বাম রঙ্গ [পর্ব-তিন]
"....আর এর ভেতরে প্রথাগত মূল ধারার বামপন্থী দলগুলো এখনো সেই স্বপ্নের ঘরেই রয়েছে যে একদিন তারা 'ক্ষমতা অধিগ্রহণ' করবে। কিন্তু খুব অদ্ভুতভাবেই তারা বর্তমান সময়ের প্রয়োজনকে দেখতে অস্বীকার করতে এবং এ বিষয়ে কিছু কাজ করতে নির্বিকার এবং একেবারেই অনিচ্ছুক রয়ে গেছে। তারা যেন নিজেরাই নিজেদের অবরোধ করে রেখেছে এবং এমন একটি অগম্য বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে তারা নিজেদের পশ্চাৎপদ করে রেখেছে যেখানে সেই প্রাচীন ভাষা ব্যবহার করে সুপ্রাচীন তত্ত্ব-তর্কের কূটকৌশলগুলোকেই আউড়ে যাওয়া হয়, যা এখনকার দিনের খুব কম মানুষই বুঝতে পারেন।...."
- অরুন্ধতী রায় (লিসেনিং টু দ্য গ্রাসহোপার্স)
..............................................................
নিজেদের দ্বারা নির্বাচনে গিয়ে সরকার গঠনের মুরোদ না থাকলেও কয়েকটা সিটের আশায় নির্বাচনপন্থী বামেরা দেশে দেশে একই আচরণ করে যায় আজীবন। মিসরে তরুণ সমাজের নেতৃত্বে যে মুবারকবিরোধী জনমত তৈরি হয়েছিল এটা হোয়াইট হাউস প্রশাসনের অজানা ছিল না। মিসরের এই তথাকথিত 'ফেসবুক বিপ্লব' এর সঙ্গে যারা জডিত ছিল তাদের কেউ কেউ ওয়াশিংটনে প্রশিক্ষণ নিয়েছে। বিশেষ করে 'Kefaya Movement' কিংবা 'April 6 Movement'কে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা থেকে সাহায্য করা হয়েছিল। এপ্রিল সিক্স এর সাথে মার্কিনিদের গোপন আঁতাত এর ব্যাপারটা উইকিলিকস এ এসেছে। এরা মুরসি'র বিরোধিতা করেছিল মূলত তার ইজরায়েল বিরোধী মনোভাবের কারণে। এরপর নিয়ে আসা হয় জেনারেল সিসি'কে। ফিলিস্তিনের দুই ইন্তিফাদা আর লেবানন যুদ্ধের সময় মুবারকের সাথে ইজরায়েলের গলায় গলায় ভাব ছিল। বহু যুদ্ধে মুবারক ইজরায়েলের আইডিএফ ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স এজেন্সিগুলোকে তল্লাসীর অজুহাতে আরবদের উপর নিপীড়ন চালানোর অনুমতি দিয়েছিল আর তাদের সাহায্য করেছিল মিশরের সেনাবাহিনী। আনোয়ার সাদাতকে মারা হয়েছিল ইজরায়েলের প্রতি জি হুজুর মনোভাবের কারণে এবং বিদ্রোহী অফিসাররা পরে মুবারককে ক্ষমতায় আনে। অথচ মুবারক বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকার পরও পশ্চিমারা কিছু করেনি ইজরায়েলের স্বার্থে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/April_6_Youth_Movement
ওয়াশিংটন ভিত্তিক Carnegie Endowment, RAND কিংবা National Endowment for Democracy এর মতো গবেষণা সংস্থাগুলো মিশরের এই সংস্থাকে আর্থিক সহযোগিতা করেছিল।
https://carnegieendowment.org/
https://www.rand.org/
https://www.ned.org/
নিউইয়র্ক টাইমস ২০১১ সালের ১৪ এপ্রিল 'U.S. Groups helped Nurture Arab Uprisings' শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সেখানে এই সাহায্যের কথা উল্লেখ করা হয়।
https://www.nytimes.com/2011/04/15/world/15aid.html
১৯৮৩ সালে মার্কিন কংগ্রেস National Endowment for Democracy প্রতিষ্ঠা করে, যার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছিল উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা! এই উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠানের জন্য বছরে ১০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়। কিভাবে সাহায্য করা হয়, তার ব্যাখ্যা নিউইয়র্ক টাইমসকে দিয়েছেন এডভোকেসি গ্রুপ Project on Middle East Democracy-র নির্বাহী পরিচালক স্টেফান ম্যাকলিনারনে।
https://pomed.org/
প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় ২০০৮ সালে নিউইয়র্কে কিছু আরব তরুণ একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নিয়েছিল। তাদের তখন শেখানো হয়েছিল কীভাবে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রমোট করা যায়! বাহরাইন, জর্দান ও মরক্কোর তরুণরা এ ধরনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে তারা কিভাবে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গঠন করা যায়, তার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিল! ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় হামলার পর RAND মধ্যপ্রাচ্যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করে আসছে! এই লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে সংগঠিত হতে সাহায্য করে। 'Kefaya Movement' এ ধরনের একটি সংগঠন। সেদেশের নির্বাচনপন্থী বামেরা এদের সমর্থন দিয়েছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Kefaya
Kefaya Movement এর জন্ম ২০০৪ সালে। উদ্যোক্তা ছিল আবু লা আলা মাদি যে একসময় ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টির সঙ্গে জড়িত ছিল। ইসলামিক ব্রাদারহুড পার্টি নিষিদ্ধ থাকায় এর সমর্থকরা Ikhwan Muslim Brotherhood Movement এর জন্ম দেয়। এর নেতৃত্ব দিতো সাঈদ এল কাতাতিনি। ওয়াশিংটন গোপনে এই সংগঠনটিকে সাহায্য করে।
............................................................
বদরুদ্দীন উমর একাত্তরে যুদ্ধের প্রশ্নে নিজেই নীরব ছিলেন এবং পরবর্তীতে স্বীকার করেছিলেন তার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে থাকা উচিত ছিল! অথচ পশ্চিমাদের সাজানো নৈরাজ্যবাদকে বিপ্লবের সাথে তুলনা করে বলেছেন-
"১৯৫২ থেকে যত গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে এটিই সবচেয়ে ব্যাপক।"
.............................................................
বাংলাদেশের নির্বাচনপন্থী বামেদের দেশকে শ্রীলংকার সাথে তুলনার আগে ঐ দেশটির বামেদের ইতিহাস জানতে হবে। 'Janatha Vimukthi Peramuna' নামক নির্বাচনপন্থী বামেরা আন্দোলনকারীদের একটা অংশের নেতৃত্বে ছিল। এদের অনেকেই সরকারের শরিক ছিল এবং তামিল গেরিলাদের দমনে এরা রাজাপাকসে সরকারকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিয়েছিল। এরা রাজাপাকসে'র নির্বাচনী প্রচারণায় পর্যন্ত অংশ নিয়েছিল। রাজাপাকসে'কে ক্ষমতায় আনতে এদের জনসংযোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল সেসময়। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এসব শহুরে রোমান্টিক বামেরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মারলেও শ্রীলংকার গ্রামগুলোতে এদের কোনো কার্যক্রম নেই।
শ্রীলংকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি মৈত্রীপালা সিরিসেনা 'শ্রীলংকান ফ্রিডম পার্টি'র সদস্য ছিলেন, যাদের রাজনৈতিক আদর্শ ছিল সোশ্যাল ডেমোক্রেসি। এর আগে তিনি নির্বাচনপন্থী 'কমিউনিস্ট পার্টি অব শ্রীলংকা'র সদস্য ছিলেন। ইকোনমিক্স টাইমস এর তথ্য অনুযায়ী তিনি জাপান ও ভারতের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন যেটির মাধ্যমে তিনি এই দেশ দু'টিকে কলম্বো বন্দর সম্প্রসারণে অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি জাপান ও ভারতকে ত্রিকোমালি শহরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির অনুমতি দেন।
..............................................................
যখন ২০০০ সালের আগস্ট মাসে কুখ্যাত ব্যবসায়ী হ্যারি ওপেনহেইমার মারা যায় তখন তথাকথিত বামপন্থী ম্যান্ডেলা তার ব্যাপারে বলেছিলেন-
"আমাদের সময়ের অন্যতম সেরা দক্ষিণ আফ্রিকান!"
এটা সেই বদমাইশ যে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বড়ো খনিজ কোম্পানি 'অ্যাংলো-আমেরিকান' এর প্রধান ছিল এবং এই কোম্পানি বর্ণবাদী সরকারের শাসনামলে কালো আফ্রিকান শ্রমিকদের চুষে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার কামিয়েছে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Harry_Oppenheimer
..................................................................
লুলা এমনি এমনি এতটা মসৃণ পথে আবার ক্ষমতায় আসেননি। তিনি বর্তমানে ব্যস্ত আছেন পেনশন সুবিধা কমাতে, নির্বাচনপন্থী দল হলেও সেখান থেকে রেডিকেল কর্মীদের সরিয়ে দিতে এবং আইএমএফ এর গাইডলাইনগুলো বাস্তবায়নে।
যেই বলসোনারো উগ্র ডানপন্থী হিসেবে বামেদের কাছে নিন্দিত, সেই বলসোনারোর মাধ্যমেই ব্রাজিলে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদী চীনের ব্যবসা ক্রমশ বেড়ে চলছিল।
https://www.americasquarterly.org/article/bolsonaro-took-aim-at-china-then-reality-struck/
https://www.bizlatinhub.com/how-brazils-changing-stance-china-benefit-businesses/
https://english.pku.edu.cn/news_events/news/people/9589.html
https://foreignpolicy.com/2022/09/22/brazil-election-china-economy-brics-bolsonaro-lula/
পুরস্কারস্বরূপ চীন তাদের 'ব্রিকস' এ শক্ত অবস্থান করে দেয়।
https://www.orfonline.org/expert-speak/why-china-wants-to-expand-brics/
https://www.elsevier.es/en-revista-mexican-law-review-123-articulo-the-role-china-brics-project-S1870057816300105
আর্জেন্টিনা, ভেনিজুয়েলার মতো দেশগুলো চীনের ব্রিকস জোটে আসতে শুরু করেছিল বলসোনারোর হাত ধরে।
https://www.reuters.com/world/americas/argentina-says-has-chinas-support-join-brics-group-2022-07-07/
https://brazilian.report/liveblog/2022/09/21/china-backs-argentina-brics/
https://thechinaproject.com/2019/01/14/venezuela-china-explained-2/
চীন তাদের মার্কিনিবিরোধী ক্রোধকে বজায় রেখে রাশিয়ার সাথে পাল্টা বিশ্বব্যবস্থায় নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করছিল। পশ্চিমাদের হাত থেকে বিশ্ববাসীকে মুক্তি দেয়ার তথাকথিত প্রত্যাশা জাগিয়ে তুলে নিজেদের একের পর এক সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে দ্বিচারিতা ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনকে জাস্টিফাই করে যাচ্ছিল সমানে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ হলেও সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে তা নিছক ব্যবসা। এই যুদ্ধের মাধ্যমে বেড়েছে সাম্রাজ্যবাদীদের অস্ত্র উৎপাদন। বেড়েছে তেল ও গ্যাসের চড়া দামে বিক্রি। বিশ্বের বহু দেশ প্রত্যক্ষভাবে চাইছে না মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের একাধিপত্য মেনে নিতে। ধীরে ধীরে তারা ঝুঁকেছে চীন-রাশিয়ার দিকে। খোদ ইউরোপে এই মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে। মার্কিন মুল্লুকের ডেমোক্রেটদের কাছে এই লুলা ছিল সবসময় ভরসার প্রার্থী। লুলা সংশোধনবাদী ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী হওয়ার কারণে তার আগের শাসনামলে দরিদ্রদের মধ্যে 'পুঁজিবাদের বিকল্প পুঁজিবাদ', 'পুঁজিতন্ত্রের অন্তর্ভুক্তি হতে পারে' ইত্যাদি জগাখিচুড়ি তত্ত্ব প্রচার করা হয়েছিল 'বলসা ফ্যামিলিয়া', 'ফমি জিরো' জাতীয় প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bolsa_Fam%C3%ADlia
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Fome_Zero
এসব কারণে তাকে মার্কিন বিনিয়োগকারী এবং ধনীদের একাংশ ঐসময় ব্রাজিলের 'সঠিক নেতা' বলে মনে করেছিল এবং ভোটের আগে কৌশলগত সমর্থন দিয়েছিল। পশ্চিমাদের একাংশ ব্রাজিলে বলসোনারোর কার্যকলাপ নিয়ে ২০২০ সাল থেকে সমালোচনা করে আসছিল মূলত চীনা বলয়ে ঝুঁকে পড়ার কারণে। লুলার ৫৮০ দিনের জেল জীবন তাদের কাছে বিকল্প হয়ে দাঁড়ায়। তিন বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের পরও বলসোনারো বিশাল ব্যবধানে হারেনি লুলার কাছে। ব্রাজিলের আঞ্চলিক মিডিয়ার নানা হিসাব থেকে জানা যায় সেখানকার ৫০% এর বেশি মানুষ বলসোনারোর শাসনের উপর থেকে আস্থা হারিয়েছিল। লুলা সম্পর্কে একবার বারাক ওবামা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তিনি নাকি 'একালের বিশ্বের অন্যতম সাফল্যমন্ডিত সর্বশ্রেষ্ঠ রাষ্ট্রপতি'! তবে রিপাবলিকানরা তাকে ভালো নজরে দেখেনি কখনো। দুর্নীতির অভিযোগে লুলার জেল হয় ট্রাম্প এর আমলে। রয়টার্স এর তথ্য অনুযায়ী লুলা জেল থেকে বেরিয়ে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের সাথে পরোক্ষভাবে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
https://www.reuters.com/world/americas/brazils-lula-meet-with-top-us-diplomat-election-nears-2022-09-20/
মার্কিনি ডেমোক্রেটরা লুলাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন 'স্থিতিশীলতা'র জন্য! জো বাইডেন, ম্যাক্রন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল পর্যন্ত বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে লুলাকে!
https://www.newagebd.net/article/185187/congratulations-pour-in-for-lula
জো বাইডেন বলেছেন-
"অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনে লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা ব্রাজিলের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আসছে সময়ে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে একসঙ্গে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।"
ইমানুয়েল ম্যাক্রন লুলার বিজয়কে দেশটিতে "এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা" বলে অভিহিত করেন!
জোসেপ বোরেল বলেছেন-
"ব্রাজিলের নাগরিকরা শান্তিপূর্ণ এবং সুসংগঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে গিয়েছিলেন।”
লুলা নির্বাচনে জয়ের পর চীন ও রাশিয়ার তরফ থেকে বিবৃতি এসেছে। ভারতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীর জয়ের পরও রাশিয়া ও চীনের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়েছিল! চীনের বিবৃতিতে জানানো হয় চীন-রাশিয়ার ব্যবসায়িক স্বার্থ পূরণের কথা। পুতিন লুলাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এসবের প্রধান কারণ হচ্ছে লাতিন আমেরিকায় বাণিজ্যিক কেন্দ্র গড়ে তুলতে ব্রাজিল বড় ফ্যাক্টর। ব্রাজিলের আঞ্চলিক সংবাদ মাধ্যমে দেখানো হয়েছে লুলার নির্বাচনী প্রচারে Tinder, Happn, Grindr জাতীয় ডেটিং এপগুলো পর্যন্ত কাজে লাগানো হয়!
https://www.forbesindia.com/article/lifes/tinder-bumble-happn-or-grindr-dating-apps-are-getting-political-in-brazil/80571/1
https://newsinfo.inquirer.net/1678745/who-you-voting-for-dating-apps-get-political-in-brazil
প্রতিটি আাপে ডেটিংয়ে যাওয়ার আগে "কাকে ভোট দিচ্ছেন" বলে প্রশ্ন করা হয়েছিল! ব্রাজিলিয়ান তরুণী ভিভিয়ান বলেছিলেন-
“ডেটিং এপ থেকেই আমার কাছে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, আপনি সুন্দরী। দয়া করে বলবেন, আপনি কি বামপন্থী?”
ভিভিয়ান বলেছেন, এই প্রশ্নের উত্তর দিলে তবেই পছন্দসই সঙ্গীর তালিকা পাঠিয়েছে ডেটিং এপগুলো।
অস্তিত্ব রক্ষার জন্য আমাজন রেইনফরেস্ট নিয়ে লড়াই করছে ব্রাজিলের আদিবাসীরা বছরের পর বছর ধরে। অথচ জলবায়ু সংকট, বন উজাড়ের সমস্যা বরাবর থেকেছে এই নির্বাচন থেকে শত হাত দূরে। আমাজনে আগুন লাগা কিংবা বন উজাড় নিত্যদিনের ব্যাপার। সারা বিশ্বের মাথাব্যাথা আমাজন হলেও এ নিয়ে কোনো কর্মপরিকল্পনা ও লক্ষ্য নির্ধারণ করতে দেখা যায়নি ব্রাজিলের নির্বাচনে তথাকথিত বামপন্থীদের তরফ থেকে।
https://www.rfi.fr/en/international-news/20221028-the-amazon-a-burning-question-absent-in-brazil-vote
https://blazetrends.com/amazon-a-global-concern-but-absent-in-the-brazilian-election/
https://morocco.detailzero.com/news/89318/Brazil-the-Amazon-a-burning-issue-absent-from-the-electoral-campaign.html
এর আগেও ব্রাজিলে তথাকথিত বামপন্থী সরকাররা ক্ষমতায় থাকলেও সেদেশের এক কোটির উপর মানুষ এখনো নিরক্ষর এবং দেশের ৭৫% সম্পদের মালিক মাত্র ১০% উচ্চবিত্ত!
.........................................................................
পশ্চিমবঙ্গে 'ভেড়ি' বলে একটা টার্ম প্রচলিত আছে যেখানে বিশাল পরিসরে মাছের চাষ করা হয়। নির্বাচনপন্থী বামেরা ক্ষমতায় থাকার সময় 'কো-অপারেটিভ' নাম দিয়ে কলকাতার জোঁকেদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভেড়িগুলো দখল করলেও অর্জিত অর্থের খুব সামান্য অংশ পেতো শ্রমিকরা। বাকিটা যেত স্থানীয় বাম নেতাদের পকেটে, যাদের অনেকে পূর্বে দরিদ্র জীবনযাপন করলেও ভেড়িগুলোর কল্যাণে অবস্থাপন্ন হয়ে যায়। উল্লেখ্য, যেই অংশে মাছ থাকে ওটাকে বলা হয় 'ঘেড়ি' আর এর চারদিকের বাঁধকে বলা হয় 'ভেড়ি'।
................................................................................
"এবং ম্যান্ডেলার দক্ষিণ আফ্রিকার খবর কী? অন্যভাবে ক্ষুদ্র বিস্ময়, ঈশ্বরের রংধনু জাতি হিসাবে পরিচিত? দক্ষিণ আফ্রিকানরা বলে যে তারা একমাত্র অলৌকিক ঘটনাটি জানে যে রংধনুকে কত দ্রুত বেসরকারীকরণ করা হয়েছে, ভাগ করা হয়েছে এবং নিলাম করা হয়েছে সর্বোচ্চ দরদাতার নিকট। ১৯৯৪ সালে অফিসে যাওয়ার দুই বছরের মধ্যে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস বাজারের ঈশ্বরের কাছে খুব কমই একটি সতর্কবার্তা দিয়েছিল। আর্জেন্টিনাকে নিওলিবারেলিজমের পোস্টার বয় হিসাবে প্রতিস্থাপন করার তাড়ার মধ্যে এটি বেসরকারীকরণ এবং কাঠামোগত সমন্বয়ের একটি বিশাল কর্মসূচি চালু করে। ২৬ মিলিয়ন ভূমিহীন মানুষের মধ্যে কৃষিজমি পুনঃবন্টন করার সরকারের প্রতিশ্রুতি অন্ধকার হাস্যরসের রাজ্যে রয়ে গেছে। যখন জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ ভূমিহীন, প্রায় সমস্ত কৃষি জমির মালিক ৬০,০০০ শ্বেতাঙ্গ কৃষক। (কিছুটা আশ্চর্যের বিষয় যে, জর্জ বুশ তার সাম্প্রতিক দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে জিম্বাবুয়ে ইস্যুতে থাবো এমবেকিকে তার 'পয়েন্ট ম্যান' হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন।) বর্ণবাদের অবসানের পর ৪০ শতাংশ দরিদ্রতম কালো পরিবারের আয় প্রায় ২০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। দুই মিলিয়ন লোককে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এইডসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন ছয়শত মানুষ মারা যায়। জনসংখ্যার চল্লিশ শতাংশ বেকার এবং সেই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। মৌলিক পরিষেবাগুলোর কর্পোরেটাইজেশনের অর্থ হলো লক্ষ লক্ষ মানুষকে পানি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এক পক্ষ কাল আগে আমি তেরেসা নাইডুর বাড়িতে গিয়েছিলাম চ্যাটসওয়ার্থ, ডারবানে। তার স্বামী এইডস এ আগের দিন মারা গিয়েছিল। ... সে আর তার দুই ছোট শিশু এইচআইভি পজিটিভ। সরকার পানির বিল এবং ছোট্ট কাউন্সিল ফ্ল্যাটের বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় তার পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। সরকার তার সমস্যা এবং তার মতো লক্ষ লক্ষ লোককে 'খেলাপি সংস্কৃতি' বলে উড়িয়ে দেয়। একটি আন্তর্জাতিক কেলেঙ্কারিতে যা হওয়া উচিত, এই একই সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে মার্কিন আদালতে বিচারককে বর্ণবাদের সময় কোম্পানিগুলোকে তাদের ভূমিকার জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য করার বিরুদ্ধে রায় দিতে বলেছে। এর যুক্তি হলো ক্ষতিপূরণ - অন্য কথায় ন্যায়বিচার - বিদেশী বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করবে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার দরিদ্রতমদের অবশ্যই বর্ণবাদের ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যাতে যারা বর্ণবৈষম্যের সময় কালো মানুষদের শোষণ করে মুনাফা অর্জন করেছিল তারা নেলসন ম্যান্ডেলার রেইনবো নেশন অফ গড দ্বারা সৃষ্ট দয়া থেকে আরও বেশি লাভ করতে পারে। রাষ্ট্রপতি থাবো এমবেকিকে এখনও 'কমরেড' বলে ডাকে সরকারে থাকা সহকর্মীরা। দক্ষিণ আফ্রিকায় অরওয়েলিয়ান প্যারোডি বাস্তব জীবনের ঘরানার অধীনে চলছে।"
- 'এন অর্ডিনারি পার্সন'স গাইড টু এম্পায়ার', অরুন্ধতী রায়
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Council_house
.................................................................................
১৯৩৫ সালে আলবেয়ার কাম্যু ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিলেও এর দুই বছর পর তাকে ট্রটস্কিবাদের সমর্থক হিসেবে পার্টি থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি আলজেরিয়ান পপুলার পার্টির নেতা মেশালি হাদজ'কে (প্রথমদিকে বামপন্থী ছিলেন, পরে উগ্র মোল্লায় পরিণত হন) সমর্থন করতেন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Messali_Hadj
কাম্যু 'The Rebel' লেখায় সমাজতন্ত্রের সমালোচনা করেছেন। এই বইটিকে 'The Myth of Sisyphus' এর সিক্যুয়েল হিসেবে ধরা হয় (সেখানেও তিনি এবসার্ডিটি'র নামে ধোঁয়াশাপূর্ণ বক্তব্যের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক তাত্ত্বিকদের জীবন ও জগৎকে বিশ্লেষণের উল্টো গীত গেয়েছেন)। তিনি তার 'ক্যালিগুলা' নাটকে এবসার্ডিটি'র নামে এই পিশাচকে জাস্টিফাই করেছেন। উল্লেখ্য, সুয়েটোনিয়াস নামের এক ইতিহাসবিদ ক্যালিগুলাকে জাস্টিফাই করতে তার মৃগীরোগ থাকা এবং দাসী কর্তৃক যৌন উত্তেজক মদ খাওয়ানোর কাহিনী আমদানি করেছিলেন।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Suetonius
কাম্যু লেখালেখি ছাড়াও প্রকাশ্যেই বহুবার সমাজতন্ত্রের সমালোচনা করেছেন।
কাম্যু তার 'দ্য মিথ অব সিসিফাস' বইটিতে লিখেছেন-
"মানুষ স্বাধীন কি স্বাধীন নয়, এই জ্ঞানটির প্রতি আমার কোনও আগ্রহ নেই। আমি আমার নিজের স্বাধীনতাটুকুকেই শুধু উপভোগ করতে পারি।"
এটিকে বিতর্কিত ও সংস্কারপন্থী 'পোস্ট মার্ক্সিজম' ঘরানার বই হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এবসার্ডিটি'র নামে তিনি ডন জুয়ানের মতো লুইচ্চাকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করেছেন। মার্ক্সবাদী রাজনৈতিক দলের প্রাক্তন সদস্য হওয়ার পরও তিনি 'দ্য মিথ অব সিসিফাস' বইটিতে লিখেছেন-
"ব্যর্থতার জন্য তার পরিমণ্ডল নয়, মানুষটি নিজেই দায়ী থাকে।"
...........................................................................
বার্মা সোশ্যালিস্ট প্রোগ্রাম পার্টি'কে মূলত দেশটির জেনারেলরা চালায়। তাদের ভাষায় তারা 'বার্মিজ ঘরানার সমাজতন্ত্র' বাস্তবায়নে কাজ করছে!
.......................................................................
“শ্রেণী সমঝোতার ওকালতি করা; সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ধারণা এবং সংগ্রামের বিপ্লবী পদ্ধতিকে পরিত্যাগ করা; বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়া; জাতীয়তা ও দেশের সীমানাগুলো যে ঐতিহাসিকভাবে ক্ষণস্থায়ী, এই সত্য নজর থেকে সরে যাওয়া; বুর্জোয়া বৈধতাকে পূজনীয় করে তোলা; ‘জনগণের ব্যাপক অংশ’ (মানে পেটিবুর্জোয়া) এর বিরূপ হয়ে ওঠার ভয়ে শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গি ও শ্রেণী সংগ্রামকে বর্জন করা - নিঃসন্দেহে এগুলো হলো সুবিধাবাদের মতাদর্শগত ভিত্তি।’’
- লেনিন
Comments