সাদ্দাম ও গাদ্দাফিকে হিরো বানানোর আগে





সাদ্দামের পতনের পর পশ্চিমাদের পুতুল সরকার দ্বারা জাতিসংঘে যে ১২,০০০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল তা অনেকটাই আমেরিকা কর্তৃক সেন্সর করা হয় জমা দেয়ার আগে। মূল রিপোর্টে আমেরিকার ২৪টি কর্পোরেশনের নাম ছিল যারা উপসাগরীয় যুদ্ধের পূর্বে ইরাকের সাথে যৌথভাবে পারমাণবিক এবং প্রচলিত অস্ত্র উৎপাদন সংক্রান্ত কর্মসূচিতে কাজ করেছিল। এসব কর্পোরেশনের মধ্যে ছিল Bechtel, Dupont, Eastman Kodak, Hewlett Packard, Unisys এর মতো কোম্পানি।
....................................................................

পাশের দেশ ভারতে বেচটেল এবং জেনারেল ইলেকট্রিক হলো কুখ্যাত এবং বর্তমানে বিলুপ্ত এনরন বিদ্যুৎ প্রকল্পের নতুন মালিক। এনরন চুক্তি আইনত মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারকে বাধ্য করে এনরনকে ৩০ বিলিয়ন অর্থ প্রদান করতে, যা ছিল ভারতে স্বাক্ষরিত সবচেয়ে বড় চুক্তি। এনরন ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের 'শিক্ষিত' করার জন্য যে মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে তা নিয়ে গর্ব করতে লজ্জাবোধ করেনি। এনরন চুক্তি [ভারতের প্রথম 'ফাস্ট-ট্র্যাক' ব্যক্তিগত বিদ্যুৎ প্রকল্প] দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জালিয়াতি হিসাবে পরিচিত হয়। এনরন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির প্রচারণায় অবদান রাখা আরেকটি কোম্পানি। এনরন যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছিল তা এতটাই বেশি ছিল যে দেশটির সরকার সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যুৎ না কেনাই সস্তা হবে এবং চুক্তিতে বাধ্যতামূলক নির্দিষ্ট চার্জ এনরনকে পরিশোধ করবে। এর মানে ছিল পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশটির সরকার এনরনকে বছরে ২২০ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল বিদ্যুৎ উৎপাদন না করার জন্য! এনরনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার পর বেচটেল এবং জিই মহারাষ্ট্র রাজ্য বিদ্যুৎ বোর্ডের বিরুদ্ধে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের জন্য মামলা করে। পরিমাণটি তারা (বা এনরন) প্রকৃতপক্ষে এই প্রকল্পে যে অর্থ বিনিয়োগ করেছে তার একটি ভগ্নাংশও নয়। ৬ বিলিয়ন ডলার ভারত সরকারের বার্ষিক গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনের প্রায় অর্ধেক পরিমাণ যা চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী, ঋণগ্রস্ত, বাস্তুচ্যুত এবং দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টিতে বিপর্যস্ত লক্ষ লক্ষ লোকের জীবিকা নির্বাহ করতে পারতো।

নাওমি ক্লেইন লিখেছেন বেচটেল ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর 'যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ' এবং 'লাভ হারানোর' জন্য ইরাকের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। এটিকে ৭ মিলিয়ন ডলার প্রদান করা হয়েছিল সেসময়। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Naomi_Klein

কুয়েত আক্রমণের পর থেকে আক্রমনকৃত ও দখলকৃত ইরাককে ১৮۔৮ বিলিয়ন ডলার 'ক্ষতিপূরণ' দিতে বাধ্য করা হয় হেলিবার্টন, শেল, মবিল, নেসলে, পেপসি, কেন্টাকি ফ্রাইড চিকেন, টয়স "আর" আস এর মতো কর্পোরেশনগুলোকে। এগুলো ইরাকের ১২৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ এর সাথে যুক্ত হয় যা দেশটিকে আইএমএফের কাছে যেতে বাধ্য করে, যা মৃত্যুর দেবদূতের মতো ডানা মেলে অপেক্ষা করছিল এটির কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচি নিয়ে।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক 'সেন্টার ফর পাবলিক ইন্টিগ্রিটি' বের করেছিল যে, বুশ প্রশাসনের শাসনামলে প্রতিরক্ষা নীতি বোর্ডের ত্রিশ সদস্যের মধ্যে নয়জন ২০০১ এবং ২০০২ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে পুরস্কৃত কোম্পানিগুলোর সাথে যুক্ত ছিল যার মূল্য ৭৬ বিলিয়ন ডলার। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Center_for_Public_Integrity 

তাদের মধ্যে অন্যতম জ্যাক শিহান বেচটেলের একজন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/John_J._Sheehan 

কোম্পানির তৎকালীন চেয়ারম্যান রিলি বেচটেল প্রেসিডেন্ট বুশ এর এক্সপোর্ট কাউন্সিলে ছিলেন। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Riley_P._Bechtel 

প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট জর্জ শুল্টজ ছিলেন বেচটেল গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদে, যিনি ইরাকের 'মুক্তির' জন্য কমিটির উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/George_Shultz 

বেচটেলকে ৬৮০ মিলিয়ন ডলারের কাজ দেয়া হয় ইরাক 'পুনর্গঠন' করতে। 'সেন্টার ফর রেসপন্সিভ পলিটিক্স' এর মতে, বেচটেল ১৯৯৯-২০০০ সালের রিপাবলিকান পার্টির প্রচারে ১۔৩ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/OpenSecrets

বেচটেল গ্রুপ এবং সাদ্দাম হোসেন পুরানো ব্যবসায়িক মিত্র। তাদের অনেক লেনদেনের মধ্যস্থতা ডোনাল্ড রামসফেল্ড করেছিল। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Donald_Rumsfeld

১৯৮৮ সালে সাদ্দাম হোসেন হাজার হাজার কুর্দিদের উপর গ্যাস প্রয়োগের পর বেচটেল বাগদাদে একটি দ্বৈত-ব্যবহারের রাসায়নিক প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য তার সরকারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করে। 

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা সচিব ক্যাস্পার ওয়েইনবার্গার বেচটেল জেনারেল কাউন্সেল এবং পরিচালক ছিলেন। দেশটির সাবেক ডেপুটি জ্বালানি সচিব ডব্লিউ কেনেথ ডেভিস বেচটেলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Caspar_Weinberger

https://en.m.wikipedia.org/wiki/W._Kenneth_Davis

বেচটেলকে ইরাকে ২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পুনর্গঠনের কাজ প্রদান করা হয়; যার মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বৈদ্যুতিক গ্রিড, পানি সরবরাহ, পয়:নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং বিমানবন্দর সুবিধাগুলো পুনর্নির্মাণের চুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। 

১৯৯০ এবং ২০০২ সালের মধ্যে বেচটেল গ্রুপ রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাট উভয় দলের প্রচারণা তহবিলে ৩۔৩ মিলিয়ন ডলার দেয়। ১৯৯০ সাল থেকে এটি ১১ বিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের ২০০০টিরও বেশি সরকারি কাজ আদায় করে নেয়।

বেচটেল গ্রুপ আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করে যখন এটি বলিভিয়ার প্রাক্তন স্বৈরশাসক হুগো ব্যাঞ্জারের সাথে কোচাবাম্বা শহরের পানি সরবরাহকে বেসরকারীকরণ করার চুক্তি স্বাক্ষর করে। 
.................................................................................

১৯৮৮ সালে সাদ্দাম হোসেন ইরাকের উত্তরাঞ্চলের শত শত গ্রাম ধ্বংস করেন এবং রাসায়নিক অস্ত্র ও মেশিনগান ব্যবহার করেন হাজার হাজার কুর্দিকে হত্যা করার জন্য। একই বছর মার্কিন সরকার তাকে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ভর্তুকি প্রদান করে আমেরিকান কৃষি পণ্য কিনতে। পরবর্তী বছর মার্কিন সরকারের ভর্তুকি এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। মার্কিন সরকার তাকে অ্যানথ্রাক্সের জন্য উচ্চ মানের জীবাণু বীজ, হেলিকপ্টার এবং দ্বৈতভাবে ব্যবহারযোগ্য উপাদান (রাসায়নিক পণ্য উৎপাদন করতে এবং জৈবিক অস্ত্র তৈরিতে) প্রদান করে।

"....কিছু মনে করবেন না যে চল্লিশ বছর আগে সিআইএ, রাষ্ট্রপতি জন এফ. কেনেডির অধীনে বাগদাদে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন সমন্বিত করেছিল। ১৯৬৩ সালে একটি সফল অভ্যুত্থানের পর বাথ পার্টি ইরাকে ক্ষমতায় আসে। সিআইএ দ্বারা প্রদত্ত তালিকা ব্যবহার করে নতুন বাথ সরকার ​​পদ্ধতিগতভাবে শত শত ডাক্তার, শিক্ষক, আইনজীবী এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যারা বামপন্থী হিসেবে পরিচিত তাদের নির্মূল করে। একটা সম্পূর্ণ বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে হত্যা করা হয়েছিল (একই গণহত্যার কৌশল ব্যবহার করা হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া এবং পূর্ব তিমুরের হাজার হাজার মানুষের ক্ষেত্রে)। বলা হয় যুবক সাদ্দাম হোসেনের এই রক্তপাতের তত্ত্বাবধানে হাত ছিল। ১৯৭৯ সালে বাথ পার্টির দলের মধ্যে কোন্দলের পর সাদ্দাম হোসেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট হন। ১৯৮০ সালের এপ্রিল মাসে যখন তিনি শিয়াদের গণহত্যা করছিলেন, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা  জবিগনিয়েও ব্রজিজিনস্কি ঘোষণা করেন, "আমরা দেখতে পাচ্ছি স্বার্থের কোনো মৌলিক অসঙ্গতি নেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরাকের মধ্যে"। ওয়াশিংটন এবং লন্ডন প্রকাশ্যে এবং গোপনে সমর্থন করেছে সাদ্দাম হোসেনকে। তারা তাকে অর্থায়ন করেছে, সজ্জিত করেছে, সশস্ত্র করেছে এবং তাকে দ্বৈতভাবে ব্যবহারের উপকরণ সরবরাহ করেছে গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির জন্য। তারা তার নিকৃষ্ট বাড়াবাড়ি সমর্থন করেছিল আর্থিকভাবে, বস্তুগত এবং নৈতিকভাবে। তারা ইরানের বিরুদ্ধে আট বছরের যুদ্ধকে সমর্থন করেছে এবং ১৯৮৮ সালে হালাবজায় কুর্দি জনগণের উপর গ্যাস প্রয়োগকে, অপরাধগুলো যা চৌদ্দ বছর পরে পুনরায় উত্তপ্ত হয় এবং ইরাক আক্রমণকে ন্যায্যতা দেয়ার কারণ হিসাবে পরিবেশিত হয়। প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের পর 'মিত্ররা' বসরায় শিয়াদের বিদ্রোহকে উস্কে দিয়েছিল এবং তারপর সরে দাঁড়িয়েছিল যখন সাদ্দাম হোসেন বিদ্রোহকে চূর্ণ করেছিলেন এবং প্রতিহিংসামূলক আচরণের দ্বারা হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছিলেন।...."

- 'এন অর্ডিনারি পার্সন'স গাইড টু এম্পায়ার', অরুন্ধতী রায়

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hugo_Banzer

বেচটেল প্রথম যে কাজটি করেছিল তা হচ্ছে পানির দাম বাড়ানো। হাজার হাজার মানুষ যারা বেচটেলের বিল পরিশোধ করতে পারেনি তারা রাস্তায় নেমে আসে। বিশাল ধর্মঘট শহরকে অচল করে দেয়। সামরিক আইন জারি হয়। যদিও বেচটেল তাদের অফিস থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছিল, পরে এটি সম্ভাব্য ক্ষতির জন্য বলিভিয়ার সরকারের কাছ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করে।
..............................................................................

"জুনিয়র জর্জ বুশ যে আমেরিকান কৃষকদের দ্বারা বিশ্বকে খাওয়াতে চান তা ঘোষণা করার পরপরই বিশ্বের বৃহত্তম শস্য রপ্তানিকারক কারগিলের প্রাক্তন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ড্যান অ্যামস্টুটজকে ইরাকের কৃষি পুনর্গঠনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। অক্সফামের পলিসি ডিরেক্টর কেভিন ওয়াটকিনস বলেছেন, "ইরাকে কৃষি পুনর্গঠনের দায়িত্বে ড্যান আমস্টুটজকে রাখা মানে সাদ্দাম হোসেনকে কোনো মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারে বসানোর মতো।" ইরাকি তেল পরিচালনার উদ্দেশ্যে অপারেশন চালানোর জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত দুই ব্যক্তি শেল, বিপি এবং ফ্লুয়রের সাথে কাজ করেছেন। ফ্লুয়র কৃষ্ণাঙ্গ দক্ষিণ আফ্রিকান কর্মীদের দ্বারা একটি মামলায় জড়িয়ে পড়েছে যারা বর্ণবাদের যুগে কোম্পানির বিরুদ্ধে তাদের শোষণ ও নৃশংসতার অভিযোগ করেছেন। শেল, অবশ্যই, নাইজেরিয়ার ওগোনি উপজাতীয় ভূমি ধ্বংসের জন্য সুপরিচিত।"

- 'এন অর্ডিনারি পার্সন'স গাইড টু এম্পায়ার', অরুন্ধতী রায় 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Dan_Amstutz

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Cargill

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Kevin_Watkins

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Shell_plc

https://en.m.wikipedia.org/wiki/BP

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Fluor_Corporation

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ogoni_people#:~:text=The%20Ogonis%20are%20a%20people,also%20refer%20to%20as%20Ogoniland.

১৯৯৭-৯৮ সালে ইরাকে কর্মরত জাতিসংঘের মানবিক কর্মসূচি সমন্বয়ক ডেনিস হ্যালিডে ইরাকে আরোপিত অর্থনৈতিক অবরোধকে 'জেনোসাইড' বলে অভিহিত করে পদত্যাগ করেন। সাদ্দাম হোসেনকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য আরোপিত অবরোধে মৃত্যুবরণ করেছিল ৫ লাখ ইরাকি শিশু।
.........................................................................

পশ্চিমাদের পরোক্ষ সমর্থন নিয়েই কিন্তু গাদ্দাফী এতদিন ক্ষমতায় ছিলেন। ফ্রান্স (Total), ইতালি (ENI) ও স্পেন (Respo) লিবিয়ায় তেল বা গ্যাস উত্তোলনের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল। লিবিয়া গাদ্দাফীর আমলে প্রতিদিন ১০ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করতো। সেই সাথে বিশ্বের ১২তম তেল রফতানিকারক দেশ ছিল লিবিয়া। এর মধ্যে ইতালি ৩,৬৫,৭৪২ ব্যারেল (ফতানির ২৯ ভাগ), ফ্রান্স ১,৭৭,৭৯৭ ব্যারেল (১৪ ভাগ), স্পেন ১,২৯,২২৭ ব্যারেল (১০ ভাগ), চীন ১,৬০,৬৭৬ ব্যারেল (১৩ ভাগ), আর যুক্তরাষ্ট্রের তেল কোম্পানিগুলো ৬০,৫৫৩ ব্যারেল (৫ ভাগ) তেল উৎপাদন করতো। আর ইতালি লিবিয়া থেকে বছরে গ্যাস পেত ৬০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার। পশ্চিমা বিশ্ব নাইন-ইলেভেনে'র পর 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' শুরু করলে গাদ্দাফী ছিলেন তাদের অন্যতম মিত্র। সেদিন গাদ্দাফী সাদ্দাম হোসেনের তথাকথিত 'Weapons of Mass Destruction' এর কঠোর সমালোচনা করেছিলেন। ইরাকের বিরুদ্ধে গাদ্দাফীকে ব্যবহারও করেছিল পশ্চিমা বিশ্ব। ১৯৮৬ সালে ইরানের বিরুদ্ধেও গাদ্দাফীকে ব্যবহার করা হয়েছিল। ২০০৪ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ব্লেয়ার ত্রিপোলি সফর করেছিলেন। সেসময় লিবিয়ায় একটি ব্যবসার ক্ষেত্র তৈরী হয়েছিল এবং ব্রিটেন চেয়েছিলো সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে। এমনকি সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইস ত্রিপোলি সফর করেছিলেন ২০০৮ সালে। শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থ বিবেচনা করে ব্রিটেন লকার্বি বিমান দুর্ঘটনায় অভিযুক্ত আবদুল বাসেত আল মেগরাহিকে মানবিক কারণে (?) ২০০৯ সালে মুক্তি দিয়েছিলো। ফ্রিডম হাউস যখন লিবিয়াকে 'Most Despotic Country' হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল, তখনও যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু আরব বসন্তের সময় হঠাৎ করে পশ্চিমা বিশ্ব 'জনতার পাশে' এসে দাঁড়ায়!

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]