ফিলিস্তিন
ফিলিস্তিনের বিখ্যাত শিল্পী নাজি আল আলির বড় ছেলে খালিদ আল আলি বাবার কাজ নিয়ে ২০০৯ সালে ‘A Child of Palestine’ বইটি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন-
"আমার বাবা জানতেন, তার কাজ তার মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। কিন্তু ভয় পেয়ে ঘরে বসে থাকার মানুষ তিনি নন। তিনি মনে করতেন না, কার্টুনিস্ট হিসেবে তার কাজ শুধু মানুষকে হাসানো। তিনি চাইতেন, আপনি ভাবুন!"
তার রহস্যময় মৃত্যুর পর আল ক্বাবাস পত্রিকার সম্পাদক বলেছিলেন-
"গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তাকে বার বার হুমকি দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু তিনি বাড়িতে থাকতে নারাজ ছিলেন। তিনি মৃত্যুকে ভয় পেতেন না। জীবনকে অবশ্যই ভালোবাসতেন, কিন্তু তার ছবির মাধ্যমে তিনি যে বার্তা দিতে চাইতেন, তার সাথে ন্যূনতম আপোষ তিনি কখনও করতেন না। যা বলার দরকার তিনি বলতেন, যা আঁকার দরকার তিনি আঁকতেন।"
বিখ্যাত ব্রিটিশ নাট্যকার হ্যারল্ড পিন্টার আজীবন ফিলিস্তিনের জনগণের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। ২০০৮ সালে তার স্বাক্ষরিত এক বক্তব্যে বলা হয়েছিল-
"We're not celebrating Israel's anniversary. We cannot celebrate the birthday of a state founded on terrorism, massacres and the dispossession of another people from their land. We will celebrate when Arab and Jew live as equals in a peaceful Middle East."
১৯৭৮ সালের ২৮শে মার্চ ফিলিস্তিনের জনগণ, আরব জাতি ও পৃথিবীর সকল মুক্তিকামী আন্দোলন একজন সংগ্রামীকে হারিয়েছে, যিনি ফিলিস্তিনি জনগণের উপর ইহুদিবাদী দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। ইসরায়েলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ পূর্ব জার্মানির বার্লিনে ডাঃ ওয়াদি হাদ্দাদকে বেলজিয়ান চকলেটের মাধ্যমে বিষ প্রয়োগে হত্যা করেছিল। ফিলিস্তিনের সমাজতান্ত্রিক ধারার পপুলার ফ্রন্ট ফর দি লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন (PFLP) এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ডাঃ ওয়াদি হাদ্দাদ। তার নেতৃত্বে ১৯৬০-৭০ এর দিকে ইসরায়েলী লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা ও বিমান হাইজ্যাক করা হয়েছিল। ১৯২৭ সালে ফিলিস্তিনে এক অর্থোডক্স খ্রিষ্টান পরিবারে জন্ম নেয়া এই বিপ্লবী বৈরুতের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন। কমরেড ডাঃ ওয়াদি হাদ্দাদের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক ধারার (PFLP) ফ্রন্ট ‘শত্রু সর্বত্র’ ব্যানারে দখলদারীত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী বিপ্লবী সামরিক অভিযান চালায়। জাতীয় মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্বজুড়ে সংগ্রামে তার নেতৃত্বে যোগদানকারী কমরেডদের সহযোগিতায় জাপানের রেড আর্মির বিপ্লবীরা ১৯৭২ সালে লোদ বিমানবন্দরে সাহসী অপারেশন চালায়।
আইসিস জঙ্গীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শহীদ এই কমিউনিস্ট লিডার জাতিতে আর্মেনিয়ান, নাম নুবার ওজানিয়ান। তার নামে আর্মেনিয়ান কমিউনিস্টদের যে গেরিলা দলটি আছে তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে প্রথম ইন্তিফাদায় অংশ নিয়েছিলেন, এখনো যারা ইজরায়েলি বর্বরতার বিরুদ্ধে নিয়মিত বিবৃত দেন।
ফিলিস্তিন সম্পর্কে চার্চিল বলেছিলেন-
"মৃতপ্রায় কুকুরের ঘেউ ঘেউ করার অধিকার নেই। আমি মনে করি, আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ান কিংবা অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের ওপর কোনো অবিচার হয়নি, শক্তিশালী গোষ্ঠী তাদের উচ্ছেদ করেছে। এটাই স্বাভাবিক।"
এই মানুষটার নাম চাগাই এলাদ। তিনি ধর্মের দিক থেকে ইহুদি ও ইজরায়েলের বাসিন্দা হওয়ার পরও ফিলিস্তিনিদের উপর ইজরায়েলি সরকারের বর্বরতার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার ছিলেন এবং এজন্য তিনি সবসময় মৃত্যুর ঝুঁকিতে থাকেন। আল জাজিরার সাংবাদিক শিরিনকে মেরে ফেলার পর সর্বপ্রথম তার মানবাধিকার সংগঠনটি প্রমাণ করে যে ইজরায়েল কর্তৃপক্ষের ভাষ্যগুলো ভিত্তিহীন। ঠিক একইভাবে ধর্মের দিক থেকে খ্রিষ্টান হলেও শিরিন ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। তার মৃত্যুর পর মুসলিম ফিলিস্তিনিরাই তাকে গির্জায় নিয়ে গিয়ে শেষকৃত্যের ব্যবস্থা করেছিল। শিরিন মার্কিন নাগরিক হওয়ার পরও আমেরিকা তদন্ত করেনি এই ব্যাপারে। উল্টো ইজরায়েলের পক্ষ নিয়ে বলেছিল এই ঘটনা নাকি ইচ্ছা করে ঘটানো হয়নি!
কাফকা জায়নবাদের কট্টর বিরোধী ছিলেন ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও। এজন্য উগ্র জায়নবাদী পরিচিত ও বন্ধুদের সাথে তার সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।
একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যে যে পানি ব্যবহৃত হয় তার মধ্যে ৮৫% ব্যবহৃত হয় কেবল কৃষিকাজে। এই পানি প্রবাহে কৃত্রিমভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হলে সঙ্গত কারণেই খাদ্য উৎপাদনে প্রভাব পড়বে এবং আরব দেশগুলো খাদ্য আমদানি করতে বাধ্য হবে। এর জন্য তাদেরকে খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত গোপন চুক্তিতে রাজি হতে বাধ্য করা হবে পশ্চিমাদের সাথে।
'আওয়ার বয়েজ' সিরিয়াল ইসরায়েলিদের দ্বারা নির্মিত। এর তিন নির্মাতার মধ্যে দু'জন ইহুদী এবং একজন আরব-ইসরায়েলি। তারপরও এটা ইসরায়েলিদের অনেকের পছন্দ হয়নি। ইসরায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এটির কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। তিনি এর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান 'চ্যানেল ১২'কে 'ফেইক চ্যানেল' বলে দাবি করেছিলেন এবং একে 'অ্যান্টি সেমিটিক' ট্যাগ দিয়ে বয়কটের দাবি জানিয়েছিলেন।
https://www.haaretz.com/israel-news/2019-08-31/ty-article/.premium/netanyahu-blasts-hbos-our-boys-as-anti-semitic-calls-to-boycott-israeli-channel/0000017f-dc0b-d3ff-a7ff-fdab031a0000
'আওয়ার বয়েজ' টিভি সিরিজটির কাহিনী নির্মিত হয়েছে সত্য ঘটনা অবলম্বনে। ২০১৪ সালে হামাসের কিছু সদস্য তিন ইসরায়েলি কিশোরকে অপহরণ করে এই আশায় যে, তারা তাদের মুক্তিপণ হিসেবে ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসন বন্ধ করতে পারবে এবং প্রতিবাদ মিছিল থেকে আটককৃত হাজার হাজার নিরপরাধ বন্দীর মুক্তির জন্য দেন দরবার করতে পারবে। কিন্তু পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় তারা তিন কিশোরকে হত্যা করে। ইসরায়েলি কিশোরদের অপহরণের পর ইসরায়েল বিশাল অপারেশন শুরু করে।ইসরায়েল ৯ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে এবং আরো ৮০০ জনকে গ্রেপ্তার করে। এর কয়দিন পর তিনজন উগ্র ইহুদী কিশোর মিলে মোহাম্মদ আবু খেদির নামে পূর্ব জেরুজালেমের এক ফিলিস্তিনি কিশোরকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
https://edition.cnn.com/2014/08/22/world/meast/mideast-crisis/index.html?hpt=hp_t2
https://www.huffingtonpost.co.uk/mehdi-hasan/gaza-israel_b_5624401.html
https://www.theguardian.com/world/2014/jul/05/palestinian-boy-mohammed-abu-khdeir-burned-alive
ইসরায়েলি প্রশাসন শুরু থেকে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগকে আমলে না নিয়ে অপহরণের পেছনে ইহুদী সেটেলারদের পরিবর্তে আরবদের উপর দোষ খোঁজার চেষ্টা করতে থাকে, মোহাম্মদ আবু খেদিরের বাবা আবু আইয়্যাদকে তদন্তের নামে আটক রেখে হয়রানি করতে থাকে এবং ইহুদীদের নিষ্পাপ প্রমাণের জন্য উল্টো ভিক্টিম এবং তার পরিবারের বিভিন্ন দোষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে থাকে। মোহাম্মদ আবু খেদিরের লাশ পাওয়ার পরও এবং ইহুদীদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত হওয়ার পরও তারা তদন্তকে রাজনৈতিক খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করে। প্রতিক্রিয়ায় শুরু হয় ইসরায়েলের সাথে ফিলিস্তিনিদের ৫০ দিন ব্যাপী দীর্ঘ সংঘর্ষ। হামাস গাজা থেকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে রকেট নিক্ষেপ শুরু করে। ইসরায়েল গাজায় বিশাল অভিযান শুরু করে। জাতিসংঘ, ইইউ, আমেরিকার নিন্দায় এবং আন্তর্জাতিক চাপে শেষ পর্যন্ত ইসরায়েলিরা বাধ্য হয় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং বিচার করতে। এই মিনি সিরিজে তিন ইসরায়েলি কিশোরের অপহরণের কাহিনী দেখানো ছাড়াও মোহাম্মদ আবু খেদির অপহরণের ঘটনা, তাদের পরিবারের বিচারের দাবি এবং ইসরায়েলি প্রশাসনের বৈষম্যমূলক আচরণের চিত্রগুলো উঠে এসেছে। একইসাথে উঠে এসেছে ইসরায়েলের রেসিজম, আরবদের প্রতি তাদের তীব্র ঘৃণা এবং তাদের মধ্যকার ধর্মীয় উগ্রপন্থার কিছু দৃশ্য। নির্মাতারা সিরিয়ালটির শুটিং করেন অত্যন্ত গোপনে। প্রচার শুরু হওয়ার পর তারা ইহুদীদের কাছ থেকে একাধিকবার হুমকি পেয়েছিলেন। সমালোচকদের দ্বারা প্রশংসিত হওয়া সত্ত্বেও ইন্টারনেটে IMDB সহ চলচ্চিত্র বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইটে সিরিয়ালটির রেটিং খুবই কম, ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার মতে এর পেছনে সংঘবদ্ধ এবং পরিকল্পিত প্রচেষ্টা কাজ করেছে।
https://www.haaretz.com/israel-news/2019-08-20/ty-article/.premium/why-you-must-watch-hbos-brilliant-new-israeli-drama-our-boys/0000017f-f6da-d887-a7ff-fefee7a20000
Comments