমান্ত অতিক্রম করে দক্ষিণ কোরিয়ার উপর সামরিক আক্রমণ চালায়। উত্তর কোরিয়ার নেতারা চেয়েছিলেন দক্ষিণ কোরিয়াকে পরাজিত করে আবার দুই কোরিয়া একত্রিত করে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করতে। ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সিংম্যান রি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Syngman_Rhee
তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর কমিউনিস্ট নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করতে শুরু করেন। তিনি অভিজ্ঞ বিচারকদের পরামর্শে গতানুগতিক বিচারের পরিপ্রেক্ষিতে শাস্তির পরিবর্তে কমিউনিস্ট নেতাকর্মী এবং তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের সংশোধনের জন্য ‘রি-এডুকেশন প্রোগ্রাম’ হাতে নেন। এই প্রোগ্রামকে বলা হতো ‘বোদো লীগ’। এই প্রোগ্রামের অধীনে ফাঁসি কিংবা দীর্ঘদিন কারাবাসের পরিবর্তে পুঁজিবাদ ও গণতন্ত্রের সমর্থক হাওয়ার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা দেয়া হতো। প্রায় দুই লাখ কমিউনিস্ট ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিকে এই প্রোগ্রামের অধীনে নিয়ে আসা হয়। কোরীয় যুদ্ধ শুরু হলে প্রধানমন্ত্রী সিংম্যান রি এর নির্দেশে দক্ষিণ কোরিয়ান সেনাবাহিনী ও স্থানীয় কমিউনিস্টবিরোধী জনগণ জেলে আটক থাকা কমিউনিস্টদের উপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ইতিহাসবিদদের মতে, দুই লাখ মানুষ এই গণহত্যার শিকার হন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bodo_League_massacre
যুদ্ধ শুরু হলে গানঘোয়া দ্বীপের মানুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী লড়াই করছিল, তখন জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে তারা উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করেছিল। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ কোরিয়ার পুলিশবাহিনী, যুদ্ধরত সামরিক বাহিনীর কিছু ইউনিট ও স্থানীয় আধাসামরিক বাহিনী দ্বীপবাসীদের ‘যথোপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার’ জন্য একত্রিত হয়। ১৯৫১ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি প্রায় তেরশো দ্বীপবাসীকে কোনো বিচার ছাড়া ফায়ারিং স্কোয়াডে কিংবা ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ganghwa_massacre
১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার গিয়োংস্যাং অঞ্চলে ঘটে আরেকটি গণহত্যা। দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী অঞ্চলটি দখল করার আগে স্যানচোং কাউন্টি পার্টি অঞ্চলটিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। পার্টির নিজস্ব গেরিলা দলের মাধ্যমে নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হতো। এই গেরিলা দল দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করতে গিয়ে পরাজিত হয় এবং অঞ্চলটি থেকে পালিয়ে যায়। ১৯৫১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রায় ছয়টি গ্রামের ১৩৬ জনকে পাকসিন উপত্যকায় নিয়ে মেশিনগান থেকে গুলিবর্ষণের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। পরদিন ঐ অঞ্চলে অবস্থানরত সবাইকে আশেপাশের বিভিন্ন উপত্যকায় নিয়ে যাওয়া হয়, যাদের পরবর্তীতে গুলি করে মারা হয়। গণহত্যার আলামত নষ্ট করার জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা মৃত ব্যক্তিদের লাশগুলো পুড়িয়ে ফেলে। এই গণহত্যা প্রসঙ্গে দেশটির তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন-
“কমিউনিস্টদের উৎখাতের জন্য এটা করা হয়েছে, কোনো নিরপরাধ মানুষ এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।”
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Geochang_massacre
কোরিয়া উপদ্বীপ ভাগ হওয়ার আগে থেকে জেজু দ্বীপে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠিত হয়। ৩৮° অক্ষরেখা বরাবর ভাগ হওয়ার পর জেজু দ্বীপকে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। দ্বীপের অধিবাসীরা কোরিয়ার এই বিভাগ মেনে নিতে পারেনি। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ যখন দক্ষিণ কোরিয়ায় সাধারণ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেয়, তখন জেজু দ্বীপবাসীরা এর প্রতিবাদে সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। ১৯৪৮ সালের এপ্রিলে এই দ্বীপে ‘সাউথ কোরিয়া ওয়ার্কার্স পার্টি’র যেসব নেতাকর্মী ছিল, তারা সহিংস আন্দোলন শুরু করে। তাদের প্রধান টার্গেট ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার সিংম্যান রি সরকারের অনুগত পুলিশবাহিনী। সরকারের কাছে জেজু দ্বীপের সশস্ত্র আন্দোলনের খবর পৌঁছানোর পর আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে সামরিক আইন জারি করা হয়। শুরু হয় ধরপাকড় ও বিচারবহির্ভূত হত্যা। দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনী ও আন্দোলনকারীদের সহিংসতায় প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ মারা যায়। প্রাণ বাঁচাতে জাপানে পালিয়ে যায় প্রায় চল্লিশ হাজার মানুষ। ২০০৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার এই গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Jeju_uprising
দক্ষিণ কোরিয়ার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে এমন আরো অনেক গণহত্যা সংঘটিত হয়। এসব গণহত্যায় টার্গেট করা হয় কমিউনিস্ট ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিবর্গকে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/List_of_massacres_in_South_Korea
Comments