কমিউনিস্টরা ছিল, আছে, থাকবে

 

কমিউনিস্টরা নাকি শেষ হয়ে যাচ্ছে, মানুষ নাকি বামপন্থার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছে এবং জনগণ নাকি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশ ও ভারতে আওয়ামী লীগ ও বিজেপিকে নিজেদের রক্ষাকর্তা হিসেবে বেছে নিয়েছে - এই নিয়ে প্রতিনিয়ত গাদা গাদা লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। বামপন্থী বলতে ঠিক কাদের বোঝানো হচ্ছে সেই বিষয়ে যেমন কোনো স্পষ্ট ধারণা দেয়া হচ্ছে না, ঠিক তেমনি বুর্জোয়া গণতন্ত্রের অধীনে সংসদীয় নির্বাচনে গিয়ে বিপ্লব কায়েমের স্বপ্ন দেখা চরম সংশোধনবাদী ও সামাজিক-ফ্যাসিবাদী পার্টিগুলোর অধ:পতনকে কেন সামগ্রিকভাবে বাম ও কমিউনিস্ট শক্তির পতন হিসেবে দেখানো হচ্ছে তারও কোনো জবাব নেই।কমিউনিস্টদের হেয় করতে যেমন এককালে চরম কমিউনিস্ট বিরোধী সংবাদমাধ্যমগুলো ক্রুশ্চেভ, ব্রেজনেভ, গর্বাচেভ প্রমুখের কাজকর্মকে কমিউনিস্টদের কাজকর্ম বলে প্রচার করতো, তেমনি আজ বাংলাদেশ ও ভারতে এসব সুবিধাবাদী দলগুলোর নেতাদের কমিউনিস্ট সাজিয়ে জনমানসে বিভ্রান্তি ও হতাশা ছড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

প্রথমেই বাংলাদেশের নির্বাচনপন্থীদের দিকে ফিরে তাকানো যাক

বামপন্থী লেখক হিসেবে পরিচিত সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছিলেন-

"শেখ মুজিবের সাহস তো অবশ্যই, বুদ্ধিমত্তাও ছিল প্রখর।"

অনেকেই দাবী করেন এদের আচরণ বৃদ্ধ বয়সে এসে রিভার্স করে। তারা এদের যৌবনের ইতিহাস জানেন না বলেই এমনটা করেন। ভাষা আন্দোলনের সময় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানীদের ভয়ে নিজে পিছিয়ে এসে অন্যদেরও তাই করতে বলার বিস্তারিত বর্ণনা আছে আহমদ ছফার একটা লেখায়। আইয়ুব খান ক্ষমতায় এসে বুদ্ধিজীবীদের চিন্তা নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে 'পাকিস্তান রাইটার্স গিল্ড' নামের প্রতিষ্ঠানটি তৈরী করেছিলেন। এই দালাল প্রতিষ্ঠানটির সদস্যদের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের বহু নামকরা সাহিত্যিক ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান অংশের সভাপতি ছিলেন ড۔ এনামুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ড۔ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী!

................................................................................

মণি সিং বলেছিলেন- 

"আসুন আমরা সকলে মিলিয়া বিভেদ ভুলিয়া বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সোনার বাংলা গড়ার কাজে আগাইয়া যাই।"

[ইত্তেফাক, ১৯-১-১৯৭৪]

তিনি ক্ষমতাসীন ও তাদের সাথে জোটে যাওয়া বাম দলগুলোর বিরোধিতাকারীদের কেটে টুকরো টুকরো করবেন বলে হুমকি দিয়েছিলেন সেসময়।
..........................................................................

বারীণ দত্ত ওরফে আবদুস সালাম বারীণ বলেছিলেন রাষ্ট্রীয় চার নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার জন্য তারা স্বেচ্ছায় স্বজ্ঞানে লীগের ঐক্যজোটে আবদ্ধ হয়েছেন

[ইত্তেফাক, ১৫-১০-১৯৭৩]

.......................................................................

লেখক জাফর ইকবাল তার 'অনলাইন জীবন' বইটিতে লিখেছেন-

"আমরা একবার যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। দেশের 'মেহনতি' মানুষের রাজনৈতিক সংগঠন বামপন্থী দলগুলো এবং কমিউনিস্ট পার্টি মিলে সেটি বন্ধ করেছিল! বিশ্বাস হয়?"
..........................................................................

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-

* দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন করেছিল!

* নাম পরিবর্তন করতে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত সময় নিয়েছিল!

*১৯৭৭ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের আহবানে ব্রহ্মপুত্র নদ খনন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিল!

*১৯৮৬ সালে জেনারেল এরশাদের সামরিক সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল!

*দলের তৃতীয় কংগ্রেসে (১৯৭৮) কোরানের আয়াত "আসমান ও জমিনের মালিক একমাত্র আল্লাহ" ব্যবহারের প্রস্তাব আসলেও পরে তা বাতিল হয়!

[সূত্র: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির তৃতীয় কংগ্রেস উপলক্ষ্যে সদস্যদের মধ্যে প্রচারিত গোপন দলিল, ১৯৭৮]

কিন্তু ধার্মিকদের দলে টানতে এই কংগ্রেসে পার্টি সভ্য হওয়ার শপথনামায় "আমি মার্কসবাদ-লেনিনবাদে বিশ্বাস করি" এর পরিবর্তে "আমি সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করি" প্রতিস্থাপিত হয়!

*১৯৮৭ সালে মোহাম্মদ ফরহাদের মৃত্যু হলে তাদের পার্টি অফিসে মাইক বাজিয়ে কোরান পাঠ করা হয়!
................................................................................

সিরাজ শিকদাররা যখন একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিলেন, তখন গৃহপালিত বামেরা ভারতে নিরাপদে নয় মাস কাটিয়ে এসেছিল। অধ্যাপক মোজাফ্ফর বলেছিলেন-

"আমার দল বিধবা নয়।"

"নক্সালপন্থীরা মনে করতে পারে জমিদার জোতদারের গলা কেটে সমাজতন্ত্র কায়েম করা সম্ভব। কিন্তু আমরা তা মনে করি না। এই জন্য যদি কোনো বন্ধু মনে করেন যে আমরা বিধবার রাজনীতি করি তাতে আমাদের আপত্তি নেই।"

(সূত্র: আজাদ পত্রিকা, ২৫-৫-১৯৭২)

....................................................................................

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ দম্ভ সহকারে দাবী করতেন তিনি নাকি মাও সে তুং থেকে অনেক অনেক বেশি জ্ঞানী (যেহেতু তিনি এম এ পাশ)! 

[অধ্যাপক আসহাব উদ্দীন আহমদ রচনাবলী] 

বাকশাল সরকারের সাথে জোট গঠনের সময় তিনি 'মুজিববাদ' ও 'সমাজতন্ত্র'কে একই জিনিস বিবেচনায় বলেছিলেন-

"নামে কি আসে যায়!"

[ইত্তেফাক, ১৪-১০-১৯৭৩] 

বর্তমান ক্ষমতাসীনদের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি বলেছিলেন- 

"বঙ্গবন্ধুকে আমরা সমর্থন করি। কারণ বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্রের এবং গরিবের বন্ধু। ইহা ছাড়া তিনি সাম্রাজ্যবাদ ও শোষকের শত্রু।" 

[ইত্তেফাক, ১৯-১-১৯৭৪] 

শুধু তাই না, তিনি ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দীকে 'পাগল' বলে সম্বোধন করেছিলেন এক সংবাদ সম্মেলনে।

.........................................................................

১৯৬৭ সালে নকশালবাড়ির কৃষক আন্দোলনের উপর গুলি চালিয়ে দুইটি শিশু সহ ১১ জন কমিউনিস্ট আন্দোলনকারী হত্যা করার মধ্য দিয়ে সিপিএমের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে হাতেখড়ি যা পশ্চিমবঙ্গে দলটির সাড়ে তিন দশকের শাসনের শেষ প্রান্তে বার বার সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম ও লালগড়ে শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের, কৃষক ও সাধারণ জনতার রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়ার মধ্যে দিয়ে সিপিএমকে সামাজিক-ফ্যাসিবাদী শক্তিতে পরিণত করে দলটি কংগ্রেসের সাথে হাত মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নকশালপন্থী বিপ্লবীদের হত্যা করা শুরু করে। বলা হচ্ছে সিপিএমের ভোট বিজেপির খাতায় চলে যাচ্ছে, সিপিএমকে দেখিয়ে "বামের রাম হওয়া" জাতীয় কুৎসিত কমিউনিস্ট বিরোধী রটনা করে সামগ্রিক কমিউনিস্ট আন্দোলনকে বিজেপি ও হিন্দুত্বের দোসর হিসেবে দেখানো হচ্ছে ভারতে।সিপিএম কোনদিনই হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের চরম বিরোধিতা করেনি কিংবা কেরালায় নিজেদের ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আরএসএস এর সাথে মারামারি করলেও কোথাও হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করতে লড়াই করেনি। যখন ১৯৮৯ সালে কংগ্রেসকে আটকাতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহ জনতা সরকার গড়ার চেষ্টা করেন প্রাক্তন জনতা পার্টির নানা নেতা ও গোষ্ঠীকে এক করে, তখন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের রাম জন্মভূমি আন্দোলনে বিজেপি পুরোদস্তুর শরিক ও নেতৃত্বের ভূমিকায় আসীন। সারা ভারত জুড়ে যখন লাল কৃষ্ণ আদভানি ও অন্যান্য বিজেপি নেতারা অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির গড়ার উগ্র হিন্দুত্ববাদী জিগির তুলে দেশটির মধ্যে দাঙ্গা লাগাবার পরিকল্পনা করছে বিজেপির রাজনৈতিক উত্থানের স্বার্থে তখন জ্যোতি বসুদের বিজেপির অটল বিহারী বাজপেয়ীর সাথে হাতে হাত মিলিয়ে ব্রিগেড সভা করতে গায়ে বাঁধেনি, বিজেপি ও সিপিএমের জোট রাম মন্দির আন্দোলনের ছায়ায় গড়ে উঠেছিল। সেই বাজপেয়ীর সাথে জ্যোতি বসু হাত মেলায় যার হাতে তখনো ১৯৮৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংগঠিত নেলি হত্যাকাণ্ডের রক্ত লেগে ছিল।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Nellie_massacre

জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা বা এনডিএ-র অংশ হিসেবে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের প্রতি প্রান্তে জোট সঙ্গী বিজেপি ও আরএসএস'কে জায়গা করে দিচ্ছিলেন, যখন উত্তরবঙ্গের আদিবাসী অঞ্চলগুলোতে আরএসএস এর প্রচারকরা একের পর এক জঙ্গি তৈরির শিবির তৈরি করে, স্কুল গড়ে শিশুদের জঙ্গি তৈরি করার কারখানা শুরু করে তখন কিন্তু জ্যোতি বসু বা তার উত্তরসূরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য টু শব্দ করেননি।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/National_Democratic_Alliance

আওয়াজ তুলেছিল বিপ্লবী কমিউনিস্টরা; যার ফলে তাদের সিপিএম, তৃণমূল ও বিজেপির যৌথ হামলার মোকাবিলা করতে হয়েছে। প্রায় এক দশক বাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসীন হলেন বাম সরকারকে উচ্ছেদ করে, তখন শাসক পার্টির লোক হওয়ার জন্য মানুষের নাস্তিক সাজার দরকার হলো না। শুরু হলো ধর্ম ও রাজনীতির ঘৃণ্য ব্যভিচার, তখনো আসল সমস্যার দিকে চোখ না ঘুরিয়ে গৃহপালিত নির্বাচনপন্থীরা মানুষের কাছে শুধু নিজেদের ক্ষমতায় ফেরানোর দাবি নিয়ে গেছে। যখন ইমাম ভাতা দেয়ার নাম করে তৃণমূল মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে, তখন সিপিএমকে দেখা যায়নি মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করতে, সিপিএমকে পাওয়া গিয়েছে বিজেপির পাশে বসে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে। তারা যে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন বিমান বসু, সূর্য মিশ্র কিংবা সিপিএমের অন্যান্য কোনো নেতার ব্যবহার বা আদব কায়দায় তা কখনো ফুটে ওঠেনি। অমায়িক, দম্ভহীন, অনুতপ্ত হয়ে এবং আত্মসমালোচনা করে জনগণের কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়ার জায়গায় তাদের মধ্যে তীব্র হয়ে ওঠে যেনতেন প্রকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতাচ্যুত করার অভিলাষ। ২০১৪ সালে বিজেপি রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে দু'টি আসন ও ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যখন তিনটি আসন লাভ করে, তখন থেকেই তৃণমূলের সন্ত্রাস রোখার অছিলায় তৃণমূল স্তরে বিজেপি, আরএসএস ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের সাথে গাঁট বাধে সিপিএমের নেতৃত্ব। ২০১১ সালে ক্ষমতার সাথে সাথে নিজের হার্মাদ বাহিনীকেও হারায় সিপিএম। তৃণমূল সেই হার্মাদ বাহিনীর মালিক হয়ে সিপিএমের দিকে ধেয়ে আসে, ৩৪ বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে জনমানসে সঞ্চিত ঘৃণা ও ক্রোধের বারুদে আগুন জ্বালিয়ে সিপিএমের নেতা ও কর্মীদের উপর নামিয়ে আনে অত্যাচারের খাঁড়া; তখন ভোটের স্বার্থে গড়া ঠুনকো সংগঠন ভেঙে যায়। এলাকায় এলাকায় প্রতিরোধ গড়া দূরের কথা, কোনোভাবে সংগঠনের লোকেদের বাঁচাবার ক্ষমতাও সিপিএমের থাকে না। সিপিএম নেতারা ২০১১ সাল নাগাদ বলতেন ক্ষমতা চলে যাওয়ায় তাদের দলের নাকি বেনো জলও চলে গেছে এবং যা পরে থাকছে তা নাকি খাঁটি সোনা। কিন্তু তাদের দলে যা ছিল তার সবটাই বেনো জল, ঐ বেনো জল চলে যাওয়ার পরে হাতে থাকলো পেন্সিল আর সংগঠন সরে গেলো ফেসবুকের দুনিয়ায়। গ্রামে গ্রামে যে তৃণমূল বিরোধী ভোটগুলো নিজের দিকে টেনে রাখতো সিপিএম তা-ও ধীরে ধীরে বিজেপির খাতায় চলে গেলো, বিজেপি তৃণমূলের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়তে পেরেছে আরএসএস এর জঙ্গী বাহিনীকে ব্যবহার করে। বিজেপিতে তৃণমূল বিরোধী হিন্দু ভোট চলে যাওয়ার ফলে ভোট ব্যাঙ্কের গেরুয়াকরণ সহজ হয়ে যায় বিজেপির কাছে। সিপিএম তখন প্রথমে কংগ্রেসের হাত ধরে নিজের ভোট কংগ্রেসের খাতায় তুলে দেয় ও পরে আবার বিজেপির সাথে গোপন আঁতাত গড়ে তৃণমূলকে নির্মূল করতে।
۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔
ভারতে সিপিএমের এভাবে বিজেপিতে বিলীন হয়ে যাওয়ার সাথে কিংবা বাংলাদেশের বামেদের আওয়ামী লীগের সাথে জোট বেঁধে ও জোটের বাইরে থেকে সংসদে সিট পাওয়ার জন্য লালায়িত হওয়ার সাথে বিপ্লবী কমিউনিস্টদের হিন্দুত্ববাদী, উগ্র জাতীয়তাবাদী ও সালাফিস্ট মোল্লাদের ফ্যাসিবাদকে নির্মূল করার লক্ষ্যে এগুলোর শক্তির মূল উৎস আধা-সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্ককে উচ্ছেদ করার জন্য চালিত জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রতি পদে পদে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের সংগ্রামকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাথে সাথে লড়তে হচ্ছে সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে। এই লড়াইয়ে সুবিধাবাদী এসব নির্বাচনপন্থীরা বিপ্লবী কমিউনিস্টদের ও দেশ দু'টির আপামর শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষের শত্রু হিসেবে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। এসব দল ও সংশোধনবাদকে পরাস্ত না করে হিন্দুত্ববাদী ও মোল্লাতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করার স্বপ্ন দিবাস্বপ্ন মাত্র। যে বা যারা ভাবছেন এসব দলের শরিকদের সাথে এক হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলবেন তারা যে শুধু জনতাকে বোকা বানাচ্ছেন তাই নয়, নিজেদেরও ঠকাচ্ছেন। ফ্যাসিবাদের এই উত্থানের ফলে দেশ দু'টি জুড়ে শ্রমিক-কৃষকের লড়াইয়ে ধাক্কা লেগেছে, ধাক্কা খেয়েছে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের কাজ। এর সাথে সুবিধাবাদী নির্বাচনপন্থীদের বেইমানির চেয়ে বেশি সম্পর্ক হলো বিপ্লবী কমিউনিস্ট আন্দোলনের উপর জেঁকে বসে থাকা নয়া-সংশোধনবাদী রাজনীতির, যা মানুষকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও মাও সেতুঙের চিন্তাধারার যে সফল প্রয়োগ চারু মজুমদার কিংবা সিরাজ সিজদার দেখিয়ে গেছেন, বিপ্লবী পার্টি গড়ে শিখিয়ে গেছেন, তার থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। নানা ধরনের সংস্কারবাদ ও পরিচয়ের রাজনীতির গরলকে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও মাও সেতুঙের চিন্তাধারার মধ্যে মিশিয়ে ভেজাল রাজনীতির কারবার চালিয়ে মানুষকে ঠকাচ্ছে এক দল তথাকথিত বিপ্লবী। অন্যদিকে আরএসএস, জামায়াতে ইসলামী এর  কর্মীরা জনগণের গভীরে মিশে যাচ্ছে, স্বাচ্ছন্দ্যে শ্রমিক-কৃষকের মধ্যে বাস করছে, তাদের শিশুদের বিনামূল্যে শিক্ষা দেয়ার অছিলায় ছোটবেলা থেকেই হিন্দুত্ববাদী ও মোল্লাতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদের দর্শনে দীক্ষিত করছে। অথচ তথাকথিত বিপ্লবী কমিউনিস্টদের আস্তানা হয়েছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ, নানা ধরনের আলোচনা সভায় যেখানে শুধুই বুদ্ধিজীবীরা ভিড় করেন এবং নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেখানে শ্রমিক ও কৃষকের দেখা মেলা ভার। যদিও কিছু তথাকথিত কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা, বিশেষ করে ছাত্র যুব সম্প্রদায়ের থেকে উঠে আসা নব্য বামেরা, শ্রমিক ও কৃষকদের মধ্যে সংগঠন করতে যান, তারাও বাড়ি ভাড়া করে থাকেন, নানা ধরনের তত্ত্ব শুনিয়ে জনগণের ঘাড়ে বসে খান, নিজেরা কায়িক শ্রম দেন না, শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করা যে কী কষ্টসাধ্য তা অনুমান করতে পারেন না। কষ্টসাধ্য জীবনযাপন না করা, সাধারণ মানুষের সাথে অমায়িক হয়ে না মেলামেশা করায়, এলিটিস্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঁচিলের মধ্যে নিজেদের একঘরে করে রাখায় এই তথাকথিত বিপ্লবীদের সম্পর্কে জনমানসে ঘৃণার ও তাচ্ছিল্যের আবহ তৈরি করতে হিন্দুত্ববাদী ও মোল্লাতান্ত্রিক দলগুলোর কর্মীদের বেশি সময় লাগে না। যখন ফ্যাসিবাদের উত্থান হয় তখন তার পিছনে থাকে বর্তমান ব্যবস্থার প্রতি মানুষের অবিশ্বাস, রাগ আর আমূল পরিবর্তনের আশা, যা ফ্যাসিবাদী শক্তি তাদের মধ্যে জাগিয়ে তোলে। নরেন্দ্র মোদী কিংবা শেখ হাসিনাকে শিখন্ডি করে বিজেপি ও আওয়ামী লীগ আসলে মানুষকে একটা পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখিয়েছে। তারা দেখিয়েছে যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে বদলে দিতে সক্ষম এদের মতো নেতা-নেত্রীরা। মোদী ও হাসিনা সরকারের জনপ্রিয়তা যে শুধুমাত্র উচ্চবিত্ত ও শহুরে মধ্যবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ সে কথা মেনে নেয়া হবে বোকামি। দেশ দু'টির নানা প্রান্তের গ্রামাঞ্চলেও, দরিদ্র ও মাঝারি কৃষকের মধ্যেও বিজেপি ও আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি হলো মোদী ও হাসিনার জনপ্রিয়তা, মোদী ও হাসিনাকে ভাগ করা হয়েছে প্রতিটি শ্রেণীর মানুষের চেতনা ও চাহিদার দিকে তাকিয়ে। বৃহৎ একচেটিয়া বিদেশী পুঁজি ও তার সহচর দেশী মুৎসুদ্দি পুঁজির যেমন দরকার তেমন লাগামহীন লুঠ ও শোষণের গ্যারান্টি ফ্যাসিবাদ সেই শ্রেণীগুলোকে দেয়বৃহৎ জোতদার ও আমলাতান্ত্রিক পুঁজিকে দেয় কর্পোরেট লুটের বখরার আশ্বাস; মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের দেয় চাকুরী, ব্যবসা, কর ছাড় সহ উগ্র দেশপ্রেমের টনিকঅন্যদিকে গ্রামীণ ও শহুরে গরিবকে, শোষিত ও বঞ্চিত মানুষকে হিন্দুত্বের ও মোল্লাতন্ত্রের উগ্রতার অংশীদার করে তাদের মধ্যে ক্ষমতায়নের অনুভবের সঞ্চারণ করে, তাদের মিথ্যা আত্মসম্মানবোধ দিয়ে আচ্ছন্ন করে, তাদের হিন্দু ও ইসলাম ধর্মের নামে ক্ষেপিয়ে বিভিন্ন ইসলামী জঙ্গিগোষ্ঠী ও বিজেপির প্রতি জনসমর্থন তৈরি করতে পেরেছে।
....................................................................

যখন ভারত জুড়ে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে, হিন্দুরা ও হিন্দুধর্ম আক্রান্ত এই জোয়ার তুলে, কমিউনিস্টদের ধর্মদ্রোহী ও মুসলিম তোষণকারী বলে চিহ্নিত করে ও দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করার জিগির তুলে আরএসএস ও বিজেপি মোদীর প্রতি সমর্থনের বন্যা তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে, বিরোধী মতবাদকে পিষে দিচ্ছে, সেসময় জনতা যে সংবিধান ও ব্যবস্থার চেয়ে মুক্তি চাইছে, সেই সংবিধানকে রক্ষা করার কথা বলে, যে ধর্মের প্রতি মানুষের মোহ চূড়ান্ত সেই মোহকে শেষ না করে নানাভাবে হিন্দু ধর্মের উপর আম্বেদকরীয় কায়দায় হামলা করে (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী কায়দায় নয়) নব্য বামেরা ও তথাকথিত কিছু বিপ্লবী সাজা আঁতেল ধরনের লোকেরা জনগণকে আরএসএসের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। যখন সংবিধান বদলে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের কথা জোর করে প্রচার করছে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদ তখন সেই হিন্দুরাষ্ট্রের ক্ষতিকারক বিষয়গুলো জনগণের সামনে সহজ ভাষায় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা না করে, জনগণকে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে তাদের সমস্যার সমাধানের কথা না বলে, জনগণকে এই পঁচাগলা ব্যবস্থা ও তারা যে সংবিধানের উপর ক্ষিপ্ত তার বিরুদ্ধে যে কমিউনিস্টরা বিকল্প ব্যবস্থা, যা সম্পূর্ণ নতুন এক ব্যবস্থা হবে, গড়তে চায়, সে কথা না বলে শুধু সংবিধান বাঁচাও ও এই ঘৃণ্য ব্যবস্থাকে বাঁচাবার কথা বলে মিছিল মিটিং করলে যে জনগণের থেকেই দূরে সরে যেতে হয়, কমিউনিস্ট আর লিবারেল গণতন্ত্রীদের মধ্যে পার্থক্যটা মুছে যায়, সে কথা তথাকথিত বিপ্লবী কমিউনিস্টদের বোধগম্য হচ্ছে না। কারুর লেজুড় না হয়ে, স্বতঃস্ফূর্ততার পিছনে ধাওয়া না করে বরং জনগণের মধ্যে রাজনীতি দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ততা সৃষ্টি করার কাজকে অনেক তথাকথিত বিপ্লবী ধর্তব্যের মধ্যে আনে না। যে মুহূর্তে ভারত জুড়ে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর গোরক্ষক নামক হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করছে, মানুষকে খুন করছে তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য এবং রাষ্ট্রের মদতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ভীত ও সন্ত্রস্ত করে রাখার চেষ্টা করছে, ঠিক সেই সময়ে কলকাতার মতো কিছুটা নিরাপদ শহরে দাঁড়িয়ে বা কেরালার মতো নিরাপদ রাজ্যে দাঁড়িয়ে বিফ ফেস্টিভ্যাল করা, জনসমক্ষে পৈতে পুড়িয়ে বা হিন্দু ধর্মের তীব্র সমালোচনা করার মধ্য দিয়ে আসল সংগ্রাম, অর্থাৎ যে সকল অঞ্চলে সংখ্যালঘু মুসলিমরা আক্রান্ত সেখানে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও মাও সেতুঙের চিন্তাধারা দিয়ে মানুষকে জাগ্রত করা, শ্রেণী সংগ্রামের আগুনে হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদকে জ্বালিয়ে দেয়া ও এর শক্তির উৎস আধা-সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন সম্পর্ককে উচ্ছেদ করার কর্তব্যকে এড়িয়ে যাওয়া চূড়ান্ত মাত্রার সুবিধাবাদী রাজনীতি। উদারনৈতিক গণতন্ত্রীদের সাথে এহেন নব্য বামেদের বা তথাকথিত কিছু বিপ্লবীর লাইনের কোনো গুণগত পার্থক্য থাকছে না। ফলে ধর্মভীরু, রাজনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ, সংখ্যাগুরু হিন্দু সম্প্রদায়ের ব্যাপক শ্রমিক-কৃষকের মধ্যে, শোষিত মেহনতি মানুষের মধ্যে নিজেদের হিন্দু-বিরোধী ও মুসলিমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে, কমিউনিস্টদের সম্পর্কে আরএসএস এর ছড়ানো বিষাক্ত প্রচারকে শক্তিশালী করে তুলে শ্রেণী সংগ্রামের পিঠে ছুরি মারছে এই তথাকথিত বিপ্লবীদের দল। সিপিএম যে বিজেপির দোসর হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত হয়ে গেছে এবং সেই ঘটনা কমিউনিস্ট আন্দোলনের যতটা ক্ষতি করেছে তার চেয়েও ভয়ানক ক্ষতি বিপ্লবী সাজা একদল পাতি বুর্জোয়া আঁতেলদের দল করছে। শ্রমিক-কৃষক থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে, পরিচয় সংগ্রামকে শ্রেণী সংগ্রামের উপরে স্থান দিয়ে, কোনো ধরনের বিকল্প পরিকল্পনা ছাড়া মানুষকে রাজনীতি দিয়ে, শ্রেণী সংগ্রামের যুদ্ধ ক্ষেত্রে পোড় না খাইয়ে শুধু আঁতলামি করে, গ্রন্থকীটের মতো অমার্ক্সীয় তত্ত্ব আউরে শুধু ধর্মীয় রীতিনীতি, জাত ব্যবস্থা ও গরুর মাংস খাওয়া নিয়ে নাটক করে, মানুষের আশু সমস্যাগুলো নিয়ে লড়াই না করে, মানুষের জন্যে বিকল্প ন্যারেটিভ তৈরি না করে শুধু আরএসএস ও বিজেপির তৈরি ন্যারেটিভের সীমারেখার মধ্যে নিজেদের বন্দি রেখে এই তথাকথিত বিপ্লবীরা বিপ্লবের ঢের ক্ষতি করেছে।
۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔
একই কান্ড ঘটছে বাংলাদেশেও। এক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকায় নিরাপদে বসে নববর্ষ উৎযাপন থেকে শুরু করে বহু বিপ্লবী (!) কাজই সম্পাদন করা হচ্ছে! নির্বাচনপন্থী বামেরা বরাবরের মতোই হুজুগে গা ভাসিয়ে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণীর এক দিনের উৎসবে মেতে থাকে মার্ক্সবাদের প্রধানতম শিক্ষা শ্রেণীগত বিশ্লেষণ ভুলে। বাংলা অঞ্চলে প্রথম মানবগোষ্ঠী হিসেবে আগমন ঘটে নেগ্রিটোদের। এরপর অস্ট্রিক নরগোষ্ঠী নেগ্রিটোদের পরাজিত করে এখানে বসতি স্থাপন করে। অস্ট্রিকদের দ্বারা নেগ্রিটোরা বিলীন হয়ে যায়। এরপর আগমন ঘটে দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর। দ্রাবিড়রা অস্ট্রিকদের সাথে লড়াই করে বাংলা অঞ্চলে বসতি গড়ে। এরপর মঙ্গোলীয় বা ভোটচীনীয়দের আগমন ঘটে। অষ্ট্রিক ও দ্রাবিড়দের বিরুদ্ধে টিকে থাকতে না পেরে মঙ্গোলীয়রা এই অঞ্চল পরিত্যাগ করে। এরপর পুরো ভারতবর্ষসহ বাংলা অঞ্চলে আর্যদের আগমন ঘটে। পরবর্তীতে আর্য, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় এসব নরগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে বাঙালি নৃগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়। বাংলাদেশের প্রথম আদিবাসী হলো অস্ট্রালয়েড বা অস্ট্রিক নরগোষ্ঠী। বর্তমান বাংলাদেশের সাঁওতাল, কোল, ভিল, ভূমিজ, মুন্ডা, বাঁশফোড়, মালপাহাড়ি, পুলিন্দ, শবর ইত্যাদি নৃগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ হলো অস্ট্রিক নরগোষ্ঠী। এই অঞ্চলে অস্ট্রিকদের পরে আসা দ্রাবিড়দের বর্তমান ভারতে অধিক হারে বসবাস রয়েছে। এছাড়া এদের দেখা যায় শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও পাকিস্তানে। তেলেগু, তামিল, কন্নড়, মালায়ালাম, ব্রাহুই ইত্যাদি ভাষাতাত্ত্বিক নৃগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ হলো দ্রাবিড় নরগোষ্ঠী। মালয়েশিয়াতে তামিলদের একটি বড় অংশ বসবাস করে। বাংলাদেশের দ্রাবিড়রা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর সাথে মিশে গেছে। এজন্য বিশুদ্ধ দ্রাবিড় বাংলাদেশে ততটা দেখা যায় না। তবে পাহাড়িয়া, ওরাওঁ এই দুই জাতিগোষ্ঠী এখনও দ্রাবিড় নরগোষ্ঠী থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে বিবেচনা করা হয়। এক মৌলবাদ প্রতিহত করার দোহাই দিয়ে আরেক মৌলবাদ অর্থাৎ জাতিগত আধিপত্যবাদের জন্ম দেয়ার উপায় করে দেয় কথিত নববর্ষের উৎসব। আর্যদের উত্তরপুরুষ হচ্ছে সংকর জাতি বাঙালি। ড. মুহম্মদ এনামুল হক গবেষণা করে দেখিয়েছেন বর্তমানে বাঙালিরা যে ভাষায় কথা বলে সেখানে তদ্ভব শব্দ ৬০%, অর্ধ তৎসম ৫%, বিদেশি শব্দ ৮%, তৎসম শব্দ ২৫% আর দেশি শব্দ মাত্র ২% আছে। এই দুই পার্সেন্ট যাদের ভাষা তারা হচ্ছে কোল, মুন্ডা প্রভৃতি জাতি।

সারাদিন 'বিজাতীয় সংস্কৃতি', 'বিদেশী সংস্কৃতি', 'ভিনদেশী সংস্কৃতি'র গুষ্টি উদ্ধার করা জনগণকে কিভাবে মগা বানায় পুঁজিবাদী অর্থনীতি তার কিছু নমুনা দেখা যাক-

#সারা বছর মাছ-মাংস খেয়ে নববর্ষে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার সেলফি আপলোড করা জনগণের জানা উচিত যে, আপনাদের ইলিশের পিছে খরচ করা ১২০০ টাকা প্রান্তিক পর্যায়ের জেলেদের পকেটে যায়না; সেটা যায় তাদের কাছ থেকে মাছ কিনে নেয়া সামর্থ্যবান ব্যবসায়ীদের পকেটে। আর দরিদ্র দেশের ততোধিক দরিদ্র জেলেদের তিন বেলা ভাত এখনো জুটে না।

#নায়িকা অঞ্জনা বলেছিলেন "গ্রামে গ্রামে মহিলাদের ব্লাউজ কে দিয়েছে?" অথচ এখনো এদেশে বহু স্বামী পরিত্যক্ত মহিলারা পুরো বছর পুরোনো শাড়ি পড়ে ক্ষেতে আর মানুষের বাড়িতে কাজ করে বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দেয়। কুষ্টিয়ার মোল্লারা এই শ্রমজীবী নারীদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়ে বলেছিলো নারীরা ক্ষেতে কাজ করলে নাকি কৃষি উৎপাদন কমে যায়! চট্টগ্রামের শফি বলেছিলো গার্মেন্টস এ কাজ করা শ্রমজীবী নারীরা নাকি বেশ্যা! অন্যদিকে পহেলা বৈশাখ কিংবা বসন্তের প্রথম দিনে হাজার টাকা দিয়ে তাঁতের শাড়ি কিনে, মাটির গয়না কিনে (গ্রামের মানুষ থেকে ৫০ টাকায় কিনে ৫০০ টাকায় বিক্রি করে মার্কেটগুলো), কাজল দিয়ে সেলফি আপলোড করে দেশীয় সংস্কৃতি পালনকারী নারীরা! আর পুরুষরা আড়ং থেকে কিনে হাজার টাকার পাঞ্জাবি! অথচ কৃষককে, জেলেকে, শ্রমিককে ছেড়া লুঙ্গি পড়েই বাচ্চাদের খাবারের টাকা জোগাড় করতে হয়।

#মা-দাদীদের পিঠা এখন ফুড চেইন শপের হাজার টাকার ব্যবসার উপকরণ! আর শীতকালে রাস্তায় দরিদ্র মানুষেরা এসব ৫-১০ টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিনশেষে কয়েকশো টাকা উপার্জন করে মাত্র।

#দরিদ্র মহিলাদের ৫০-১০০ টাকার পুতির শোপিস, নকশি কাঁথা, পাটের শোপিস, বাঁশের শো পিস ইত্যাদি হাজার হাজার টাকায় বিক্রি করে অনলাইন ই-কমার্স সাইটগুলো দেশীয় পণ্যের তকমা লাগিয়ে এবং ক্রেতারা এসব পণ্যের দাম পরিচিতদের কাছে গর্বের সাথে জাহির করে।

#সংস্কৃতি শোষণের পর্যায়ে চলে যাওয়ার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশের বিয়ে। আগের 'যৌতুক' প্রথার নাম পাল্টে এখন 'উপহার' করা হয়েছে। শহরের কমিউনিটি সেন্টারগুলোর ব্যবসার কথা বাদ দিলাম, কন্যার বাবার সামর্থ্য না থাকলেও সমাজের মানুষদের সমালোচনার কারণে গ্রামেও প্রচুর মানুষকে খাওয়াতে বাধ্য হয়। বিয়ের সময় লক্ষ টাকার ফার্নিচারের 'উপহার' ছাড়াও এদেশে রোজার সময় ইফতার, কোরবানির ঈদের সময় পশু দিতে হয় বরের বাড়িতে। আরও নানা উপলক্ষে ফল, নাস্তা তো আছেই। ঋণ করে হলেও দেশীয় সংস্কৃতি রক্ষা করতে হয় এভাবে।

#রাজাকারদের ফাঁসির বিরোধিতাকারী লক্ষ লক্ষ বদমাইশদের দেশে স্বাধীনতা দিবসে আর বিজয় দিবসে ই-কমার্স সাইট আর মার্কেটগুলো এসব দিবসের থিম সংক্রান্ত মগ, চাবির রিং, টিশার্ট, পাঞ্জাবি, শাড়ি, ফতুয়ার হাজার হাজার টাকার ব্যবসা করে।

#বিভিন্ন দিবসে ৪০০-৫০০ টাকা দিয়ে গামছা কিনে এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা মাথায় বেঁধে রাস্তায় ঘুরে কিংবা সেলফি আপলোড করে। অথচ এই গামছা ৫০-৮০ টাকা দিয়ে কিনে যেই কৃষক আর শ্রমিকরা ঘাম মুছে তাদের এই প্রজন্ম গ্রাম্য, মূর্খ, চাষা, লেবার বলে গালি দেয়।
۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔
বিপ্লবী কমিউনিস্টদের কর্তব্য হচ্ছে শিকড়ে ফিরে যাওয়া। শ্রেণী সংগ্রামের কোনো বিকল্প নেই। জনগণের কাছে ছাত্র হিসেবে ফিরে যাওয়া, তাদের সৃজনশীলতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, তাদের চেতনার মান বুঝে তাদের সম্পূর্ণ রাজনীতি দিয়ে নতুন মানুষ হিসেবে গড়ে তুলে দরিদ্র ও ভূমিহীন কৃষককে নেতৃত্বে উন্নীত করা যাতে তারা বিপ্লবের লড়াইয়ে, নিজেদের শ্রেণীর মুক্তির সংগ্রামে তাদের ভূমিকা পালন করতে পারে। এর জন্য দরকার শ্রমিক ও কৃষকের সাথে একাত্ম হওয়া। শহরের নিরাপদ জীবনযাপন ছেড়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ ছেড়ে, ভালো চাকরি ও ভবিষ্যতের ডাককে উপেক্ষা করে, "আমার কী হবে?" চিন্তাকে জয় করে, আত্মস্বার্থকে চূর্ণ করে, সংশোধনবাদকে নাকচ করে, জনগণের স্বার্থে আত্মত্যাগ করা। গ্রামে গিয়ে দরিদ্র-ভূমিহীন কৃষকের বাসায় আশ্রয় নেয়া, তাদের সাথে শ্রম দেয়া, শ্রমের মর্যাদা দেয়া, তাদের রাজনীতির জ্ঞান দেয়া ও শ্রেণী সংগ্রামের লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করা, শ্রেণীর মাস্টার হওয়ার চেষ্টা না করে তাদের ভালো ছাত্র হওয়ার চেষ্টা করা, তাদের বিশ্বাস করা ও তাদের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা এবং সর্বোপরি তাদের উদ্ভাবনী সৃষ্টিশীলতার উপর ভরসা রেখে তাদের নেতৃত্বে উন্নীত করার চেষ্টা জরুরীযারা গ্রামে যেতে পারছে না কোনো কারণে তাদের শ্রমিকদের এলাকায় গিয়ে প্রচার ও প্রসারের দ্বায়িত্ব পালন করা উচিত। শ্রমিকের লড়াই যে বিশ্বমুক্তির লড়াই, টাকা আনা পাইয়ের নয় বরং মর্যাদার লড়াই সে কথা জোর দিয়ে বলার সময় এসেছে। বাড়ি ভাড়া না নিয়ে রাজনীতি দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা, শ্রমিকদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করা, কোনো ধরনের কাজ জোগাড় করে শ্রমের বদলে নিজের খরচ চালানোর চেষ্টা করা ও পদে পদে মানুষকে পার্টির চেতনার স্তরে উন্নীত করার চেষ্টা করা বিপ্লবী কমিউনিস্টদের কর্তব্য। এর সাথে সমস্ত বুর্জোয়া অভ্যাস যেমন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু এলিটিস্ট চক্রের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো, বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে বাইরে বের হওয়ার অভিপ্রায় হারানো, শুধু মধ্যবিত্ত-উচ্চমধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে গন্ডিবদ্ধ থাকা ত্যাগ করতে হবে। বাড়িতে গৃহ শ্রমিক না রেখে নিজের কাজ নিজে করা, বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের সাথে অমায়িক হয়ে ব্যবহার করা, যেভাবে হিন্দুত্ববাদী ও মোল্লাতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদীরা অতীতের কমিউনিস্টদের নকল করে জনগণের সাথে সহজ সরল জীবনযাত্রা আয়ত্ত করে মিশে গেছে তার বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের মানুষের মধ্যে যাওয়ার ও তাদের একজন হয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা করতে হবে বুর্জোয়া শিক্ষাব্যবস্থায় অর্জিত ডিগ্রি থেকে নিজেকে গাড়ির গিয়ারের মতো নিউট্রালাইজ করে, জনগণের ছাত্র হিসেবে তৈরি হয়ে। এখন অনেকগুলো ছোট বা মাঝারি কমিউনিস্ট পার্টি নানাভাবে বিপ্লবের কথা বলছে ও সংশোধনবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছে। কিছু দল এখনো নকশালবাড়ির রাজনীতির কথা, চারু মজুমদারের কথা, সিরাজ সিকদারের কথা এখনো বলে। একজন বিপ্লবী কমিউনিস্ট এই রকম অনেক দলের একটির কর্মী বা সমর্থক হতে পারে এবং সেই দলের রাজনীতির সাথে অন্য দলের রাজনীতির হয়তো অনেক তফাৎ। যেহেতু তিনি বিপ্লব চান এবং তিনি মনে করেন তার পার্টির দৃষ্টিভঙ্গী সঠিক তাই বলে তিনি অন্য দলের কর্মীদের বা সমর্থকদের যদি হেয় করেন, তাচ্ছিল্য করেন বা কথায় কথায় খোটা মারেন তাহলে বিপ্লবী ঐক্য বলে কোনো কিছু তৈরি করা সম্ভব নয়। বিপ্লবের স্বার্থে, শ্রেণীর স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে যেহেতু তারা লড়াই করেন তাই তাদের সঙ্কীর্ণতাবাদ থেকে মুক্ত হয়ে সমগ্র বিপ্লবী কমিউনিস্ট শক্তির সাথে ঐকবদ্ধ হওয়ার মানসিকতা রাখতে হবে এবং তা প্রয়োগ করতে হবে যাতে ফ্যাসিবাদের আক্রমণের মুখে শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষের প্রতিরোধকে শক্তিশালী করা যায়, যাতে শ্রেণী বিভক্ত না হয়ে যায়। যেখানেই কমিউনিস্টদের মনে হবে তারা কঠিন সংগ্রাম না করে সহজেই বিজয় অর্জন করে ফেলবেন সেখানেই সংশোধনবাদ যে বিপ্লবী সত্ত্বাকে ধ্বংস করার জন্যে দরজায় কড়া নাড়ছে সে কথা বুঝতে হবে। নির্বাচনপন্থী সুবিধাবাদীদের বিষাক্ত হাওয়ায় এখন কমবেশি অনেকগুলো কমিউনিস্ট নামধারী দল আক্রান্ত হয়েছে। যেসব তথাকথিত বিপ্লবীরা লড়াইয়ের ময়দান থেকে দূরে বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সেমিনার আর পদযাত্রা করে জীবন কাটিয়েছেন এই যুগে এসে তারা যে সত্যিই প্রতিরোধে কোনো ভূমিকা নেবে সে কথা আশা করা হবে শিশুসুলভ আকাশ কুসুম কল্পনা। আমাদের পাশে যে বিপ্লবী কমিউনিস্টরা ও শ্রমিক-কৃষক ও মেহনতি মানুষ আছে তাদের নিয়েই কাজ করতে হবে এবং একমাত্র মার্কসবাদ-লেনিনবাদ ও মাও সেতুঙের চিন্তাধারার ব্যাপক প্রচার করে, মানুষের দৈনন্দিন সমস্যায় তত্ত্বকে প্রয়োগ করে, বিপ্লবের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা জনগণকে বুঝিয়ে তাদের মধ্যে প্রবেশ করা ফ্যাসিবাদের বিষকে নির্মূল করা সম্ভব। প্রতিটি কমিউনিস্টের কাজ হওয়া উচিত প্রতিটি অন্যায়, অবিচার ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও সেই প্রতিরোধে সামিল হতে শ্রেণীকে উদ্বুদ্ধ করা। এই শ্রেণীকে উদ্বুদ্ধ করতে তাদের শ্রেণীর কাছে, অর্থাৎ শিকড়ে ফিরতে হবে, মূলটা ধরতে হবে। এলাকা ভিত্তিক লেগে-পড়ে থেকে কাজ না করলে পঞ্চাশ বছর পরও শুধু দিবস পালনে তারা সীমিত থেকে যাবে। 

۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔

বানতলার ঘটনায় সিপিএম এর নেতা জ্যোতি বসু বলেছিলেন- 

"এমন তো হতেই পারে!" 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/1990_Bantala_rape_case 

কুচবিহারের মহিলাকে গণধর্ষণের ব্যাপারে নির্বাচনপন্থী দলটির আরেক নেতা বিমান বসু বলেছিলেন- 

"মহিলাটির চরিত্র খারাপ ছিল!" 

অনাহারে আমলাশোল এ ৯ জন মানুষের মৃত্যু হলে সাংবাদিকদের প্রতি নির্লজ্জের মতো হাসিমুখে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন- 

"আপনারা শুধু আমলাশোল আমলাশোল বলে চ্যাঁচাচ্ছেন, এই কলকাতার বস্তিগুলোতে কত মানুষ না খেয়ে থাকেন তার খবর রাখেন?" 

পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি দুই টাকা বাড়লে এই নির্বাচনপন্থীদের বক্তব্য ছিল- 

"এমন কিছু বাড়েনি, বিজেপি অনেক বাড়াত!" 

সূত্র: 'ঐতিহাসিক ভুল ক'বার হয়', সমরেশ মজুমদার, জুলাই, ২০০৪

۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔۔

১৯২৮ সালে মুম্বাই শহরে টেক্সটাইল ধর্মঘটের সময় নির্বাচনপন্থী বামেদের ব্যাপারে আম্বেদকরের মোহভঙ্গ হয়েছিল ওয়েভিং ডিপার্টমেন্ট থেকে অচ্ছুতদের বাদ রাখার কাজকে এরা প্রতিবাদযোগ্যই মনে করেনি বলে। এসব ব্রাহ্মণ ঘরের বামেদের কাছে তারা ছিল কেবল কম বেতনের স্পিনিং ডিপার্টমেন্টে কাজ করার উপযুক্ত! কারণ ওয়েভিং এর কাজে সুতোর মধ্যে মুখের লালা লাগাতে হতো যা উঁচু বর্ণের কর্মীরা অপবিত্র বলে মনে করতো। এসব নিয়েই ইন্দিরার অন্যতম প্রধান চামচা ডাঙ্গের সাথে আম্বেদকরের বিরোধের সৃষ্টি হয়েছিল সেসময়।

..................................................................................

অরুন্ধতী রায় তার প্রথম উপন্যাস 'দ্য গড অফ স্মল থিংস' এ কেরালার নির্বাচনপন্থী বামেদের শাসনামলের সবচেয়ে বড়ো ব্যর্থতা, অর্থাৎ জাত প্রথা বিলুপ্ত করতে না পারার অক্ষমতা দেখানোর কারণে বামেরা নিজেদের ভুল স্বীকার না করে উল্টো তার বিরুদ্ধে কুৎসিত বিষোদ্গারে লিপ্ত হয়েছিল। তার আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস 'দ্য মিনিস্ট্রি অফ আটমোস্ট হ্যাপিনেস' এ তিনি আবারো এই নোংরা প্রথার অস্তিত্বের কথা তুলে এনেছেন (যদিও এখনো নির্বাচনপন্থী বামেরা সেখানে ক্ষমতায়):

"....তারা যদি হিন্দু হতো, তাহলে এটুকুই যথেষ্ট হতো না বলে তারা বলতো এঝাভা, সে জানতে চাইতো তারা থিয়া না চেকাভা। যদি তারা বলতো 'তফশিলী জাতি', সে জানতে চাইতো তারা কি পারায়া, পুলায়া, পারাভান, উল্লাডান। তারা কি মূলত নারকেল-কুড়ানি জাত? নাকি তাদের পূর্বপুরুষরা ছিল শববাহক, মেথর, ধোপা অথবা ইঁদুর শিকারী? সে নির্দিষ্টভাবে জানার জন্য জেদ ধরতো এবং কেবল তা জানার পরই তাদের সে সুযোগ দিতো তাকে সেবাযত্ন করার। যদি তারা হতো সিরিয়ান খ্রিষ্টান, তাহলে তাদের পারিবারিক উপাধি কী?...."

তিনি একই বইয়ে মুসলিমদের মাঝে লুকিয়ে থাকা বিভাজনের কথাও বলেছেন:

".....আমি বললাম, 'আমিও! দেওবন্দী নাকি বারেলভী?'

সে বললো, 'বারেলভী।'

আমি বললাম, 'আমিও! তানজিহী নাকি তাফকিরী?'

সে বললো, 'তানজিহী।'

আমি বললাম, 'আমিও! তানজিহী আজমাতী নাকি তানজিহী ফারহাতী?'

সে বললো, 'তানজিহী ফারহাতী।'

আমি বললাম, 'আমিও! তানজিহী ফারহাতী জামিয়া উল উলুম আজমির নাকি তানজিহী ফারহাতী জামিয়া উল নূর মেওয়াত?'

সে বললো, 'তানজিহী ফারহাতী জামিয়া উল নূর মেওয়াত।'

আমি বললাম, 'মর কাফির!' এবং আমি তাকে সহজেই কাবু করলাম।....."

..................................................................................

জঙ্গলমহলে জনগণের যে সংগ্রাম গড়ে উঠেছিল তার অন্যতম নেতা 'পুলিশি সন্ত্রাস বিরোধী জনসাধারণের কমিটি'-র সচিব ভুতো বাস্কে ওরফে সিধু সোরেনকে ২০ বছর বয়সে বুদ্ধদেব-চিদাম্বরমের যৌথবাহিনী এবং সিপিএমের হার্মাদরা বিষ খাইয়ে হত্যা করে ২০১০ সালের ২৬ জুলাই। জনগণের সংগ্রাম দেখে ভয় পেয়ে ব্যাপক জুলুম শুরু করে ভারতের বুর্জোয়া সরকার (যাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহায়তা করেছিল নির্বাচনপন্থী বামেরা), গ্রেফতার করে একের পর এক গণ আন্দোলনের কর্মীকে, এনকাউন্টারে খুন হয় বীর কমরেডরা। ভারত রাষ্ট্র ভেবেছিল রাতের অন্ধকারে সিধু সোরেন, পুতুল মান্ডি, ব্রোজো দুলে, ফোগা মাহাতো, সঞ্জয় সোরেন, বিবেক মুর্মুদের খুন করে সংগ্রামের শিরদাঁড়া ভেঙে দেবে।

...............................................................................

নেরুদার স্মৃতিকথায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া চিলির বামপন্থী সরকারের আমলাদের কুকীর্তির অনেক কিছুই উঠে এসেছে। যেমন- সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রদূতের আরেকজনকে লোক দেখানো দায়িত্বে রেখে নিজে বিলাসী জীবন কাটানো, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের (কথিত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য) মাইবাজি আর মদে গা ভাসিয়ে দেয়া, নেহরুর সময় ভারতে জুলিও কুরির চিঠি নিয়ে আসার পর নেরুদা আর তার ডায়েরিতে উল্লেখিত ব্যক্তিদের তথাকথিত ভারতীয় ভার্সনের সমাজতন্ত্রের সরকারের আমলা ও কর্মকর্তাদের দ্বারা নিপীড়ন দেখেও নির্বাচনপন্থী সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য রাষ্ট্রদূতের মিনমিনে আচরণ ইত্যাদি

চিলির বামফ্রন্টের নির্বাচনী প্রার্থী আলেন্দের সততা, দেশপ্রেম ইত্যাদি গুণাবলী একবাক্যে এমনকি পশ্চিমা জোঁকেরাও স্বীকার করে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে কেবল কিছু প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয়করণ, বিনামূল্যে শিক্ষা ও চিকিৎসার মতো মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করলেই সমাজতন্ত্র কায়েম হয়ে যায় না। নেরুদা তার স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন আলেন্দে সরকারকে রাষ্ট্রের বাইরের তুলনায় দেশের ভেতরে কয়েক গুণ বেশি প্রতিবিপ্লবী জোঁকেদের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তিনি আরও লিখে গেছেন যে সাধারণ মানুষ আলেন্দেকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনলেও রাষ্ট্রের প্রতিটা সেক্টরের কর্মচারী আর কর্মকর্তারা দক্ষিণপন্থীদের নীতির অনুসারী ও গোলাম ছিল। আলেন্দেকে অভ্যুত্থানের হাত থেকে কয়েকবার রক্ষা করা জেনারেল রেইনে স্নেইডেরকে নির্মমভাবে খুনের পর দক্ষিণপন্থীদের দখলে থাকা সুপ্রিমকোর্ট অপরাধীকে মাত্র দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিল। ডানপন্থী জোঁকেরা পাহাড় সমান সম্পদ নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যায় সেসময়। আলেন্দের বুক মেশিনগানে ঝাঁঝরা করে দিলেও দালাল সেনাবাহিনী তার আত্মহত্যার কাহিনী বানিয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছিল।

..................................................................................

১৯৭২ সালের ২১ এপ্রিল বিধানসভায় বিশ্বনাথ কংগ্রেসের সাথে জোট বেঁধে 'প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক মোর্চা' নামক প্রহসনের স্বপক্ষে ভাষণ দিয়েছিলেন। এই বামেদের অঙ্গসংগঠন 'নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস' এর তৎকালীন সভাপতি এস۔এস۔ মীর জাফর (তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এস۔এ۔ দাঙ্গে) বলেছিলেন- 

"শ্রীমতি গান্ধীই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী নীতি গ্রহণ করে দেশের সংহতি বিধানের জন্য এক মহান ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।" 

(যুগান্তর, ২৬-৪-১৯৭২) 

চরম প্রতিক্রিয়াশীল 'জনশৃঙ্খলা রক্ষা আইন' এর বিরোধিতা করেছিল বামেদের এই জোট, কারণ তারা জানতো যে এতে কংগ্রেস সরকারের পতন হবে না। এজন্যই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ সংকর রায় রসিকতা করে বলেছিলেন-

"বিশ্বনাথ (বিশ্বনাথ মুখোপাধ্যায়) বাবুকে ধন্যবাদ। মাঝে মাঝে এইভাবে ভোটাভুটি না হলে আমাদের মোর্চায় মরচে ধরে যাবে। বিভক্ত সভার সদস্যরা হাসিতে ফেটে পড়েন।" 

(যুগান্তর, ২৬-৪-১৯৭২)

..............................................................................

স্বাধীনতার পর ভারত সরকার ভাগ চাষীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার জন্য ভূমি ব্যবস্থার কিছুটা সংস্কার করে। ১৯৫৫ সালে বর্ধিত ভূমি সংস্কার আইন ও পরবর্তী সংশোধনগুলোতে দু'টি প্রধান ধারার উল্লেখ ছিল-

১। জমির মালিককে আইন নির্ধারিত উৎপাদনের অংশ দিয়ে গেলে, জমি ফেলে না রাখলে বা জমি অন্য কাউকে ইজারা না দিলে ভাগ চাষীরা জমিতে স্থায়ী ও উত্তরাধিকারযোগ্য ভোগ দখলের অধিকার পাবে। কিন্তু জমি মালিক ব্যক্তিগত চাষের জন্য ঐ জমি ব্যবহার করতে চাইলে ভাগচাষী সেই অধিকার হারাবে। এই অধিকার উত্তরাধিকারযোগ্য, কিন্তু হস্তান্তরযোগ্য নয়।

২। জমির মালিক কোনো নথিভুক্ত ভাগ চাষীর কাছ থেকে ২৫ শতাংশের বেশি উৎপাদন দ্রব্য দাবী করতে পারবে না। এক্ষেত্রে চাষের সম্পূর্ণ শ্রম ও উৎপাদনের খরচ ভাগ চাষীকে বহন করতে হবে। যদি মালিক শ্রম ছাড়া অন্যান্য উপাদানের খরচ বহন করে তাহলে তার প্রাপ্য হবে ৫০ শতাংশ।

১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার 'অপারেশন বর্গা' কর্মসূচি শুরু করে। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Operation_Barga

ভাগ চাষীরা ভূমি রাজস্ব দপ্তরে নিজেদের নাম নথিভুক্ত করে এবং জমির মালিককে উৎপাদনের ২৫ শতাংশ খাজনা হিসাবে দিয়ে ভাগে চাষ করা জমিতে স্থায়ী ও উত্তরাধিকারযোগ্য স্বত্ব অর্জন করে। ফলে মালিকের মর্জি অনুযায়ী জমি থেকে উচ্ছেদ হওয়ার ভয় রইলো না। মৈত্রীশ ঘটক, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পল গার্টলার তাদের যৌথ গবেষণায় দেখিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গে ধান চাষে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির এক-তৃতীয়াংশ অপারেশন বর্গার ফলে সম্ভব হয়। কিন্তু অপারেশন বর্গার ফলে নথিভুক্ত প্রায় সাড়ে চোদ্দ লক্ষ ভাগ চাষী রাজ্যটির সমগ্র কৃষি জমির মাত্র ৮ শতাংশ জমিতে চাষ করতে পেরেছিলেন। যদি ধরে নেয়া হয় অপারেশন বর্গার ফলে অনথিভুক্ত ভাগ চাষীদেরও দরকষাকষির ক্ষমতা এবং জমিতে স্থায়িত্ব বেড়েছিল এবং অনথিভুক্তদের সংখ্যা নথিভুক্তদের প্রায় সমান, তাহলেও কর্মসূচীর মোট প্রভাব ১৬ শতাংশের বেশি জমিতে পড়েনি। বিভিন্ন গবেষকদের গবেষণাপত্র থেকে জানা যায় পশ্চিমবঙ্গে ভাগ চাষের আওতাভুক্ত জমির পরিমাণ মোট জমির ২০% এর বেশি ছিল না সেসময়। পশ্চিমবঙ্গের ৮০ শতাংশ জমির ওপর অপারেশন বর্গার কোনো প্রভাব পড়েনি। ঐ জমি কর্ষিত হতো ক্ষেতমজুর কিংবা ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক কৃষক পরিবারগুলোর পারিবারিক শ্রমে। অপারেশান বর্গার ফলে পুরানো ভূমি সম্পর্কের গুণগত পরিবর্তন হয়নি। এই আইনে জমির মালিকের অধিকার পূর্ণমাত্রায় বজায় ছিল। কোনো শ্রম না করে, উৎপাদনের কোনো খরচ ও ঝুঁকি বহন না করে জমির মালিক শুধু মালিক হওয়ার সুবাদে উৎপাদনের ২৫ শতাংশ ভোগ করতো। এই ব্যবস্থা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার থেকেও পশ্চাৎপদ ব্যবস্থা ছিল; পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় জমির মালিককে সমগ্র উৎপাদনের তদারকি, উৎপাদন ব্যয় এবং ঝুঁকি বহন করতে হয়। কিন্তু বর্গাদারি ব্যবস্থায় জমির মালিককে সামন্তবাদী কায়দায় উদ্বৃত্ত আত্মসাতের অধিকার দেয়া হয়। উদ্বৃত্ত উৎপাদনে পুনর্বিনিয়োগের ইচ্ছা এবং উৎপাদনের মানের উন্নয়ন ঘটানোর দায় তার থাকে না। ভাগ চাষের জমির প্রায় ৯০ শতাংশে ধান চাষ হয়। বীজ, বীজতলায় হাল, সার, জমিতে হাল, সেচ (ডিজেল), শ্রমিক, নিড়ানি, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবস্থার পর যে ধান উৎপাদিত হবে সেখান থেকে ভাগ চাষীকে জমির মালিককে এবং জলসেচের জন্য পাম্পের মালিককে ধান দিতে হতো নির্বাচনপন্থীদের শাসনামলে। অধিকাংশ ভাগ চাষীর চাষ থেকে যা আয় হতো তার সবটা সংসার খরচে চলে যেতো, তাদের সুদে ধার করে এই খরচ যোগাড় করতে হতো মহাজনের কাছ থেকে। অপারেশন বর্গার ফলে উৎপাদন বেড়েছিল। কিন্তু পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদরা শুধু উৎপাদন বৃদ্ধি দেখেন এবং উৎপাদনের জন্যে প্রয়োজনীয় শ্রমের পুনরুৎপাদনের দায়িত্ব উৎপাদকের উপর ছেড়ে দেন। এই নির্মম পদ্ধতির এতটুকু শৈথিল্য বর্গাদারি ব্যবস্থায় নেই। জমি এক ফসলি হলে বা জোতের আকার ক্ষুদ্র হলে বর্গাদার অতিরিক্ত পেশা গ্রহণ করতে বাধ্য হন।

............................................................................

জ্যোতি বসু তার ছেলেকে ৩০০ কোটি টাকার শিল্পপতি বানিয়ে ফেলেছিলেন। বেঙ্গল ল্যাম্প কেলেঙ্কারির সাথে সরাসরি যুক্ত ছিল জ্যোতি বসুর ছেলে চন্দন, তার সংস্থাকে অনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দেয়ার প্রতিবাদ করেন বামফ্রন্টের মন্ত্রী যতীন চক্রবর্তী। ডাকাতের হাতে রহস্যজনকভাবে খুন হয় যতীনের মেয়ে। বহু বিদ্রোহী ট্রেড ইউনিয়ন নেতাও সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে লরি চাপা পরে মরে গেছে রহস্যজনকভাবে। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসতেন সিপিআই (এম) কর্মী সুশীল রায়চৌধুরী। সুশীলবাবু যখন খুন হন, তখন তার বয়স ৭৫৷ আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সিপিআই (এম) এর রাজ্য দপ্তরে দলের টাকাপয়সার হিসেব রাখতেন তিনি৷ সুশীলবাবু এক রাতে ইএম বাইপাসের উপর চিংড়িঘাটায় বাস থেকে নেমে হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে নৃশংসভাবে খুন হন৷ খালের ধারে তার দেহ মেলে৷ মুখ্যমন্ত্রী তখন জ্যোতি বসু, পুলিশমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ কিছু নেতা পার্টির টাকা নয়-ছয় করায় রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সুশীলবাবু৷ বুদ্ধদেববাবু বিধানসভায় দাঁড়িয়ে দু’বার ঘোষণা করেছিলেন সুশীলবাবুর খুনিরা নাকি ধরা পড়বে! খুনের নেপথ্যে বিরোধীদের হাত আছে, এমন অভিযোগ সিপিএম কখনত্ত তোলেনি৷ দলের নেতা-কর্মী খুনের ঘটনায় পার্টি কমিশন বসায়৷ সুশীলবাবুর ক্ষেত্রে তা হয়নি৷ সুশীলবাবুর খুনের বিষয়ে প্রেসিডেন্সি রেঞ্জের ডিআইজি প্রাক্তন আইপিএস রচপাল সিং বলেন- 

"সুশীলবাবুর খুনের তদন্ত করতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম৷ পরদিনই আমাকে রেলে বদলি করে দেয়া হয়৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন পুলিশমন্ত্রী৷ উনি আমায় ডেকে ধমকেছিলেন৷" 

বিমান বোসের বান্ধবী অধ্যাপিকা মনীষা মুখার্জী নিরুদ্দেশ তিন দশকেরও বেশী সময় পার হয়ে গেছে। বামফ্রন্ট শাসনের শেষের দিকে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও বীরভূম জেলার গ্রামাঞ্চলে  গণরোষে অনেক ডিলারের দোকান ভাঙচুর শুরু হয়; এই দুর্নীতিগ্রস্ত ডিলাররা ছিল সিপাআই (এম) মদতপুষ্ট। বামফ্রন্টের সময়ে ট্রেড ইউনিয়নের নামে মালিকের দালালি করে বহু নেতা ধনী হয়েছে। সিপিআই (এম) এর মহঃ সেলিম 'হিন্দুস্তান মোটরস' কারখানার জমি শ্রীরাম গ্রুপের কাছে সস্তায় বেচে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছে। ২০১১ সাল পর্যন্ত ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের পুরো একটা তলা নিয়ে বিনা ভাড়ায় বাস করেছেন সেলিম, বিদ্যুৎ মাশুল ছিল ফ্রী! ছবিতে বিকাশ বাবুর বজবজ জুট মিলের শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মালিক পক্ষের হয়ে নির্লজ্জ ওকালতির প্রমাণ। ২০১৫ সালে মালিকের হয়ে কেস সাজিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেন বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।



.............................................................................

মৎসজীবী, বাঁশচাষি ও বালু শ্রমিকদের কেরালার কথিত বাম সরকার শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। নির্বাচনে জিততে প্রতিটি এলাকায় ইচ্ছা করেই ঐ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্ণের লোককে প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে এই নির্বাচনপন্থীরা। এই রাজ্যে এখনো বিশাল সংখ্যক নারীকে যৌতুক দিয়ে বিয়ে করতে হয়। নারীদের সম্পত্তিতে অধিকার সংক্রান্ত বিতর্কিত খ্রিস্টীয় আইনের বিরুদ্ধে আদালত সমান অধিকারের রায় দিলেও বাস্তবায়ন হয়নি কোথাও। গির্জাগুলো এখনো নারীদের সম্পত্তিতে অধিকারের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

সূত্র: The Shape of the Beast

.........................................................................

নিচের স্ক্রিনশট দুইটা হলো সি পি আই (এম) এর স্বরূপ। গদি হারিয়ে শাসক শ্রেণীর এই দালালরা আজ যে নিষ্পাপ, জনদরদী সাজতে চাইছে তার মুখোশ উন্মোচন করা প্রয়োজন। ১৯৬৭ সালের প্রথমদিকে পশ্চিমবঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাসীন ছিল। এসময় উত্তরবঙ্গের নক্সালবাড়ি অঞ্চলে সশস্ত্র কৃষক সংগ্রামের সূত্রপাত হয়। যুক্তফ্রন্টের প্রধান শরিক সি পি আই (এম) এর বিদ্রোহী অংশ দার্জিলিং জেলা কমিটির নেতৃত্বে পরিচালিত হয় এই কৃষক সংগ্রাম। নক্সালবাড়ির সশস্ত্র কৃষক সংগ্রামের রিপোর্ট ও ঐ সংগ্রামের পরিচালক আঞ্চলিক কৃষক সভার সভাপতি জঙ্গল সাঁওতালের বিবৃতি পার্টির সাপ্তাহিক মুখপত্র দেশহিতৈষী'তে প্রকাশ করার অপরাধে সরোজ দত্ত, সুশীতল রায়চৌধুরী সহ পত্রিকাটি প্রকাশনার সাথে যুক্ত কয়েকজন বাদে প্রায় সমস্ত কর্মীরা পার্টি থেকে বিতাড়িত হয়। লেনিন সরণিতে অবস্থিত পত্রিকা অফিস গুন্ডামি করে দখলে নেয় সি পি আই (এম) এর কর্মীরা।



.......................................................................................

'কমিউনিস্ট' নামধারী এসব সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের ব্যাপারে স্তালিন বলতেন- 

"ফ্যাসিবাদের বিপরীত মেরু নয়, আসলে যমজ।" 

"বস্তুত ফ্যাসিবাদের এক মনোনীত শাখা।" 

"একই বৃন্তে দুটি মটরশুঁটির দানার মতো সম্পর্ক।"

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

চাড্ডিগণ [এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]