শেখ আব্দুল্লাহ

 

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্তির পর দুই দেশের বাহিনীর নেতৃত্বে একজন ব্রিটিশ অফিসার এবং তার অধীনস্থ অনেক উচ্চপদস্থ ব্রিটিশ অফিসার ছিল ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন আর দুই বাহিনীর জয়েন্ট কমান্ডার ইন চিফ ফিল্ড মার্শাল অচিনলেক জিন্নাহকে স্পষ্ট করে বলে দেয় যে, তারা কাশ্মীরের ক্ষেত্রে শক্তির প্রয়োগ বরদাস্ত করবে না। পাকিস্তান কর্তৃক এই চেষ্টা করা হলে ব্রিটেন পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে প্রত্যেক ব্রিটিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নিবে। জিন্নাহ সিদ্ধান্ত নেন ব্রিটিশ হাই কমান্ডের বিরোধিতা করে কাশ্মীরে সামরিক অভিযান চালানোর। অন্যদিকে শিখ রাজা গোপনে ভারতের সাথে দর কষাকষি শুরু করে দিয়েছিলেন। জিন্নাহ পাঞ্জাবের সরদার শওকত হায়াৎ খানকে এই অপারেশন পরিচালনার জন্য মনোনীত করেছিলেন

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Shaukat_Hayat_Khan

যুদ্ধের সময় তিনি একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি কয়েক মাস ইতালির পিওডব্লিউ ক্যাম্পে কাটিয়েছেন

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Prisoner-of-war_camp

দেশে ফিরে কমিশন থেকে পদত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। পুরাতন পাঞ্জাবের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তার বাবা। তিনি অনিয়মিতদের যুদ্ধে ব্যবহারের বিরোধী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন এই অপারেশন শুধু সামরিক বাহিনীর লোকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকুক। তাকে প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত করেছিলেন। তিনি চেয়েছিলাম খুরশিদ আনোয়ার তার অপারেশনে অংশগ্রহণ করবে

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Khurshid_Anwar_(Major)

সমস্ত সামরিক পরামর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে খুরশিদ আনোয়ার পশতুন গোত্রের লোকদের জড়ো করে। ৬/১৩ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের (অবিভক্ত ভারতে পিফার্স) হিসেবে পরিচিত ছিল) দুই ব্রিগেডিয়ার আকবর খান এবং শের খানকে দায়িত্ব দেয়া হয় আক্রমণের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Akbar_Khan_(Pakistani_general)

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sher_Ali_Khan_Pataudi

আক্রমণের দিন ঠিক করা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সেদিন খুরশিদ আনোয়ারের বিয়ের দিন হওয়ায় অপারেশন দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে খবর ফাঁস হয়ে যায়। ব্রিগেডিয়ার ইফতিখার জেনে যান ঘটনা। তিনি খবর পৌঁছে দেন পাকিস্তান বাহিনীর সর্বাধিনায়ক জেনারেল মেজার্ভির কাছে

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Frank_Messervy

জেনারেল অচিনলেককে খবর দেন এবং তার কাছ থেকে মাউন্টব্যাটেনের কাছে খবর যায়

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Claude_Auchinleck

আর মাউন্টব্যাটেন এই খবর পৌঁছে দেন ভারত সরকারকে। কংগ্রেস সরদার প্যাটেলকে কাশ্মীরের মহারাজার কাছে পাঠায় তাকে চাপ দিয়ে ভারতের সাথে অঙ্গীভূত হতে রাজি করানোর জন্য। মাউন্টব্যাটেন ভারতীয় বাহিনীকে শ্রীনগরে এয়ারলিফট এর আদেশ দেয় হানিমুন থেকে আনোয়ার রাওয়ালপিন্ডি ফিরে আসার পর আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। এক সপ্তাহের ভেতর মহারাজার বাহিনীতে ভাঙ্গন ধরলে হরি সিং জম্মুতে তার প্রাসাদে পালিয়ে যান। ১১ তম শিখ রেজিমেন্ট শ্রীনগরে পৌঁছানোর পর বাধ্য হয় অতিরিক্ত সেনা সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করতে। খুরশিদের আদেশে আসা পশতুন গোত্রের লোকেরা বারামুলায় এসে আর কোথাও যেতে অস্বীকৃতি জানায়। ঐখানে তারা তিন দিন অবস্থানকালে মদ্যপানে ব্যস্ত ছিল। তারা ইচ্ছামতো বাড়ি ঘর লুট করে। হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোককে সমানভাবে লাঞ্ছিত করেনারী ও পুরুষ উভয়কে ধর্ষণ করে এবং কাশ্মীরের কোষাগার লুট করে নিয়ে যায়স্থানীয় সিনেমা হল ধর্ষণের আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। তারা সেন্ট জোসেফ কনভেন্টে হামলা করে চার জন নানকে ধর্ষণ ও হত্যা করে। এদের মধ্যে কনভেন্টের মাদার সুপিরিয়র ছিলেন

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mother_superior

তারা কনভেন্টে থাকা এক ইতালিয়ান দম্পতিকে গুলি করে হত্যা করে। অন্যদিকে ভারতীয় বাহিনী পাল্টা হামলা চালায় এবং মহারাজা ভারতের সাথে একীভূত হওয়ার কাগজের সই করেন। যুদ্ধ চলাকালীন সময়েই ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আপিল করে। আপিলের জবাবে জাতিসংঘ যুদ্ধ বিরোধী করে এবং 'লাইন অফ কন্ট্রোল' সৃষ্টি করে। কাশ্মীর মুসলিম কনফারেন্সের নেতারা শেখ আব্দুল্লাহর হাতে উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে চলে যান শেখ আব্দুল্লাহ মুসলিম লীগকে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতেন। তার আশঙ্কা ছিল কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্গত হলে মুসলিম লীগের পাঞ্জাবি জমিদাররা যেকোনো সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংস্কারে বাধা সৃষ্টি করবে। এসব চিন্তা করে তিনি কাশ্মীরে ভারতীয় সামরিক উপস্থিতির সমর্থন করেছিলেন তবে তিনি সাধারণ কাশ্মীরীদের নিজেদের ভবিষ্যৎ বেছে নেয়ার অনুমতি দেন শ্রীনগরের এক গণসমাবেশে আব্দুল্লাহকে পাশে নিয়ে নেহেরু কাশ্মিরীদের একই রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে আব্দুল্লাহকে জরুরি সরকারের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মহারাজা আব্দুল্লাহর নিয়োগের বিরোধিতা করলে নেহেরু চিঠি লিখে তাকে আশ্বস্ত করেন আব্দুল্লাহর ব্যাপারে। ১৯৪৪ সালে কাশ্মীরের জন্য ন্যাশনাল কনফারেন্স একটি সংবিধানের অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু সংবিধানের ৩৭০ ধারা দিয়ে কেবল কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। কারান সিং ক্ষমতায় বসেছিল এরপর, যে ছিল স্রেফ নামমাত্র প্রধান। জম্মু-কাশ্মীর কনফারেন্স এ স্বীকারোক্তিমূলক উপাদান নিয়ে বিভক্তি দেখা দেয়ার পর শেখ আব্দুল্লাহ বামপন্থার দিকে ঝুঁকেছিলেন। আব্দুল্লাহ জমিদারদের জমি সংক্রান্ত আইন সংস্থারে হাত দেন। তাদের সর্বোচ্চ ২০ একর পর্যন্ত জায়গা রাখার অনুমতি দেয়া হয় যদি তারা জমিতে নিজেরা কাজ করে। ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ৮৮ হাজার ৭৭৫ একর জমি হস্তান্তর করা হয়েছিল ১ লক্ষ ৫৩ হাজার ৩৯৯ জন কৃষকের কাছে। আব্দুল্লাহ আরো ৯০ হাজার খামারে যৌথ চাষের ব্যবস্থা করেছিলেন। কাশ্মীরের বাইরের কারো কাছে জমি বিক্রি নিষিদ্ধ করে আইন পাস করা হয় অঞ্চলটির মৌলিক ভূসংস্থান ঠিক রাখতে। ডজন খানেক নতুন স্কুল ও চারটি হাসপাতাল তৈরি করেন আব্দুল্লাহ। শ্রীনগরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীরা আব্দুল্লাহর এই বাম ধারার সংস্কারগুলোকে ভালো চোখে দেখেনি। আমেরিকার তৎকালীন মিত্র পাকিস্তান তাদের নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অধিবাসীদের কমিউনিজমের জুজুর ভয় দেখাতে লাগলো। এই সংক্রান্ত আমেরিকার মিথ্যা প্রোপাগান্ডার অন্যতম সেরা উদাহরণ হলো জোসেফ করবেলের লেখা 'ডেঞ্জার ইন কাশ্মীর'। বইটি লিখতে সাহায্য করে মেয়ে ম্যাডেলিন অলব্রাইট

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Madeleine_Albright

১৯৪৮ সালে ন্যাশনাল কনফারেন্স এই শর্তে ভারতের সাথে সাময়িক সংযোজনকে সমর্থন করে যে, কাশ্মীর স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসেবে থাকবে যার প্রতিরক্ষা বিদেশ নীতি ও যোগাযোগের বিষয়গুলো কেন্দ্রের হাতে থাকবে। ডোগরার অভিজাত ও কাশ্মীরি পন্ডিতের নিয়ে গড়ে ওঠা প্রভাবশালী গোষ্ঠী নিজেদের সুবিধা হারানোর ভয়ে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে। তাদের পেছনে সমর্থন ছিল জনসংঘের, এই জনসংঘ বিজেপির রূপ নিয়ে পুনর্জন্ম লাভ করেছে। আব্দুল্লাহ সরকারের বিরুদ্ধে উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য এরা তহবিল আর স্বেচ্ছাসেবী সরবরাহ করেছিল। আব্দুল্লাহ বিশ্বাস করতে নেহেরুকে অথচ নেহেরু ১৯৫৩ সালের মে মাসে শ্রীনগর সফরের সময় আব্দুল্লাহকে ভুলিয়ে ভালিয়ে দিল্লির শর্তে কাশ্মীর ইস্যুতে স্থায়ী সমাধান গ্রহণের জন্য রাজি করাতে চেষ্টা করেন নেহেরুর আবেদন ছিল, ভারতে যদি সেক্যুলার ডেমোক্রেসি প্রতিষ্ঠা করা যায় তবে কাশ্মীরকে ভারতের অংশ হতে হবে। কিন্তু আব্দুল্লাহ এতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি আব্দুল্লাহর মতে, কাশ্মীরিদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হলেও মুসলিমরা ভারতের বৃহৎ সংখ্যালঘু গোষ্ঠী কংগ্রেসের ভেতরেই এমন অনেক নেতা ছিল যারা জনসংঘের মৌলবাদী দাবীর প্রতি ছিল সংবেদনশীল। তিন মাস পর নেহেরু নিজেও যোগ দিলেন এসব মৌলবাদীদের দলে। নেহেরু কাশ্মীরে সংগঠিত অভ্যুত্থানের অনুমোদনও  দিয়েছিলেন। কারান সিং শেখ আব্দুল্লাহকে দরখাস্ত করলো বাকশি গুলাম মুহাম্মাদ নামে তার এক লেফটেন্যান্ট প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করলো

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bakshi_Ghulam_Mohammad

পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্স এর সাথে যোগাযোগের অভিযোগে আব্দুল্লাহকে গ্রেফতার করা হলো। ২০ দিনব্যাপী সাধারণ ধর্মঘটে কয়েক হাজার কাশ্মীরিকে  আটক করা হলো। ন্যাশনাল কনফারেন্সের হিসাব অনুযায়ী এসময় ভারতীয় বাহিনীর গুলিতে ১ হাজারের অধিক কাশ্মীরির মৃত্যু হয় অথচ কংগ্রেস সরকার মাত্র ৬০ জনের মৃত্যুর হিসাব দিয়েছিল। শেখ আব্দুল্লাহর স্ত্রী আকবর জেহানের নেতৃত্বে নারীদের বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। শেখ আব্দুল্লাহ বিনা বিচারে ছাড়া চার বছর জেল খাটেন। ১৯৫৮ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। সরকারি গাড়ির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে তিনি ট্যাক্সি ভাড়া করে শ্রীনগর পৌঁছে যান। এরপর বিভিন্ন জনসমাবেশে তিনি নেহেরুকে মনে করিয়ে দিতে থাকেন ১৯৪৭ সালে করা নেহেরুর প্রতিজ্ঞা। এরপর কংগ্রেস সরকার তাকে আবার গ্রেফতার করে এবং তার স্ত্রী ও অন্যান্য জাতীয়তাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রস্তুত করে। ষড়যন্ত্রমূলকে মামলা ১৯৫৯ সালে শুরু হয়ে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলে। ১৯৬২ সালে একজন স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি পাঠিয়ে দেন উচ্চ আদালতে। তিনি সুপারিশ করেছিলেন যে, অভিযুক্তের বিচার ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারার অধীনে করা যেতে পারে যার শাস্তি হয় মৃত্যুদণ্ড নয়তো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। ১৯৬৩ সালের ডিসেম্বর মাসে হযরতবাল মাজার থেকে নবী মুহাম্মদের চুল চুরি হয়ে যায়। ধর্মঘট আর গণবিক্ষোভের কারণে অ্যাকশন কমিটি গঠন করা হয় নেহেরু চুলের গোছা খুঁজে বের করার ঘোষণা দেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তা উদ্ধার হয়। অ্যাকশন কমিটির তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য ধর্মীয় নেতাদের ডেকেছিল। ফকির মিরাক শাহ এই চুলের গোছা যে আসল তা নিশ্চিত করেন

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sayyid_Meerak_Shah_Kashani

আব্দুল্লাহর দ্বিতীয় বারের কারাবরণ ছিল ছয় বছরের দিল্লিতে তিনি আব্দুল্লাহকে পরামর্শ দেন আবদুল্লাহ যেন পাকিস্তান সফর করে আইয়ুব খানের সাথে কথা বলে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের ব্যাপারে। আব্দুল্লাহ পাকিস্তানে আইয়ুব খানের সাথে এই বিষয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করেছিলেন ১৯৬৪ সালের ২৭ মে তিনি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদে পৌঁছে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছিলেন সেসময় তার এক সহকর্মী এসে জানায় যে, অল ইন্ডিয়া রেডিওতে নেহেরুর মৃত্যুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। শেখ আব্দুল্লাহ শোনা মাত্র কাঁদতে শুরু করেন পাকিস্তানের সব কর্মসূচি বাতিল করে তিনি ভুট্টোর সাথে দিল্লি ফিরে যান নেহেরুর শেষকৃত্যে অংশগ্রহণ করতে। কাশ্মীর সংকট সমাধানে আবদুল্লাহ দুনিয়া চষে বেড়িয়েছেন আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের আশায়। চৌ এন লাই এর সাথে তার বৈঠক ভারতে উত্তেজনার সৃষ্টি করে এই অজুহাতে দেশে ফেরার পর তাকে আবার কারাবন্দি করা হয় তাকে ও তার স্ত্রীকে কাশ্মীর থেকে দূরে আরেকটি কারাগারে পাঠানো হয় ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তান আবার 'লাইন অফ কন্ট্রোল' অতিক্রম করে আইয়ুব খান ওয়াশিংটনের কাছে সাহায্যের আবেদন করেন। ওয়াশিংটন মস্কোকে ভারতের উপর চাপ প্রয়োগ করতে বলে। আলেক্সেই কোসিগিনের অধীনে তাসখন্দে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এই যুদ্ধের আইডিয়া ছিল ভুট্টোর। যুদ্ধের ব্যর্থতার জন্য আইয়ুব খান ভুট্টোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে পদচ্যুত করেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার পর ১৯৭২ সালে সিমলায় আধিপত্যবাদী ভারত সরকার ভুট্টোকে রাজি করায় কাশ্মীরের স্থিতাবস্থা মেনে নিতে। বিনিময়ে ভুট্টোর সরকার প্রায় ১ লাখ পাকিস্তানি সৈন্যকে ফেরত পায় যারা ঢাকা পতনের পর বন্দী হয়েছিল। ১৯৭০ সালের মধ্যভাগে শেখ আব্দুল্লাহকে মুক্তি দেয়া হয় দুর্বল স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি দিল্লির সাথে শান্তি স্থাপন করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি আবার কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হন। শ্রীনগরে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি তার বড় ছেলে ফারুক আব্দুল্লাহকে উত্তরসূরী হিসেবে ঘোষণা করেনডাক্তার ফারুক ছিলেন মদ্যপান এবং ব্যভিচারে আসক্ত, যিনি পিতার মতো উজ্জ্বল ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন না। ১৯৯৬ সালে ফারুক আব্দুল্লাহ ক্ষমতায় আসন এবং কাশ্মীরীদের নিপীড়নে বিজেপিকে সহায়তার জন্য ব্যাপকভাবে নিন্দিত হন ১৯৯৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নওয়াজ শরীফ সমর্থিত সেনাবাহিনী ও জঙ্গিরা আবারো ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে। ১৯৯৯ সালের মে মাসে ভারত পাকিস্তানে প্রবেশ করলে তারা আবারও হোয়াইট হাউজের কাছে সাহায্যের  আবেদন করে ক্লিনটন প্রশাসন পাকিস্তানে একজন মার্কিন জেনারেলকে পাঠায় এবং নওয়াজ শরীফকে হোয়াইট হাউজে ডেকে নিয়ে যুদ্ধ প্রত্যাহার করতে বলে নওয়াজ শরীফ কথা মানতে বাধ্য হনএকান্ত আলাপে শরীফ বলেছিলেন তিনি ভারতের সাথে মিটমাট করে কারগিল যুদ্ধ আটকাতে চাইলেও সেনাবাহিনীর ধোঁকায় পড়ে তা করতে ব্যর্থ হন। ওয়াশিংটন আর দিল্লীতে এই মিথ্যায় কাজ হলেও পাকিস্তানি হাই কমান্ড প্রচণ্ড রেগে যায়। দেশে ফিরে শরীফ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে জেনারেল পারভেজ মুশাররফকে সরিয়ে আইএসআই এর প্রধান জেনারেল খাজা জিয়াউদ্দিনকে বসানোর পরিকল্পনা করেন। শরীফের ভাই শাহবাজ জিয়াউদ্দিনকে নিয়োগের নিয়োগের অনুমতি পাওয়ার জন্য ওয়াশিংটনে অলিখিত সফর করে। দু'জনকেই হোয়াইট হাউজ, পেন্টাগন ও সিআইএ অফিসে গ্রহণ করে নেয়া হয় এবং দেয়া হয় প্রচুর প্রতিশ্রুতি।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Shehbaz_Sharif

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ziauddin_Butt

১৯৯৯ সালের ১১ অক্টোবর জেনারেল মুশাররফ শ্রীলংকা থেকে তিন দিনের সরকারি সফর শেষে ফিরে আসার সময় নওয়াজ শরীফ তার পদচ্যুতির এবং জিয়াউদ্দিনের পদোন্নতির ঘোষণা দেন করাচির বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে জেনারেলের বিমানকে ঘুরিয়ে সিন্ধু প্রদেশের একটি নির্দিষ্ট এয়ারস্ট্রিপে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী জিয়াউদ্দিনের কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়করাচির কমান্ডার বিমানবন্দর দখল করে বিমান নামানোর নির্দেশ দেয়। মুশাররফকে পূর্ণ সামরিক প্রটোকল দেয়া হয় রাজধানীর সেনাবাহিনীর কমান্ডার শরীফ ভাইদ্বয় ও জিয়াউদ্দিনকে গ্রেফতার করে। ঘটনার তিন দিন আগেই ক্লিনটন হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয়রা পাকিস্তানিদের জানায় কারগিল-দ্রাসের একটি চূড়া তখনো যুদ্ধ বিরোধী চুক্তি হওয়ার পরও পাকিস্তানি সৈন্যরা দখল করে বসে আছে। ঘটনার তদন্ত করতে পাকিস্তানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেই চূড়ায় গিয়েছিলেন তিনি দায়িত্বরত ক্যাপ্টেনকে  পাকিস্তান সীমান্তে ফিরে আসতে বললে ঐ ক্যাপ্টেন তাকে ইসলামের সাথে প্রতারণা করার অভিযোগ দেখিয়ে গুলি করে মেরে ফেলেন ক্যাপ্টেনকে পরে মার্শাল কোর্টে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]