কাফকা+নাজিম হিকমত
৮৪ বছর বয়সে ইজরায়েলের তেল আবিবে কাফকার কিছু লেখার সংকলক এবং তার বন্ধু ম্যাক্স ব্রডের মৃত্যু হয়েছিল। কাফকার প্রচুর লেখা আজও আলোর মুখ দেখেনি। মৃত্যুর সময় ব্রড তার সেক্রেটারি মিসেস হফের কাছে সেগুলো হস্তান্তর করেন। ২০০৭ সালে মিসেস হফের মৃত্যু পর্যন্ত সেগুলো তার জিম্মাতে ছিল। ১৯৮৮ সালে কাফকার 'বিচার' উপন্যাসের পান্ডুলিপি তিনি নিলামে ২ মিলিয়ন ডলার দামে বিক্রি করে দিয়েছিলেন জার্মানির মার্বাখের জার্মান লিটারারি আর্কাইভে; ১৯৭৪ সালে মিসেস হফ কাফকার ২২টি চিঠি ও কাফকার ব্রডকে পাঠানো ১০টি পোস্টকার্ড বিক্রি করেন অজানা দামে। পরের বছর তেল আবিব এয়ারপোর্টে মিসেস হফ গ্রেপ্তার হন কাফকার কিছু পান্ডুলিপি সহ, আইন অনুযায়ী ইজরায়েলের ন্যাশনাল আর্কাইভের কাছে ফটোকপি জমা না রেখে প্লেনে ওঠার সময়। ব্রডের শেষ ইচ্ছার মধ্যে অস্পষ্টতা থাকায় কাফকার বাক্সবন্দী পান্ডুলিপি নিয়ে আজও চলছে আইনি লড়াই - একদিকে 'ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব ইজরায়েল' যাদের দাবি হচ্ছে ম্যাক্স ব্রড এগুলো হফের কাছে দিয়ে গিয়েছিলেন লাইব্রেরির হাতে তুলে দেয়ার জন্য; অন্যদিকে আছে মিসেস হফের দুই মেয়ে এভা ও রুথ, যাদের দাবি ম্যাক্স ব্রড এগুলো চিরদিনের জন্য তাদের মাকে দিয়ে গেছেন শর্তহীন উত্তরাধিকারী করে। এই দুই বোন তাদের ইচ্ছা ঘোষণা করেছে যে তারা পান্ডুলিপির বাক্সগুলো ইজরায়েলে রাখবে না যুদ্ধ হুমকি, পান্ডুলিপি সংরক্ষণের প্রযুক্তি ও সে বিষয়ক জ্ঞানের অভাব ইত্যাদি কারণে; দিয়ে দেবে জার্মানির মার্বাখের মিউজিয়ামে বা আর্কাইভে। এভা আজও ইজরায়েলের আদালতে পান্ডুলিপিগুলোর অধিকার নিয়ে লড়ে যাচ্ছে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব ইজরায়েলের বিরুদ্ধে। ১৯৮০-র দশকে বার্নহার্ড এখ্ট নামে এক ভাষাতাত্ত্বিক মিসেস এস্থার হফের সঙ্গে মিলে বাক্সবন্দী পান্ডুলিপিগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেন; ধারণা করা হয় এটিও পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়। কাফকার অনেক লেখাই ব্রড পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ইজরায়েলের বাইরে সুইস ব্যাংকের ডিপোজিট বক্সে।
.....................................................................
কাফকা তার বাপকে লেখা চিঠিতে তার বাপের এবং ইহুদি ধার্মিকদের দ্বারা না বুঝে অর্থহীন আচার পালনের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি সিনাগগ এর ভেতরে অনুষ্ঠিত অযৌক্তিক ধর্মীয় রীতিগুলোর বিরুদ্ধেও লিখেছেন।
তুরস্কের বিপ্লবী কবি নাজিম হিকমতকে তার দেশের শোষক সরকার দীর্ঘ ২৮ বছর বন্দি করে রেখেছিলো। সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকাকালীন তিনি নেরুদাকে তার উপর চালানো নির্মম অত্যাচারের বর্ণনা দিয়েছিলেন। জাহাজের ডেকের উপর তাকে শেকল পড়া অবস্থায় দৌঁড়াতে বাধ্য করা হতো যতক্ষণ না তিনি অসুস্থ হয়ে পড়তেন। তাকে টয়লেটে আবদ্ধ করে রাখা হতো। টয়লেটে মলের স্তূপে তার কোমর পর্যন্ত ডুবে যেতো। তুরস্কের কৃষকদের অসহনীয় দারিদ্র আর কষ্টের কথা তুলে ধরতেন নাজিম। জমির মালিক ও প্রভুদের অত্যাচারের গল্প শুনাতেন নাজিম। তিনি দেখেছিলেন তুর্কি কৃষক ও শ্রমিকদের জেলখানায় ধরে এনে শুকনো রুটির গুঁড়ো আর ঘাস খেতে দেয়া হতো কেবল। যখন রুটির গুঁড়ো ফুরিয়ে যেতো তখন শ্রমিক-কৃষকদের হাত আর পায়ের সাহায্যে চতুষ্পদ জন্তুর মতো চলে ঘাস খেতে বাধ্য করা হতো।
Comments