পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-দুই]
বিতর্কিত এক-এগারোর সময় যখন রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে (প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনাকে) মাইনাস করার চক্রান্ত হয়, তখন চরম সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানী নীতি অনুসরণ করে সামরিক কর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন এই ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. ইউনূস তার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে ডিগবাজি খান ঐসময়। তখন থেকেই এই লোকের মাধ্যমে পশ্চিমারা বাংলাদেশকে কব্জা করতে চেয়েছিল তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থে। ১৯৮৩ সালে একটি সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরুতে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের ছিল ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ঋণ গ্রহীতাদের ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২২ সালের হিসাব মতে গ্রামীণ ব্যাংকের সম্পদ ও সম্পত্তির পরিমাণ হচ্ছে ৩০১۔০৫ বিলিয়ন টাকা! এখন এর পরিমাণ আরো অনেক বেড়েছে। দরিদ্র অসহায় নারীদের ভাগ্যোন্নয়ন বা ক্ষমতায়নের অজুহাতে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকের ২০ তলা আলিশান ভবন রয়েছে রাজধানীর মিরপুরে! যাদের বিন্দু বিন্দু সঞ্চয়ের জামানতে গ্রামীণ ব্যাংকের তহবিল ফুলেফেঁপে উঠেছে, তাদের ভাগ্যের সত্যিকার অর্থে কতটা উন্নতি হয়েছে সেটা নিয়ে বিতর্ক অনেক। ক্ষুদ্রঋণ দরিদ্র নারীদের দারিদ্র্যমুক্ত করে ক্ষমতায়িত করেনি, বরং তাদের ঋণজালে বেঁধে শৃঙ্খলিত করেছে। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের বেতনভুক্ত এমডি ছিলেন। তার নিজের কোনো বিনিয়োগ ছিল না। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি'র দায়িত্বে ছিলেন। বিধি অনুযায়ী ৬০ বছর বয়সে তার অবসরে যাওয়ার কথা। কিন্তু তিনি তা করেননি। ২০১১ সালে তার অবসরের বয়সসীমা ১১ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পর তার ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঐ বছরের মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে এমডি পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। তাকে অব্যাহতি দেয়ার ব্যাপারটিকে ইস্যুতে পরিণত করে তিনি দেশে-বিদেশে তার পক্ষে জনমত গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান। উচ্চ আদালতও তার পক্ষে রায় দেননি। অথচ এ নিয়ে তিনি প্রচারণা অব্যাহত রাখেন। আজ তিনিই হাসিনাকে 'স্বৈরাচারী' বলেন! ড. ইউনূস কেমন ব্যবস্থাপক যিনি দুই যুগ ধরে একটি প্রতিষ্ঠান চালালেন? কর্তৃত্ব কুক্ষিগত করে রাখা কি সৎ গুণের মধ্যে পড়ে? তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন বলেই কি তাকে আমৃত্যু গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে রাখতে হবে? চাকরির বয়সসীমা তিনি মানবেন না? এটা হয় কখনো কোনো দেশে? পশ্চিমা তথা পুঁজিবাদী দুনিয়া ড. ইউনূসের কাছে কৃতজ্ঞ এ কারণে যে তিনি এমন একটি পন্থা উদ্ভাবন করেছেন যার মাধ্যমে হতদরিদ্র মানুষকেও শোষণ করা যাচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে যাদের কিছুই নেই, যারা একেবারেই সহায় সম্বলহীন, তাদেরও শোষণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। আগে এটা সম্ভব ছিল না। রিলিফ দেয়া ছাড়া তাদের কাছ থেকে পাওয়ার কিছু ছিল না। ইউরোপ-আমেরিকার কোনো অর্থনীতিবিদ-গবেষক-পণ্ডিত শোষণের এ ধরনের অভিনব পদ্ধতির কথা ভাবতে পারেননি। ড. ইউনূস গরিবকে তার অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সহায়তার নামে অল্প টাকা ঋণ দিয়ে তা থেকে মাত্রাতিরিক্ত সুদ নিয়ে অবিরাম শোষণের যে প্রক্রিয়া চালু করেছেন তাতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার রক্ষকরা পর্যন্ত তাজ্জব বনে গেছেন বলেই ড. ইউনূসকে নিয়ে তাদের এত মাতামাতি। গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের কাছ থেকে জামানত গ্রহণ, ঋণদান প্রক্রিয়া, সুদের হার ইত্যাদি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এটা মারাত্মক দুষ্টচক্র। গ্রামীণ ব্যাংকের অভ্যন্তরে অনিয়ম-অব্যবস্থার অভিযোগ নতুন নয়। অনিয়ম দূর করার জন্য ড. ইউনূস নিজে তো উদ্যোগ নেননি, উল্টো হাসিনার সরকার একটি তদন্ত কমিশন গঠন করায় তিনি তাতে বাগড়া দিয়েছিলেন। বিদেশি মুরুব্বিদের শরণাপন্ন হয়ে সরকারের ওপর চাপ দিয়েছিলেন অনিয়ম-অব্যবস্থা নিয়ে তদন্ত বন্ধ করার জন্য। সরকারি পদক্ষেপের কারণে যদি সত্যি গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হতো, তাহলে এর সুবিধাভোগীরাই প্রথম প্রতিবাদ করতো। ড. ইউনূস আগ বাড়িয়ে কেন বাধা দিয়েছিলেন? বলা হয়, প্রায় এক কোটির কাছাকাছি ঋণগ্রহীতা গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডার এবং তারাই ব্যাংকটির মালিক। এই শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ট বা লভ্যাংশ দেয়া হয় কি? যতদূর জানা যায়, কাউকেই কোনো লভ্যাংশ দেয়া হয় না। তারা নামমাত্র মালিক। ব্যাংকের সুযোগ-সুবিধা সব ড. ইউনূস ভোগ করেছেন। যুগ্ম সচিবের পদমর্যাদায় এমডি পদে চাকরি করে তিনি কত সম্পদের মালিক হয়েছেন, তার ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে কত টাকা আছে, এই টাকা তিনি কীভাবে আয় করেছেন, এর জন্য আয়কর দিয়েছেন কিনা সেসব জানার অধিকার যেমন এই ব্যাংকের ঋণগ্রহীতাদের ছিল, তেমনি অধিকার ছিল হাসিনা সরকারেরও। গ্রামীণ ব্যাংকের সুনাম ব্যবহার করে গ্রামীণ নামের যে অসংখ্য কোম্পানি গড়ে তুলেছিলেন এই লোক সেসবের টাকা কোথা থেকে এসেছে, এগুলোর প্রকৃত মালিক কারা তা জানতে চাওয়া হাসিনা সরকারের অপরাধ ছিল না।
ইউনূস প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথম ক্ষুদ্র ঋণগ্রাহক সুফিয়া খাতুন মারা যান ১৯৯৭ সালে। তার দুই মেয়ের বড়জন হালিমা বেগম মানসিকভাবে অসুস্থ। হালিমার দুই ছেলে মোহাম্মদ বাবুল (২৭) ও মোহসিন (৩০) রিক্সা চালান। ছোট মেয়ে নুরুন্নাহার বেগমের ছেলে ইদ্রিস এলাকায় অবস্থাপন্ন পরিবারের জমিতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন; মেয়ে শাহিদা তার স্বামীর সঙ্গে থাকেন। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে সুফিয়ার বাড়িতে বিডিনিউজ এর সাংবাদিক গিয়ে দেখেছিলেন পাঁচ কাঠা জমির ওপর হালিমা ও নুরুন্নাহারের পৃথক দু'টি ভিটে। এর বাইরে তাদের চাষযোগ্য কোনো জমি নেই। দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছ থেকে এক বছরে দুই দফায় পাঁচশ ৬০ টাকা ঋণ নেন সুফিয়া খাতুন। এটি ছিলো আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর আগে মুহম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যকর গবেষণা কার্যক্রমের আওতায় দেয়া প্রথম ঋণ। এর প্রায় ৩৫ বছর পর সুফিয়ার ছোট মেয়ে নুরুন্নাহার বেগম বিডিনিউজ এর প্রতিবেদককে বলেছিলেন-
"আমার আম্মা (সুফিয়া খাতুন) ক্ষুদ্র ঋণের প্রথম গ্রাহক। তাকে দেখিয়ে ইউনূস সাহেব দেশে বিদেশে অনেক নাম করেছেন, কিন্তু আমাদের কিছুই হয়নি। বেতের তৈরি মোড়াসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরির ব্যবসা করতে আম্মা ঐ ঋণ নেন। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকা কিস্তি পরিশোধ করতে গিয়ে তাকে হিমশিম খেতে হয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি শোধ করতে আম্মাকে অন্যজনের কাছ থেকে আবার ঋণ নিতে হয়েছিল।"
এরপর থেকে সুফিয়া বা তার পরিবারের কোনো সদস্য গ্রামীণ ব্যাংক থেকে আর ঋণ নেননি বলে জানান তিনি। হালিমা বেগমের ছেলে বাবুল বলেছিলেন-
"ইউনূস সাহেব নোবেল পাওয়ার পর অনেক পত্রিকা ও টিভির সাংবাদিক এসে আমাদের ছবি তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। গ্রামীণ ব্যাংকের স্থানীয় কর্মকর্তারা ঘরের পাশের দোতলা পাকা দালান দেখিয়ে দিয়ে ছবি তোলায়।"
অথচ পাশের দালানটি ছিল সুফিয়া খাতুনের ভাইপো আবুধাবী প্রবাসী জেবল হোসেনের। জেবল বিডিনিউজ এর সাংবাদিককে বলেছিলেন-
"ক্ষুদ্রঋণের প্রকল্প দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস নোবেল পেয়েছেন। দেশে বিদেশে এর সুফল নিয়ে বড়বড় বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু ঋণগ্রহীতাদের কী অবস্থা তা কেউ খতিয়ে দেখেনি।"
নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর মুহম্মদ ইউনূস এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জোবরা গ্রামে এসেছিলেন। সেসময় সুফিয়ার পরিবারের সদস্যরা কেউ তার সঙ্গে দেখা করতে পারেননি বলে সাংবাদিককে জানান নুরুন্নাহার ও জেবল।
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অবস্থার উন্নতি করতে না পারা আরেকজন জোবরা গ্রামের মোহাম্মদ হানিফ। নুরুন্নাহারের প্রতিবেশি হানিফ ১৯৮৬ সালে দু'হাজার টাকা ঋণ নেন। তিনি বিডিনিউজ এর সাংবাদিককে জানিয়েছিলেন, ঐ টাকায় তিনি একটি গরু কিনেছিলেন। কিন্তু কিস্তির টাকা নিয়মিত শোধ করতে না পেরে সেই গরু বিক্রি করে সাত মাসে দু'হাজার আটশ টাকা পরিশোধ করতে হয় গ্রামীণ ব্যাংককে। হানিফ বলেছিলেন-
"ক্ষুদ্র ঋণ গরীবদের জন্য বলা হলেও তা ঠিক নয়। পরে আর কখনো লোন নিইনি।"
তিনি এখন চাষাবাদ করে কষ্টে সংসার চালান।
দুই কথিত ছাত্রনেতা যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা তারা কি আসলেই ছাত্র?
//নাহিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ (শিক্ষাবর্ষ-২০১৬-১৭) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছিলেন।
//আসিফ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ (শিক্ষাবর্ষ- ২০১৭-১৮) থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছিলেন।
দুজনকেই সাধারণ ছাত্র হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল। পরে জানা গেলো তারা অছাত্র হয়েও 'গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তি' নামে একটা ছাত্র সংগঠনের পদ ধরে আছেন, যে সংগঠনটা গড়ে উঠেছে ২০২৩ সাল থেকে।
//নাগরিক শক্তি'র প্রতিষ্ঠাতা ড۔ ইউনূস
//নাগরিক শক্তি'র ছাত্র সংগঠন ছাত্র শক্তি
//ছাত্র শক্তি'র প্রেসিডেন্ট আসিফ মাহমুদ
//ছাত্র শক্তি'র সাধারণ সম্পাদক নাহিদ হাসান
//নাগরিক শক্তি'র উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
মৌলবাদী দলগুলোর সাথে এদের সংশ্লিষ্টতার অতীত ইতিহাস-
https://drive.google.com/file/d/1REtqoyN3trYGhuFbmMiGEL_UXn26q8Sy/view?usp=drivesdk
Comments