উগ্র খ্রিস্টান

 


মধ্যযুগে এমনকি বাচ্চা কিংবা কিশোরী মেয়েরাও যদি খেলার ছলে প্ল্যানচেট জাতীয় জিনিসের আয়োজন করতো আর সেটা গির্জাগুলোতে অবস্থানরত ধর্মের পান্ডাদের কানে যেতো, তাহলে বাচ্চা ও কিশোরীদের উপর নেমে আসতো ভয়াবহ শাস্তি। তাদের শত শত মানুষের সামনেই উলঙ্গ করে কথিত শয়তানের চিহ্ন খোঁজা হতো শরীরে। এসময় জন্মদাগকে পর্যন্ত শয়তানের চিহ্ন হিসেবে দাবি করা হতো। শেষে তাদের বিশেষ চাকার ফ্রেমের সাথে শক্ত করে বাঁধা হতো। তীক্ষ্ণ কাঁটা আর গরম কয়লা দেয়া থাকতো সেখানে। চাকা ঘুরতে থাকলে এসব হতভাগ্য বালিকাদের শরীরের মাংস পুড়তে ও ছিঁড়তে থাকতো।

এসব বালিকাদের আরেকভাবে শাস্তি দিতো এই বর্বররা। বিশেষ খাটে উলঙ্গ করে শুইয়ে দুই গোড়ালি আংটা দিয়ে বেঁধে দেয়া হতো। এরপর দুই হাত মাথার উপর দড়িতে বেঁধে লিভারের সাথে ঝুলিয়ে দিতো। লিভারে চাপ দিলে হাত পেছনের দিকে চলে যেতো, কাঁধ জয়েন্ট থেকে বেরিয়ে আসতো, মেরুদন্ড ভেঙে যেতো, ত্বক ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেতো।
.....................................................................................

যীশুর এতগুলো ভাই-বোন স্বাভাবিক নিয়মে জন্মানোর পরও তাকেই অলৌকিকভাবে জন্মদান করানোর কাহিনী বানানো হলো! তার ভাইবোনদের তালিকা-

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Brothers_of_Jesus

ইংরেজি 'ভিলেন' শব্দটা এসেছে 'ভিলেজার' শব্দ থেকে। স্বাভাবিকভাবেই খ্রিষ্ট ধর্ম সেমিটিক অঞ্চলের গন্ডির বাইরে যাত্রা শুরু করার প্রথমদিকে ইউরোপের শহরগুলোতে ছড়িয়ে পড়লেও গ্রামগুলো তখনো ছিল প্যাগানদের দখলে। এজন্য এই ধর্মের পান্ডারা গ্রামের অধিবাসীদের 'শয়তানের উপাসক' হিসেবে প্রচার করতো। এশিয়ার গন্ডি অতিক্রম করে ইউরোপের প্যাগানদের সংস্পর্শে আসার কারণে এদের পেইন্টিং ও ভাস্কর্য সংক্রান্ত গোঁড়ামি অনেকটা দূর হয়ে গেলেও এই আধুনিক যুগেও ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চগুলোতে যীশু কিংবা মেরীর মূর্তি রাখা নিষিদ্ধ। প্যাগান সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য দেবীরূপে নারী সত্তার উপস্থিতি, যার বিপরীত চিত্র দেখা যায় আব্রাহামিক ধর্মগুলোতে। এরা এতই উগ্র নারীবিদ্বেষী যে প্যাগানদের দেবীদের সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছুই বিকৃতভাবে প্রচার করে এসেছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। যেমন- দেবী ভেনাসের প্রতীক পেন্টাকল হয়ে গেছে শয়তানের চিহ্ন, জ্ঞানী ক্রন এর টুপি হয়ে গেছে ডাইনীদের টুপি ইত্যাদি।

একজন ক্যাথলিককে বিয়ে করার 'অপরাধে' রাজা চতুর্থ হেনরিকে প্রোটেস্ট্যান্টরা বিতাড়িত করেছিল।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Henry_IV_of_England

.....................................................................................

এই মেয়ে রাশিয়ার এক গির্জার মূর্তি থেকে এক গাদা জীবাণু পেয়ে সেই সেম্পল তার জীববিদ্যার ক্লাসের ল্যাবে সাবমিট করেছিল। এজন্য পাদ্রিরা তার বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছে। সে মূর্তিগুলো থেকে staphylococcus, streptococcus, pseudomonas আর intestinal ব্যাকটেরিয়া পেয়েছিল।


সিরিলিক অক্ষরে যা লেখা আছে সেটার সারমর্ম হচ্ছে রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চ উরাল অঞ্চলের আধ্যাত্মিক কেন্দ্রগুলোর জন্য পুতিন সরকারের বাজেট থেকে ১৭৩ মিলিয়ন রুবল পেয়েছে। অথচ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফিতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য ২৩৯ মিলিয়ন রুবল প্রয়োজন, কিন্তু সেই অর্থ নাকি পুতিনের কাছে নেই!

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Spinal_muscular_atrophy


"যা লেখা হয়েছে, তার সাথে আর একটা অক্ষরও যোগ হবে না।"

- বাইবেল

রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জার পুরোহিত ফিলিপ ইলিয়াসেনকোর ফতোয়া মানতে বাধ্য করে এক নারীকে ধর্ষিত হওয়ার পরও বাচ্চা জন্ম দিতে বাধ্য করা হয়েছে! খ্রিষ্টান মোল্লাতন্ত্রের কাছে নতজানু পুতিনের বানানো আইন অনুযায়ী দেশটিতে এবরশন পিল প্রাপ্তির অধিকার অতি সীমিত।
...........................................................................................

ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ধর্মীয় গ্রন্থ অনুযায়ী 'হাম' আঙ্গুরের মদ খেয়ে উলঙ্গ হয়ে শুয়ে থাকা পিতা নূহকে নগ্ন অবস্থায় দেখে ফেলে বাকি দুই ভাই শাম এবং যাফতকে ডেকে আনে। কথিত এই নবী শাম এর পুত্র কনানকে অভিশাপ দেয় এভাবে-

"অভিশপ্ত হোক কনান
সে হবে তার ভ্রাতাদের দাসানুদাস।"

ধর্মীয় গ্রন্থের কল্পকাহিনীর উপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে ইহুদিরা স্থানীয় বাসিন্দাদের উপর গণহত্যা চালায় এবং কানানাইটদের বশ্যতা স্বীকারে বাধ্য করে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Canaan

অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদী ইউরোপের খ্রিস্টানরা দাসপ্রথার যথার্থতা প্রতিপন্ন করতে নূহ এর কথিত উক্তির আশ্রয় নিয়েছিল। তারা আফ্রিকানদের 'হাম' এর বংশধর বলে প্রচার করতো এবং বলতো যে অন্যান্য মানুষদের মাঝে ওরা 'দাসানুদাস' হিসাবে অভিশপ্ত।

"....কিন্তু যেকোনো ধর্মশাস্ত্রের মত, জেনেসিসকে অনুদ্ধরণীয় সুদূর অতীতের উপর আলোক নিক্ষেপের জন্য নয় বরং বর্তমানের সাথে এর চিরন্তন প্রাসঙ্গিকতার কারণে অধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। জেনেসিসের লেখকরা খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় সহস্রাব্দে প্যালেস্টাইনে জীবন কেমন ছিল সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ঐতিহাসিক তথ্য প্রদান করে না। বিদগ্ধজনেরা যেমন বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন তারা বস্তুতপক্ষে সেই সময়কাল সম্বন্ধে কিছুই জানতো না। তারা হরহামেশাই যেমন ফিলিস্তিনীদের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে ভুল করেছে যারা প্রকৃতপক্ষে বাইবেলে উল্লেখিত গোড়ার দিকের এই যুগ শেষ হবার অনেক পরে এখানে আগমন করেছিল। তারা এমন সব শহরের কথা বলে, যেমন বীরসেবা, যার পত্তন তখনও হয়নি। তারা এই সময়ে ফিলিস্তিনে মিশরীয়দের শক্তিশালী উপস্থিতির কথার কোনো উল্লেখই করে না। আমাদের লেখকরা অবশ্য ঐতিহাসিক নির্ভুলতা নিয়ে খুব একটা আগ্রহী নন। তারা বরং মানুষের দুর্দশা সম্বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ সত্যের প্রতি পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায় যা আজও আমাদের চারপাশে অনুরণিত হয়।...."

'In the beginning', Karen Armstrong

[বিখ্যাত এই লেখিকা ফিলিস্তিনী বলতে এক্ষেত্রে প্রাচীন আমলের ইহুদিদের বুঝিয়েছেন এবং তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের গল্পগুলো যারা বানিয়েছে তাদের সমালোচনা করেছেন। খ্রিস্টান আর মুসলিমরা যেগুলো পরবর্তীতে কপি-পেস্ট করেছিল।]

...............................................................................

১৯৬৫ সালে এডওয়ার্ড হুউমপারের নেতৃত্বে একদল পর্বত অভিযাত্রী অভিযান চালিয়েছিলেন সুইজারল্যান্ডের আলপস্ পর্বতের ম্যাটারহর্ন চুড়োয়। অভিযানের সময় চার অভিযাত্রী দড়ি ছিঁড়ে পড়ে যান গভীর খাদে। এমন অবস্থায় হুউমপার দেখলেন আকাশজুড়ে অদ্ভুত এক ক্রস চিহ্ন। এই বিপর্যয়ের মাঝে যীশুর করুণা ও শুভেচ্ছার প্রতীক হিসেবেই এই ক্রস চিহ্নের আবির্ভাব ধরে নিয়ে নতুনভাবে মানসিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে অভিযান চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তিনি তার রোজনামচায় এই ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন। এই ঘটনার আগে-পরে আরও বহু পর্বত অভিযাত্রী বিভিন্ন শৃঙ্গে অভিযান চালানোর সময় যীশুর অপার করুণা অনুভব করে নবশক্তি পেয়েছিলেন, আর এই অপার করুণার প্রতীক ছিল আকাশে ক্রস চিহ্নের স্পষ্ট অবস্থান। পরবর্তীকালে প্রকৃতি বিজ্ঞানীদের তথ্য থেকে জানা গেছে বৃষ্টিতে রোদ পড়ে যেমন অনেক সময় রামধনু দেখা যায়, তেমনি কুয়াশায় রোদ পড়ে অনেক সময় দেখা যায় কুয়াশাধনু। 

Fog bow - Wikipedia https://share.google/uUvibnOzQNpfoawHX

এই কুয়াশাধনুই যীশু খ্রিস্টের অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাসীদের চোখে হয়ে উঠেছিল শূন্যে ভাসমান অলৌকিক ক্রস চিহ্ন।

......................................................................................

ষোড়শ শতকেও পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি মানুষ বিশ্বাস করতো অসুখের কারণ পাপের ফল বা অশুভ শক্তি। ষোড়শ শতকে সুইজারল্যান্ডের বেসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নশাস্ত্র ও ভেষজবিদ্যার অধ্যাপক ডাক্তার ফিলিপ্রাস অ্যাউরেওলাস প্যারাসেলসাস ঘোষণা করলেন - মানুষের অসুস্থতার কারণ কোনও পাপের ফল বা অশুভ শক্তি নয়, রোগের কারণ জীবাণু। পরজীবী এই জীবাণুদের শেষ করতে পারলেই নিরাময় লাভ করা যাবে।

Paracelsus - Wikipedia https://share.google/0UpdP9zqkzpjMYeuq

প্যারাসেলসাসের এমন উদ্ভট ও ধর্মবিরোধী তত্ত্ব শুনে তাবৎ ধর্মের ধারক-বাহকরা 'রে-রে' করে উঠলেন। প্যারাসেলসাসকে হাজির করা হলো 'বিচার' নামক প্রহসনের মুখোমুখি। ধর্মান্ধ বিচারকরা 'রোগের কারণ জীবাণু' বলার অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিল তাঁকে। প্যারাসেলসাস সেদিন জীবন বাঁচাতে নিজের দেশ সুইজারল্যান্ড ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।

..................................................................................

মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের নবী 'ইব্রাহিম' তথা 'আব্রাহাম' শব্দের অর্থ 'বহুজনের পিতা'।

ইব্রাহিমের বৌ সারাহ বন্ধ্যা হওয়ায় সে নিকট প্রাচ্যে পরিচিত একটা সাধারণ কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল। সে ইব্রাহিমকে তার মিশরীয় দাসী হাগারকে বিয়ে করতে বলে এবং ফলশ্রুতিতে হাগার ইসমাইলের জন্ম দেয়। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Hagar

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Sarah

বন্ধ্যা নারীরা এই বন্দোবস্তের মাধ্যমে পরিবারের প্রধান হিসাবে নিজের অবস্থান বজায় রাখতে পারতো তখন। পারস্যের বিধিবদ্ধ নিয়মাবলীর সারগ্রন্থের অনুশাসন অনুযায়ী যদি কোনো স্ত্রী তার স্বামীর সন্তান ধারণের জন্য কোনো রমণীর বন্দোবস্তু করে, তবে সেই স্বামী নিজের জন্য কোনো উপপত্নী গ্রহণ করতে পারবে না। কিন্তু সারাহ যখন তিন ধর্মের প্রথম দু'টির পুরাণ অনুযায়ী ইসহাকের জন্ম দেয় তখন সে গোঁ ধরে হাগার আর তার পুত্র ইসমাইলকে বিদায় করতে হবে। এদের পুরাণ অনুযায়ী ঈশ্বরও হাগার আর ইসমাইলকে বিদায় দেয়ার জন্য ইব্রাহিমকে নির্দেশ দেন; তিনি কথা দেন ইসমাইল থেকেও তিনি বিশাল এক বংশের সৃষ্টি করবেন, কিন্তু প্রতিশ্রুতি আর আশীর্বাদের উত্তরাধিকারী হবে ইসহাক। ইব্রাহিম আদেশ পালন করে। সে পরের দিন খুব সকালবেলা 'রুটি আর পানি ভর্তি চামড়ার মশক নিয়ে সেটা হাগারকে দেয় - সাথে বাচ্চাটাকেও তার কাঁধে তুলে দেয় এবং তাদের বিদায় করে দেয়' (২১:১৪)। এসব তুচ্ছ অপ্রতুল খাদ্য জোগান নিয়ে মা আর সন্তান বনের ভিতর প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি হয়। ইব্রাহিম নিজের রক্ষিতা আর তার সন্তানকে এভাবেই বিপদের সম্মুখীন করেছিল। অথচ মুসলমানরা পরবর্তীতে ইব্রাহিমকে মহান হিসেবে উপস্থাপন করতে ইতিহাস উল্টে দেয়।

........................................................................................

মণিকা বেসরা (Monica Besra) নামক এক সাঁওতাল নারীর পেটে যক্ষার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় টিউমার হয়েছিল। পোপ দ্বিতীয় জন পল এর নির্দেশে কলকাতার মিশনারিজ অব চ্যারিটি এর নির্মলা জোশি (Nirmala Joshi) এক নিকৃষ্ট কর্মে নেমেছিলেন এই মহিলাকে ব্যবহার করে। 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Pope_John_Paul_II

তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরা প্রচার করলেন মহিলার আসলে ক্যান্সার হয়েছিল এবং মাদার তেরেসার ছবি যুক্ত লকেট থেকে কথিত অলৌকিক আলো বের হয়ে নাকি মহিলার টিউমার গায়েব করে দিয়েছিল, সেই সাথে ক্যান্সারও ভালো হয়ে গিয়েছিল। এই বানানো ঘটনার উপর ভিত্তি করে তারা মাদার তেরেসাকে 'সেইন্ট' ঘোষণা করতে চেয়েছিল। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র মানুষদের তাদের ধর্ম গ্রহণে আরও বেশি করে আকৃষ্ট করা। এই ঘটনা বাস্তবায়িত করতে তারা মণিকার আগের সব রিপোর্ট গায়েব করে দেয়ার বহু চেষ্টা করেছিল, তার বোনকে (যিনি এদের একটি প্রতিষ্ঠানে নার্স ছিলেন) লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল, ডা. আর এন ভট্টাচার্য নামক কাল্পনিক চরিত্রের আমদানি করে ঘটনার সত্যতার নামে গলাবাজি করা হলেও এই লোকের কোনও অস্তিত্ব পর্যন্ত ছিল না, ডা. মঞ্জুল মুর্শেদ ছাড়াও মণিকার আরেকজন চিকিৎসককে রোমে নিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করা হয়েছিল, অথচ বামফ্রন্ট সরকারের কোনও খবরই ছিল না। পরে সারা বিশ্বের মিডিয়ায় এটা নিয়ে হুলুস্থুল শুরু হলে এদের টনক নড়ে। এক্ষেত্রে আরেকজন বিখ্যাত চিকিৎসকের নাম উল্লেখ করা প্রয়োজন যিনি তেরেসা প্রেমে গদগদ ছিলেন দেখে এই বুজরুকিতে না বুঝে প্রথমদিকে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছিলেন। তিনি হচ্ছেন ডা. সুনীল ঠাকুর। মণিকার স্বামী আর তার প্রতিবেশীদের হুমকি দিয়ে বক্তব্য পাল্টে দিয়েছিল মানবসেবার ভং ধরা ভ্যাটিকান এর চামচারা। শেষের দিকে খোদ মণিকাকেই লুকিয়ে ফেলেছিল এরা। এই পোপ দম্ভ সহকারে ঘোষণা করেছিল-

"প্রথম সহস্রাব্দে ইউরোপ জয় করেছি। দ্বিতীয় সহস্রাব্দে আমেরিকা। তৃতীয় সহস্রাব্দে জয় করবো এশিয়া।"

সেইন্ট বানানোর পরিকল্পনা নষ্ট হলেও কলকাতায় মাদারের 'ব্লেসেড' হওয়া নিয়ে উৎসব হয়েছিল। সেই উৎসবের আমন্ত্রণ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গ্রহণ করেছিলেন! সময়ের অভাবে বুদ্ধদেববাবু নাকি রোমে হাজির থাকতে পারেননি, তাই এই ব্যবস্থা!

সেইন্ট হওয়ার পূর্ব পদক্ষেপসমূহ:

#'ক্যানান ল' অনুযায়ী 'ব্লেসেড' বা 'ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্যা' ঘোষণার প্রস্তুতিপর্ব শুরু হবে প্রার্থীর মৃত্যুর পাঁচ বছর পরে।

#স্থানীয় বিশপরা প্রার্থীর জীবনচর্চা বিষয়ে অনুসন্ধান করে তাদের মতামত পোপের কাছে পাঠাবেন।

#'ভ্যাটিকান' বা পোপের শাসন কর্তৃত্বের পরিকাঠামো এই মতামত পাঠাবে প্যানেলভুক্ত কার্ডিনালদের কাছে। তারা এই মতামত গ্রহণ করলে মৃত প্রার্থীর নামের আগে 'ভেনারেবল' বা 'সার্ভেন্ট অফ গড' উপাধি ব্যবহারের জন্য অনুমতি প্রদান করবেন পোপ।

#পরবর্তী পদক্ষেপ 'বিয়েটিফিকেশন' বা স্বর্গীয় মহিমা প্রদান অনুষ্ঠান। এই পর্যায়ে পৌঁছাতে গেলে লাগবে প্রার্থীর অলৌকিক ক্ষমতার অকাট্য প্রমাণ। এখানেও বিশেষত্ব আছে। প্রার্থীর মৃত্যুর পর তার অমর আত্মাকে ঘটাতে হবে কোনও একটি অলৌকিক ঘটনা।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Beatification#:~:text=Beatification%20(from%20Latin%20beatus%2C%20%22,who%20pray%20in%20their%20name.

#এরপর আসে 'সেইন্ট' উপাধি দানের সর্বশেষ পর্যায়। এর জন্য দরকার হয় আত্মার আরও একটি অলৌকিক ক্ষমতার খাঁটি প্রমাণ।

তৎকালীন পোপ এই ধাপগুলো টপকে তার চক্রান্ত বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন, যা 'ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি' ও বিশ্বের বিখ্যাত মিডিয়াগুলোর সৎ সাংবাদিকদের অবদানে ভেস্তে গিয়েছিল। ধর্ম যাজকের সর্বোচ্চ আসনে থেকে এই পোপ হাজারেরও বেশি 'ব্লেসেড' বানিয়েছিলেন। আর তার 'সন্ত' তৈরির কারখানা থেকে বেরিয়েছিল ৪৭৭ জন।

ভ্যাটিকানের তৎকালীন পরিবার সংক্রান্ত মন্ত্রী লোপেজ টুজিল্লো বিবিসি'র অনুষ্ঠানে ক্যানান ল' স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন-

১)সন্তান কামনা ছাড়া পতি-পত্নীর দেহমিলন অনৈতিক। 

২)কন্ডোম কাম-সুখের রাস্তা দেখায়, ব্যভিচারের পথ প্রশস্ত করে।

৩)ভ্যাটিকানের আবিষ্কার - কন্ডোম কখনই এইডস প্রতিরোধ করে না। বরং কন্ডোম ব্যবহারের জন্যই এইডস বাড়ছে।

..............................................................................

ধার্মিকদের বহুল প্রচারিত প্রোপাগান্ডাগুলোর অন্যতম হচ্ছে হিটলার নাকি নাস্তিক ছিল! দক্ষিণ-পশ্চিম জার্মানির প্রত্যন্ত গ্রাম হার্কহিম আম বার্গ এর সেন্ট জেমস প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চে আজও হিটলারের শুভকামনায় ঘন্টা বাজানো হয়। ঘন্টায় উপরের দিকে খোদাই করা বাণী- "পিতৃভূমির জন্য সমর্পিত, অ্যাডলফ হিটলার"। নীচের অংশে চিত্রিত স্বস্তিকা চিহ্ন। ১৯৩৪ সালে হিটলারের সমর্থক এক মেয়র ঘন্টাটি গির্জার সম্মুখে স্থাপন করে। জার্মানিতে হিটলারের শাসনামলে তার সমর্থনে দেশের বিভিন্ন গির্জা থেকে স্তোকবাক্য পাঠ করা হতো। পরবর্তীকালে তার পতনের পর সেই রীতি বিলুপ্ত হয়। কিন্তু আজও হার্কহিম আম বার্গ অঞ্চলের মতো জার্মানির বেশ কিছু গির্জায় বহাল তবিয়তে রয়ে গিয়েছে এমন কয়েকটি ঘণ্টা।

https://www.bbc.com/news/world-europe-43210993


Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]