উগ্র খ্রিস্টান

 


মধ্যযুগে এমনকি বাচ্চা কিংবা কিশোরী মেয়েরাও যদি খেলার ছলে প্ল্যানচেট জাতীয় জিনিসের আয়োজন করতো আর সেটা গির্জাগুলোতে অবস্থানরত ধর্মের পান্ডাদের কানে যেতো, তাহলে বাচ্চা ও কিশোরীদের উপর নেমে আসতো ভয়াবহ শাস্তি। তাদের শত শত মানুষের সামনেই উলঙ্গ করে কথিত শয়তানের চিহ্ন খোঁজা হতো শরীরে। এসময় জন্মদাগকে পর্যন্ত শয়তানের চিহ্ন হিসেবে দাবি করা হতো। শেষে তাদের বিশেষ চাকার ফ্রেমের সাথে শক্ত করে বাঁধা হতো। তীক্ষ্ণ কাঁটা আর গরম কয়লা দেয়া থাকতো সেখানে। চাকা ঘুরতে থাকলে এসব হতভাগ্য বালিকাদের শরীরের মাংস পুড়তে ও ছিঁড়তে থাকতো।

এসব বালিকাদের আরেকভাবে শাস্তি দিতো এই বর্বররা। বিশেষ খাটে উলঙ্গ করে শুইয়ে দুই গোড়ালি আংটা দিয়ে বেঁধে দেয়া হতো। এরপর দুই হাত মাথার উপর দড়িতে বেঁধে লিভারের সাথে ঝুলিয়ে দিতো। লিভারে চাপ দিলে হাত পেছনের দিকে চলে যেতো, কাঁধ জয়েন্ট থেকে বেরিয়ে আসতো, মেরুদন্ড ভেঙে যেতো, ত্বক ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেতো।
.....................................................................................

যীশুর এতগুলো ভাই-বোন স্বাভাবিক নিয়মে জন্মানোর পরও তাকেই অলৌকিকভাবে জন্মদান করানোর কাহিনী বানানো হলো! তার ভাইবোনদের তালিকা-

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Brothers_of_Jesus

ইংরেজি 'ভিলেন' শব্দটা এসেছে 'ভিলেজার' শব্দ থেকে। স্বাভাবিকভাবেই খ্রিষ্ট ধর্ম সেমিটিক অঞ্চলের গন্ডির বাইরে যাত্রা শুরু করার প্রথমদিকে ইউরোপের শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়লেও গ্রামগুলো তখনো ছিল প্যাগানদের দখলে। এজন্য এই ধর্মের পান্ডারা গ্রামের অধিবাসীদের 'শয়তানের উপাসক' হিসেবে প্রচার করতো। এশিয়ার গন্ডি অতিক্রম করে ইউরোপের প্যাগানদের সংস্পর্শে আসার কারণে এদের পেইন্টিং ও ভাস্কর্য সংক্রান্ত গোঁড়ামি অনেকটা দূর হয়ে গেলেও এই আধুনিক যুগেও ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চগুলোতে যীশু কিংবা মেরীর মূর্তি রাখা নিষিদ্ধ। প্যাগান সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য দেবীরূপে নারী সত্তার উপস্থিতি, যার বিপরীত চিত্র দেখা যায় আব্রাহামিক ধর্মগুলোতে। এরা এতই উগ্র নারীবিদ্বেষী যে প্যাগানদের দেবীদের সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছুই বিকৃতভাবে প্রচার করে এসেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। যেমন- দেবী ভেনাসের প্রতীক পেন্টাকল হয়ে গেছে শয়তানের চিহ্ন, জ্ঞানী ক্রন এর টুপি হয়ে গেছে ডাইনীদের টুপি ইত্যাদি।

একজন ক্যাথলিককে বিয়ে করার 'অপরাধে' রাজা চতুর্থ হেনরিকে প্রোটেস্ট্যান্টরা বিতাড়িত করেছিল।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Henry_IV_of_England

.....................................................................................

এই মেয়ে রাশিয়ার এক গির্জার মূর্তি থেকে এক গাদা জীবাণু পেয়ে সেই সেম্পল তার জীববিদ্যার ক্লাসের ল্যাবে সাবমিট করেছিল। এজন্য পাদ্রিরা তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছে। সে মূর্তিগুলো থেকে staphylococcus, streptococcus, pseudomonas আর intestinal ব্যাকটেরিয়া পেয়েছিল।


সিরিলিক অক্ষরে যা লেখা আছে সেটার সারমর্ম হচ্ছে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চ উরাল অঞ্চলের আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলোর জন্য পুতিন সরকারের বাজেট থেকে ১৭৩ মিলিয়ন রুবল পেয়েছে। অথচ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফিতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য ২৩৯ মিলিয়ন রুবল প্রয়োজন, কিন্তু সেই অর্থ নাকি পুতিনের কাছে নেই!

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Spinal_muscular_atrophy


"যা লেখা হয়েছে, তার সাথে আর একটা অক্ষরও যোগ হবে না।"

- বাইবেল

রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জার পুরোহিত ফিলিপ ইলিয়াসেনকোর ফতোয়া মানতে বাধ্য করে এক নারীকে ধর্ষিত হওয়ার পরও বাচ্চা জন্ম দিতে বাধ্য করা হয়েছে! খ্রিষ্টান মোল্লাতন্ত্রের কাছে নতজানু পুতিনের বানানো আইন অনুযায়ী দেশটিতে এবরশন পিল প্রাপ্তির অধিকার অতি সীমিত।
...........................................................................................

ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ অনুযায়ী 'হাম' আঙ্গুরের মদ খেয়ে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে থাকা পিতা নূহকে নগ্ন অবস্থায় দেখে ফেলে বাকি দুই ভাই শাম এবং যাফতকে ডেকে আনে। কথিত এই নবী শাম এর পুত্র কনানকে অভিশাপ দেয় এভাবে-

"অভিশপ্ত হোক কনান
সে হবে তার ভ্রাতাদের দাসানুদাস।"

ধর্মীয় গ্রন্থের কল্পকাহিনীর উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে ইহুদিরা স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর গণহত্যা চালায় এবং কানানাইটদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Canaan

অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপের খ্রিস্টানরা দাসপ্রথার যথার্থতা প্রতিপন্ন করতে নূহ এর কথিত উক্তির আশ্রয় নিয়েছিল। তারা আফ্রিকানদের 'হাম' এর বংশধর বলে প্রচার করতো এবং বলতো যে অন্যান্য মানুষদের মাঝে ওরা 'দাসানুদাস' হিসাবে অভিশপ্ত।

"....কিন্তু যেকোনো ধর্মশাস্ত্রের মত, জেনেসিসকে অনুদ্ধরণীয় সুদূর অতীতের উপর আলোক নিক্ষেপের জন্য নয় বরং বর্তমানের সাথে এর চিরন্তন প্রাসঙ্গিকতার কারণে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। জেনেসিসের লেখকরা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে প্যালেস্টাইনে জীবন কেমন ছিল সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ঐতিহাসিক তথ্য প্রদান করে না। বিদগ্ধজনেরা যেমন বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন তারা বস্তুতপক্ষে সেই সময়কাল সম্বন্ধে কিছুই জানতো না। তারা হরহামেশাই যেমন ফিলিস্তিনীদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ভুল করেছে যারা প্রকৃতপক্ষে বাইবেলে উল্লেখিত গোড়ার দিকের এই যুগ শেষ হবার অনেক পরে এখানে আগমন করেছিল। তারা এমন সব শহরের কথা বলে, যেমন বীরসেবা, যার পত্তন তখনও হয়নি। তারা এই সময়ে ফিলিস্তিনে মিশরীয়দের শক্তিশালী উপস্থিতির কথার কোনো উল্লেখই করে না। আমাদের লেখকরা অবশ্য ঐতিহাসিক নির্ভুলতা নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নন। তারা বরং মানুষের দুর্দশা সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ সত্যের প্রতি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায় যা আজও আমাদের চারপাশে অনুরণিত হয়।...."

'In the beginning', Karen Armstrong

[বিখ্যাত এই লেখিকা ফিলিস্তিনী বলতে এক্ষেত্রে প্রাচীন আমলের ইহুদিদের বুঝিয়েছেন এবং তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের গল্পগুলো যারা বানিয়েছে তাদের সমালোচনা করেছেন। খ্রিস্টান আর মুসলিমরা যেগুলো পরবর্তীতে কপি-পেস্ট করেছিল।]


Comments

Popular posts from this blog

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-দুই]

শিবিরনামা [পর্ব-এক]