বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু সুবিধাবাদী লেখক

 

প্রথমেই এক বিখ্যাত বুদ্ধিবেশ্যার মাওবাদীদের ব্যাপারে বক্তব্য শোনা যাক-

"...দুনিয়ার রাজনীতিতে এর কোনো দিশা ছিল না, কোনো লক্ষ্য ছিল না। একচুয়েলি জোতদার-টোতদার মারার চেয়েও এরা ওই ভিকটিম করতো, সফট টার্গেট ঠিক করে মারতো? ফলে এমন একটা অবস্থা হলো আমরা বুঝতে পারলাম যে, এটা একটা দিশাহীন আন্দোলন, কোনো আন্দোলনের মাথামুন্ডু ছিল না। এখন জানা যাচ্ছে যে, গোটা মার্কসিজমটাই পৃথিবীতে পরিত্যক্ত। এর মধ্যে অনেক গন্ডগোল আছে। এ গন্ডগোল ড্রিম হিসেবে খুব ভালো। কিন্তু এটা প্র্যাকটিক্যাল নয়। প্র্যাকটিক্যাল নয় বলে কমিউনিজমটা কোথাও সাকসেসফুল হলো না। ইটস এ ফেইলিউর। এই ফেইলিউরের জন্যই আমরা জানি যে, নকশাল আন্দোলনও ফেইলিউর। এটার একটাই কারণ - খুন খারাবিটা, যেহেতু ইলজিক্যাল খুন খারাবি শুরু হয়ে গেল। যাকে হাতের কাছে পাচ্ছে তাকেই মারছে। স্কুলে ঢুকে একজন টিচারকে মেরে দিল। এটা কীসের প্রতিবাদ হলো? ট্রাফিক পুলিশকে মারলো, কার প্রতিবাদ হলো? প্রচুর ছেলেকে মারলো, পুলিশ মারলো, একটা রক্তক্ষয়ী ঘটনা ঘটে গেল কয়েক বছর ধরে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ইকোনমিকে, সামাজিক উন্নতিকে, রাষ্ট্রের উন্নতিকে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে এ নকশাল আন্দোলন। নকশাল আন্দোলন না করলে আজকে পশ্চিমবঙ্গ অনেক বেটার জায়গায় থাকতো। এই নকশাল বাড়ির আন্দোলন থেকেই কিন্ত গোটা ভারতবর্ষে মুভমেন্ট শুরু হয়েছিল। পিপলস মুভমেন্ট নামে একটা ফতোয়া দিয়ে, তকমা দিয়ে মাওবাদী আন্দোলন। এখন তো ওদের বহু ফ্র্যাকশন, এখন তো আর নকশাল আন্দোলন বলে কিছু নেই। এখন নকশাল আন্দোলন থেকে বহু রকমের, বোধহয় হাজার খানেক পার্টি বের হয়েছে। কেউ কারোর সঙ্গে একমত নয়। প্রত্যেকে আলাদা আলাদা। এখনো মাওবাদীরা যে খুনগুলো করছে, এ খুনগুলো সম্পূর্ণ ভুল। একেবারেই যুক্তিহীন। খুন করে কোনো দিশা পাচ্ছে না।..."

- শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, 'আমাদের সময়' পত্রিকায় (ঢাকা) ২০১৬ সালের ১লা এপ্রিলের সাক্ষাৎকার

...................................................................................

ভারতীয় বংশোদ্ভূত পাশ্চাত্যপ্রেমী লেখক ভি۔ এস۔ নাইপল বলেছিলেন-

"পাশ্চাত্য সভ্যতা সার্বজনীন সভ্যতা যা সকল মানুষের ব্যাপারে খাপ খায়।"

................................................................................

এক শ্রেণীর 'মুক্তমনা'দের কাছে জনপ্রিয় লেখক সালমান রুশদী প্রকাশ্যেই আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন।

সূত্র: 'দ্য শেপ অব দ্য বিস্ট', অরুন্ধতী রায়

তিনি হামাস গঠনের পিছে ইজরায়েল ও পশ্চিমাদের অবদানের কথা একবারও উল্লেখ না করে বলেছেন-

"এখনই ফিলিস্তিন স্বাধীন হলে আরেকটি তালেবান রাষ্ট্র হবে।"

..................................................................................

চেতন ভগৎ'কে বর্তমান ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক হিসেবে ধরা হলেও তিনি তার 'One Indian Girl' বইয়েও আগের লেখা ফিকশন ও নন-ফিকশনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন ভালোভাবেই। অর্থাৎ লেখার উপাদানে বামপন্থীদের কটাক্ষ, উচ্চবিত্তদের প্রমোট, স্বাধীনতা কিংবা মুক্তির নামে বিলাসী জীবনযাপনকে প্রমোট, মডারেট হিন্দুগিরির নামে সংখ্যাগরিষ্ঠদের বজ্জাতিকে প্রমোট ইত্যাদি। তিনি তার 'One Indian Girl' এর প্রধান চরিত্রকে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাম ধারার আন্দোলনকে কটাক্ষ করিয়ে যা বলিয়েছেন সেই লাইনগুলোর বাংলা করলে অনেকটা এমন হয় "ও আচ্ছা, তোমরা বাঙালিরা তো আবার কমিউনিস্ট। সমতা চাই।۔۔۔۔۔", যখন বাঙালি নায়ক কম বেতনের জন্য ঈর্ষায় আক্রান্ত হয়েছিল। মেল শভিনিস্ট আচরণের সাথে একই কাতারে বাম আন্দোলনকে টেনে নামিয়েছেন এই লেখক! তার নন-ফিকশন 'Making India Awesome' এ লেখক বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদের কটাক্ষ করে বলেছিলেন শান্তি রক্ষার নামে তারা নাকি সংখ্যাগুরুদের অসন্তুষ্ট করছে, যখন তারা বাবরী মসজিদের জায়গায় হাসপাতাল তৈরীর পরামর্শ দিয়েছিলেন। তার সাম্প্রতিক বই '400 Days' এ এই লেখক চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন বড়োলোকরা কতভাবে গরিবদের মাধ্যমে ভুক্তভোগী হয় এবং সেই সাথে বিলাসী পোশাক, গয়না, গাড়ি, বাড়ির বিস্তারিত বর্ণনা তো আছেই বরাবরের মতো! সম্ভবত 'মি টু' আন্দোলনের সময় তিনিও ধরা খেয়েছিলেন দেখে এই বই লিখে ঝাল মিটিয়েছেন! বই লেখার আগে তার পেশা কি ছিল সেটা জানলেই নন-ফিকশনগুলোতে জিডিপি বাড়াতে বলা কিংবা কাশ্মীরিদের ভারতের সাথে যুক্ত হতে পরামর্শ দেয়ার ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। এই লেখক তার এক নন-ফিকশন আর্টিকেলে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক কাশ্মীরি শিশুদের প্যালেট গান দিয়ে অন্ধ করে দেয়া ও নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন সেটার বাংলা করলে দাঁড়ায় অনেকটা এমন "এইরকম একটু আধটু তো হবেই!" তার ভক্তরা এসব বস্তাপচা বইগুলোকে 'ইয়াং এডাল্ট লিটারেচার' নাম দিলেও এগুলো চটি ছাড়া আর কিছুই না। কলকাতার অক্সফোর্ড বুক সেন্টারে এক সাহিত্য উৎসবে বিখ্যাত অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি বলেছিলেন চেতন ভগৎ এর বই ১০০ টাকায় কিনে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়ার মতো বস্তু। এই লোক উরফি জাভেদ'কে স্লাট শেমিং করেছিল। মোদী'র জন্মদিন পালনের বিপরীতে একদিকে যখন দেশটির আমজনতা 'ন্যাশনাল আনপ্লয়মেন্ট ডে' হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রতিবাদ করেছে, অন্যদিকে এই লেখক ব্যস্ত ছিল তার অতি প্রিয় শোষক ব্যবসায়ীদের বন্ধু প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে!

'11 Rules for life' শিরোনামের পুরো বইটাই লেখা হয়েছে 'জোঁক' কিভাবে হতে হয় সেই শিক্ষা দিতে। বইটির কয়েকটা লাইন-

"I’m not judging these people. Some would say, and rightly so, that I too belong to this class now. However, I was one of you at one point. I want you to get here as well. My purpose of writing this book is to help you join this elite 1 per cent class. It’s hard as hell if you don’t already belong there, but it isn’t impossible........The Class III population is the largest in this world, and easily outnumbers the other two classes above it. If this class is not managed well, it could shake the world. It could take back control from the Elite (indeed, that is what happened in some socio-economic revolutions in the history of our world). However, for the most part, Class II ensures that Class III behaves itself well. Class III plays its role of being workers, drones and slaves for the world, and the Elite Protector Class ensures this hierarchical way of functioning continues to run in a smooth manner."

উপমহাদেশের সম্ভাবনাময় প্রজন্মকে ভোগবাদী, স্বার্থপর, শোষক, নীতিভ্রষ্ট অমানুষ বানাতে এরাই যথেষ্ট।

এই লেখক পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ডারউইন এর উক্তির উল্লেখ করেছেন সর্বশেষ বইয়ের একটি চ্যাপ্টারে-

"In nature, it is not the strongest or most intelligent that survives, but it is the most adaptive that does."

তিনি চিকিৎসকদের ব্যাপারে বলছেন-

"Let’s say you are a doctor, a relatively stable field and career. You could remain a traditional doctor and probably hold a job. However, who are the richest doctors today? The ones who have understood business along with medicine. Doctors who can run a business can multiply their income manifold. They could open diagnostic centres, a scalable chain of clinic sand online medical services."

নিজের মুখে লেখার উদ্দেশ্য বলা-

"When I became a writer, I quit my banking job. All my friends, however, remained in banking. Bankers are about money, and the question they would ask me most was: 'How much money do you make as a writer?' The answer back then, when I had just started out was: 'Not much.' I didn't become a writer to just make money. If I wanted to make money, I would have remained a banker. However, somewhere, my friends' questions bothered me. I wanted to 'show them' that I could 'make a lot of money' as a writer too. In the process, over the next decade, I nearly killed myself with work-innumerable motivational talks, hundreds of flights a year, books, films, columns, TV appearances and even reality shows (gosh, why, I now wonder!). I worked at breakneck speed to maximize my earnings. I became fat, lost my health and, most importantly, lost sense of the main purpose of my writing life which was to express myself. It took the Covid-19 pandemic to jolt me back to reality. All of a sudden, a lot of my work-talks, flights, launches and film shoots-came to a grinding halt. The forced pressing of the pause button due to the pandemic gave me a chance to reflect on my life and see who I truly am. I realized that the friends who asked me how much money I make don't matter. It's my life. I must live it according to what I want. My friends probably don't even know till date the inner turmoil their harmless question caused in me."

...............................................................................

১৯৯০ সালে এরশাদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের হিন্দুদের উপর সহিংস হামলা চাপিয়ে দিয়েছিলেন। অথচ পশ্চিমবঙ্গের লেখক ও সাহিত্যিকরা সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়ে এরশাদকে 'দাঙ্গাবিরোধী একজন মহামানব' হিসেবে ভারতের মানুষের কাছে পরিচিত করেছিলেন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শিবনারায়ণ রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আবুল বাশার, মুস্তফা সিরাজ, প্রতিভা বসু প্রমুখ এরশাদের ভূমিকার তারিফ করে সংবাদপত্রে বিবৃতি দিয়েছিলেন! বুদ্ধদেব বসুর কন্যা মীনাক্ষির স্বামী জ্যোতির্ময় দত্ত এরশাদের ভাড়া করা চামচা ছিলেন। তিনি তখন ঢাকা এলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে জায়গা পেতেন। এরশাদ নিজের চামচাদের দিয়ে জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠন করলেন এবং প্রতি বছর 'এশিয়ান কবিতা উৎসবের' আয়োজন করতে থাকলেন। তিনি কলকাতা থেকে অতিথিদের বিমানের প্রথম শ্রেণীর আসনে করে ঢাকা নিয়ে এসেছিলেন এই উৎসবে। তাদের এরশাদ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে রেখে সেবা-যত্নের ত্রুটি রাখেননি! শিবনারায়ণ রায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অনেকেই এসেছিলেন তখন ঢাকা।

..........................................................................................

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বাংলাদেশিদের সাম্প্রদায়িক হিসেবে বিবেচনা করতেন যা তার বিভিন্ন লেখায় এসেছে। কোনো এক বাংলাদেশী নাকি তাকে সম্বোধন করেছিল 'হিন্দু লেখক' হিসেবে। অথচ তিনি লালনকে 'হিন্দু' বানিয়ে ছেড়েছেন তার লেখায় যার উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে সিনেমা তৈরী হয়! উল্লেখ্য, গবেষকদের কাছে লালনের পারিবারিক ধর্ম এখনো অজ্ঞাত।

...............................................................................

কথিত প্রগতিশীল লেখক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় (বনফুল) এর কমিউনিস্ট বিদ্বেষী উপন্যাস 'অগ্নি'।

..................................................................................

যারা ভারতীয় অভিনেতা নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকীর শেখ মুজিবের বায়োপিকে অভিনয় নিয়ে চরম উচ্ছাস প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছেন তাদের বোঝা উচিত যে শিল্পীদের দায়িত্ববোধ বলে একটা কথা আছে যা ভারতের বিতর্কিত নাগরিক আইনের ব্যাপারে আন্দোলনের সময়ও অনেক বিখ্যাতদের নীরব ভূমিকায় প্রমাণিত হয়েছে। চারু মজুমদারের হত্যাকারী পুলিশ অফিসারের বই 'সাদা আমি কালো আমি'র উপর ভিত্তি করে যেই ফিল্ম বানানো হয়েছে সেখানে ঐ দালাল পুলিশের চরিত্র চমৎকারভাবে [সাহসী, কর্তব্যের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ইত্যাদি] ফুটিয়ে তুলেছেন সিদ্দিকী সাহেব! ঐ ফিল্মে আবার বাংলাদেশের জয়া আহসানও আছে! ভারতের মিডিয়া তাদের বুর্জোয়া সরকারের সহায়কের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথেই। আরেকদিকে আছে শহুরে তথাকথিত বিখ্যাত বুদ্ধিজীবীরা। সৃজিত মুখার্জির ফিল্মগুলোতেও কমিউনিস্টদের কিভাবে উপস্থাপন করা হয় সেটা ফিল্মগুলো দেখলেই বোঝা যায়। 

......................................................................................

লেখক সমরেশ মজুমদার কোন কিসিমের 'বামপন্থী' ছিলেন তা তার 'বিশল্যকরণী' লেখাটা পড়লেই বোঝা যায়। তিনি মাওবাদী কমিউনিস্টদের একটু পর পরই 'উগ্রপন্থী' বলে সম্বোধন করেছেন বইটিতে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে 'উগ্রপন্থী' বলতে উগ্র ধার্মিকদেরও বোঝানো হয়। কিন্তু পাশের দেশ ভারতে এই শব্দটা দিয়ে সন্ত্রাসীদের বোঝানো হয়। তিনি এই বইটিতে বলেছেন মাওবাদীদের নেতারা নাকি ধনীদের অপহরণ করে আর আদায়কৃত অর্থ নিজেরা খেয়ে ফেলে! সাধারণ কর্মীরা অর্থের ভাগ চাইলে নেতারা নাকি অস্ত্র কেনার অজুহাত দেখায়! লেখকের মানসিকতা স্বাভাবিকভাবেই তার সাহিত্যকর্মে প্রতিফলিত হবেই। তিনি তার গল্পের চরিত্রদের দিয়ে ধৃত মাওবাদীদের 'তুই' বলে সম্বোধন করেছেন। তার গল্পের চরিত্ররা এখানে এক বেঈমানকে আশ্রয় দেয় এবং মাওবাদীদের সাথে লড়াই করে এক বিদেশী মহিলাকে উদ্ধার করে।

বিখ্যাত সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার তার 'আত্মপক্ষ' বইটিতে দৃষ্টিকটুভাবেই ঐ পাড়ের নির্বাচনপন্থী বামেদের নানা কুকর্মের পক্ষে নায়কের মাধ্যমে সাফাই গেয়েছেন। তার মতে, নির্বাচনপন্থীদের ক্যাডারদের গুন্ডামি সম্পর্কে নাকি বামেদের কেন্দ্রীয় নেতারা অবগত ছিলেন না! জনগণ নাকি জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত ব্যাপারে এসব নির্বাচনপন্থী বামেদের ভুল বুঝেছিল! তিনি একদিকে তৃণমূলের পিছে লেগেছেন, অথচ নায়িকার মুখ দিয়ে কংগ্রেসের প্রশংসা করেছেন! তিনি আন্দোলনের ঐসময়ের সহিংসতাগুলোকে কেবল তৃণমূলের কাজ হিসেবে দেখাতে চেয়েছেন এবং গণজাগরণকে পাবলিকের 'হুজুগ' হিসেবে দেখিয়ে আমজনতার বৈপ্লবিক চেতনাকে তাচ্ছিল্য করেছেন। কলকাতায় আরামে বসবাস করে মফস্বলের ব্যাপারে সবজান্তার ভাব দেখানো এই লেখকের মতে, নির্বাচনপন্থীরা নাকি রাজ্যটি প্রায় তিন যুগ শাসন করতে পেরেছে কেবল তাদের জনপ্রিয়তার কারণে! বইটিতে তিনি নক্সালদের প্রসঙ্গ এনেছেন, যারা নাকি এই বামেদের ক্ষমতাচ্যুত করতে তৃণমূলকে সাহায্য করেছিল টাকা খেয়ে! এই বইতে তিনি নক্সালদের মদ্যপ ও লম্পট হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

অনেকের অতি প্রিয় 'বামপন্থী' এই লেখক 'মানুষের মা' বইটিতে শোষক জমিদার, তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট জোঁকেরা ও তাদের সহযোগী পুরোহিততন্ত্রের আধ্যাত্মবাদের গুণগান গাইতে গাইতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন, এনজিও স্টাইলে আমজনতার জন্য সম্পাদিত কথিত কিছু কল্যাণমূলক কাজের উল্লেখ করে!

তিনি 'কলিকাল' উপন্যাসে শোষক জোতদারকে 'মহান' হিসেবে উপস্থাপন করেছেন নিজেকে 'বামপন্থী' হিসেবে সবসময় দাবি করে গেলেও।

'এখনও সময় আছে' আত্মজীবনীতে প্রথমেই তিনি তার বৌ এবং ছেলে-মেয়েদের কথিত স্বার্থপরতার বর্ণনা দিলেন, যাদের অত্যাচারে টিকতে না পেরে উড়িষ্যার এক নির্জন সৈকতের ধারে বাড়ি কিনেন। বইটিতে নিজের বৌ এর বিরুদ্ধে বদনামের শেষ নাই। কলকাতার এক আধুনিকা তরুণী ঘুরতে এসে এক রাতের আশ্রয় চায় লেখকের কাছে। তার সঙ্গে হালকা লুইচ্চামিও হয়। ঐ তরুণী রাতের বেলা সমুদ্রে গোসল করতে গিয়ে ডুবে মারা গেলেও এই প্রভাবশালী লেখক পরিচিতদের কল্যাণে সব ধরনের তদন্ত থেকে বেঁচে যায় সেসময়। তিনি হেল্পিং হ্যান্ডকে আসবাবপত্রের সাথে তুলনা করেছেন এবং দুইজনের শ্রেণী পার্থক্যের কথা উল্লেখ করলেও সেই হেল্পিং হ্যান্ড এর সাথেই সহবাস করেছেন কলকাতার আধুনিকা সেই তরুণীটির শরীর কল্পনা করে। আবার সেই হেল্পিং হ্যান্ডকে প্রায় হাজার টাকার সালোয়ার কামিজ কিনে দিয়েছেন প্যান্টি সহ। এই হচ্ছে কথিত 'বামপন্থী' লেখকের চরিত্র। শেষের দিকে আবার আর্নেস্ট হেমিংওয়ে'র 'দি ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সি' এর আদলে নিজেকে হিরো বানানোর কল্পনার সাগরে গা ভাসিয়েছেন।

সমরেশ বাবু নিজের অজান্তেই বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর প্রগতিশীলতার বাহ্যিক ভণ্ডামি প্রদর্শনকারীদের প্রতিনিধি হয়ে থেকে যাবেন 'মেয়েরা যেমন হয়' বইটির মাধ্যমে। রবীন্দ্রনাথের মতোই [হুমায়ুন আজাদ সাহেবের 'নারী' বইটিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত লেখা আছে] তিনি নীরবে লৈঙ্গিক বৈষম্য সহ্য করে যাওয়া মাতৃস্থানীয় নারীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেও কর্মজীবী নারীদের সমালোচনা করে লিখেছেন তারা নাকি ভালো ভালো পদ রান্না করতে অক্ষম দেখেই দাম্পত্য জীবনে দূরত্ব তৈরী হয়! এই বইয়ে তিনি নারীদের রেসিপির বই পড়ে নতুন নতুন পদ শিখতে উপদেশ দিয়ে গেছেন এবং সুস্পষ্টভাবে সেসব নারীদের প্রতি বিদ্বেষ প্রদর্শন করেছেন যারা নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছেন। উল্লেখ্য, তিনি তার 'বাঙালির নষ্টামি' বইটিতে নকশাল গেরিলাদের ইঙ্গিত করে তাদের 'মৌলবাদী' হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও নৈরাজ্যবাদ আর সমাজতন্ত্রের মাঝে পার্থক্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না রাখা অনেকেই তাকে বামঘেঁষা সাহিত্যিক হিসেবে ধরে নেয় কয়েকটি নির্দিষ্ট উপন্যাস পড়েই। তার অর্জুন সিরিজের বহু গল্পে তিনি মাওবাদী গেরিলাদের 'সমাজ বিরোধী', 'রাষ্ট্র বিরোধী' হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

তিনি 'না আকাশ না পাতাল' বইটিতে স্বীকার করেছেন তার প্রথম আমেরিকা ভ্রমণ সম্পন্ন হয়েছিল সিআইএ এর মদদপুষ্ট সংস্থার মাধ্যমে। দেশটিতে হিন্দু ধর্মের প্রচারের বাড়াবাড়িতে পুলিশের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা প্রদর্শন করেছেন এই কথিত প্রগতিশীল লেখক। তিনি সমকামিতাকে 'রোগ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন এটির প্রতি তার 'ঘিনঘিনে' মনোভাবের কথা। বইটিতে তিনি একদিকে নিজের গরুর মাংস খাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন, আরেকদিকে গোবধকারীদের 'অবোধ' বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি 'আগুনবেলা' উপন্যাসে লিখলেন ভারত বিশাল দেশ দেখে নাকি বিপ্লব সম্ভব না আর মাওবাদীরা নাকি জীবন নষ্ট করছে! তিনি বেঁচে থাকলে সোভিয়েত ইউনিয়ন কিংবা চীনের আকৃতির কি ব্যাখ্যা দিতেন? তার মতে, ভারতের সর্বহারারা নাকি এই আন্দোলন সম্পর্কে নিস্পৃহ, যেখানে বাস্তব বলছে ভিন্ন কথা। তিনি মাওবাদকে 'উগ্রতা' বলে সম্বোধন করে এটিকে 'বামপন্থার' ভণ্ডামির সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের লাইনকে 'অলীক' বলে উল্লেখ করেছেন।

'কালপুরুষ' উপন্যাসেও তিনি তার সুবিধাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি মাওবাদীদের বিপ্লব ছড়িয়ে দেয়ার অক্ষমতা আবিষ্কার করলেন। তারা নাকি কমরেডদের খোঁজ নেয় না। এই লেখক এখানেও বললেন ভারতে নাকি বিপ্লব অসম্ভব। মাওবাদী হয়েও উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অনিমেষ মাধবীলতাকে ছেলেকে শাসনের সময় বলছে ও কি মেয়ে নাকি যে ঘরে থাকবে? তিনি নায়ক অনিমেষকে দিয়ে বলিয়েছেন যে, মাওবাদীদের লাইন ভুল। নায়ক অনিমেষ তার প্রাক্তন কমরেডকে পরামর্শ দিচ্ছে বিপ্লবের জন্য সংগৃহীত অর্থ মাদার তেরেসার প্রতিষ্ঠান জাতীয় কোনো সংগঠনে দিয়ে দিতে। সংশোধনবাদী নায়কের মতে, এরা নাকি রাজনৈতিক বক্তৃতার চেয়েও মানুষের জন্য বেশি উপকার করে! অন্যদিকে তার প্রাক্তন কমরেড মাও এর লাইন পরিত্যাগ করে 'নতুন' করে শুরু করতে চাইছে। লেখকের মতে, নকশাল আন্দোলনের নামে কিছুটা হৈচৈ করে নাকি নেতারা ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। তিনি নায়কের প্রাক্তন কমরেড এর মুখ দিয়ে বলালেন এই আন্দোলন নাকি জনবিচ্ছিন্ন ছিল। বইয়ের নায়কের মতে, হিন্দু ধর্মের কুসংস্কারগুলো নাকি বড়োদের খুশি করতে মানলে ক্ষতি নেই। নক্সালরা নাকি মাও সে তুঙ আর কার্ল মার্ক্স এর দোহাই দিয়ে গুন্ডামি করেছিল আর এতে দেশের কোনো উপকার হয়নি। সাধারণ মানুষ নাকি তাদের কথা শুনলে আটকে উঠে এখনো।

'জন-যাজক' বইটিতে তিনি মত দিলেন সশস্ত্র বিপ্লব নাকি প্রাদেশিকভাবে সম্ভব নয়। কিন্তু তাকে কে বললো যে, নক্সালদের লক্ষ্য ছিল কেবল পশ্চিমবঙ্গে বিপ্লবকে সীমাবদ্ধ রাখা? তিনি নক্সালদের দ্বারা মূর্তি ভাঙার কথা বললেও কারণ আর বললেন না, যা সরোজ দত্ত চমৎকারভাবে বিশ্লেষণ করে গেছেন। তিনি আন্দাজে দাবি করলেন নক্সালরা নাকি মাটি তৈরি না করেই বিপ্লবের কাজ শুরু করেছিল। তিনি নির্বাচনে গিয়ে সর্বহারাদের অধিকার কায়েম সম্ভব বলে দাবি করলেন এবং মাওবাদীদের দ্বারা বুর্জোয়াদের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের অধিকার নিশ্চিতের ব্যাপারকে 'সোনার পাথরবাটি' বলে সম্বোধনকে টিটকারি দিলেন। তিনি বিবেকানন্দের মতো অনেক বিতর্কিত ও আপত্তিকর বক্তব্য প্রদানকারী ধর্মীয় গুরুকে মার্ক্স এর সাথে তুলনা করলেন! তার মতে, এই গুরুর মতবাদ নাকি সকল সমাজতান্ত্রিকের আদৰ্শ হওয়া উচিত! সশস্ত্র বিপ্লবের কথা নাকি ভারতে চিন্তাও করা যাবে না আর মাওবাদ নাকি অন্ধ ভাবাবেগ ছাড়া আর কিছু না। মাওবাদের নাম করে নেতারা নাকি জনগণের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে কেবল। তিনি নায়কের মাধ্যমে জানালেন যে, পাহাড়ি জাতিগুলোর গেরিলারা নাকি সন্ত্রাসী। এই পাহাড়ি গেরিলাদের আর নক্সালদের একই কাতারে ফেললেন তিনি। তিনি সাম্যবাদ আর অধ্যাত্মবাদ এর সমন্বয়ের কথা বলেছেন নায়কের মুখ দিয়ে যা বালখিল্যতা ছাড়া আর কিছু না। 

'ঠিকানা ভারতবর্ষ' বইটিতে তিনি নায়িকার মুখ দিয়ে পুলিশদের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন। তার চোখে সবাই নাকি এক না, অনেক পুলিশ নাকি দেশের মানুষের সেবা করে যাচ্ছে। কোনো পুলিশ খারাপ কাজ করলে নাকি আদালত, ওপরওয়ালা আর মন্ত্রী আছে যারা 'সুবিচার' করবে। তিনি মাওবাদীদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে শাস্তি দেয়ার অধিকার তাদের নেই! তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নৈরাজ্যবাদী দিকটির সাথে মাওবাদকে একই শ্রেণীতে ফেলেছেন এই বইয়ে। জোঁকেদের থেকে কেড়ে নেয়া মাওবাদীদের অর্থ তার এই বইয়ের নায়িকা সাধারণের চিকিৎসার ক্ষেত্রে খরচে রাজি হয়নি আর এটাকে অন্যায় বলেছে! তার এই নায়িকা নারী গেরিলাকে ধরিয়ে দিয়েছে পুলিশের কাছে।

সমরেশ মজুমদার তার 'ছায়াবৃতা' বইয়ের নায়কের মুখ দিয়ে মার্কিন পুলিশকে শুনিয়ে দিয়েছেন তাদের নাকি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের মতো বাংলা ভাষার জন্য সংগ্রামের প্রয়োজন হয়নি বলেই তারা সেটা করেননি! জনাব সমরেশ এর মতো কেন্দ্রের পা চাটা বুদ্ধিজীবীদের এমন নাকউঁচু আর বাস্তবতা বিবর্জিত প্রলাপ বলাই স্বাভাবিক। তিনি কমলা ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে অন্যদের নাম ভুলে গেছেন এবং সেই সাথে হিন্দির আগ্রাসন কিভাবে দক্ষিণ ভারত রুখে দিয়েছে সেটাও। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিকভাবে সচেতন যেসব বাঙালি হিন্দির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে, এদের মতো ছদ্ম প্রগতিশীল ও চাড্ডিদের কাছে তারা হয়ে যায় 'দেশদ্রোহী'। মেনে নিলে প্রয়োজন তো হওয়ার কথা না।এরাই আবার বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষায় উর্দু, ফার্সি, আরবি শব্দের প্রয়োগ নিয়ে চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারে না।তাছাড়া এই বইটিতে তিনি চাকমা সম্প্রদায়কে 'বাঙালি' বলেছেন!

'অনি' বইটিতে তিনি উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের গুরু বঙ্কিমচন্দ্র বাবুর ব্যাপক প্রশংসা করলেন এবং মাওবাদীদের প্রভাবিত করতে তার বইগুলোর কাল্পনিক ভূমিকা আবিষ্কার করলেন আন্দাজে। তার অন্যান্য বইগুলোতেও এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী লেখকের প্রশংসা আছে।

লেখক 'আট কুঠুরি নয় দরজা' উপন্যাসে আবারো তার অজ্ঞতার পরিচয় দিলেন। একদিকে বিপ্লবীদের মাওবাদের জনগণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার চেষ্টার কথা বললেন, আরেকদিকে বিপ্লবীদের নেতার মুখ থেকে ভারতের বুর্জোয়া গণতন্ত্রের প্রশংসা আদায় করিয়ে জনগণতন্ত্রের সাথে বুর্জোয়া নির্বাচনকে গুলিয়ে ফেললেন। একজন জনগণতন্ত্র বাস্তবায়িত করার পথের যোদ্ধা কিভাবে বুর্জোয়া নির্বাচন ব্যবস্থা চাইতে পারে কিংবা প্রশংসা করতে পারে? 

'জীবনযাপন' উপন্যাসে সাধুদের গুণগান আর অধ্যাত্মবাদ এর জয়গান গেয়েছেন এই কথিত 'বামপন্থী' লেখক।

সুবিধাবাদী এই সাহিত্যিকের আরও কিছু সুবিধাবাদী কথা শোনা যাক তার 'দাউ দাউ আগুন' উপন্যাসটি থেকে (যদিও হুজুগে নির্বাচনপন্থীরা তার কিছু নৈরাজ্যবাদী উপন্যাস পড়ে ভ্রান্ত ধারণা রাখে তার সম্পর্কে)-

"কেন ওরা এভাবে জেনেবুঝে আত্মহত্যা করছে? ওরা বিপ্লব করতে চায়, দেশের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক চেহারা বদলে দিতে চায়। খুব ভালো কথা। কিন্তু দেশ তো ওদের মতো কয়েকশো দলের নয়। কোটি কোটি মানুষ মনে করে কিছু অসুবিধে থাকা সত্ত্বেও এই সিস্টেমটার সঙ্গে দিব্যি মানিয়ে নেওয়া যায়। তখন ওরা কাদের নিয়ে বিপ্লব করবে? পৃথিবীর ইতিহাস বলছে দেশের বেশিরভাগ মানুষ যখন অত্যাচারিত, নিষ্পেষিত এবং সরকারি নীতির ফলে প্রায় অভুক্ত তখনই বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে যায়। প্রকৃত নেতা এসে নেতৃত্ব দিলে একে একে সবাই প্রাথমিক সঙ্কোচ কাটিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শোষকের বিরুদ্ধে। বিপ্লব তরান্বিত হয়। কিন্তু এখন এই ভারতবর্ষের মানুষের অবস্থান সেরকম নয়। ভোটের মাধ্যমে তারা শোষকদলকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারে। বেঁচে থাকার ন্যুনতম উপকরণ থেকে তারা বঞ্চিত নয়। অন্তত নব্বুই শতাংশ এই পর্যায়ে পড়ে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক শিক্ষা নিয়ে যদি এইসব তরুণেরা বিপ্লবের ডাক দেয় তাহলে সাড়া পাওয়া সম্ভব নয়। এরাও সেটা জানে। জেনেও সাঁইত্রিশ-আটত্রিশ বছর ধরে একই ভুল করে চলেছে।"

###################################

"কিন্তু বাংলাদেশের মতো দুর্বল রাষ্ট্রের দালাল বললে গালাগাল দেওয়া হয় কিনা জানি না, তবে খারাপ তো লাগেই।"

- 'বাঙালির নষ্টামি', সমরেশ মজুমদার 

কেমন বোধ করছেন সমরেশ প্রেমী বাংলাদেশিরা এই লাইনটা শোনার পর?

........................................................................................

কবি ও সাহিত্যিক আহসান হাবীব ছিলেন অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে। অথচ তাকে একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয়েছিল।

...................................................................................

কবি গোলাম মোস্তফা ভাষা আন্দোলনের সময় উর্দুর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছিলেন।

....................................................................................

বাংলাদেশের বিখ্যাত সাহিত্যিক আলাউদ্দিন আল আজাদ একজন ভাষা সৈনিক। অথচ নীতি আর আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে তিনি হয়ে যান এরশাদ সরকারের সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা।

..........................................................................................


এই লোক নিজেকে 'মার্ক্সবাদী' হিসেবে দাবি করলেও তার প্রতিটা বই কোরান-হাদিসের উদ্ধৃতিতে ভর্তি থাকে, ইসলামকে একমাত্র সত্য ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টার অংশ হিসেবে নানা ধরনের গোঁজামিল দেয়া আবোল তাবোল বাক্য থাকে, সবকিছুতে ইহুদি-খ্রিষ্টান-প্যাগানদের যোগসূত্র থাকার ব্যাপারটা আবিষ্কারের ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়, মার্ক্সবাদ তথা কমিউনিস্টদের সমালোচনা করতে যে ন্যূনতম যোগ্যতা লাগে সেই প্রাথমিক স্তরের জ্ঞান না রেখেই এই লেখক পাগলের প্রলাপ চালিয়ে যায়। ইউটিউবে হাজার হাজার বাংলাদেশী মুসলমানরা এর অডিও বই শুনে, এর বই মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হয় বাংলাদেশে। এভাবেই এই লোক মার্ক্সবাদের বিরুদ্ধে অসংখ্য পড়াশোনা বিমুখ লোককে বিভ্রান্ত করছে, সেই সাথে কৌশলে ধর্মীয় উগ্রতা ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার 'মৌলবাদী নাস্তিক' বইটা পড়ার পর মুখ দিয়ে গালি ছাড়া আর কিছুই বের হচ্ছে না। নিজেকে 'মার্ক্সবাদী' হিসেবে পরিচয় দেয়া এই আহাম্মক কোথায় পেয়েছে যে নিধার্মিকরা নাকি দাবি করে গ্রিক দার্শনিকরা নাস্তিক ছিলেন? তাছাড়া তিনি খলিফা ও সাহাবীদের ব্যাপারে যেসব ভালো ভালো মিথ এর কথা বললেন সেগুলো বহু আগেই আলি দাস্তি খণ্ডন করে গেছেন অসংখ্য রেফারেন্স দিয়ে। এই ছাগল সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটল'কে 'নবী' বানিয়ে দিয়েছে কোরানের কিছু আয়াতের উল্লেখ করে! তাছাড়া মধ্যযুগ ও এর পরবর্তী সময়ের আস্তিক দার্শনিকদের কথা উল্লেখ করে এই লোক নিধার্মিকদের টিটকারি দিয়েছেন। অথচ আধুনিক যুগে প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় দার্শনিক এবং বিজ্ঞানীদের ভ্রান্ত ধারণাগুলো উন্মোচন করা হয়েছে, যেসব ধারণার উপর ভিত্তি করে এবং সেগুলোকে কোরানের সাথে গায়ের জোরে সম্পর্কযুক্ত করে এই লোক আস্তিক্যবাদের গুণগান গেয়েছেন। দার্শনিক মতবাদগুলোর আদান-প্রদান সংক্রান্ত জ্ঞান লাভের জন্য উৎকৃষ্ট রেফারেন্স হচ্ছে 'সোফির জগৎ' বইটি। মানুষের সভ্যতা এতদূর এসেছে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায়। হান্টিংটন এর দাবিকৃত পশ্চিমের একক অবদানে না, কেবল মোল্লাদের 'ইসলামিক স্কলারদের' দ্বারা না কিংবা চাড্ডিদের দাবিকৃত প্রাচীন আর্য স্কলারদের দ্বারা না। দেকার্ত এর “আমি চিন্তা করি অতএব আমি আছি” উক্তির সাথেও তিনি কোরানের কিছু আয়াতের সামঞ্জস্য আবিষ্কার করেছেন! দেকার্তকে এই লোক রীতিমতো 'গুরু' হিসেবে গণ্য করেছেন তার ঈশ্বরের অস্তিত্ব সংক্রান্ত ধোঁয়াশাপূর্ণ বক্তব্যের কারণে। মানুষ আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহারের সাহায্যে ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতা জয় করতে পেরেছে দেখেই আমরা আমাদের দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তির রেঞ্জ এর বাইরের জগতকেও জানতে সক্ষম হয়েছি। অথচ এই লোক অন্য যুগে বাস করছে দেখেই ইন্দ্রিয়ের সীমাবদ্ধতার অজুহাত দিয়েছে। তাছাড়া প্রাচীন ও মধ্যযুগে চিন্তা কেবল পর্যবেক্ষণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল বিধায় দর্শন ও বিজ্ঞানকে আলাদা করা যেত না জীবন ও জগতকে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে। আধুনিক যুগে দর্শনের স্থান নিয়ে নিয়েছে বিজ্ঞান। তিনি বইটিতে লিখেছেন বিজ্ঞান দিয়ে নাকি রাষ্ট্র চালানো যায় না! তাহলে 'পলিটিক্যাল সায়েন্স' বা 'রাষ্ট্রবিজ্ঞান' বলা হয় কেন? তিনি স্ট্রিং থিওরি ও এম-থিওরির প্রসঙ্গ এনে বিজ্ঞানের কথিত সীমাবদ্ধতার কথা বললেও কোরানের সমতল পৃথিবী থেকে শুরু নানা অবৈজ্ঞানিক ফালতু ধারণার ব্যাপারে মুখ খুললেন না যা প্রাচীন মানুষদের চিন্তার সীমাবদ্ধতারই প্রতিনিধিত্ব করছে। বিজ্ঞানের রাজ্যে যা আজ হাইপোথিসিস, তা কাল প্রমাণিত সত্য; 'সীমাবদ্ধতা' নয়। বিজ্ঞান কোনো ধর্ম নয় যে, গায়ের জোরে দাবি করে কোনো কিছুকে 'সত্য' বলবে। দর্শন মূলত কথার মারপ্যাঁচ, কিন্তু বিজ্ঞান হচ্ছে পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ। তাছাড়া এই লোকের দাবি অনুযায়ী, বিজ্ঞানের কাজ নাকি কেবল প্রকৃতির অবস্থা ব্যাখ্যা! কিন্তু বিজ্ঞান কেবল বর্তমানকে নয়, কিভাবে বর্তমান অবস্থার সৃষ্টি হয় সেটা জানতে অতীতে যাওয়া। নৃবিজ্ঞান কি আমাদের পূর্বপুরুষদের ব্যাপারে জানাচ্ছে না? জ্যোতির্বিজ্ঞান কি আমাদের মহাজাগতিক বস্তুগুলোর লক্ষ বছর আগের অবস্থা জানাচ্ছে না? এই লোকের কথা অনুযায়ী, বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলো নাকি কিছু সৃষ্টিতে অক্ষম। তার 'লজিকের' নমুনা এমনই! বিবর্তনবাদ [হাজারটা প্রমাণ থাকার পরও এই লোকের কাছে যেটা 'হাইপোথিসিস']  আর জ্যোতির্বিজ্ঞান আমাদের জানাচ্ছে পৃথিবী ও এর জীব-জড় সবকিছুর উৎপত্তির ব্যাপারে। উল্টোদিকে, তার উপস্থাপিত মধ্যযুগের আস্তিক্যবাদী হাইপোথিসিসগুলোর তুলোধুনো করা হয়েছে আধুনিক যুগে অসংখ্য প্রমাণের মাধ্যমে। তার দাবি হচ্ছে ফসিলের আবিষ্কার কিংবা পৃথিবীর সঠিক বয়স নির্ণয় নাকি বাইবেলের পরাজয়, কোরানের নয়। অথচ মুসলিমরা আব্রাহামিক ধর্মের দুই পূর্বসূরী থেকে প্রায় সবকিছুই নকল করেছে। কেবল মস্তিষ্ক নিয়েই গবেষণার আর্টিকেল এই লোক এক জীবনে পড়ে শেষ করতে পারবে না, আর সেখানে সে বলছে কোষের উৎপত্তির ব্যাখ্যা নাকি বিজ্ঞান দিতে পারেনি। পৃথিবীকে মানুষের উপযোগী করে তৈরির জন্য মহাবিশ্ব এভাবে সেটআপ করা হয়নি কোনো ঈশ্বরের দ্বারা, বরং মানুষ ও অন্যান্য জীবেরা এই সেটআপ এ টিকে থাকার জন্য নিয়মিত বিবর্তিত হয়ে চলেছে। মানুষের শরীর নিখুঁত কোনো সত্তা না, অসংখ্য বায়োলজিক্যাল খুঁত বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন। আস্তিক্যের সাথে নৈতিকতার সম্পর্কের দাবি করা হলেও বিশেষ করে বিশাল সংখ্যক নাস্তিকদের নর্ডিক দেশগুলোতে জেলগুলো বন্ধ করে দিতে হচ্ছে অপরাধীর অভাবে, অন্যদিকে প্রায় শতভাগ আস্তিকদের দেশগুলোতে কয়েদিদের জায়গা দেয়া যায় না জেলগুলোতে। তার কথিত স্রষ্টা প্রদত্ত 'বিবেক' তথা বিভিন্ন স্পেসিস এর মধ্যকার আপাত সহমর্মিতার ব্যাখ্যা দেয় জৈব বিবর্তন তত্ত্ব। এই লোক অত্যন্ত নির্লজ্জের মতো বহুবিবাহের পক্ষে লজিক্যাল ফ্যালাসি দিয়েছেন এবং তার জানা উচিত জাহেলিয়াত যুগ সংক্রান্ত কোরানের অনেক দাবি মিথ্যা। এই লোকের মতে, ঘরে অবস্থান করার বিধান নাকি কেবল নবী মুহাম্মদের স্ত্রীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল! তাছাড়া তিনি নারীদের বাইরে কাজ করার ফল হিসেবে এতিমখানার উৎপত্তির কথা বললেও একাত্তরের লক্ষ লক্ষ বীরাঙ্গনার সন্তানদের দায়িত্ব যে পশ্চিমারাই নিয়েছিল সেটা কি জানেন? পশ্চিমাদের এতিমখানার ব্যাপারে চিন্তিত এই লেখক মুসলিম প্রধান দেশগুলোর বিশাল পরিমাণে বিদ্যমান এতিমখানার ব্যাখ্যা কেন দিলেন না? নির্দিষ্ট কোনো আদিবাসী জাতির নাম উল্লেখ না করেই এই লেখক বললেন আদিবাসী নারীরা নাকি অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় থাকে আর সেটা দেখতে অভ্যস্ত আদিবাসী পুরুষরা নারী শরীরের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে মাসে একবার মাত্র ইন্টিমেসিতে অংশ নেয় এবং গর্ভবতী হওয়ার পর ঐ আদিবাসী নারীর কাছে পুরুষটি দুই বছরেও একবার আসে না! তিনি অবশ্য 'উপজাতি' শব্দটি ব্যবহার করেছেন। তিনি ইসলামের বিধান অনুযায়ী কথিত পর্দার পক্ষে বলতে গিয়ে বললেন "নিষিদ্ধ 'জিনিস [নারী]' অধিক লোভনীয় ও আকর্ষণীয়"! অবাধ নগ্নতার ফলে নাকি পুরুষদের কৌতূহল ও যৌন আকর্ষণ হ্রাস পায়! পশ্চিমের দেশগুলোতে নারীরা নাকি এজন্য নিজেদের শরীরের মহত্ব, কমনীয়তা ও আকর্ষণীয়তা হারিয়ে ফেলেছে! তিনি কোথায় পেলেন যে ইউরোপিয়ান নারীদের বিয়ের সময় জামাইকে যৌতুক দিতে হয়? তার দাবি অনুযায়ী আধুনিক মনোবিজ্ঞানের কোথায় বলা আছে বৌকে মারধর ও শয্যা ত্যাগের ইসলামিক বিধান বিজ্ঞানসম্মত? এই লোক বলছেন বিজ্ঞান নাকি আবিষ্কার করেছে নারীরা অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করার মধ্য দিয়ে আনন্দ খুঁজে পায়! আবার নারীরা নাকি আনন্দ খুঁজে পায় নিজের উপর অন্যের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা অর্থাৎ ঝগড়া ও আধিপত্য মেনে নেয়ার মধ্য দিয়ে! তার মতে, বিখ্যাত নিধার্মিকদের প্রায় সবাই ছিলেন পুরুষ। একজন নারীর রাষ্ট্র পরিচালনা, সেনাবাহিনীতে যোগদান, দর্শন চর্চা নাকি অদ্ভুত ব্যাপার! তিনি বিশ্বাস করেন, নারী ও পুরুষের ভেদাভেদ প্রকৃতি প্রদত্ত। রান্না, সেলাই, সন্তানের লালনপালন, গৃহ ব্যবস্থাপনা, সংসার পরিচালনা করা নারী জাতির সাথে নাকি পুরুষদের তুলনা করা বোকামি! তিনি পুরুষ রাজনীতিবিদ হিসেবে মার্ক্স ও স্তালিনের নাম নিয়েছেন!! পুরুষ পরিবারের জন্য সম্পদ অর্জন ও ব্যয় করে দেখে ইসলাম অনুযায়ী পুরুষ নারীর দ্বিগুণ সম্পত্তি পায়! অথচ কলকাতায় একবার জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে ৮৫% ঘরে কন্যা সন্তানরা মা-বাবাকে দেখে রাখছে চাকরি করে, যা জরিপ না চালালেও নির্দ্বিধায় বাংলাদেশের জন্যও সত্য। তিনি ইসলামে স্বামী-স্ত্রীর 'মধুর' সম্পর্কের ব্যাপারে সাফাই গাইতে নবী মুহাম্মদের সাথে তার বৌদের কথিত মধুর সম্পর্কের কথা টেনে আনলেও মুহাম্মদ তার মৃত্যুর পর বৌদের অন্য জায়গায় বিয়ে করা নিষিদ্ধ করেন। এমনকি মুহাম্মদ কর্তৃক আয়েশাকে প্রচন্ড মারধরের ঘটনা সম্পর্কে হাদিসে আছে। নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ইলেক্ট্রন, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদ, সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী, গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে সূর্য, ছোট গ্যালাক্সিগুলো বড়ো গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে ঘোরে - কথাটি বলে তিনি হজের যৌক্তিকতা বোঝালেন আমাদের! ৭ বার তাওয়াফ এর যৌক্তিকতা ব্যাখ্যায় এই গণ্ডমূর্খ রংধনুর ৭ রঙের প্রসঙ্গ এনেছে বিজ্ঞান না জেনেই, এই ছাগল ইলেক্ট্রনের প্রধান ও উপ শক্তিস্তরের ব্যাপারে না জেনেই ৭ সংখ্যা এখানেও আবিষ্কার করেছে, মাতৃগর্ভে ভ্রূণের সপ্তম মাসে পরিপূর্ণতা লাভ করা সম্পূর্ণভাবে বিবর্তনগত জৈবিক ব্যাপার, আর সপ্তাহ-মাস-বছরের জাতিভেদে ইতিহাস সম্পর্কে এই লোক একেবারেই অজ্ঞ। হাজরে আসওয়াদ থেকে শুরু করে দুনিয়ার সব পাথরের উৎপত্তি জানতে কসমোলজির জ্ঞান লাগে যা এই লোকের দ্বারা অর্জন সম্ভব কি? তার মতে, আফ্রিকার 'বর্বর উপজাতি' মাও মাও'দের মাঝে প্রচলিত একেশ্বরবাদী ধারণার অর্থ নাকি তাদের কাছে ইসলামের কোনো নবী গিয়েছিল! নিয়াম নিয়াম, ডিনকা ও শিলুক নামক 'নিগ্রো' 'উপজাতিদের' মাঝে প্রচলিত একেশ্বরবাদী ধারণার অর্থ নাকি একই!

......................................................................................

ভারতে রাজপুতদের নানা বীরত্বগাথা নিয়ে বর্তমানে অনেক সিনেমা ও সিরিয়াল তৈরী হয় যেগুলোর কাহিনীর প্রায় সবগুলোই বিতর্কিত। আর এই কাহিনী তথা মিথগুলোর প্রধানতম সংকলন ধরা হয় ইংরেজ অফিসার জেমস টড এর এই বইটিকে। রাজস্থানের চারণ কবিদের মুখে মুখে প্রচলিত অজস্র কাল্পনিক মিথের সংকলন এটি। আর এই বইটিকে মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করে উনিশ শতকের অবিভক্ত ভারতের সাম্প্রদায়িক লেখকদের পাশাপাশি প্রগতিশীল বলে খ্যাত বহু লেখকও আর্যদের কাল্পনিক বীরত্বগাথা সৃষ্টি করেছিলেন উপমহাদেশে মধ্যবিত্ত হিন্দুদের দ্বারা নব্য জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সৃষ্টির অংশ হিসেবে। এই বইটির রেফারেন্স দিয়ে তারা রাজপুতদের আর্য বীর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করলেও তারা ছিল মূলত হুনদের বংশধর। দীনেশচন্দ্র সেন এর সাথে এজন্য বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো সাম্প্রদায়িক লেখকের বিরোধ তুঙ্গে উঠে। দীনেশচন্দ্রের মতো অনেক প্রগতিশীল লেখক দেখিয়েছিলেন কৃষ্ণের ধর্মীয় নীতিগুলো ছিল আসলে অনার্য স্বাধীন রাজন্যদের পরাজিত করে আর্যদের কেন্দ্রীয়ভাবে রাজনৈতিক ক্ষমতা সংহত করার কৌশল। অন্যদিকে এই ইংরেজ অফিসারের বইটি ছিল মুঘলদের হাতে হেনস্থার স্মৃতির কথা মাথায় রেখে পাল্টা প্রোপাগান্ডা সৃষ্টি।

.........................................................................................

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড۔ মিলন কান্তি নাথ হুমায়ুন আজাদের ভাষা বিজ্ঞানের উপর লিখিত একটি বইয়ের ব্যাপারে অনেকগুলো প্রবন্ধ লিখে প্রমাণ করেছিলেন যে, বইটির সম্পূর্ণটাই চৌর্যবৃত্তির ফসল। এজন্য বাংলা একাডেমি হুমায়ুন আজাদের বইটি বাজার থেকে উঠিয়ে নিয়ে উনার কাছে ব্যাখ্যা দাবী করলে উনি উল্টো একাডেমির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১৫ জনের মতো ব্যক্তির লেখালেখির মধ্যে বিভিন্ন অসঙ্গতি বের করলেন। নিজেদের লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে এজন্য তারা আজাদের উপর থেকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগটা উঠিয়ে নিয়েছিলেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে 'নারী' বইটির অনেক কিছু সিমোন দ্য বোভোয়ার এর লেখা থেকে এবং 'আমার অবিশ্বাস' বইটির অনেক কিছু বার্ট্রান্ড রাসেলের 'Why I Am Not A Christian' লেখাটি থেকে চুরি করে নিজের লেখাগুলোকে 'মৌলিক' হিসেবে দাবী করার অভিযোগ আছে।

......................................................................................

কিছু নির্বাচনপন্থী বামেদের 'আদিবাসী বাঙালি' টার্মটা আবিষ্কার করতে দেখে সমরেশ এর মতো ভন্ড 'বামপন্থী' লেখকের দুইটা বইয়ের কথা মনে পড়লো। তিনি 'এত রক্ত কেন' বইটিতে ত্রিপুরার আসল অধিবাসীদের 'উপজাতি', 'জঙ্গি' এবং 'সন্ত্রাসবাদী' বলে সম্বোধন করেছেন আর 'অগ্নিরথ' বইটিতে তিনি পাহাড়ি জাতিদের ধর্ষক থেকে শুরু করে আরো বহু কিছু বানিয়ে উভয় বইয়েই বহিরাগত বাঙালিদের অবস্থানের পক্ষে নানা কুযুক্তি দেখিয়েছেন। তাছাড়া 'মুক্তমনাদের' অতি প্রিয় হুমায়ুন আজাদ তার 'পার্বত্য চট্টগ্রাম: সবুজ পাহাড়ের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হিংসার ঝরনাধারা' বইটিতে উগ্র জাতীয়তাবাদের নগ্ন প্রদর্শন করে গেছেন অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে।

.......................................................................................

ড. মুহম্মদ এনামুল হক এর মধ্যে মুসলমানিত্ব এতো বেশি জেগে উঠেছিল যে, তিনি গবেষণার সময়ও অসততা অবলম্বন করে ঘোষণা করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। উল্লেখ্য, এটা ছিল সেই সময় যখন তুর্কিদের বর্বর আক্রমণে সাহিত্য রচনা প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।


Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]