কংগ্রেসনামা

 

নেরুদার স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে দরিদ্র ভারতে নেহরুর বোনের গা ভর্তি দামি গয়নার কথা। এছাড়া জমিদার মতিলাল নেহরুর বুর্জোয়া দৃষ্টিভঙ্গি পুত্রের মধ্যে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়ার কথাও আছে বইটিতে। নেহরুর লেনিন শান্তি পুরস্কার পাওয়ার অযোগ্যতা নেরুদা তার এই বইটিতে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।

এবার তার কন্যার কিছু কীর্তি দেখা যাক-

সিকিম: সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে এই ধুয়া তুলে সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে নরবাহাদুর ভান্ডারীকে সরানো হয় এবং নতুন মুখ্যমন্ত্রী ভীম বাহাদুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হলে প্রেসিডেন্টের শাসন জারী করে সেখানে কংগ্রেস সরকার।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Nar_Bahadur_Bhandari

https://en.m.wikipedia.org/wiki/B._B._Gurung#:~:text=Bhim%20Bahadur%20Gurung%20(11%20October,in%20the%20history%20of%20Sikkim.

কাশ্মীর: জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ফারুকের দলের ১২ জন সদস্যকে দলছুট করিয়ে ফারুক আব্দুল্লাহকে বরখাস্ত করা হয় এবং তার বোনের জামাই জি এম শাহকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। আর দলছুট ১২ বেঈমানকে মন্ত্রী বানিয়ে দেয় কংগ্রেস। ফারুককে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়নি।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Farooq_Abdullah

ইন্দিরার পদলেহী শাহকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এক মাসের মধ্যে যেকোনো উপায়ে হোক মেজরিটি তৈরী করতে। এজন্য বি. কে. নেহরুকে সরিয়ে জগমোহনকে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজ্যপাল করা হয়।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Braj_Kumar_Nehru

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Jagmohan

অন্ধ্র প্রদেশ: অন্ধ্র প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন. টি. রামা রাও যুক্তরাষ্ট্র থেকে হার্টের অপারেশন শেষে দেশে ফিরে আসার পরের দিন তাকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ২৬ জন মারা যায়। ইন্দিরা সব দোষ রাজ্যপাল রামলালের উপর চাপানোর চেষ্টা করলে তিনি ক্ষোভে পদত্যাগ করেন। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Zail_Singh

ভাস্কর রাওকে মুখ্যমন্ত্রী বানানো হয়। রামা রাও হুইল চেয়ারে বসে ১৬৩ জন বিধায়ককে সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে হাজির হলে ইন্দিরার গোপন নির্দেশে রাষ্ট্রপতি জৈল সিং তাদের পাত্তা দেননি। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Thakur_Ram_Lal

ইন্দিরার পদলেহীরা এসব বিধায়কের প্রত্যেককে ৩০-৪০ লক্ষ রুপিতে কিনতে চেয়েছে। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/N._Bhaskara_Rao

তারা কেউই অধিবেশন ডাকার আগ পর্যন্ত নিজেদের প্রদেশে ফিরে যায়নি। তারা রামা রাও এর ষ্টুডিওতে বিছানা পেতে তার অভিনীত সিনেমা দেখে সময় কাটাতেন। ভাস্কর রাও মেজরিটি প্রমাণে ব্যর্থ হলে রামা রাও পুনরায় মুখ্যমন্ত্রী হন। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/N._T._Rama_Rao

কেরালা: ১৯৫৭ সালে কেরালায় বামপন্থীরা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর জমির সিলিং ১৫ একর নির্ধারণ করে এবং রাজ্যটিতে শিক্ষার জাতীয়করণ করে। এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয় সরকারি তহবিলে জমা দিতে হতো এবং শিক্ষকদের একই হারে বেতন দিতো রাজ্য সরকার। তৎকালীন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ইন্দিরা ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর একই পথে হাঁটার কথা ভেবে আতংকিত হয়ে পড়ে। ইন্দিরা নিজে কেরালায় গিয়ে সব প্রতিক্রিয়াশীলদের একত্র করেন, লক্ষ লক্ষ রুপী ব্যয় করে গুন্ডাদের ভাড়া করে এদের দিয়ে রাজ্যটির আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটান। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/E._M._S._Namboodiripad

কেরালার মন্ত্রিসভা এসব সন্ত্রাসীদের উপর গুলিবর্ষণ না করে পদত্যাগ করা শ্রেয় মনে করেছিল।

....................................................................................

১৯৬৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক সপ্তাহ পর ইন্দিরা গান্ধী আমেরিকা গিয়ে প্রেসিডেন্ট জনসনের সাথে 'পিএল ৪৮০' নামক সন্ধি করেন। এই সন্ধির শর্ত পালনের অংশ হিসেবে তিনি চীনের বিষোদ্গার করেন এবং ভিয়েতনামে মার্কিনিদের বর্বরতার নিন্দা থেকে বিরত থাকেন। ঐসময় বিশ্বের ২৮টি দেশ ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট সরকারকে স্বীকৃতি দিলেও ইন্দিরা তা করেননি। 

[কলকাতার ফ্রন্টিয়ার পত্রিকা, ১৯৭২ সালের ২রা ডিসেম্বর সংখ্যা]

উল্টো বেশ কিছু ভারতীয় সামরিক বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষককে পাঠিয়েছিলেন মার্কিনিদের পুতুল সরকারের রক্ষক সৈন্যদের গেরিলা ট্রেনিং দিতে। এদের মধ্যে মেজর জেনারেল উবান অন্যতম (তার লেখা 'ফ্যান্টমস অব চিটাগং' বাংলাদেশের সুশীলরা শখ করে পড়ে)। দেশপ্রেমিক রাজা ও খেমার রুজ গেরিলাদের পৃষ্ঠপোষক নরোদম সিহানুককে মার্কিনিরা তাদের দালাল জেনারেল লন নোল দ্বারা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরিয়ে দিলে মার্কিনিদের সাথে স্বার্থের কথা মাথায় রেখে তিনি সিহানুক এর নির্বাসিত সরকারকে স্বীকৃতি দেননি। ইন্দিরা কৃত্রিম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তার বাবাকে চাপ দিয়ে কেরালার নাম্বুদিরিপাদ এর বামপন্থী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। 

[রিডার্স ডাইজেস্ট এর ১৯৬৬ সালের মে সংখ্যা] 

নেহরু কর্তৃক চীন আক্রমণ করার বিরোধিতা করায় মন্ত্রী কৃষ্ণমেননকে কংগ্রেস বহিষ্কার করেছিল সেসময় (কথিত আছে, এই আক্রমণে তিনি পিতাকে উস্কে দিয়েছিলেন)। এই নেহরু মার্কিনিদের সপ্তম নৌবহরকে ভারত মহাসাগরে অবস্থানের অনুমতি দিয়েছিলেন যা ভূমধ্যসাগরের ষষ্ঠ নৌবহরের সাথে সংযোগ রক্ষা করছিল।

...........................................................................

মোসাদ প্রথম পর্যায়ে ভারতের উচ্চ পর্যায়ের ৩০ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে গুপ্তহত্যা চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়েছিল কংগ্রেস আমলে। ভারত সরকার ও ইজরায়েলের উদ্দেশ্য ছিল মাওবাদী নেতাদের হত্যা করে তাদের নেতৃত্বশূন্য করা। ইজরায়েল কংগ্রেস সরকারকে লেজার রেঞ্জ ফাইন্ডার, থার্মাল ইমেজিং ইকুপমেন্ট ও চালকবিহীন ড্রোন বিমান সরবরাহ করেছিল মাওবাদী গেরিলাদের খুন করতে। কংগ্রেসের মন্ত্রীরা সাধারণ জনতার সমর্থনে পরিচালিত এই বিপ্লবে নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের সাহায্যের যোগসূত্রতা আবিষ্কারের দাবি করে ভূমিপুত্রদের এই মহান সংগ্রামকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা চালালেও প্রমাণ দেখাতে পারেননি বিন্দুমাত্র। অথচ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নেপালের জনগণের উপর শোষণ চালিয়ে যাওয়া রাজতন্ত্রকে সমর্থন দিয়ে এসেছে কংগ্রেস!

..................................................................................

মাওবাদীদের কট্টর সমালোচক এবং তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রটিতে রীতিমতো যুদ্ধক্ষেত্রের আয়োজনে সহায়তাকারী ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা পি۔ চিদাম্বরম ছিলেন বিতর্কিত 'এনরন' এর আইনজীবী।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Enron_scandal

তিনি 'বেদান্ত' নামক বহুজাতিক খনি কোম্পানির বোর্ড অব ডিরেক্টরে ছিলেন। এই কোম্পানি উড়িষ্যার জঙ্গল ধ্বংস করার জন্য কুখ্যাত।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Vedanta_Resources

তার নানা ছিলেন ইউনাইটেড ইন্ডিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সহ প্রতিষ্ঠাতা (বাজার অর্থনীতি ঢুকানোর পুরস্কার হিসেবে ব্রিটিশ জোঁকেদের কাছ থেকে 'রাজা' উপাধি লাভ)। তার ভাই রামস্বামী চেট্টিয়ার 'ইন্ডিয়ান ব্যাংক' এর প্রতিষ্ঠাতা এবং 'ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাংক' এর সহ প্রতিষ্ঠাতা।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Indian_Bank

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Indian_Overseas_Bank

...................................................................................

কে۔ এন۔ গোবিন্দাচার্য নামের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতা ২০০৯ সালে ভারতের সাধারণ নির্বাচনের সময় মজা করে বলেছিলেন-

"কংগ্রেস এবং বিজেপি যেন একজোট হয়ে নির্বাচন করে!"

কারণ উভয় দলই দেশটিতে বাজার ব্যবস্থার সম্প্রসারণে সংস্কারবাদীদের সঙ্গে একমত ছিল।
.............................................................................

কংগ্রেসের প্রধানতম নেতা করাচিতে কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পূর্বে যত দ্রুত সম্ভব ভগৎ সিং এর ফাঁসি কার্যকর করার বিষয়ে গান্ধী তার নিজের লেখায় উল্লেখ করেছেন। এ প্রসঙ্গে গান্ধী নিজে 'তরুণ ভারতে' লিখেছেন-

“আমি হয়তো বিষয়টি নিষ্পত্তি করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে দণ্ড লঘু করার প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারতাম। কিন্তু এটি করা সম্ভব হতো না। এ ব্যাপারে কার্যসভা আমার সাথে একমত পোষণ করেছে যে সাময়িক শান্তিচুক্তির নজির হিসেবে দণ্ড লঘু করার প্রস্তাব পেশ করা সঠিক হবে না। তাই আমি বিষয়টি কেবল উল্লেখই করতে পারতাম।”

মহাত্মা গান্ধী যদি চাইতেন তাহলে দণ্ড লঘু করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে উত্থাপন করতে পারতেন। ভাইসরয় এর কাছে গান্ধী প্রার্থনা জানিয়ে বলেছিলেন-

“ছেলেগুলোকে যদি ফাঁসি দিতেই হয়, তবে তা করাচির কংগ্রেস অধিবেশনের পরে না দিয়ে পূর্বেই যেন দেয়া হয়”।

লাহোরের সর্ব ভারতীয় ভগৎ সিং, রাজগুরু ও সুখদেব স্মৃতিরক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে গান্ধীর কাছে এই তিন বীরের স্মৃতি রক্ষার্থে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনের বিষয়ে গান্ধীর সহযোগিতা কামনা করলে তিনি কমিটির সাধারণ সম্পাদককে এ বিষয়ে সহযোগিতা প্রদানের ব্যাপারে অস্বীকৃতি জানান।

[History of the National Congress]

...................................................................................

১৯৪৭ সালে অবিভক্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ভারতের ক্ষমতা হস্তান্তরকে 'স্বাধীনতার প্রহসন' হিসেবে উল্লেখ করে এবং স্লোগান দেয় "ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়, দেশকা জনতা ভুখা হ্যায়"। এজন্য তাদের 'দেশদ্রোহী' আখ্যা দিয়েছিল কংগ্রেস। 


...............................................................................

অবিভক্ত বাংলায় বহুজনবাদের সূচনা হয় যোগেন মন্ডলের হাত ধরে। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Jogendra_Nath_Mandal

https://pdfcoffee.com/qdownload/--7040-pdf-free.html

কিন্তু আদর্শটি নুইয়ে পড়ে জাতীয় কংগ্রেস এবং হিন্দু মহাসভার সুপরিকল্পিত বিরোধিতায়। জাতীয় কংগ্রেস ছিল ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বর্ণ হিন্দুদের দল আর হিন্দু মহাসভা খোলাখুলিভাবে উগ্র বর্ণ হিন্দুদের রাজনৈতিক মঞ্চ। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hindu_Mahasabha

যোগেন ছিলেন নম:শূদ্র কৃষক সন্তান। নিপীড়িত শ্রেণির হিস্যাকে সম্বল করে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু। তার দাবি ছিল নিপীড়িত দলিত শ্রেণির জন্য পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থার। আম্বেদকরের মতো তিনি পরিসংখ্যান মারফত উপলব্ধি করেছিলেন অভিন্ন নির্বাচনী ব্যবস্থায় তফশিলিদের প্রতিনিধিত্ব সম্ভব নয়। বর্ণ হিন্দুরা অভিন্নতা ও নিজেদের সকল ভারতীয়ের প্রতিনিধি দাবি করে রাজনৈতিক পরিসরকে নিজেদের কব্জায় রেখে দেবে বলে তিনি মনে করতেন। তার মতে, অভিন্ন নির্বাচনী ব্যবস্থা মানে ঘুরপথে বর্ণ হিন্দুদের আধিপত্য মেনে নেয়া। যোগেনের মনে হয়েছিল মুসলিম লীগের সঙ্গে হাত মেলালে হয়তো তফসিলিদের প্রতিনিধিত্ব রক্ষিত হবে। তিনি মুসলিম লীগকে রাজনৈতিক মিত্র হিসাবে দেখতে শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি উপলব্ধি করেন মুসলিম লিগ মোটেই খেটে খাওয়া কৃষিজীবী মুসলমানদের নয়, ভূস্বামী জমিদার মুসলমানদের দল। তিনি মনে করতেন আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে ও নৃতাত্ত্বিকভাবে বাংলার কৃষিজীবী মুসলমান আর কৃষিজীবী নম:শূদ্র একই স্তরে অবস্থান করে। তিনি বলতেন- 

"জমির আল যার সাথে আন্দোলন তার সাথে।" 

মুসলিম লীগ যোগেন মন্ডলের বেশ কিছু দাবিকে মান্যতা দেয়। তার মধ্যে অন্যতম ছিল তফশিলিদের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব। মুসলিম লিগের সঙ্গে সখ্য হিন্দু মহাসভার বর্ণবাদী রাজনীতির জন্য ছিল বিপদের কারণ। দলিত ভোটের সিংহভাগ হাতছাড়া হয়ে গেলে ক্ষমতার কুর্সি ধরে রাখা মুশকিল ছিল তাদের পক্ষে। এই লক্ষ্যে ১৯২০-৩০ এর দশকে তফশিলিদের হিন্দুকরণের রাজনীতি শুরু হয়। পঞ্চানন বর্মার নেতৃত্বে 'ক্ষাত্র আন্দোলন' দ্বারা রাজবংশীদের মাঝে ব্রাহ্মণ্যবাদী সংস্কৃতি সঞ্চালিত করে ‘হিন্দু’ বানানোর প্রক্রিয়া চলে ১৯২০-র দশকে। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Panchanan_Barma

১৯৩০ এর দশকে আসে সত্যাগ্রহের নামে ‘অচ্ছুৎ’ তফশিলিদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেয়া, ক্ষত্রিয় পরিচয় প্রদান এবং হিন্দু মহাসভার উদ্যোগে হিন্দুমেলার আয়োজন। তফশিলিদের ‘শুদ্ধিকরণের’ মাধ্যমে হিন্দু পরিচিতির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া ছিল হিন্দুমেলার উদ্দেশ্য। তফসিলিদের প্রতিনিধিত্ব ও বঞ্চনার যে প্রশ্নগুলো জোরালোভাবে উত্থাপিত হতে শুরু করে সেগুলো কিছুটা চাপা দেয়া গেলো এবং হিন্দু মহাসভা যে উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি করে সেই স্রোতে তফসিলিদের দলে টানা গেলো। ১৯৩৭ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে অভিজাত পরিবারের সরল দত্তকে যোগেন হারিয়েছিলেন দুই হাজার ভোটে। 

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%86%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A6%B8%E0%A6%AD%E0%A6%BE_%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%A8,_%E0%A7%A7%E0%A7%AF%E0%A7%A9%E0%A7%AD

এই নির্বাচনে কৃষক প্রজা পার্টির ফজলুল হকের কাছে বড়ো ব্যবধানে হারে মুসলিম লীগের নবাব বংশীয় প্রার্থী নাজিমুদ্দিন। এসময় তফসিলি মতুয়া আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন গুরুচাঁদ ঠাকুরের প্রপৌত্র প্রমথরঞ্জন ঠাকুর। 

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE_%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%98

প্রমথরঞ্জন কোনো রাজনৈতিক মিত্রের খোঁজ করেননি এবং রাজনৈতিক ব্রাহ্মণ্যবাদের স্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেননি। ফলে জাতীয় কংগ্রেস ভোট বাক্সে মতুয়া সম্প্রদায়কে ছিনতাই করে নিতে সফল হয়। বর্তমানে মতুয়া সম্প্রদায় বিজেপি'র ভোটব্যাঙ্ক। বহুজনবাদী আদর্শ বিকাশের উপযুক্ত সময় এলেও একজোট হওয়ার বদলে নমঃশুদ্র, রাজবংশী, মতুয়া তপশিলি এবং নিম্নবিত্ত কৃষিজীবী মুসলমানরা কৌমভিত্তিকভাবে বিভক্ত ছিল। এই বিভক্তি কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা ও ভূস্বামী মুসলমানের দল মুসলিম লীগের সুবিধা করে দেয়। বহুজনের রাজনৈতিক আদর্শকে বিকশিত হতে দেয়া হয়নি বলে এত বছর পর আজও উপমহাদেশে অনগ্রসর ৮৫% এর উপর মাত্র ৬% উচ্চবর্গীয় এলিটের ছড়ি ঘোরানোর রাজনীতি বহমান। দেশভাগের এত বছর পরও উপমহাদেশে রাজনৈতিক ব্রাহ্মণ্যবাদের অবদমন থেকে তফসিলি হিন্দুদের মুক্তি ঘটেনি। ১৯৪৫ সালে তফসিলি জাতি ফেডারেশনের প্রথম মহাসম্মেলনের সভাপতি হিসাবে যোগেন মন্ডল বলেছিলেন-

"১৯৪১ সালের লোকগণনায় তফসিলি জাতির লক্ষ লক্ষ লোককে তফসিলি না লিখিয়া কেবল হিন্দু লেখা হইয়াছে। এই উদ্দেশ্যে কার্যসিদ্ধির জন্য হিন্দু মহাসভা বহু অর্থ খরচ করিয়া লক্ষ লক্ষ লোককে নিযুক্ত করিয়াছে। তফশিলি জাতির পক্ষে এই অন্যায় কার্য প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় নাই। ফলে ১৯৪১ সালের লোকসংখ্যায় মুসলমান ও হিন্দুগণ অত্যধিক বৃদ্ধি পাইলেও তফশিলি জাতির জনসংখ্যা মোটেই বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় নাই। আমরা ১৯৪১ সালের গণনা কিছুতেই মানিয়া লইতে পারি না।" 

'৪০ এর দশকে হিন্দু মহাসভার তত্ত্বাবধানে তফসিলিদের মধ্যে বাকেরগঞ্জে ৬৫টি, ঢাকায় ৫০টি, ফরিদপুরের ৪৩টি, যশোরে ২৯টি এবং খুলনায় ৩১টি শাখা কমিটি গঠিত হয়। তফসিলিরা তখন শ্রেণি ও জাতি পরিচিতি ভুলে ‘হিন্দু’ গর্বে গর্বিত। তাদের এই ‘হিন্দু’ পরিচিতি যে  রাজনৈতিক সেটা তারা বুঝে উঠতে পারেনি। হিন্দু মহাসভা যেমন এদের লেঠেল হিসাবে ব্যবহার করেছে, তেমনি নিরক্ষর নিম্নবিত্ত মুসলমানদের লেঠেল হিসাবে ব্যবহার করেছে ভূস্বামী ও জমিদার মুসলমানদের দল মুসলিম লীগ। বাংলা ভাগের প্রবল বিরোধিতা করেছিলেন যোগেন। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন বাংলা ভাগ হলে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পূর্ববঙ্গের নম:শূদ্র সম্প্রদায়। শরৎ বোস, সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ বাংলা ভাগ চাননি। কিন্তু হিন্দু মহাসভার সভাপতি শ্যামাপ্রসাদের প্রচারণা এতো জোরালো ছিল যে শেষমেষ বাংলা ভাগ আঁটকানো যায়নি। বরিশালের যোগেন মন্ডল পাকিস্তানের প্রথম আইন ও শ্রমমন্ত্রী হলেন। জিন্না যতদিন বেঁচেছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে যোগেন মন্ডলের জাতির স্বার্থ রক্ষিত ছিল। জিন্নার মৃত্যুর পর মুসলিম লীগের উপর থেকে তার মোহভঙ্গ ঘটতে থাকে। তিনি উপলব্ধি করেন মুসলিম লীগ হলো উর্দুভাষী আশরাফ মুসলমানদের দল আর নিরক্ষর বাঙালি মুসলমানদের এরা ব্যবহার করে। নম:শূদ্রদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে এরা। তার উপর দেখা দেয় নম:শূদ্রদের উপর সংখ্যাগুরু মুসলমানদের অত্যাচার। পাকিস্তানে ১৯৫৪ এর নির্বাচনে যোগেন মন্ডলের দাবি মতো সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষণ সহ পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছিল, কিন্তু ১৯৫৫ সালে আওয়ামি লীগের হস্তক্ষেপে পৃথক নির্বাচনী ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যুক্ত নির্বাচন ব্যবস্থা চালু হয়। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলিকে পদত্যাগপত্র দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন যোগেন। সেখানে গিয়ে উদ্বাস্তুদের নিয়ে নতুন রাজনৈতিক ভাষ্য নির্মাণ করার চেষ্টা শুরু করলেও সফল হননি তিনি। ভোটে বেশ কয়েকবার লড়েও জায়গা করতে পারেননি যোগেন। তিনি উপলব্ধি করেন জাতীয় কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা, মুসলিম লীগ বা আওয়ামি লীগ হলো দেশজ এলিটদের রাজনৈতিক মঞ্চ। এরা তফশিলিদের জন্য রাজনৈতিক ক্ষেত্র ছেড়ে দেবে না। যেকোনো রাজনৈতিক দলে তফশিলি শ্রেণি সাধারণ ভোটার, বড়জোর স্থানীয় ক্যাডার। যোগেনের বহুজনবাদী আদর্শ ধূলিস্যাৎ হওয়ার পর নির্বাচনপন্থী বামেরা পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও শ্রেণি বৈষম্যের ভাষ্য দাঁড় করাতে পারেনি। সুদীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থেকেও জাতিগত বৈষম্যের প্রশ্নগুলোকে আমল দেয়নি বামেরা। উল্টো এরাই সাংস্কৃতিক ব্রাহ্মণ্যবাদকে প্রশ্রয় দিয়েছে। চেয়ার দখল করেছে উচ্চবর্গীয় হিন্দুরা। সংস্কৃতির নিরিখে মানুষ পড়াশোনা জানা ‘ভদ্রলোক’ ও পড়াশোনা না জানা ‘ছোটোলোকে’ ভাগ হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম এর ৩৪ বছরের রাজনীতিতে। নিম্নবর্গীয়দের সংস্কৃতিকে ‘নিম্নরুচি’ বলে দেগে নাক উঁচু ভাব দেখিয়েছে নির্বাচনপন্থী বাম দলটির উচ্চবর্গের বাবুরা। জ্যোতি বসু বলেছিলেন বাংলায় জাতপাত নেই। অথচ তার মুখ থেকে তফসিলিদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে আসে ‘সোনার চাঁদ’, ‘সোনার টুকরো’, ‘কোটার মাল’ ইত্যাদি ব্যঙ্গ বিদ্রুপের বর্ণবাদী জাতিবিদ্বেষী মানসিকতা। পশ্চিমবঙ্গে মাত্র ৬% হয়ে যে উচ্চবর্গীয় শ্রেণি সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ৬০% জায়গা অলিখিতভাবে সংরক্ষণ করে রেখেছে সে বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই এই বামেদের মুখ থেকে। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গে বহুজনবাদী আদর্শের দলিত আন্দোলন দানা বাঁধেনি। যেটুকু হয়েছে সেগুলো করেছে মূলত মধ্যবিত্ত উচ্চবর্গীয় বাবুশ্রেণি। এই শ্রেণি সব আন্দোলনের সামনের সারিতে এসে কৃতিত্ব ছিনতাই করে নেয়। যাবতীয় গণআন্দোলনের শৌখিন মুখ হয়ে পোস্টার আলো করে উচ্চবর্গীয় শ্রেণি। তফশিলিরা নিজেদের লড়াই নিজেরা লড়ার ক্ষেত্র পায়নি বলে ব্রাহ্মণ্যবাদকে ধাক্কা দেয়ার মতো শক্তিশালী তফসিলি আন্দোলন গড়ে ওঠেনি। উপমহাদেশের রাজনীতিতে যে শ্রেণি বৈষম্যের সঙ্গে জাতি বৈষম্যের প্রশ্নটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত সেটা সিপিএম সবসময় এড়িয়ে গেছে। নির্বাচনপন্থীদের ৩৪ বছরে প্রথম সারির তফসিলি নেতা উঠে না আসার আসল কারণ নিহিত রয়েছে যোগেনের বহুজনবাদী আদর্শকে উৎসমূলে পিষে মেরে ফেলার ইতিহাসে। তৃণমূলের জমানাতেও সেই ঐতিহ্য সমান তালে চলছে। পর্যাপ্ত তফসিলি প্রতিনিধিত্ব পশ্চিমবঙ্গের কোনো দলেই নেই। তফসিলি জনমানসে রাজনৈতিকভাবে (বর্ণ) হিন্দুয়ানি চালিত হওয়ায় বর্ণহিন্দু প্রতিনিধিকে তফসিলিরা নিজেদের প্রতিনিধি ভেবে আসছে। এজন্য তারা বর্ণবাদী আধিপত্য বিনা শর্তে মেনে নেয়।

.................................................................................

ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান এবং কংগ্রেসের প্রাক্তন সংসদ সদস্য শংকর রায়চৌধুরী দেশটির একটি ইংরেজি দৈনিকে 'Fight Naxals the way US wages Taliban war' শিরোনামের প্রবন্ধে লিখেছিলেন-

"....নক্সাল সমস্যা ভারতের জন্য সেই মাত্রায় গুরুতর হয়ে উঠেছে, যেমন আফগানিস্তানে যুদ্ধ চালানো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সময় এসেছে দেশের পেশাদার সামরিক বাহিনীকে সিদ্ধান্তগ্রহণকারী প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার। একে শুধু শেষ পদক্ষেপ হিসেবে রেখে দিলে চলবে না।...."

কাদের সাথে কাদের তুলনা! আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, এই লোক জমিদার বংশের+একাত্তরে ইন্দিরা সরকারের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নের সহযোগী+ইন্ডিয়ান মেটাল এন্ড ফেরো এলয়েস এর ডিরেক্টর+কাশ্মীরের সাধারণ মানুষদের হত্যাকারী।

১৯০৫ সালে ব্রিটিশরা যখন মালয় অঞ্চলে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ছিল তখন জেনারেল স্যার হ্যারল্ড ব্রিগস যে নীতির উদ্ভাবন করেছিলেন সেটা হচ্ছে কমিউনিস্টদের কার্যক্রম আছে এমন এলাকার লোকেদের জোর করে সামরিক কিংবা আধা সামরিক বাহিনীর ক্যাম্পগুলোর পাশে নির্দিষ্ট জায়গায় থাকতে বাধ্য করা। ভারতের সেনাবাহিনীও একই নীতি অনুসরণ করে নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, তেলেঙ্গানা, ছত্তিশগড় সহ বহু জায়গায়।

"....স্টিলের মগে এক কাপ কালো চায়ের সাথে কেউ একজন আমাকে একজোড়া ইয়ারফোন এবং এমপিথ্রি প্লেয়ারের সুইচ দিলো। বিজাপুরের সেসময়কার এসপি মনোহরের একটি গোপন কথোপকথনের গোপন রেকর্ডিং এটি। তিনি তার অধস্তন অফিসারদের ওয়ারলেসে জানাচ্ছেন, গ্রামবাসীকে ক্যাম্পে আনতে পারলে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার থেকে কি কি পুরস্কার দেয়া হবে। এরপর তিনি বললেন, যারা ক্যাম্পে আসতে অস্বীকার করবে তাদের পুড়িয়ে মারতে হবে। কোনো সাংবাদিক যদি নকশালিদের খবর সংগ্রহ করতে যায় তবে দেখামাত্র তাকে গুলি করতে হবে। এ খবর যখন প্রকাশিত হয় তখন তা আমি পড়েছিলাম এবং পুরস্কার হিসেবে ঐ এসপিকে রাষ্ট্রীয় মানবাধিকার কমিশনে বদলি করা হয়েছিল।...."

-  অরুন্ধতী রায়, 'ওয়াকিং উইথ দ্য কমরেডস'

..............................................................................

'তামিল ঈলম' গেরিলাদের উপর শ্রীলংকান সরকারের গণহত্যা তদন্তে জাতিসংঘের মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক দল গঠনের উদ্যোগকে বন্ধ করতে যেসব রাষ্ট্র তৎপর ছিল তাদের মধ্যে ভারত ছিল অন্যতম! আর সেসময় ক্ষমতায় ছিল এই কংগ্রেস পার্টিই!

..................................................................................

বাবা আমতে সর্বপ্রথম ১৯৭৫ সালে দণ্ডকারণ্যে আশ্রম খোলার মাধ্যমে ঐ অঞ্চলের আদিবাসীদের মধ্যে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনের সূচনা করেছিলেন। এরপর উত্তর বস্তারে বাবা বিহারীদাস আদিবাসীদের হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত করতে উঠেপড়ে লাগেন। এসব গুরুদের কারণে সরল আদিবাসীদের মাঝে বর্ণপ্রথার সূচনা হয় এবং তাদের নিজেদের সংস্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যায়। প্রথমদিকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন ঐ অঞ্চলের গ্রামগুলোর প্রধান এবং ভূমিপতিরা। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন মহেন্দ্র কর্মা যে মাওবাদীদের হত্যার জন্য গঠিত কুখ্যাত 'সালওয়া জুদুম' এর প্রতিষ্ঠাতা। এই বেঈমানকে (নির্বাচনপন্থী বামদল সিপিআই এর প্রাক্তন সদস্য) হিন্দু ধর্ম গ্রহণের পর দু'টি উপাধি দেয়া হয়- 'দ্বিজ' (পুনর্জন্মগ্রহণকারী) এবং 'ব্রাহ্মণ'। যেসব আদিবাসী হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেনি তাদের 'অচ্ছুত' ও 'অস্পৃশ্য' ঘোষণা করা হয়েছিল পরে। টাটা ও এসার স্টিল কোম্পানি যে এই দালাল বাহিনী তৈরিতে অর্থ ব্যয় করেছিল সেটা পরে ফাঁস হয়ে যায়। এসব ঘটনার সবই কংগ্রেস সরকারের শাসনামলে ঘটে

.........................................................................................

"জয়েন্দ্র সরস্বতীর দাবির মধ্যে রয়েছে ভারতের নাম করতে হবে 'হিন্দুস্থান', গরুকে করতে হবে 'জাতীয় পশু'। আমরা দেখলাম জয়েন্দ্র সরস্বতী আন্দোলনের সূত্রে দিল্লিতে এলেন। প্রধানমন্ত্রী পদে থেকেও রাজীব গান্ধী সপরিবারে তাঁর আশীর্বাদ নিতে হাজির হলেন। সে সময়ে রাজীবের হাতে তখন বিজ্ঞান দপ্তরও। আমরা দেখলাম পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল নুরুল হাসানের নাম উপরাষ্ট্রপতি পদে কংগ্রেস দলের মনোনয়নের প্রশ্নে বাতিল হলো। তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি তথা আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বিরোধী নেতাদের জানালেন, নুরুল হাসানের নাম বাতিল করা হলো, কারণ নুরুল হাসান নাস্তিক।"

- 'অলৌকিক নয়, লৌকিক [প্রথম খন্ড]', প্রবীর ঘোষ 

"১৯৮৭-র ৪ সেপ্টেম্বর। ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে মাত্র চার ঘণ্টার দূরত্বে, রাজস্থানের দেওরালায় ধর্মীয় উন্মাদ কিছু মানুষ মধ্যযুগীয় বর্বরতায় অষ্টাদশী রূপ কানওয়ারকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে সতী করলো। আমরা দেখলাম ধর্মীয় উন্মাদনার সামনে দাঁড়িয়ে আমাদের ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রীয় নেতারা পিছু হটলেন। সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক এন. সি. চতুর্বেদী প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন, সতীদাহ ব্যক্তিগত ধর্মীয় ব্যাপার।

আমরা দেখলাম সতীর সমর্থনে জয়পুরের জনসভায় রাজস্থানের রাজ্য জনতা দলের সভাপতি, রাজ্য লোকদল (বহুগুণা গোষ্ঠী) সভাপতির সরব উপস্থিতি।

আমরা দেখেছি হরিয়ানার নির্বাচনে কংগ্রেস বিরোধী প্রচারে এন. টি. রামারাওকে নারায়ণ সেজে চৈতন্য রথম চেপে হিন্দু ভোটারদের সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করতে। আমরা দেখেছি 'শরিয়ত' নামের আদিম বর্বর আইনের সমর্থনে দীর্ঘ মিছিল। 'অকাল তখত' থেকে পুরোহিতদের জারি হওয়া ফতোয়া। আমরা দেখেছি রামশিলা ও বাবরি মসজিদ নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। আমরা দেখলাম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় পুলিশের ভূমিকা হয় নীরব দর্শকের, নতুবা দাঙ্গাবাজদের উৎসাহদাতার।"

[ঐ]

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]