পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-তিন]



প্রফেসর ইউনূস নিজের স্বার্থে বিদেশী দাতাদের কাছ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় অবৈধভাবে তহবিল স্থানান্তর করেছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। ২০১০ সালে টম হেইনম্যানের ড্যানিশ ডকুমেন্টারি ‘ক্ষুদ্র ঋণে ধরা (কট ইন মাইক্রো ডেবট)’ এ ড.ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের বিরুদ্ধে নরওয়েজিয়ান এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন (নোরাড) এর বাংলাদেশে দরিদ্রদের আবাসন সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে ব্যাংককে দেয়া ঋণের জন্য প্রদান করা প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিল সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল।

https://youtu.be/NSkyXXOKa0Y?feature=shared

ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিল করার জন্য বিশ্ব ব্যাংককে প্রভাবিত করা থেকে শুরু করে কর ফাঁকি, দাতা তহবিলের অবৈধ স্থানান্তর, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিদেশ ভ্রমণ বিধি লঙ্ঘন প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে অভিযুক্ত।

প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ টেলিকম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় এই মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে (গ্রামীণ টেলিকম) উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছিলেন। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গ্রামীণ টেলিকম (জিটি) এবং এর পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ৩,০০০ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং মামলায় তদন্ত শুরু করেছিল হাসিনা সরকারের আমলে। অভিযোগের মধ্যে ছিল কর্মচারীদের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫% এর অপব্যবহার; আইনজীবীদের ফি এবং শ্রমিকদের বেতন থেকে অন্যান্য চার্জ হিসাবে ৬% অবৈধভাবে কাটা; কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিল থেকে ৪৫.৫২ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ এবং কোম্পানি থেকে ২, ৯৭৭ কোটি টাকা অবৈধভাবে পাচার করা।

 ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য ড. ইউনূস এবং অন্য তিনজনের বিরুদ্ধে কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ কর্তৃক শ্রম আইনের ধারা ৪, ৭, ৮, ১১৭ এবং ২৩৪ এর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের শ্রম আইন লঙ্ঘনের জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন এটা স্বীকার করে যে, তার প্রতিষ্ঠিত একটি সামাজিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান শ্রম আইন ভঙ্গ করেছে।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগও উঠেছিল যে, তিনি তার বিরুদ্ধে গ্রামীণ টেলিকম ইউনিয়ন এর শ্রমিক ও কর্মচারীদের দায়ের করা ১১০টি মামলা ২৫০ মিলিয়ন টাকায় বেআইনিভাবে নিষ্পত্তি করেছিলেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রাজস্ব কর্তৃপক্ষ ১.৫১ মিলিয়নের বেশি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ কর পরিশোধ না করার জন্য তাকে তলব করেছিল।

মার্চ, ২০১১ সালে ইউনূসকে দেশের অবসর আইন অনুযায়ী ব্যাংকের সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করার অনুরোধ করা হয়েছিল, যেখানে বলা ছিল অবসরের বয়স ৬০। ইউনূসের বয়স তখন ৭০ বছর। হাসিনা সরকার তাকে ‘উপদেষ্টা ইমেরিটাস’ হিসাবে কাজ করার আমন্ত্রণ জানায়, কিন্তু তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আইনি লড়াইয়ে হেরে যান তিনি।

তারপর তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে তার অবস্থান পুনরুদ্ধার করার জন্য বিদেশী শক্তি, বিশেষ করে আমেরিকা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের আইনপ্রণেতা, তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন এবং তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের স্ত্রী চেরি ব্লেয়ারকে লবিং করে তার পক্ষে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য সরকারকে চাপ দেন। খুব বাস্তব অর্থে, একজন নোবেল বিজয়ী তার ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিক বিদেশী দেশ এবং সংস্থার সাহায্যের জন্য আবেদন তার দেশপ্রেমকে ঠিক প্রতিফলিত করে না।

দেশের সর্ববৃহৎ কাঠামো পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে কুৎসিতভাবে অস্বীকৃতি জানানোর পেছনে ড. ইউনূসের হাত ছিল বলে অভিযোগ আছে। প্রত্যাহার করার সময় বিশ্বব্যাংক সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতি নিয়ে অনেক শোরগোল করেছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে কানাডার একটি আদালত কথিত দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে দেয়। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রবার্ট ব্রুস জোয়েলিকস বলেছিলেন ঋণ বাতিল করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ বাংলাদেশ এর অংশীদার দেশগুলোর এবং ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কখনও ঋণখেলাপি হয়নি। পরে জানা যায় জোয়েলিককে বিশ্ব ব্যাংকের সভাপতি হিসাবে তার শেষ কার্যদিবসের শেষ মূহুর্তে অর্থায়ন বাতিল করার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়েছিল।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Robert_Zoellick

ক্ষুদ্রঋণ নিরীক্ষণকারী সংস্থা পিকেএসএফ এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান ডক্টর কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ ক্ষুদ্রঋণকে বাংলাদেশের দরিদ্রদের জন্য ‘মৃত্যুর ফাঁদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Qazi_Kholiquzzaman_Ahmad

২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন বাংলাদেশী সেনাবাহিনী দ্বারা সমর্থিত হয়েছিল এবং দেশে সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ ছিল, তখন কেবল তাকেই রাজনৈতিক দল গঠন করে কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০০৭ সালে ড. ইউনূস দেশের রাজনীতির ‘সংস্কার’ করার জন্য রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য দেশবাসীর সমর্থন চেয়েছিলেন। জঘন্য চুক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের তার পরিকল্পনা সেসময় বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এমনকি রোহিঙ্গাদের রক্ষায় ড. ইউনুস সামান্যই আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার স্ত্রী আফরোজী ইউনূসসহ পরিবারের সদস্যরা দেশে-বিদেশে বাড়ি, ব্যাংক ব্যালেন্সসহ বিপুল সম্পদের মালিক। ঢাকার গুলশানে ড. ইউনূসের আছে ৫ হাজার ৪শ বর্গফুটের ১২ কোটি টাকার ফ্ল্যাট। কলাবাগানে আছে ৩ কোটি টাকা মূল্যের ৩ হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট। এছাড়া স্পেনে রয়েছে রাজকীয় বাড়ি। চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে রয়েছে জমিসহ অনেক সম্পদ। অন্যদিকে অধ্যাপক স্ত্রী আফরোজী ইউনূসের নামে আছে উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৭০ নম্বরে ৫ কাঠার ওপরে ৫ তলা আলিশান বাড়ি। স্ত্রীর নামে রয়েছে মিরপুরের লালকুঠিতে ৩০ কাঠা জমি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ৩ বিঘা জমি। লন্ডনে তার নামে বাড়ি আছে। ড. ইউনূসের নামে প্রায় ৫৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র আছে দেশে। নোবেলসহ বিভিন্ন পুরস্কারের টাকা এর অংশ। যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশের ব্যাংকে ড. ইউনূসের বিপুল পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত আছে। বর্তমান স্ত্রী ও কন্যার নামে কয়েক কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র আছে। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ড. ইউনূস প্রথম স্ত্রীর মেয়ে মনিকা ইউনূসের নামে যুক্তরাষ্ট্রে একটি ফ্ল্যাট ও ১০ কোটি টাকা নগদ অর্থ দিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। প্যাকেজেস করপোরেশন পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হলেও মূলত এটি ইউনূসের। গ্রামীণের টেলিকমসহ সহযোগী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার টাকার অংশীদারিত্ব আছে ড. ইউনূসের। গ্রামীণের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিশ্বস্ত এমডি ও বেনামী ব্যক্তিদের নামে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পদ আছে তার, এমন কথাও শোনা গেছে। হাসিনা সরকারের সময় এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গিয়েছিল ড. ইউনূস ও তার পরিবারের সদস্যদের ইনকাম ট্যাক্সের ফাইলে বর্ণিত জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সম্পদের দেয়া তথ্যের মিল নেই। ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা বেরিয়ে এসেছিল এনবিআর এর বিশেষ প্রতিবেদনে। মানি লন্ডারিং আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা ও রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ১২৫ নোবেলজয়ী এবং ১১৭ জন ব্যবসায়ী (!) ও সুশীল নেতা, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেছিলেন। এই বছরের ২৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এ সেটি প্রকাশিত হলে হইচই পড়ে যায়। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় এটি আসলে একটি বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। ঐদিন ওয়াশিংটন পোস্টের সাত নম্বর পৃষ্ঠায় ড. ইউনূসের বিজ্ঞাপনটি প্রকাশিত হয়। সাদাকালো পাতায় প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের জন্য তারা ৮০৭ ডলার চার্জ করে। ড. ইউনুসের পক্ষে প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটি ৫ কলাম ১৯ ইঞ্চি। ফলে এর পেছনে খরচ হয় ৭৬ হাজার ডলারের বেশি, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮৫ লাখ টাকারও বেশি। এটি শুধু বিজ্ঞাপন প্রকাশের খরচ। বিজ্ঞাপন বানাতে অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নাম ব্যবহার করতে আলাদা টাকা দিতে হয়। যে বিজ্ঞাপনী সংস্থা এ বিজ্ঞাপনটি তৈরি করে, অর্থাৎ যারা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে তাদের ফি আলাদা।

ড. ইউনূস ‘অন্যায় আচরণের শিকার’- এমন অভিযোগ করে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এর আগেও খোলা চিঠি লিখেছিলেন বিশ্বের ৪০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি। যা গত ৭ মার্চ মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয়। ওয়াশিংটন পোস্টের সাত নম্বর পৃষ্ঠাটি বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার হয়। ৭ মার্চ ঐ  পৃষ্ঠায় সাড়ে ১৮ ইঞ্চি, পাঁচ কলামে খোলা চিঠিটি ছাপানো হয়। বিজ্ঞাপনের আকার ছিলো সাড়ে ৯০ কলাম ইঞ্চি। বর্তমানে ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতি কলাম ইঞ্চি বিজ্ঞাপনের রেট ৮০৭ ডলার। সেই হিসাবে ইউনূসের এই বিজ্ঞাপনে খরচ পড়েছে ৭৩ হাজার ৩৩ ডলার। টাকায় যার মূল্য দাঁড়ায় ৭৮ লাখ ১৪ হাজার ৫৮৪ টাকা।

ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম ‘শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের’ চার হাজার ৭০০ কোটি আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে ১৭৬ জন তাদের হিস্যার ৪৩৭ কোটি টাকার জন্য অভিযোগ করেছেন। পরে অভিযুক্তরা মামলা করার প্রস্তুতি নিলে সেই টাকা তাদের দিয়ে সমঝোতা করেন ইউনূস। তার আইনজীবীর অ্যাকাউন্টে ১৬ কোটি টাকা পাওয়া যায় অভিযুক্তদের সাথে সমঝোতা করানোর জন্য। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কামরুজ্জামান, ফিরোজ মাহমুদ, মাইনুল হাসানের অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায় ১৭ কোটি টাকা, যা তাদের দেয়া হয় অভিযোগ উত্থাপনকারীদের ম্যানেজ করার জন্য।

গ্রামীণ টেলিকমের ২৬ বছরের কার্যক্রম চলাকালে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ আছে। এই দীর্ঘ সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রতিবছর ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত কর ফাঁকি দিয়েছেন এমন অভিযোগ আছে। ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গ্রামীণ টেলিকমে ড. ইউনূস ২৫ শতাংশ কর ফাঁকি দেন। ওই সময় কর ছিল ৩৫ শতাংশ, দিয়েছেন মাত্র ১০ শতাংশ। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূস কর ফাঁকি দেন বছরে ২০ শতাংশ। ঐসময় কর ছিল ৩৫ শতাংশ, দিয়েছেন মাত্র ১৫ শতাংশ। ২০০৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমে প্রতিবছর ১৫ শতাংশ কর ফাঁকি দেয়া হয়েছে। ঐসময়ের মধ্যে কর ছিল ৩৫ শতাংশ, আর প্রদান করেছিলেন মাত্র ২০ শতাংশ। ড. ইউনূসের কর সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ বিষয়ে হাসিনা সরকারের সময়ের রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ পরিচালিত তদন্তে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় ড. ইউনূস নিজে এবং তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো তার নির্দেশনাতে কর ফাঁকির অপরাধে জড়িত ছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তিনটি যথাক্রমে ১. সাউথ ইস্ট ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নম্বর ০২১২১০০০২০০৬১), ২. স্ট্যান্ডান্ড চার্টার্ড ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নম্বর ১৮১২১২৭৪৭০১) এবং ৩. রূপালী ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নম্বর-০৪৮৯০১০০০৮০৯৬)। তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে ২০০০ সালে খোলা সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটি (অ্যাকাউন্ট নম্বর ০২১২১০০০২০০৬১) ড. ইউনূসের মূল ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছিল। এই অ্যাকাউন্টে ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১১৮ কোটি ২৭ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬৮ টাকা রেমিট্যান্স এসেছে। এই রেমিট্যান্সের বেশির ভাগ ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫২ টাকা এসেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়। সেই সময়েই একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রয়াস করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিদেশ থেকে টাকা এনে ড. ইউনূস রাজনৈতিক দল করতে চেয়েছিলেন এমন প্রশ্ন উঠে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ট্যাক্স ফাইল বিশ্লেষণে উঠে এসেছিল ২০০৩ সালের পর তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে ২০০৫-০৬ কর বছরে মোট ৯৭ কোটি চার লাখ ৬১ হাজার ১৯১ টাকা রেমিট্যান্স পাওয়ার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু ঐসময় তার ব্যক্তিগত সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রেমিট্যান্স পাওয়ার পরিমাণ ১১৫ কোটি ৯৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৪ টাকা। অর্থাৎ ঐসময় তিনি ১৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৫ টাকার রেমিট্যান্স পাওয়ার তথ্য কর ফাঁকি দেয়ার লক্ষ্যে তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে গোপন করেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের ‘ডেবিট অ্যানালিসিসে’ উঠে এসেছিল, অপ্রদর্শিত অর্থসমূহের মূল অংশ তিনি সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অন্য দু'টি অ্যাকাউন্ট, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ১৫ নম্বর ব্রাঞ্চের ট্র্যাভেল ইন্টারন্যাশনাল লি. নামের (অ্যাকাউন্ট নম্বর ৭৩৩০০০০০৩৩৩৯) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১১ কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৬৭ টাকা এবং ০০৩৫ নম্বর ব্রাঞ্চের (অ্যাকাউন্ট নম্বর ৯০৩০৩১৬০৯১০) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দুই কোটি ৫২ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন। অর্থপাচারের জন্যই এভাবে টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। তৎকালীন সরকারকে কর ফাঁকি দেয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর বছরে ড. ইউনূস ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে নিজস্ব সাউথ ইস্ট ব্যাংকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ রেমিট্যান্সের তথ্য গোপন করেন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তিনি রেমিট্যান্স পেয়েছিলেন ১৫ কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার ৪৭ টাকা। কিন্তু তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শন করেন ৯ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪৮৯ টাকা। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং ট্যাক্স বা কর ফাইলের সঙ্গে এখানে পার্থক্য রয়েছে পাঁচ কোটি ৯৬ লাখ ৭২ হাজার ৫৫৯ টাকা। ২০০৮-০৯ কর বছরে মুহাম্মদ ইউনূস রেমিট্যান্স পেয়েছিলেন ১১ কোটি ৮৩ লাখ ১৪ হাজার ৪১০ টাকা। অথচ তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেন ১০ কোটি ৪০ লাখ ২৪ হাজার ৮৩২ টাকা। এখানে তিনি এক কোটি ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৭৮ টাকার তথ্য গোপন করেন ২০০৯-১০ কর বছরে মুহাম্মদ ইউনূস রেমিট্যান্স পেয়েছিলেন ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৫১ হাজার ১৯৫ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেন ১৮ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ৭৩১ টাকা। এখানে তিনি এক কোটি ৯৬ লাখ ২২ হাজার ৪৬৫ টাকার তথ্য গোপন করেন। ২০১০-১১ কর বছরে ড. ইউনূস রেমিট্যান্স পেয়েছিলেন আট কোটি ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ২০৪ টাকা। অথচ তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেন ছয় কোটি ৬০ লাখ ৪৪ হাজার ৯২ টাকা। এখানে তিনি এক কোটি ৫৮ লাখ ২১ হাজার ১১২ টাকার তথ্য গোপন করেন। ২০১১-১২ কর বছরে ড. ইউনূস রেমিট্যান্স পেয়েছিলেন পাঁচ কোটি ৯১ লাখ পাঁচ হাজার ৫৮৬ টাকা। আর ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেন চার কোটি ৬৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭২ টাকা। এখানে তিনি এক কোটি ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৪ টাকার তথ্য গোপন করেন। ২০১২-১৩ কর বছরে ড. ইউনূস রেমিট্যান্স পেয়েছিলেন আট কোটি ৩৭ লাখ দুই হাজার ৭৭ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেন ছয় কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৫ টাকা। এখানে তিনি এক কোটি ৮৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪১২ টাকার তথ্য গোপন করেন। ২০১৩-১৪ কর বছরে ড. ইউনূস রেমিট্যান্স পেয়েছিলেন ১০ কোটি ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ৩৩৬ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেন সাত কোটি ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৪৪ টাকা। এখানে তিনি দুই কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৩ টাকার তথ্য গোপন করেন। ২০১৪-১৫ কর বছরে ড. ইউনূস রেমিট্যান্স প্রাপ্ত হয়েছিলেন সাত কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ২০৭ টাকা। অথচ ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেন পাঁচ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৯৮ টাকা। এখানেও তিনি এক কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬০৯ টাকার তথ্য গোপন করেন। ২০০০ সালের পর থেকে এমন প্রতিটি কর বছরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রাপ্ত হয়ে কোটি কোটি টাকার তথ্য গোপন করে সরকারের কর ফাঁকি দিয়েছেন। ২০০৫-০৬ কর বছর থেকে শুরু করে ২০২২-২৩ কর বছর পর্যন্ত সরকারকে কর ফাঁকি দেয়ার লক্ষ্যে তিনি ১৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩৫ টাকা রেমিট্যান্সের তথ্য গোপন করেন।

এই ক্রিমিনাল তথাকথিত সাজানো আন্দোলনের সময় তার ফেসবুকের প্রোফাইল লাল করেছিল! ২০১৬ সালের ১১ অক্টোবর উইকিলিকস এর ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী হিলারি ক্লিনটনের 'ক্লিনটন ফাউন্ডেশন' থেকে আইএস জঙ্গিরা অর্থ সহায়তা পেয়েছে। আর হিলারির ঘনিষ্ট বন্ধু এই ইউনূস এই ফাউন্ডেশনে ডোনেশন দিয়েছিল।

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]