কোয়েলহোনামা

 

কোয়েলহো তার 'দ্য জাহির' বইটিতে কুলাকদের ভূমিকার কথা উল্লেখের ধারেকাছে না গিয়ে, ট্রটস্কির চামচাদের স্যাবোটাজ এর কথা না বলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই কাজাখস্তানের সেসময়ের খাদ্য সংকটের জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। তার একই বইয়ে করা দাবি অনুযায়ী সোভিয়েত প্রকৌশলীদের ভুলে সাগর শুকিয়ে গিয়ে পুরো কাজাখস্তানে দারিদ্র নেমে আসার ব্যাপারটা পুরোপুরি ফালতু কথা। তাছাড়া পারমাণবিক পরীক্ষার কারণে অধিবাসীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির ব্যাপারে বুর্জোয়া অতিরঞ্জন তো আছেই। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াই করা অবসরপ্রাপ্ত লাল ফৌজের বীরদের ভরণপোষণের দায়িত্ব সমাজতান্ত্রিক সরকার কর্তৃক না নেয়া সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। কাজাখস্তানের যাযাবর জাতিদের যৌথ খামার ব্যবস্থার অধীনে আনার সমালোচনা করেছেন তিনি একই বইয়ে। তিনি উরুগুয়ে'র টুপামারোস গেরিলাদের কটাক্ষ করেছেন এখানে।

আব্রাহামিক ধর্মগুলোর অনুসারীদের সবার খাসলত একই, তিনি বিখ্যাত কিংবা অখ্যাত যেই হন না কেন। কোয়েলহো পর্যন্ত এই খাসলত এর গন্ডি অতিক্রম করতে পারলেন না। মুসলিমদের মতোই তিনি বইটিতে দেখিয়েছেন কিভাবে ইহুদিরা আসিরিয়, ফিনিশীয় প্রভৃতি মধ্যপ্রাচ্যের জাতিদের দ্বারা নির্যাতিত হতো; কিভাবে তাদের পয়গম্বররা প্রেমের বাণীর দ্বারা প্যাগানদের আব্রাহামিক ধর্মের দিকে আকৃষ্ট করতো ইত্যাদি ইত্যাদি। ঐতিহাসিক বাস্তবতা বিবর্জিত এদের মিথগুলো কেবল নিজেদের ঢোল পেটাতেই ব্যস্ত, বর্বরতা ও গণহত্যার ইতিহাস আড়াল করে। ঠিক এমনটাই করেছিল আর্যরা উপমহাদেশের আদিম অধিবাসীদের সাথে, তাদের মনগড়া মিথ নতুন করে লিখে।

ভাববাদের মতো ভ্রান্ত ধারণা ছড়ানো লেখক পাওলো কোয়েলহো তার 'হিপ্পি' বইটিতে সমাজতন্ত্র ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে লিখেছেন-

"সত্যি বলতে, বাজারে তখন আরও একটা বেস্টসেলার বই ছিল। ফ্রমারের ট্রাভেল গাইডের মতো জনপ্রিয় না হলেও, বইটার চাহিদা ছিল ব্যাপক। বিশেষ করে সমাজতন্ত্র, মার্কসবাদ এবং অরাজকতা নিয়ে যারা উদ্দীপ্ত হয়েছিল, তাদের কাছে বইটা ছিল অধিক আবেদনময়। 'বিশ্বের শ্রমিকেরা একদিন ক্ষমতা দখল করবে' অথবা 'ধর্ম হচ্ছে জনগণের আফিম', এসব তত্ত্বের প্রচারণার মাধ্যমে প্রতিবার এই ধারণাগুলোর ধারক-বাহকদের ভ্রান্তিমোচন ঘটতো। অবশ্য এমন গাঁজাখুরি বিবৃতির দ্বারা বোঝা যেতো যে, আলোচ্য বক্তারা জনগণের সম্পর্কে জানা দূরে থাকুক, আফিম সম্পর্কেই কিছু জানে না।"

এই লেখকের মতে কমিউনিস্ট দেশগুলো নাকি হিপ্পিদের কোলে করে রাখবে, যেহেতু তারাও ধর্ম মানে না দেখে হিপ্পিদের মতো তাদেরও নাকি নৈতিকতার বোধ নেই!

'দ্য ডেভিল অ্যান্ড মিস প্রিম' বইটিতে তিনি অস্ত্র ব্যবসাকে ইতিবাচকভাবে হাইলাইট করেছেন এবং মার্ক্সবাদীদের আদর্শকে শয়তানের কাজের সাথে তুলনা করেছেন।


পাওলো কোয়েলহো এই বইটিতে স্বীকার করেছেন তিনি যে ২০০৩ সালের ২১ জুন জর্ডানের প্রাসাদের বাগানে ক্রিমিনালদের সাথে ডিনার করছিলেন। এরা হলো- জর্ডানের রাজা ও রানী, যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সেক্রেটারি অব স্টেট কলিন পাওয়েল, আরব লীগের প্রতিনিধি, ইজরায়েলের ঐসময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পশ্চিমাদের আফগান দালাল হামিদ কারজাই ছাড়াও আরও কয়েকজন।



Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]