আব্রাহামিক ধর্মগুলোর বিবর্তন
আব্রাহামিক তিনটি ধর্মের অনুসারীরা ইব্রাহিমকে একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রবক্তা হিসেবে গায়ের জোরে দাবি করলেও পৃথিবীর প্রথম একেশ্বরবাদী ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা জরাথ্রুস্ট। তৎকালীন সমাজে পূজিত বরুণ, মিত্র ও ইন্দ্রকে পূজা করতে অস্বীকার করে তার পরিবর্তে শুরু করেন আহুরা মাজদা নামক একক পুরুষ দেবতার পূজা।
জরাথ্রুস্টরা তাদের ধর্মের নানা বিষয় এডপ্ট করেছিল কুরগান জাতি থেকে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Kurgan_hypothesis
যিশুর জন্মের দুই হাজার বছর আগে তারা ইরান আক্রমণ করে। তাদের আবাসস্থল ছিল রাশিয়ার দক্ষিণে। খাদ্য ও উন্নত জীবন-জীবিকার খোঁজে বিপুল সংখ্যক কুরগান মধ্যপ্রাচ্যে বসতি গড়ে তোলে। তারা বহু দেবতায় বিশ্বাসী ছিল। তাদের ধর্মীয় গ্রন্থ ছিল 'ভেদাস'। অন্যদিকে পশ্চিম ইউরোপে যেসব কুরগান বসতি স্থাপন করেছিল তারা পরবর্তীতে 'সেল্টিক' হিসেবে পরিচিত হয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Celts
সেল্টিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস কালক্রমে হয়ে যায় ড্রুইডিজম।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Druid
অন্যদিকে যেসব কুরগান মধ্যপ্রাচ্যে গিয়েছিল তাদের বিশ্বাসে যুক্ত হয় মৃত ব্যক্তির আত্মার পাপ মোচন আর নরক দণ্ড ভোগের কনসেপ্ট। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তির আত্মাকে ঘোড়ায় চড়ে পার হতে হবে খুবই সরু একটি সাঁকো। তাদের মতে, দেবতা রাশু (Rashu) প্রত্যেক আত্মার এই সাঁকো পার হওয়া কিংবা পতন তদারকি করবে।
আধুনিক কোড ব্রেকারদের মতে, 'বাফোমেট' শব্দটি দ্বারা জ্ঞানের দেবী সোফিয়াকে বোঝায়। যদিও আব্রাহামিক তিন ধর্মের অনুসারীরা শব্দটি দ্বারা 'শয়তান'কে বুঝে থাকে। তারা বিশ্বের যেই প্রান্তেই গেছে, প্যাগান ধর্মগুলোর বিশেষ করে নারী দেবীদের শয়তান বানিয়ে প্রচার করেছে। একই কাজ করেছিল আর্যরা উপমহাদেশ আক্রমণের পর অনার্য জাতিদের উপাস্যদের ক্ষেত্রে।
ইতিহাসবিদ জি۔ মেসান্ডির এর মতে, খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৫৩ সালের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে ইহুদিরা জরাথ্রুস্ট এর প্রচারিত মতবাদ থেকে অনেক কিছু এডপ্ট করে।
জরাথ্রুস্টদের ধর্মগ্রন্থ জেন্দ আভেস্তা'য় 'হুরান এ বেহেস্ত' নামে একটা টার্ম আছে যাদের সাথে কথিত পুণ্যবানরা মাইয়াবাজি করবে মৃত্যুর পর। আব্রাহামিক ধর্মগুলোর অনুসারীরা এখান থেকেই অশ্লীল এই ধারণাটা মেরে দিয়েছিল। এই ধর্মটিতে উল্লেখিত 'চিন্দবাদ' নামক ব্রিজ অতিক্রমের ধারণাও এরা হুবহু মেরে দিয়েছে। সেই সাথে 'সাওসান্ত' নামক রক্ষাকারীর আগমনের ধারণাটিও।
বাইবেলে বছরের একটি দিনকে পবিত্র বিবেচনা করা হয়, যা 'প্রায়শ্চিত্যের দিন' হিসেবে পরিচিত। দুইটি ছাগল বলিদানের মাধ্যমে দিনটি উৎযাপন করা হয়। প্রথম ছাগলটি বলি দেয়া হয় ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে এবং অন্যটি আজাজিল এর জন্য। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, এই বলির মাধ্যমে ছাগলটি সকল খ্রিষ্টানের পাপ মরুভূমিতে বয়ে নিয়ে বালির সাথে মিশিয়ে দেয়। মিশরীয়দের এই প্রথা খ্রিষ্টানরা গ্রহণ করেছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Yom_Kippur
স্লাভিক শব্দ 'Bog' অর্থ 'ঈশ্বর'। যেটি প্রাচীনকালে আর্যদের এই অঞ্চলে আগমনের সময় হয়ে যায় 'Bhaga' কিংবা 'Bhugavan'। তারপরও আর্যদের উত্তরসূরিদের মধ্যে অন্যতম হিন্দু ধর্মের উগ্র অনুসারীরা নিজেদের বহিরাগত মানতে নারাজ।
সলোমনের মন্দিরের কাহিনীর সাথে কাবা'র কাহিনীর মিল চোখে পড়ার মতো। মুসলমানদের মতে, কাবা নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল ইব্রাহিমকে। আর ইহুদিদের এই উপাসনালয় নির্মাণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল রাজা সলোমনকে, যিনি মুসলমানদের কাছে নবী হিসেবে স্বীকৃত। সলোমন হাইরাম আবিফ নামক এক ইঞ্জিনিয়ারকে এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাকে মরতে হয় জুনিয়রদের হাতে। উল্লেখ্য, ইজরায়েলের প্রাচীন অনেক রাজার অস্তিত্ব সম্পর্কে নৃতাত্ত্বিকরা সন্দিহান। কাবাকে মুহাম্মদের আগেও আরবরা নিজেদের আধিপত্য কায়েম রাখতে ব্যবহার করতো। বর্তমানে হজ থেকে প্রাপ্ত কোটি কোটি ডলারের অর্থে সৌদি রাজপরিবার যেমন লুইচ্চামি করে ভোগবাদী জীবন কাটাচ্ছে, মুহাম্মদের আগেও ঐ অঞ্চলের আরবরা তেমনি অন্যান্য অঞ্চলের তীর্থযাত্রীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থে ধনী হয়ে যেতো। অন্যদিকে 'টেম্পল অব সলোমন' এর আবেগকে কাজে লাগিয়ে মধ্যযুগের ইউরোপের রাজারা ও পাদ্রীরা চমৎকারভাবে ফায়দা লুটেছিল (মারিও পুজো এর 'দ্য ফ্যামিলি') আর বর্তমানে পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের হাতের পুতুল ইজরায়েলের সরকার করে যাচ্ছে সেই কাজ। কিছুদিন আগে বাংলাদেশে মুহাম্মদের নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে জায়গা দখলের ঘটনা ঘটেছে। পাশের দেশ ভারতে কাল্পনিক রামের কথিত জন্মভূমি নিয়ে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে।
মুসলমান আস্তিকরা নিরীশ্বরবাদী প্রাক্তন মুসলিমদের আরবি নাম বজায় রাখা নিয়ে টিটকারি দেয়। তাদের উদ্দেশ্যে একটা তথ্য দেয়া যাক। 'সালমান' নামটি ছিল ইসলাম পূর্ব আরবের এক দেবতার নাম।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Salman_(myth)#:~:text=A%20god%20worshiped%20in%20pre,the%20names%20Solomon%20and%20Shalmaneser.
..........................................................................
প্যাগানদের ধর্ম থেকে বৌদ্ধ ধর্মও অনেক কিছুই এডপ্ট করেছে। তাই এখানে বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপারে আলোচনাও প্রাসঙ্গিক।
মুসলমানদের ইমাম মাহদী, হিন্দুদের কল্কি অবতার, জরাথ্রুস্টদের সাওশিয়ান্ত, ইহুদিদের মোশিয়াহ কিংবা পৃথিবীতে প্রচলিত বাকি ধর্মগুলোর প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তার আদলে বৌদ্ধ নিজের মুখেই বলে গেছেন-
“ভ্রাতৃসকল, মৈত্রেয়ী নামে এক মহাত্মা আবির্ভূত হবেন। পরিপূর্ণ রূপে জাগরিত; জ্ঞান, কল্যাণ, সুখ আর প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ; অতুলনীয় পথনির্দেশক, দেবতা আর মানবকূলের শিক্ষক এবং বুদ্ধ; এমনকি আমার থেকেও। তিনি নিজে থেকেই সৃষ্টিজগতের সকল কিছু দেখবেন এবং জানবেন; যেন মুখোমুখি বসা। এমনকি আমি যতটা জানি ও দেখি; তার চেয়েও স্পষ্ট।”
- দীর্ঘ নিকায়
মৈত্রেয়ীকে চিত্রিত করা হয় সিংহাসনে বসে অবতরণের অপেক্ষায় থাকা মহাপুরুষ হিসেবে। গায়ে ভিক্ষুর পোশাক। তার জন্ম হবে চক্রবর্তী রাজা শঙ্খের রাজ্য খেতুমতিতে। সন্তান জন্মের পর গৃহত্যাগ করবে নিগূঢ় জ্ঞান সাধনার জন্য। সাত দিনের মাথায় বোধি লাভ করবে। শিষ্যত্ব বরণ করবে অশোক, ব্রহ্মদেব, সুমন, পাদুম এবং সিহা। তার আগমণের মধ্য দিয়ে গৌতম বুদ্ধের শিক্ষা অপ্রচলিত হয়ে পড়বে। পুনরায় শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে দুনিয়ায়।
তার অনুসারীরা বলেন, জীব হত্যা মহাপাপ। কিন্তু নিজে মাংস খেতে পছন্দ করতেন। হিন্দু পণ্ডিতদের ধারণা, বিষাক্ত শুকরের মাংস খাওয়ার কারণে তার মৃত্যু হয়েছিল।
কসমোলজি সংক্রান্ত বুদ্ধের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। তার মতে-
জগৎ অনন্তকাল থেকে বিদ্যমান আছে এবং অনন্তকাল এভাবেই থাকবে। বিশ্বের আকৃতি চিরকালই এরূপ আছে এবং আগামীতেও একইরূপে থাকবে।
তিনি জন্মান্তরবাদের মতো ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন যা তিনি তার জন্মগতভাবে প্রাপ্ত পূর্বের ধর্মটি থেকে এডপ্ট করেছিলেন। তার মতে-
কর্মানুসারে প্রাণীসমূহ সংসারে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনি এমনই 'মহামানব' ছিলেন যে অত্যাচারী শোষক রাজাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দাস ও সৈন্যদের বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া নিষিদ্ধ করেছিলেন!
বুদ্ধ তার অষ্টাঙ্গিক মার্গে সুদ আর দেহ ব্যবসার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। তাছাড়া 'মন' বলতে তিনি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের কথা বলেছেন, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। তার মতে, অল্প বয়সের মন অভিজ্ঞতাকে অধিক বয়সের মনের কাছে বয়ে নিয়ে যায়, যাকে আমরা স্মৃতি বলি। এটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা।
তার সময়ে কোনো বিবাহিতা নারী সংঘের সদস্য হতে চাইলে স্বামীর অনুমতি লাগতো।
আজ থেকে বহু বছর আগে মার্ক্সবাদী লেখক রাহুল সাংকৃত্যায়ন তিব্বতের ধর্মীয় গুরুদের ভণ্ডামি করে সাধারণ মানুষকে শোষণের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে গেছেন। এক পশ্চিমা ভন্ডের দাবি অনুযায়ী লবসাং রাম্পা নামক তিব্বতের লামা নাকি তার শরীরে ভর করেছিল। সে বৌদ্ধ ধর্মের আধ্যাত্বিকতা সংক্রান্ত অনেকগুলো বই লিখে পশ্চিমে ব্যাপক ব্যবসা করেছিল। তৎকালীন দালাই লামার নীরব সম্মতিতেই সে এসব ভণ্ডামি চালিয়ে গেলেও তার আসল পরিচয় প্রকাশিত হয়ে গেলে নিজেদের গা বাঁচাতে তিব্বতের ভন্ডরা এই লোকের সাথে তাদের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছিল। অথচ এই লোকের কাছে তৎকালীন দালাই লামার দ্বারা অনুমোদিত আস্থাপত্র পর্যন্ত ছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Lobsang_Rampa
বইটি থেকে জানা যায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ইতিহাসের অনেক রাজার উপর দেশীয় আমেজ সৃষ্টির চেষ্টা করলেও এদের অনেকেই ছিলেন উপমহাদেশের বাইরে থেকে আগত তুর্কি উপজাতির লোক। যেমন- সম্রাট কনিষ্ক, মিহিরকুল ইত্যাদি। মুঘলরাও মধ্য এশিয়ার তুর্কি উপজাতিদের বংশধর ছিল। কিন্তু চাড্ডিদের আগের রাজাদের ব্যাপারে চুলকানি না থাকলেও মুঘলদের ব্যাপারে এই ব্যাপারটা থাকার কারণ মূলত ধর্মীয় উগ্রতার বহিঃপ্রকাশ।মহান জ্ঞানতাপস রাহুল এর এই বইটি থেকে আমরা বৌদ্ধ সম্প্রদায় সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারি। যেমন-
*মা-বাবার অনুমতি ছাড়া ভিক্ষু হওয়া যায় না।
*বর্ষাকালে ভিক্ষুদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ।
*উচ্চতর স্তরে যাওয়ার আগে শেষবারের মতো ভিক্ষুদের রাজপুত্রের বেশে নগরে ভ্রমণ করানো হয়। এরপর আজীবনের জন্য তাকে কঠোর কৃচ্ছসাধন নীতি অনুসরণ করতে হয়।
*কারো দুরারোগ্য ব্যাধি থাকলে কোনো ভিক্ষু উচ্চতর পর্যায়ে যেতে পারেন না।
*ভিক্ষুরা সোনা ও রুপা স্পর্শ করেন না।
*তারা ভেষজ উদ্ভিদের জ্ঞান অর্জন করতেন ধর্ম প্রচারে প্রচুর ভ্রমণ করতে হতো দেখে, যেন যাত্রাপথে অসুস্থ হলে কাজে লাগানো যায়।
ইত্যাদি ইত্যাদি..............
তবে বিখ্যাত এই লেখক ভিক্ষুদের ভণ্ডামিগুলোর আর তাদের অনুসারী কুসংস্কারে আচ্ছন্ন ভক্তদের তুলোধুনোও করেছেন।
*অনেক ভান্তে যক্ষের আয়োজন করে সম্পদ মাটির নিচে লুকিয়ে রাখতেন।
*পুন্যস্থানগুলোর বিভিন্ন কথিত নিদর্শন (মুসলিম আর হিন্দুদের স্টাইলে ব্যাঙের ছাতার মতো কাল্পনিক কাহিনী রটিয়ে এসব তৈরি করা হতো) দেখতে দেয়ার অজুহাতে ভক্তদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হতো।
...........................................................................
উত্তর মিসরের হামরা ডোম অঞ্চলে ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরে বিশ্রামের জায়গা খুঁজতে গিয়ে দুই ভাই একটি গুহার ভেতর এক বাক্স প্যাপিরাস পেলো। এ ধরনের কিছুর সন্ধান পেলে আইনানুযায়ী স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে জানানোর কথা। কিন্তু তারা তা করলো না। সরকারের নজর এড়াতে তারা কালোবাজারে পুরানো সম্পদ হিসেবে আলাদা আলাদাভাবে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিলো সেগুলো। ছেলে দু'টির মা জিন-ভূতের আছরের ভয়ে বেশ কয়েকটি সদ্য প্রাপ্ত প্যাপিরাস পুড়িয়ে ফেলেন। পরের বছর দুই ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া বেধে গেলো। কেন এই ঝগড়া হয়েছিল তা জানা যায়নি। এই ঝগড়ায় তাদের মায়ের মনে কথিত জিন-ভূতের আছরের আশঙ্কা আরো জোরদার হলো। তিনি পান্ডুলিপিগুলো এক পাদ্রীর কাছে জমা দিলেন। তিনি সেগুলো কায়রোর কপ্টিক মিউজিয়ামের কাছে বিক্রি করলেন। তখন প্যাপিরাসের নাম দেয়া হয়েছিল 'ম্যানুস্ক্রিপ্টস ফ্রম নাগ হামাদি' (যে গুহায় পান্ডুলিপিটি পাওয়া গেছে, তার সবচেয়ে কাছের শহরের নাম এটি)।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Nag_Hammadi_Codex_II
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Nag_Hammadi_library
জাদুঘরটির অন্যতম বিশেষজ্ঞ ধর্মীয় ইতিহাসবিদ জ্যা ডোরেস (Jean Doresse) এই আবিষ্কারের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত এক লেখায় এগুলোর অস্তিত্বের কথা প্রথম প্রকাশ করেন। বাকি প্যাপিরাসগুলো কালোবাজারে আত্মপ্রকাশ করতে লাগলো। মিশর সরকার শিগগিরই আবিষ্কারের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পান্ডুলিপিগুলো যাতে দেশের বাইরে পাচার হতে না পারে সেই উদ্যোগ নিলো। ১৯৫২ সালের বিপ্লবের পর বেশিরভাগ সামগ্রী কায়রোর কপ্টিক মিউজিয়ামে হস্তান্তর করে জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মাত্র একটি পান্ডুলিপি তারা উদ্ধার করতে পারেনি যা বেলজিয়ামের একটি প্রাচীন সামগ্রীর দোকানে ঠাঁই পেলো। নিউ ইয়র্ক ও প্যারিসে ব্যর্থ বিক্রয়ের চেষ্টার পর ১৯৫১ সালে কার্ল জাঙ ইনস্টিটিউটে এটির জায়গা হয়। এই প্রখ্যাত মন:সমীক্ষকের মৃত্যুর পর সেটি আবার কায়রো ফিরে আসে। সেখানেই এক হাজার পৃষ্ঠা এবং নাগ হামাদি'র পান্ডুলিপিগুলোর ছেঁড়া কিছু অংশ এখন দেখা যায়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Carl_Jung
https://en.m.wikipedia.org/wiki/C._G._Jung_Institute,_Z%C3%BCrich
প্যাপিরাসে যা কিছু লেখা ছিল সেগুলোর সব ছিল গ্রীক অনুবাদে। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতক থেকে ১৮০ সালের শেষ দিক পর্যন্ত অনুবাদের কাজ করা হয়েছিল। এগুলো 'এপক্রিফাল গসপেলস' নামে পরিচিত ছিল।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/New_Testament_apocrypha
https://en.m.wikipedia.org/wiki/List_of_Gospels
আমরা আজ যেটাকে বাইবেল বলে চিনি, এগুলো তাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। নিউ টেস্টামেন্টে কোন কোন পান্ডুলিপি অন্তর্ভুক্ত হবে, সেই সিদ্ধান্ত নিতে ১৭০ সালে একদল বিশপ সম্মেলনে মিলিত হন। আমরা আজ যে চারটি গসপেল সম্পর্কে জানি, সেগুলো গ্রহণ করার পাশাপাশি বিশপদের কাছে খ্রিস্টধর্মের প্রধান প্রধান মতবাদের সাথে 'সামঞ্জস্যপূর্ণ' বিবেচিত ধর্মপ্রচারকদের চিঠিপত্র ও অন্যান্য সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত হলো। বিশপদের এই সম্মেলন ও তাদের অনুমোদিত গ্রন্থপঞ্জির তালিকার উল্লেখ 'মুরাটোরিয়ান ক্যানন' এ পাওয়া যায়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Muratorian_fragment
নাগ হামাদি'র মতো অন্যান্য যেসব বই বাদ দেয়া হয়েছে সেগুলো হয় ছিল নারীদের দ্বারা লিখিত গ্রন্থ (যেমন- মেরি মাগদালেনের গসপেল), কিংবা সেগুলোতে যীশুকে এমনভাবে চিত্রিত করা হয়েছিল যে তিনি তার ঐশী মিশন সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। সেগুলোতে আরো লেখা ছিল যে, তার মৃত্যুযাত্রা অপ্রয়োজনীয়ভাবে দীর্ঘায়িত হবে না ও কম কষ্টদায়ক হবে।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Gospel_of_Mary
ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ স্যার ওয়াল্টার উইলকিনসন ১৯৭৪ সালে আরেকটি পান্ডুলিপি আবিষ্কার করেন। সেটি আরবি, হিব্রু ও ল্যাটিন ভাষার সমন্বয়ে লিখিত ছিল। ঐ অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক আইন সম্পর্কে জানা থাকার কারণে তিনি পান্ডুলিপিটি কায়রো জাদুঘরের পুরাতত্ত্ব বিভাগে পাঠিয়ে দেন। শিগগিরই সেখান থেকে জবাব আসে যে, দুনিয়া জুড়ে অন্তত প্রায় ১৫৫ টি একই ধরনের কপি রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে তিনটি ছিল কায়রো জাদুঘরে। কার্বন-১৪ (জৈব বস্তুর বয়স নির্ধারক পরীক্ষা) পরীক্ষায় প্রকাশ পায় নথিটি ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকের। পান্ডুলিপিটির উৎস ছিল মিশরীয় ভূখণ্ডের বাইরে, ঘানার আক্রা নগরীতে। সেজন্য মিশর থেকে পান্ডুলিপিটি সরানোর কাজে কোনো বাধা নিষেধ ছিল না। এই প্রেক্ষাপটে স্যার ওয়াল্টার মিশর সরকারের কাছ থেকে পান্ডুলিপিটি সাথে নিয়ে ইংল্যান্ড যাওয়ার লিখিত অনুমতি পেয়েছিলেন।
...................................................................................
....খ্রিস্ট ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল ইহুদি উপজাতিদের উপর রোমান সাম্রাজ্যের বারংবার নৃশংস অত্যাচারের ফলে। সশস্ত্র প্রতিরোধে বারংবার ব্যর্থ হয়ে ইহুদিদের এক অংশ পরলোকে মুক্তির সন্ধান করে। এই পরিস্থিতিতে ডেড সি অঞ্চলে সম্ভবত ইসিন (Essene) সম্প্রদায়ের মধ্যে খ্রিস্ট ধর্মের জন্ম হয়। ইহুদিদের মধ্য থেকে এভাবে খ্রিস্ট ধর্মের উদ্ভবের পেছনে সম্ভবত বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব ছিল। অশোকের দ্বারা প্রেরিত বৌদ্ধ ধর্মযাজকেরা যে এই অঞ্চলে তৎপর ছিলেন, তার ঐতিহাসিক প্রমাণ আছে। তাছাড়া যে অহিংসার তত্ত্ব নিয়ে খ্রিস্ট ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল, তার কোন পুরানো ঐতিহ্য ইহুদিদের মধ্যে ছিল না। ডেড সি অঞ্চল থেকে পাওয়া প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপিগুলো থেকেও স্পষ্ট হয়েছে যে, বৌদ্ধ ধর্মের সংগঠন ও তাত্ত্বিক আদর্শের সঙ্গে আদি খ্রিস্ট ধর্মের অনেক মিল ছিল। অবশ্য ডেড সি স্ক্রলগুলো আবিষ্কৃত হবার অনেক আগেই কোন কোন পণ্ডিত এ সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে, বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবে ইসিনদের মধ্য থেকে খ্রিস্ট ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল। তারপর বিশাল রোমান সাম্রাজ্যের ক্রীতদাস শ্রেণী এবং নিপীড়িত উপজাতিদের মধ্যে খ্রিস্ট ধর্ম কিছুটা প্রসার লাভ করে। এদিকে রোমান সম্রাটেরা বহু জাতি-উপজাতিতে এবং বিভিন্ন ধর্মে বিভক্ত তাদের সাম্রাজ্যে একটি মাত্র ধর্মের সাহায্যে সাংস্কৃতিক সমন্বয় ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হলেন। কিন্তু প্রথমে তারা খ্রিস্ট ধর্মের কথা ভাবেন নি। শাস্ত্রীয় প্রচেষ্টায় প্রথমে রোমের দেবী রোমা এবং জুপিটার বা বৃহস্পতির পুজো বাধ্যতামূলক করবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়। প্রকৃতপক্ষে এ সময়ে মিশরজাত দেবী আইসিস এবং ইরানজাত দেবতা মিত্রের পুজো রোমক সাম্রাজ্যে বহুল প্রচলিত ছিল। কিন্তু এসব ধর্ম এই বিশাল সাম্রাজ্যে ধর্মীয় ঐক্য স্থাপনে আর নিপীড়িত জনসাধারণকে পারলৌকিক মুক্তির আশ্বাস দিতে ব্যর্থ হয়েছিল। পর পর কয়েকটি ক্রীতদাস বিদ্রোহ ব্যর্থ হবার পর জনসাধারণ ইহলৌকিক মুক্তির আশা ত্যাগ করে পারলৌকিক মুক্তির আশায় উদগ্রীব হয়ে পড়েছিল। খ্রিস্ট ধর্মে ছিল এই মুক্তির আশ্বাস আর রোমক সাম্রাজ্যের সর্বজনীন ধর্ম হবার প্রতিশ্রুতি। তাই খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে সম্রাট কনস্টানটাইন এই ধর্মকেই রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে বেছে নেন। তিনি নিজে কখনো খ্রিস্ট ধর্মে দীক্ষিত হননি। কিন্তু সিংহাসনে তার নিজের এবং সাম্রাজ্যের স্থায়িত্বের জন্য পুরোহিত শ্রেণীর সাংগঠনিক শক্তির সমর্থন পেতে আর এই পরলোকমুখী ধর্মের সাহায্যে জনসাধারণকে বশে রাখতে আগ্রহী ছিলেন।
মরুপ্রধান আরব দেশ প্রাচীনকালে বহুসংখ্যক যাযাবর বেদুইন ও অল্প কিছু কৃষিনির্ভর উপজাতিতে বিভক্ত ছিল। এরা অন্যান্য দেশের প্রাচীন উপজাতিদের মতোই নানা রকম পশুপাখি, গাছ, পাথর এবং দেবদেবীর মূর্তি পুজো করতো। খ্রিস্টীয় যুগের প্রথম দিকে আরব দেশ একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মিশর, ইথিওপিয়া, মেসোপটেমিয়া, সিরিয়া এবং প্যালেস্টাইনের বাণিজ্য আরব দেশের মধ্য দিয়ে ক্যারাভান পথে যেতো। লোহিত সাগরের কাছে অবস্থিত মক্কা অঞ্চল এই ক্যারাভান পথে অবস্থিত ছিল বলে একটি সমৃদ্ধ শহরে পরিণত হয়েছিল। ফলে এটি প্রধান ধর্মস্থান ও তীর্থস্থানের মর্যাদাও পেয়েছিল। সমস্ত উপজাতিদের দেবদেবীর মূর্তি এখানকার কাবায় রাখা হতো। কুরেশি উপজাতির অভিজাত পরিবারগুলো এই বাণিজ্য ও তীর্থযাত্রা থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতো। কিন্তু ষষ্ঠ শতাব্দীতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথ আরব থেকে ইরানে সরে যাবার ফলে জনসাধারণের, বিশেষত যাযাবর উপজাতিগুলোর আর্থিক সংকট দেখা দেয়। তখন বিভিন্ন উপজাতির মধ্যে মরুভূমিতে দুর্লভ কৃষিযোগ্য জমির জন্য সংঘাত আরম্ভ হয়। ঐক্যের প্রয়োজনে হানিফ নামে একটি ধর্মগোষ্ঠী একেশ্বরবাদ প্রচার আরম্ভ করে। আরব দেশে এ সময়ে যেসব ইহুদি এবং খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী বাস করতো, তাদের মাধ্যমে একেশ্বরবাদের সঙ্গে মানুষের আগেই পরিচয় ঘটেছিল।....
- 'সভ্যতার বিবর্তনে ধর্ম', জয়ন্তানুজ বন্দ্যোপাধ্যায়
.......................................................................
"বর্তমানে যে রূপে আমরা কোরাণ শরীফকে দেখতে পাই তা সংকলিত হয়েছে খলিফা ওসমানের সময়ে। খলিফা ওসমান ছিলেন সুন্নি মতাবলম্বীদের মুখ্য প্রবক্তা। শিয়া গোষ্ঠীর বক্তব্য এই যে, সংকলিত কোরাণে অনেক বাক্য এবং অধ্যায় গৃহীত হয়নি। উদাহরণস্বরূপ তারা 'সিজদা' অধ্যায়ের অনেক বাক্য উপস্থিত করে। প্রাচীন ভাষ্যকারেরাও তা থেকে অনেক বাক্যকে নানা জায়গায় উদ্ধৃত করেছেন। পাটনা শহরের খোদাবক্স লাইব্রেরিতে একটি প্রাচীন হস্তলিখিত কোরাণের প্রতিলিপি আছে, যার মধ্যে এ ধরনের অনেক বাক্যের সংগ্রহ রয়েছে। বর্তমান কোরাণ তিরিশটি 'সিপারো' কিংবা খন্ডে বিভক্ত; অনেকে বলে থাকেন এর আগে এর সংখ্যা ছিল চল্লিশ। অতএব।"
- 'ইসলাম ধর্মের রূপরেখা', রাহুল সাংকৃত্যায়ন
..............................................................................
"বাইবেলে বলা হয়েছে এবং মুসলিমরাও বিশ্বাস করেন, মহাপ্রলয়ের আগে একমাত্র পুণ্যবান মানুষ নোয়া'কে আসন্ন ধ্বংস সম্বন্ধে ঈশ্বর সাবধান করে দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে নির্দেশ দিয়েছিলেন একটা তিনতলা জাহাজ তৈরি করতে; যেটা হবে ৩০০ হাত লম্বা, ৫০ হাত চওড়া ও ৩০ হাত উঁচু। জাহাজ তৈরি হলো। এরপর শুরু হলো মহাপ্লাবন। চল্লিশ দিন, চল্লিশ রাত ধরে অঝোরে বৃষ্টি ঝরলো। বৃষ্টির প্রাবল্যে পৃথিবীর সব পর্বতের চূড়োগুলো পর্যন্ত গেলো ডুবে। ডুবে মরলো পৃথিবীর প্রাণিকুল। বেঁচে রইলো তারা, যারা আশ্রয় পেয়েছিল জাহাজে। সেই কৃপাধন্য কারা? একজোড়া করে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণী। হ্যাঁ, এতো প্রলয়ের পরও তাঁরা বেঁচে ছিল; কারণ জাহাজে শুধু জোড়ায় জোড়ায় প্রাণীই ছিল না, ছিল তাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রযোজনীয় পর্যাপ্ত খাবার-দাবার। এ-তো গেলো ধর্মীয় বিশ্বাস। এবার আসুন দেখা যাক, বিশ্বাসটা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু।
আবহবিদ্যার বই থেকে আমরা জানতে পারি, এক বর্গমিটার জমির উপর যে বায়ুমণ্ডল রয়েছে, তাতে গড়ে মোটামুটি ১৮ কিলোগ্রাম জল থাকে। তবে কোনওভাবেই ২৫ কিলোগ্রামের বেশি নয়। বায়ুমন্ডলের এই আর্দ্রতা ঘনীভূত হয়ে একসঙ্গে যদি ঝরে পড়ে, তাহলে পৃথিবীর জলের গভীরতা কতটা বাড়ে, আসুন আমরা এবার সেটাই দেখি।
১ বর্গমিটার জায়গায় সবচেয়ে বেশি জল থাকতে পারে ২৫ কিলোগ্রাম, অর্থাৎ ২৫০০০ ঘন সেন্টিমিটার। অর্থাৎ কিনা, ২৫০০০ ঘন সেন্টিমিটার জল ঝরবে ১ বর্গ মিটার বা ১০০ x ১০০ = ১০,০০০ বর্গ সেন্টিমিটার জমির উপর। অর্থাৎ মহাপ্লাবনে সবচেয়ে বেশি জল জমা হলে তা হতে পারে ২.৫ সেন্টিমিটার গভীর। অর্থাৎ মহাপ্লাবনে পৃথিবীর সব জায়গায় গড়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হলে ২.৫ সেন্টিমিটার জল জমতে পারে।
বিশ্বাস করুন, মহাপ্লাবনে সত্যিই এর চেয়ে বেশি জল কোনওভাবেই জমা সম্ভব নয়। পৃথিবীর কোনও কোনও জায়গায় এর চেয়ে বেশি বৃষ্টি অবশ্য হয়। কিন্তু সেই ক্ষেত্রগুলোতে আশেপাশের অঞ্চলের মেঘ হাওয়ায় ভেসে বৃষ্টিপাত অঞ্চলে চলে আসে। কিন্তু মহাপ্লাবনে সারা পৃথিবী জুড়েই যদি প্লাবন হয়, তবে কোথাও কম, কোথাও বেশি বৃষ্টির জল জমার ব্যাপার নেই। সব জল ঝরে গোটা পৃথিবীতে জল জমলে ওই জলের গভীরতা হবে ২.৫ সেন্টিমিটারের মতো। তার বেশি কোনওভাবেই হওয়া সম্ভব নয়।
খ্রিস্ট ধর্মে ও মুসলিম ধর্মে বিশ্বাসীদের মতে, মহাপ্লাবনে ডুবে গিয়েছিল পৃথিবীর সব পর্বতের চূড়োগুলোও। এভারেস্টের উচ্চতা ৯ কিলোমিটার। অর্থাৎ মহাপ্লাবনে বৃষ্টির পরিমাণটা একটু বাড়িয়ে বলা হয়েছিল। এমন কিছু নয়, একটুই। মাত্র ৩,৬০,০০০ গুণ বাড়িয়ে বলা হয়েছিল!
এবার আসা যাক দ্বিতীয় প্রশ্নে। পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীদের একজোড়া করে নেওয়া কি সম্ভব ছিল নোয়া'র জাহাজে? সম্ভব ছিল, সেই সঙ্গে সমস্ত প্রাণীদের বেঁচে থাকার উপযোগী পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার ঐ জাহাজেই নেওয়া? বাইবেলে আছে, নোয়ার জাহাজটা ছিল তিনতলা। প্রতি তলা ৩০০ হাত লম্বা আর ৫০ হাত চওড়া। তখনকার দিনের লোকেদের এক হাত মানে মোটামুটি ৪৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ জাহাজের প্রতিটা তলা ছিল ৩০০x০.৪৫ = ১৩৫ মিটার লম্বা, আর ৫০x০.৪৫ = ২২.৫ মিটার চওড়া। অর্থাৎ প্রতিটা তলায় জায়গা ছিল ১৩৫ × ২২.৫ = ৩০৩৭.৫ বর্গ মিটার। তিনটে তলা মিলিয়ে জাহাজে মোট জায়গা ছিল ৩ × ৩০৩৭.৫ = ৯১১২.৫ বর্গ মিটার।
পৃথিবীতে শুধু প্রাণীই আছে দশ রকমের PHYLUM-এর (গাছ না হয় বাদই দিলাম):
1) Protozoa (2) Porifera (3) Coelenterata (4) Platyhelminthes (5) Nemathelminthes (6) Annelida (7) Arthropoda (8) Mollusca (9) Echinodermata (10) Chordata.
এর মধ্যে থেকে আমরা শুধুমাত্র একটা ফাইলামকেই বেছে নিচ্ছি। Chordata অর্থাৎ মেরুদন্ডী প্রাণী। এই Chordata-দেরও আবার পাঁচটা ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:-
(১) পাখি (২) মাছ (৩) সরীসৃপ (৪) উভচর ও (৫) স্তন্যপায়ী।
পৃথিবীতে শুধু স্তন্যপায়ী প্রাণীই আছে ৩৫০০ জাতের। নোয়ার জাহাজে যদি শুধুমাত্র স্তন্যপায়ী জানোয়ারই নেওয়া হয়ে থাকে তাহলেও দেখা যাচ্ছে যে প্রতি জোড়া স্তন্যপায়ীর জন্য জায়গা ছিল:
৯১১২.৫+৩৫০০=২.৬ বর্গমিটার। যথেষ্ট জায়গা নয় নিশ্চয়ই; বিশেষত যখন স্তন্যপায়ীদের মধ্যে তিমি, ডলফিন, হাতি, রাইনো, হিপ্পোদের মতো বিশাল আকারের জন্তুরাও আছে। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে, নোয়ার জাহাজে শুধুমাত্র স্তন্যপায়ীদের জন্যেই যথেষ্ট জায়গা ছিল না। আর স্তন্যপায়ীরা তো সমগ্র প্রাণিকূলের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র একটি ভগ্নাংশ মাত্র। তারপরও তো রয়েছে সক্কলের জন্য নিদেনপক্ষে বেশ কয়েক মাসের খাবার-দাবার রাখার জায়গার প্রশ্ন। সমস্ত পৃথিবী মহাপ্লাবনে শেষ হয়ে যাওয়ার পর জল সরলেও খাবার মিলবে কোথা থেকে? বাঘ, সিংহের মত মাংসাশীরা যে মাংস খাবে, সেই সব মাংসল প্রাণীরা কোথায়? গরু, মোষ, ছাগল, ভেড়া, ইত্যাদির মতো তৃণভোজী প্রাণীদের জন্য তৃণ কোথায়? হাতি, জিরাফ ইত্যাদি প্রাণীদের খাওয়ার মতো গাছগাছড়া কোথায়? তিমি থেকে ভোঁদড় পর্যন্ত মৎস্যভোজীদের জন্য মাছ কোথায়? সবার খাবার আবার নতুন করে যত দিন না পৃথিবীর বুকে আবির্ভূত হচ্ছে, ততদিন তো ওই নোয়ার জাহাজে রেখে দেওয়া খাবার খেয়েই প্রাণটা রাখতে হবে! অতএব জাহাজে খাবারের স্টক বেশ কয়েক মাসের বদলে বেশ কয়েক বছরের রাখাটাই স্বাভাবিক নয় কি? ওই বিশাল পরিমাণ খাদ্য রাখার জায়গা চাই! কিন্তু জাহাজে জায়গা কই? এটা এখন নিশ্চয়ই স্পষ্টতর হয়েছে, মহাপ্লাবনের মতোই নোয়ার জাহাজের ধর্মীয় বিশ্বাসও উদ্ভট কল্পনা বই কিছু নয়।"
- 'আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না', প্রবীর ঘোষ




Comments