ফেসবুক বিপ্লবীদের উৎসের সন্ধানে [পর্ব-এক]

 


১৮৭৯ সালে সচ্ছল কৃষক পরিবারে ট্রটস্কির জন্ম হয়েছিল। তার পরিবার কাজের জন্য মজুর ভাড়া করতো এবং তাদের খুবই কম মজুরী দিতো। মজুরদের খাদ্যের অবস্থা এতই করুণ ছিল যে, এক গ্রীষ্মে তারা সকলে অপুষ্টির কারণে রাতকানা-মহামারীতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। গৃহযুদ্ধ তীব্র হয়ে উঠলে তার পরিবার এতই সমৃদ্ধশালী হয়ে ওঠে যে, কমিউনিস্টরা তাদের কাছে ছিল উপদ্রবস্বরূপ। তার বাবা মস্কোর কাছে এক বছরের মতো একটি রাষ্ট্রীয় মিল পরিচালনা করেছিলেন। স্কুলের পাঠ শেষ করে ট্রটস্কি ছাত্র এবং বুদ্ধিজীবীদের বিপ্লবী চক্রে যোগদান করেন। এই চক্রগুলোর কাজ সীমাবদ্ধ ছিল অন্তহীন আলোচনার মধ্যে। শ্রমিক শ্রেণিকে প্রকৃতভাবে সংগঠিত করা এবং পীড়ক রাষ্ট্রকে গুঁড়িয়ে দেয়ার জন্য গুপ্ত সংগঠন গড়ে তুলবার কোনও উদ্যোগই ছিল না। বর্তমানের ট্রটস্কিপন্থীদের কোনও গ্রুপ এই লাইনকে অতিক্রম করে না। প্রতিষ্ঠিত শিক্ষক, ছাত্র, ব্যাংক ম্যানেজার ও অন্যান্য পেটি-বুর্জোয়া উপাদানে গঠিত ট্রটস্কিপন্থীদের অসংখ্য গলাবাজির গ্রূপ আছে; দুঃখের বিষয় অনেক জায়গায় শ্রমিকরাও ট্রটস্কিদের ফাঁদে পা দিয়েছেকিন্তু কোথাও ট্রটস্কিপন্থীরা প্রলেতারিয়েতদের সেই স্তরে সংগঠিত করতে পারেনি যে স্তরে তাদের সামরিক কাজের সাথে যুক্ত গুপ্ত সংগঠন আছে। বিপ্লবী সংগঠন ছাত্রদের আলোচনা চক্র থেকে শুরু হতে পারে এবং প্রকাশ্যে শ্রমিকদের মিছিল সংগঠিত করতে পারে, কিন্তু এগুলো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত করার পক্ষে যথেষ্ট নয় এবং সংশোধনবাদী উপাদানগুলোর দ্বারা এসবের নকল হতে পারে যারা বুর্জোয়াদের জন্য কাজ করে শ্রমিক শ্রেণিকে প্রতারণা করার মধ্য দিয়ে। ট্রটস্কিপন্থীদের যেসব সংগঠনগুলো বিভিন্ন দেশে দশকের পর দশক ধরে টিকে আছে, যেখানে প্রলেতারিয়েতদের উল্লেখযোগ্য অংশ চরম অত্যাচারের মুখোমুখি হচ্ছে; অথচ তারা গুপ্ত কাজকর্ম শুরু করেনি যা বুর্জোয়া রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করবে। তারা এই অজুহাত দেয় যে, ঐ সব দেশের পরিস্থিতি এখনও এই ধরনের কাজকর্মের জন্য পরিপক্ক হয়নি বাস্তবে সেসব দেশের পরিস্থিতি সোভিয়েত ও চীনের কমিউনিস্টরা তাদের বিপ্লবী কাজকর্মের পথে যেসব পাহাড় সম বাধার মোকাবিলা করেছেন, তার তুলনায় অনেক বেশি অনুকূল।  

নিকোলায়েভের বিপ্লবী চক্রগুলো (ট্রটস্কি যুক্ত ছিলেন) শ্রমিকদের ধর্মঘট এবং প্রদর্শন থেকে শিক্ষা লাভ করে তৎক্ষণাৎ শ্রমিকদের প্রকৃতভাবে সংগঠিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ঐ অঞ্চলের পুলিশের অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে ১৮৯৮ সালে তাদের গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই শ্রমিকদের মধ্যে তাদের সংগঠন এতটাই ব্যাপ্তি লাভ করেছিল যে, অন্যান্য কমিউনিস্টরা সেই দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়। পরবর্তীকালে ট্রটস্কি সাইবেরিয়াতে নির্বাসিত হন। ১৯০২ সালে তিনি মুক্তি পান এবং লন্ডনে লেনিনের সাথে তার প্রথমবার সাক্ষাৎ হয়। নির্বাসনে থাকাকালীন ট্রটস্কি RSDLP-র মধ্যকার মতপার্থক্যের ব্যাপারে জানতে পারেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Russian_Social_Democratic_Labour_Party

সেসময় লেনিন RSDLP-র একটি ঝোঁক অর্থনীতিবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে ব্যস্ত ছিলেন। অর্থনীতিবাদীরা মনে করতো শ্রমিকরা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক দাবিদাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে এবং স্বাধীন বুর্জোয়াদের সমর্থন করবে, যারা রাজনৈতিক লড়াই লড়বে। তারা লেনিনের কেন্দ্রীভূত প্রলেতারিয় পার্টি গঠন করার পরিকল্পনার বিরোধী ছিলেন। এই ইস্যুতে লেনিনের সমর্থকরা একটি সারা রাশিয়া ব্যাপী রাজনৈতিক সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করলেন যা অর্থনীতিবাদীদের প্রতিহত করবে। তারা পরিকল্পনা করলেন এটিকে বিদেশে ছাপানোর এবং গোপনে রাশিয়ায় ছড়িয়ে দেয়ার। ১৯০০ সালের ডিসেম্বরে এটি প্রথম প্রকাশিত হয়। এর নাম রাখা হয় ইস্ক্রা (স্ফুলিঙ্গ)। ট্রটস্কি অর্থনীতিবাদীদের বিরুদ্ধে ইস্ক্রাপন্থীদের পক্ষ নিলেন। ১৯০৩ সালে RSDLP-র দ্বিতীয় সম্মেলনে লেনিন এবং মারতভের অনুগামীদের মধ্যে পার্টি সংগঠনকে কেন্দ্র করে বিভাজন পরিলক্ষিত হয়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Julius_Martov

এসময় ট্রটস্কি প্রথম লেনিনের বিরোধিতা করেন। লেনিন এবং মারতভ দু'জনে এই বিষয়ে সহমত হয়েছিলেন যে, একজন পার্টি সদস্যকে অবশ্যই পার্টির কর্মসূচীকে গ্রহণ করতে হবে এবং পার্টিকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে হবে। লেনিন জোর দিয়ে বললেন একজন পার্টি সদস্যকে, পার্টির কোনও না কোনও সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতে হবে। লক্ষ্য ছিল একটি প্রোলেতারিয় অগ্রবাহিনি গঠন করা যেন এর দ্বারা সদস্যরা পার্টি শৃঙ্খলার সামনে নিজেদের সমর্পণ করে। মারতভ এটিকে আবশ্যিক মানতে রাজি হলেন না, কারণ তিনি পার্টি সংগঠনের কোনও নির্দিষ্ট আকারের পক্ষে ছিলেন নাসম্মেলনে লেনিনের অনুগামীরা অধিকাংশের ভোট পেলেন এবং নাম পেলেন 'বলশেভিক' (большинство - সংখ্যাগুরু) এবং মারতভরা নাম পেলেন 'মেনশেভিক' (Меньшинство - সংখ্যালঘু)। ট্রটস্কি সম্মেলনে তার রিপোর্টে মারতভের পার্টি সংক্রান্ত সূত্রকে সমর্থন করলেন এবং লেনিনকে 'পার্টির মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী', 'পার্টির প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর' নেতা বলে অভিযুক্ত করলেন ও তাকে সংশোধনবাদী বার্নস্তাইনের সাথে তুলনা করলেন!

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Eduard_Bernstein

পরবর্তী বছরগুলো ছিল রুশ-জাপান যুদ্ধের এবং ১৯০৫ সালের বিপ্লবের উত্থান ও পতনকে লেনিন আখ্যায়িত করেন অক্টোবর বিপ্লবের 'পূর্ণ সজ্জিত মহল' বলে। ইতিমধ্যে প্লেখানভ মেনশেভিকদের দিকে আসায় বলশেভিকরা ইস্ক্রার উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Georgi_Plekhanov

বলশেভিকরা জাপানের হাতে রাশিয়ার পরাজয়কে বিপ্লব সংঘটিত করার সুযোগ বলে বিবেচনা করলো। একে বলা হয় 'বৈপ্লবিক পরাজয়বাদ' যখন নিজের দেশের শাসক শ্রেণীর বিদেশীর হাতে পরাজয়কে স্বাগত জানানো হয়, যাতে বিপ্লবের শক্তিগুলো দুর্বল শাসক শ্রেণীকে পরাজিত করতে পারে। অপরদিকে মেনশেভিকরা সামন্ত প্রভু এবং পুঁজিপতিদের পিতৃভূমিকে রক্ষার অবস্থানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। বিপ্লবের সময় ট্রটস্কি সেন্ট পিটারসবার্গের সোভিয়েতের প্রথমে ভাইস চেয়ারম্যান এবং তারপর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এসময় আলেকজান্ডার পারভাস এবং ট্রটস্কি একটি তত্ত্ব প্রস্তুত করেন যাকে তারা নাম দিলেন 'চিরস্থায়ী বিপ্লব' এর তত্ত্ব।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Alexander_Parvus

পরবর্তীতে আলেকজান্ডার পারভাস আন্তর্জাতিকতাবাদকে পরিত্যাগ করেন এবং শেষের দিকে সমাজ-দেশপ্রেমিতে পরিণত হন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Social_patriotism#:~:text=Social%20patriotism%20is%20an%20openly,socialist%20internationalism%20and%20worker%20solidarity.

'চিরস্থায়ী বিপ্লব' কথাটি ১৮৫০ সালে 'Address of the Central Committee to the Communist League' শিরোনামের দলিলে মার্কস এবং এঙ্গেলস প্রথম ব্যবহার করেন।

https://www.marxists.org/archive/marx/works/1847/communist-league/1850-ad1.htm

'চিরস্থায়ী বিপ্লব' বলতে মার্কস এবং এঙ্গেলস আসলে যা বুঝিয়েছেন তা হলো, বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরে বিপ্লবকে শেষ করার বদলে শ্রমিক শ্রেণী বিপ্লব চালিয়ে যাবে সমাজতান্ত্রিক স্তর পর্যন্ত। মার্কস এবং এঙ্গেলসের যুক্তিযুক্ত প্রোগ্রামের সাথে ট্রটস্কির তত্ত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। পরবর্তীতে ট্রটস্কি তার 'চিরস্থায়ী বিপ্লব' তত্ত্বে লেনিনবাদের কিছু উপাদান অন্তর্ভুক্ত করেন এবং সেটিকে নিজের বলে দাবি করেন কিন্তু শুরুতে তার তত্ত্ব কৃষকদের গুরুত্ব দেয়নি এবং রাশিয়ায় শ্রমিক শ্রেণীকেই একমাত্র বিপ্লবী শক্তি হিসাবে দেখেছিলেন তিনি তাছাড়া রয়েছে তার এক ধাপে সমাজতন্ত্রের তত্ত্ব এবং একটি দেশে সমাজতন্ত্রের অসম্ভাব্যতার তত্ত্ব। প্রলেতারিয়েতের কৃষকদের সাথে জোটের ধারণাটি লেনিনের। ট্রটস্কি এই জোটের উল্লেখ শুধু তার শেষের দিকের কাজে করেছেন। ১৯০৯ সালে তিনি সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট প্রলেতারিয়েত এবং কৃষকদের মধ্যে অনিবার্য সংঘর্ষের পূর্বাভাস করেছিলেন-

"এই সংঘর্ষের সমাপ্তি ঘটতে পারে হয় কৃষক পার্টির দ্বারা শ্রমিকদের দমনের মধ্য দিয়ে অথবা সেই পার্টিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর মধ্য দিয়ে।"

এটি লেনিনের চিরস্থায়ী বিপ্লবের মার্কসবাদী তত্ত্বের বিকাশের বিরোধী। লেনিনীয় মডেল অনুযায়ী-

প্রলেতারিয়েত এবং কৃষকের গণতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লবের স্তরেও ক্ষমতা দখল করে এবং তাকে সমাজতান্ত্রিক স্তর পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যায়, যেখানে প্রধানত আধা-প্রলেতারিয়েত বা দরিদ্র কৃষকদের সমর্থনে প্রলেতারিয়েত একনায়কতন্ত্র রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে।

১৯১৯ সালে লেনিনের RCP(B)-র খসড়া প্রোগ্রামে বলা হয়-

"১৯১৭ সালের ২৫ অক্টোবরের (৭ নভেম্বর) বিপ্লব রাশিয়া প্রলেতারিয় একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে, যেটি দরিদ্র কৃষক বা আধা প্রলেতারিয়েতদের সমর্থনে কমিউনিস্ট সমাজের ভিত্তিপ্রস্তর পত্তনের কাজ শুরু করেছে।"

ঐ বছর লেনিন আরও বলেন-

"প্রলেতারিয় একনায়কতন্ত্র শ্রেণী সংগ্রামের সমাপ্তি নয়, বরঞ্চ নতুন আঙ্গিকে তার চলমানতা। প্রলেতারিয় একনায়কতন্ত্র হলো সেই শ্রেণী সংগ্রাম যা জারি করা হয়েছে সেই প্রলেতারিয়েতদের দ্বারা, যারা বুর্জোয়াদের বিরুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে; কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বুর্জোয়ারা উবে গেছে বা প্রতিরোধ দেয়ার জন্য তাদের আর অস্তিত্ব নেই; উল্টো সেই প্রতিরোধ আরও তীব্র হয়েছে। প্রলেতারিয় একনায়কতন্ত্র হলো শ্রমিক শ্রেণীর অগ্রবাহিনী এবং শ্রমজীবী মানুষের অসংখ্য অ-প্রলেতারিয়েত বর্গ (পেটি-বুর্জোয়া, ছোট মালিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী প্রভৃতি) বা এই বর্গের অধিকাংশের একটি জোট, যাদের লক্ষ্য হলো সমাজতন্ত্রের সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠা ও সংহতকরণের লক্ষ্যে পুঁজির সম্পূর্ণ উচ্ছেদ সাধন, বুর্জোয়াদের প্রতিরোধের সম্পূর্ণ দমন; সাথে সাথে বুর্জোয়াদের পুনর্বহালের প্রচেষ্টার সম্পূর্ণ দমন।"

মার্কসের চিরস্থায়ী বিপ্লবের লেনিনীয় বিকাশ এটি নির্দিষ্ট করে বলে যে, এক স্তর থেকে অন্য স্তরে বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রলেতারিয়েত অবশ্যই বৈপ্লবিক শ্রেণী জোটে যাবে।

১৯০৬ সালে ট্রটস্কি 'Our Revolution' এ লিখলেন-

"ইউরোপীয় প্রলেতারিয়েতদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ব্যতিরেকে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণী নিজেকে ক্ষমতায় ধরে রাখতে পারবে না এবং তার অস্থায়ী শাসনকে একটি টেকসই সমাজতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্রে উন্নীত করতে পারবে না। এই সত্যকে কোনওভাবেই আমরা সন্দেহ করতে পারি না এবং বুর্জোয়া বিপ্লবের ঘটনার তালগোলের ফলে যদি রাশিয়ার প্রলেতারিয়েত নিজেকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে পারে, সে সম্মুখীন হবে বিশ্ব প্রতিক্রিয়ার একটি সংগঠিত প্রতিরোধের এবং অপরদিকে বিশ্ব প্রলেতারিয়েতের তরফ থেকে পাবে সংগঠিত সমর্থনের একটি স্বতঃস্ফূর্ত আগ্রহ। শুধুমাত্র নিজের সম্পদের নিরিখে, যে মুহূর্তে কৃষকরা তার পাশ থেকে সরে যাবে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণী অনিবার্যভাবে প্রতিক্রিয়ার বিপ্লবের দ্বারা চূর্ণ হয়ে যাবে। নিজের রাজনৈতিক শাসনের ভাগ্যকে, সমগ্র রাশিয়ার বিপ্লবের ভাগ্যকে, ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ভাগ্যের সাথে জোড়া ছাড়া তার কাছে আর কোনও বিকল্প থাকবে না।"

ট্রটস্কি আরও বললেন, ইউরোপের আরও অগ্রসর দেশগুলোতে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ব্যতিত রাশিয়াতে সমাজতন্ত্র টিকতে পারবে না। পরবর্তীতে তিনি তার এই দাবিকে বারবার ব্যবহার করেছেন লেনিনের এক দেশে সমাজতন্ত্রের ধারণাকে আক্রমণ করার উদ্দেশ্যে। লেনিনবাদ অনুযায়ী, পুঁজিবাদের ফলে সৃষ্টি হয় অসম রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক বিকাশ এবং যার ফলে প্রথমে একটি দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯১৫ সালে লেনিন লিখলেন-

"পুঁজিবাদের একটি চরম নিয়ম হলো অসম অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিকাশ। এই কারণে এক বা একাধিক পুঁজিবাদী দেশে সমাজতন্ত্রের বিজয় সম্ভব হয়। পুঁজিপতিদের ক্ষমতাচ্যুত ও নিজেদের সমাজতান্ত্রিক উৎপাদনকে সংগঠিত করে সেই দেশের বিজয়ী প্রলেতারিয়েত বিশ্বের অবশিষ্ট পুঁজিবাদী দেশগুলোর বিরুদ্ধে উঠে দাঁড়ায় এবং অন্যান্য দেশের নিপীড়িত শ্রেণীগুলোকে আকর্ষিত করে ও সেসব দেশে পুঁজিপতিদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থানকে জাগ্রত করে এবং প্রয়োজনে সশস্ত্র বাহিনীকে সেই দেশের নিপীড়ক শ্রেণীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।"

যদি কোনো দেশের প্রলেতারিয়েত তার দেশের বুর্জোয়াদের ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করতে সফল হয়, যখন অন্যান্য দেশগুলোতে সেই ধরনের বিপ্লবী শক্তি বিকশিত হয়নি বা বুর্জোয়ারা বিপ্লবকে দমন করতে সফল হয়েছে তখন ট্রটস্কির তত্ত্ব আন্তর্জাতিক প্রলেতারিয়েতের বিজয়ী অংশের জন্য শুধুই পরাজয়ের পূর্বাভাস দেয় এবং প্রলেতারিয়েতকে হতদ্যম ও বিপথু করে। এই পরিস্থিতিতে লেনিনবাদ আমাদের সমাধানটি দেয় - যদি বিকশিত দেশে বিপ্লব ব্যর্থ হয় তখন প্রলেতারিয়েত, কৃষকদের সাথে তার জোটকে মজবুত করবে এবং একটি দেশে সমাজতন্ত্র নির্মাণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে। ১৯২১ সালে RCP(B)-র দশম সম্মেলনে লেনিনের একটি দলিলে বলা হয়েছে-

"এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই যে, একটি দেশ, যেখানে জনগণের একটি বিপুল অংশ ক্ষুদ্র কৃষি উৎপাদক, সেখানে একটি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব একমাত্র এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে একটি সর্বাত্মক ও বিশেষ উদ্বর্তনকালীন পদক্ষেপ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে, যেটি আবার চূড়ান্তভাবে বিকশিত পুঁজিবাদী দেশগুলোতে, যেখানে জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই শিল্পের বা কৃষির মজুরী-শ্রমিক, সেখানে অবান্তর হিসাবে বিবেচিত হবে। পূর্ণ বিকশিত পুঁজিবাদী দেশগুলোর একটি বহু দশক ধরে বিকশিত কৃষি-শ্রমিক রয়েছে। একমাত্র এই শ্রেণীই সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে সমাজতন্ত্রে উদ্বর্তনকে সহায়তা করতে পারে। একমাত্র সেই দেশগুলো, যেখানে এই শ্রেণীটি যথেষ্টভাবে বিকশিত হয়েছে, সেখানেই, দেশ ভেদে উদ্বর্তন প্রক্রিয়া ব্যতিতই, পুঁজিবাদ থেকে সমাজতন্ত্রে সরাসরিভাবে যাওয়া সম্ভব। আমরা অজস্র লেখাপত্রে, জনসভায় এবং আমাদের সংবাদপত্রে দেয়া সমস্ত বিবৃতিতে একথা জোর দিয়ে বলেছি যে, রাশিয়াতে এই পরিস্থিতি নেই। এখানে শিল্প-শ্রমিকরা সংখ্যালঘু এবং ছোট কৃষকই হলো বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এইরকম একটি দেশে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব বিজয়ী হতে পারে একমাত্র দু'টি শর্তের যেকোনো একটির পূরণের দ্বারা। প্রথমত, যদি এক বা একাধিক উন্নত ধনতান্ত্রিক দেশ একে যথাসময়ে সমর্থন দেয়। আপনারা একথা জানেন, আমরা অতীতের তুলনায় এই শর্ত পূরণ করার অনেক বেশি চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাকে বাস্তবায়িত করার কাছাকাছিও যেতে পারিনি। দ্বিতীয় শর্তটি হলো, একনায়কতন্ত্র প্রয়োগ করছে যে প্রলেতারিয়েত শ্রেণী অর্থাৎ রাষ্ট্র ক্ষমতা যে ধারণ করছে তার সাথে, কৃষিজীবী জনতার অধিকাংশের একটি জোট।"

লেনিন আরও বলেন-

"আমরা জানি যে, যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য দেশে বিপ্লব সংঘটিত না হচ্ছে, কৃষকদের সাথে এই মৈত্রীই রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে রক্ষা করতে পারে।"

এটি আরও উল্লেখ করে বিকশিত ধনতান্ত্রিক দেশগুলো ব্যতিত বিশেষ উদ্বর্তনকালীন পদক্ষেপের যা ট্রটস্কির এক লাফে সমাজতন্ত্রের যে কল্পনা, তাকে বাতিল করে। ১৯১১ সালে লেনিন লিখলেন-

"প্লেনারি সভার দ্বারা নিযুক্ত স্কুল কমিশনের নির্দিষ্ট নির্দেশ, কোনও পার্টি বক্তা স্ফিরদ ফ্যাকশনাল গোষ্ঠীতে যাবে না - এর সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাচরণ করে বিশ্বাসঘাতক ট্রটস্কি সেখানে যায় এবং তাদের সাথে একটি সম্মেলনের পরিকল্পনার ব্যাপারে আলোচনা করে। এই পরিকল্পনাটি বর্তমানে স্ফিরদ গ্রুপ একটি লিফলেটের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করেছে। এবং এই হলো সেই বিশ্বাসঘাতক, যে নিজের বুক বাজিয়ে গর্বের সাথে পার্টির প্রতি তার আনুগত্যকে প্রকাশ করে দাবি করছে যে, তিনি স্ফিরদ এবং বিলোপকারীদের সামনে নত হননি। এটাই হলো বিশ্বাসঘাতকের নির্লজ্জতা। এবং এই ঘটনাকে ট্রটস্কির মতো লোকেদের কাজকর্মের সাথে তুলনা করুন, যে সহমত এবং বিলোপকারিদের বিরুদ্ধে তাদের বৈরিতা নিয়ে চিৎকার করে। আমরা এইসব কাজকর্মগুলোকে ভালোমতোই চিনি; এই লোকগুলো সপ্তম সুরে চিৎকার করে বলে যে তারা বলশেভিকও না, মেনশেভিকও না, তারা আসলে সমাজ-গণতন্ত্রী; তারা হিংসুটের মতো শপথ করে ও দিব্যি কেটে বলে যে তারা বিলোপবাদের শত্রু এবং বেআইনি RSDLP-র সমর্থক; তারা, পোত্রেসভরা, গলাবাজি করে অপদস্ত করে তাদের, যারা বিলোপবাদীদের মুখোশ খুলে দেয়; তারা বলে যে, বিলোপবাদ বিরোধীরা বিষয়টিকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে; কিন্তু পোত্রেসভ, মারতভ, লেভিটস্কি, দন লারিন প্রভৃতি নির্দিষ্ট বিলোপবাদীদের বিরুদ্ধে কোনও ট্যাঁ-ফোঁ করে না। এবং অতএব এটি স্পষ্ট যে ট্রটস্কি এবং তার মতো ট্রটস্কিবাদী ও মীমাংসাকারীরা যেকোনো বিলোপবাদীদের চেয়ে বেশি অনিষ্টকারী; গোঁড়া বিলোপবাদীরা তাদের মতামত সরলভাবে রাখে এবং শ্রমিকদের পক্ষে তারা ভুল কিনা, সেটা নির্ধারণ করা সহজ হয়। অপরদিকে, ট্রটস্কিরা শ্রমিকদের ধোঁকা দেয়, শয়তানিটাকে লুকিয়ে রাখে এবং ফলে তাদের বদমায়েশিটাকে প্রকাশ করা ও তার উপশম করাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। যিনিই ট্রটস্কির ছোট্ট গ্রুপকে সমর্থন করেন, তারা আসলে সমর্থন করেন শ্রমিকদের প্রতারণার এবং বিলপবাদীদের আড়াল করার পলিসিকে। রাশিয়াতে পোত্রোসভ এবং কোম্পানির পূর্ণ স্বাধীনতা এবং তাদের কাজকর্মকে বিদেশ থেকে বিপ্লবী বুকনিবাজি দিয়ে আড়াল করা - এটিই হলো ট্রটস্কিবাদের সারৎসার।" 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Yuri_Larin

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Alexander_Potresov

পরবর্তীতে ট্রটস্কি এটা দাবি করবার চেষ্টা করেন যে, ট্রটস্কিবাদ হলো একটি নিন্দাজনক তকমা যেটা স্তালিনবাদীরা আবিষ্কার করেছেন এটা দেখাতে যে, ট্রটস্কির চিন্তাধারা লেনিন থেকে আলাদা। তার অনুগামীরা নিজেদের বলশেভিক-লেনিনবাদী বলতেন। কিন্তু 'ট্রটস্কিপন্থী' তকমাটি লেনিন ট্রটস্কির বিরুদ্ধে সংগ্রামের গোড়াতেই ব্যবহার করেছিলেন। ১৯১৪ সালে লেনিন লিখেন-

"কিন্তু পরিহাস বাদ দিয়ে (যদিও ট্রটস্কির অসহ্য কোটেশনবাজির হালকা অথচ বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর করার একমাত্র পথ হলো পরিহাস করা) 'ট্রটস্কিবাদ' এর সামনে 'আত্মহত্যা'ও একটি ফাঁকা বুলি।"

১৯১৩ সালের এপ্রিল মাসে ট্রটস্কি জর্জিয় মেনশেভিক নিকলাইকে চিঠিতে বলেন-

"বর্তমান সময়ে লেনিনবাদের সম্পূর্ণ ধাঁচাটিই গড়ে উঠেছে মিথ্যা এবং ভ্রান্ত্রির উপর এবং সেটি নিজের মধ্যেই নিজের ধ্বংসের বিষাক্ত উপাদানাগুলোকে লালন করে চলেছে।"

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Nikolay_Chkheidze

তিনি আরও লেখেন-

"লেনিনের পরিকল্পিতভাবে উস্কে দেয়া শোচনীয় কলতলার ঝগড়া, যেটা আদপে একটা পুরানো মাতব্বরি, যে রাশিয়ার শ্রমিক শ্রেণির আন্দোলনের যা কিছু পিছিয়ে পড়া তার এক পেশাদার শোষক, এটাকে একটা বুদ্ধিহীন আবেশ বলে মনে হয়।"

এই চিঠিটি ১৯২১ সালে রাশিয়ার পুলিশের মহাফেজখানায় পাওয়া যায়। পার্টির ইতিহাসের কমিশনের সভাপতি ওলমিনস্কি যখন তার কাছে এটি প্রকাশ করা হবে কিনা জানতে চান, তখন 'The Stalin School of Falsification' এর ভবিষ্যৎ লেখক উত্তর দেন-

"আজকের পাঠকরা এটি বুঝতে পারবে না, ইতিহাসের জরুরী সংশোধনকে প্রয়োগ করতে পারবে না এবং খামোখা গুলিয়ে ফেলবে।"

তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেন-

"এই সময়ে লেনিনের বিরুদ্ধে আমার চখিইতজে-কে লেখা চিঠিটি প্রকাশিত হয়। এই ঘটনা ১৯১৩ সালের এপ্রিল মাসের। তখন সেন্ট পিটারসবার্গ থেকে প্রকাশিত বলশেভিকদের সরকারি সংবাদপত্র, আমার ভিয়েনা থেকে প্রকাশিত Pravda - a Labor Paper নামটা দখল করে নেয়। এর থেকেই একটা তীব্র বিরোধ সৃষ্টি হয়, যেটা প্রবাসী জীবনের খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। চখিইতজে-কে লেখা একটি চিঠিতে, যিনি সেসময় বলশেভিক এবং মেনশেভিকদের মাঝে অবস্থান করছিলেন, আমি বলশেভিক কেন্দ্র এবং লেনিনের উপর আমার রাগ উজাড় করে দেই।"

১৯১৭ সাল পর্যন্ত ট্রটস্কি একবার এই গ্রুপ, আরেকবার ঐ গ্রুপে ঘুরে বেড়িয়েছেন। লেনিন এ বিষয়ে বলেন-

"রাশিয়ার মার্কসবাদী আন্দোলনের পুরানো কর্মীরা ট্রটস্কিকে ভালোভাবেই চেনেন এবং তাদের উপকারের জন্য তাকে নিয়ে আলোচনা নিরর্থক। কিন্তু শ্রমিকদের নবীন প্রজন্ম তাকে চেনে না এবং অতএব তাকে আলোচনায় আনাটা জরুরী, কারণ প্রবাসী পাঁচটি গ্রুপের মধ্যে বিশিষ্ট, যেগুলো বাস্তবে বিলোপবাদী এবং পার্টির মধ্যে দোদুল্যমান……এই 'যদু-মধু'রা একটি দাবিই করতে পারে যে, তারা সমস্ত গ্রুপের বাইরে; কারণ তারা আজ এক গ্রুপ থেকে তাদের চিন্তাধারা ধার করে তো কাল আরেক গ্রুপের থেকে ধার করে।"

ট্রটস্কি ১৯০১-১৯০৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন গোঁড়া ইস্ক্রাপন্থী এবং রিয়াজানভ ১৯০৩ সালে তার ভূমিকা সম্পর্কে বলেছিলেন 'লেনিনের মুগুর'।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/David_Riazanov

১৯০৩ সালের শেষে ট্রটস্কি হয়ে গেলেন গোঁড়া মেনশেভিক, তখন তিনি ইস্ক্রাপন্থীদের ত্যাগ করে অর্থনীতিবাদী হয়ে গেলেন। তিনি বলেন-

"পুরানো এবং নতুন ইস্ক্রার মধ্যে আছে সাগরের ব্যবধান।"

১৯০৪-১৯০৫ সালে তিনি মেনশেভিকদের ত্যাগ করেন সেসময় তিনি মারতিনভ এর সাথে সহযোগিতা করেন এবং 'চিরস্থায়ী বিপ্লব' তত্ত্ব ঘোষণা করেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Aleksandr_Martynov_(Russian_politician)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Permanent_revolution

১৯০৬-১৯০৭ সালে তিনি বলশেভিকদের কাছে আসেন এবং ১৯০৭ সালের বসন্তকালে তিনি দাবি করেন যে, তিনি রোজা লুক্সেমবামর্গের সাথে ঐক্যমত্য হয়েছেন। 'অ-গোষ্ঠীবাজি' দোদুল্যমানতার সময় তিনি আবার দক্ষিণ দিকে হেলে যান এবং ১৯১২ সালের অগাস্ট মাসে বিলোপবাদীদের সাথে ব্লক গঠন করেন। পরে তিনি সেটিও ত্যাগ করেন।  

তিনি যখন সবেমাত্র বলশেভিকদের সাথে যোগ দিয়েছেন, সেসময় তিনি প্রলেতারিয় শৃঙ্খলা এবং পার্টি সংগঠনকে চালানোর পদ্ধতি সম্পর্কে একেবারেই অনভিজ্ঞ ছিলেন। অভিজ্ঞ কমিউনিস্টদের যেমন স্তালিনের উপর দায়িত্ব ছিল সাংগঠনিক যোগাযোগ রক্ষার এবং তারা সারা রাশিয়া জুড়ে সেই কাজ বিপ্লবের অনেক আগে থেকেই নিরলসভাবে করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ট্রটস্কিকে সেসময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলে মনে হতো তাদের কাছে, যারা ছিলের পার্টির বাইরের দরদী এবং পার্টির কাজকর্মের বিষয়ে সম্যকভাবে অনবহিত। এই কারণেই 'দুনিয়া কাঁপানো দশ দিন' এ জন রীড বারবার ট্রটস্কির নাম উল্লেখ করেছেন এবং এরকম মনে হয়েছে যে, বলশেভিকদের পদাধিকারের ক্ষেত্রে ট্রটস্কি হলেন দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।

https://grontho.net/%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8B-%E0%A6%A6%E0%A6%B6-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8/

লেনিন ১৯১৭ সালের গোড়াতেও ট্রটস্কিকে নিবেদিতপ্রাণ কমিউনিস্ট বলে মনে করতেন না। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি এবং মার্চ মাসে লেনিন আলেকজান্দ্রা কল্লোনতাইকে লেখা চিঠিতে ট্রটস্কিকে 'শুয়োর' এবং 'দলবদলকারী' বলে উল্লেখ করেছেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Alexandra_Kollontai

১৯১৭ সালের এপ্রিলে ফিরে এসে লেনিন পেশ করলেন 'এপ্রিল থিসিস'। এটি প্রস্তাব করলো পার্টির নাম কমিউনিস্ট পার্টি হিসাবে পরিবর্তিত করতে হবে, কারণ সংশোধনবাদীরা নিজেদের সমাজ-গণতন্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিচ্ছে এবং বুর্জোয়াদের সাথে সহযোগিতা করে এই নামকে কালিমালিপ্ত করেছে। লেনিনের রূপরেখা অনুযায়ী পার্টি কাজকর্মে গতি আনলো এবং জনগণের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করলো। ফেব্রুয়ারি বিপ্লবের পর তারা সরকারিভাবে আইনি সংগঠনের স্বীকৃতি পেলেও এখন তাদের সম্মেলনকে গোপনে সংঘটিত করতে হবে। লেনিন ফিনল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।

Comments

Popular posts from this blog

লাল ফৌজ কর্তৃক ধর্ষণের মিথ্যাচারের জবাব

ট্রটস্কির মিথ্যা এবং সেগুলোর অর্থ কী - গ্রোভার ফুর

সোভিয়েত ইউনিয়ন