তালেবান
'The Dancing Boys of Afghanistan' শিরোনামের ডকুমেন্টারি'তে 'বাচা বাজি' (খেলার জন্য ছেলে) নামক প্রাচীন রীতির উন্মোচন করা হয়েছে, যেখানে ধনী ব্যক্তিরা যৌন দাসত্বের জন্য দরিদ্র পরিবার থেকে সাধারণত ১১ বছর বয়সী ছেলেদের কিনে নেয়।
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Bacha_bazi
এই ছেলেদের নারীদের পোশাক পরিয়ে পার্টিতে নাচ ও গান গাইতে বাধ্য করা হয়, পরে যৌনতার জন্য পুরুষরা দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। ছেলেদের মালিকানাকে মর্যাদার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়। খবরে আসা এক আফগান ২০ বছরের সময়কালে ৩,০০০ ছেলেকে ভোগ করেছিল, যদিও সে বিবাহিত ছিল ও তার দু'টি পুত্র ছিল। খালেদ হোসেইনি তার 'দ্য কাইট রানার' বইটিতে তুলে ধরেছেন তালেবানরাও কিভাবে সমান তালে এই বিকৃত প্রথার চর্চা করে।
পাকিস্তানেও এই প্রথা প্রচলিত। আর বাংলাদেশ ছাড়াও মুসলিম বিশ্বের মাদ্রাসাগুলোতে ধর্ষণ তো ওপেন সিক্রেট।
আফগানিস্তানে মেয়েদের পড়াশোনা প্রায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে তালেবানরা। তাদের নতুন আরেকটি আইন অনুযায়ী ছেলে ডাক্তারের কাছেও যাওয়ার অনুমতি নেই মেয়েদের। অথচ তাদের মুখপাত্র সুহাইল শাহিনের মেয়েরা কাতারে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে!
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Suhail_Shaheen
এই জঙ্গি ছাড়াও এদের আরও অনেক নেতার মেয়েরা বিভিন্ন দেশে পড়াশোনা করছে।
https://theprint.in/world/school-ban-for-afghan-girls-but-taliban-leaders-daughters-play-football-study-medicine-abroad/913150/
বিখ্যাত আফগান গায়িকা মোজদা জামালজাদার পোস্টের স্ক্রিনশট এটি। পাঠানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও নুরিস্তানি, হাজারা, তাজিক, উজবেক, তুর্কমান প্রভৃতি অসংখ্য জাতির বাস আফগানিস্তানে। অন্যান্য জাতির লোকেরা সমাজতান্ত্রিক আফগানিস্তানের সময়ও তালেবান বিরোধী ছিল, বর্তমানেও তাদের টার্গেট করে বর্বরতা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিয়মিত। অধিকাংশ তালেবান সদস্য পাঠান, যাদের বোঝানো হয়েছিল আফগানিস্তান সমাজতান্ত্রিক সিস্টেমে চললে সব ক্ষমতা অন্য জাতির লোকেদের হাতে চলে যাবে!
অনেকের কাছে 'সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী' হিসেবে খ্যাত এই প্লেবয় এর দলের সরকার খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে কুখ্যাত হাক্কানিয়া মাদ্রাসায় $3m (£2.3m) পরিমাণের অর্থ দিয়েছিল। এটির প্রধান মাওলানা সামি-উল হক 'তালেবানের পিতা' হিসাবে পরিচিত। তখন থেকে ইমরান খানকে ‘তালেবান খান’ বলা হয়। আগেরবার নির্বাচনে জয়লাভের পর তিনি তালেবানদের বিচার ব্যবস্থার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন এবং নিজেকে একজন 'ধার্মিক মুসলিম' হিসেবে তুলে ধরতে সর্বদা ব্যস্ত আছেন এখনো। ইমরান পাকিস্তানের কুখ্যাত ব্লাসফেমি আইনের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন যার অধীনে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের কারারুদ্ধ করা হয়েছে এবং তার দল মালালা ইউসুফজাইকে নিন্দা করে বলেছে 'সিআইএ এজেন্ট'। উল্লেখ্য, তিনি ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মোশাররফের সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেছিলেন। এই ইমরান খান একাত্তরের কুখ্যাত পাকিস্তানী কমান্ডার নিয়াজী'র ভাতিজা যিনি কিনা বিশ্বকাপ জেতার পর এদেশে এসে বিমান থেকে নেমে আসার সময় টিটকারি দিয়ে হাত দুইটা জড়ো করে 'নামাস্তে' বলেছিলেন। এই লোকের লুইচ্চামির খ্যাতি পুরো উপমহাদেশে প্রসিদ্ধ। উল্লেখ্য, বেনজির ভুট্টোর ছেলের পশ্চিমা দেশগুলোতে সমকামী সম্পর্কে থাকার কথাও বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে এসেছে।
১৭৫৫ সালে প্রচণ্ড ভূমিকম্পে লিসবন শহর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মারা যায় প্রায় ৩০,০০০ মানুষ। সেদিন খ্রিস্টানদের একটি পবিত্র দিন ছিল, তাই গির্জাগুলোতে মানুষের দারুণ ভিড় ছিল। গির্জায় চাপা পড়েছিল বলেই মৃত্যু হয় এতো মানুষের। ফরাসী পাদ্রিরা বললো, "এ হলো লিসবনের মানুষদের পাপের ফল। ঈশ্বর তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন। মঙ্গলময়ের লীলা কী অপরূপ!"
ভলতেয়ার এসব শুনে ফেটে পড়লেন রাগে -
"হয় বলো তোমাদের ওই মঙ্গলময়টির শক্তি আছে কিন্তু সদিচ্ছে নেই, আর না হয়তো বলো তাঁর সদিচ্ছে আছে কিন্তু শক্তি নেই। হয় তিনি ভালো করতে পারেন তবু ভালো করতে চান না, না হয়তো তিনি ভালো করতে চান কিন্তু পারেন না। তা নাহলে, পৃথিবীতে যা ঘটছে তার সবই যদি তাঁর ইচ্ছেয় ঘটে তাহলে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটবে কেমন করে?"
তিনি আরও বললেন-
"নির্বুদ্ধি মানুষ! নইলে ভগবানের কথা ভেবে এমনভাবে আত্মপ্রবঞ্চনা করতে রাজি হয়?"
.....................................................................................
তালেবানরা সাধারণ মানুষের ক্ষোভ, প্রিয়জন হারানোর কষ্ট আর প্রতিহিংসাপরায়ণতার মনস্তত্ত্বকে কিভাবে নিজেদের প্রতি সহানুভূতি আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছিল সেটা টের পাওয়া যায় কেবল এই একটা সাক্ষাৎকার পড়লেই। 'সূর্যের চেয়ে বালির গরম বেশি' প্রবাদটিকে সত্য প্রমাণিত করতেই যেন পশ্চিমা কোয়ালিশন বাহিনীর চেয়েও বেশি যুদ্ধাপরাধ করেছিল আফগান সেনাবাহিনী।
https://www.newyorker.com/magazine/2021/09/13/the-other-afghan-women
এক যুদ্ধের সময় আব্দুস সালাম নামে শাকিরার এক চাচা শ্বশুর তার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি নামাজ পড়ার জন্য একটি মসজিদে প্রবেশ করেন। সেখানে কয়েকজন তালেবানও ছিল। কোয়ালিশন বাহিনী সেখানে বিমান হামলা চালালে ভেতরে থাকা প্রায় সবাই নিহত হয়। পরের দিন শোকসন্তপ্ত আত্মীয়-স্বজনরা জানাজার নামাজের জন্য জড়ো হলে সেখানে দ্বিতীয়বার বিমান হামলা চালানো হয়। নিহত হয় আরও এক ডজন বেসামরিক মানুষ। পান কিল্লায়ে যাদের লাশ ফিরে এসেছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন আব্দুস সালাম, তার চাচা এবং তার তিন ভাস্তে, যাদের বয়স ছিল ছয় থেকে পনেরো বছরের মধ্যে।
এক বিকেলে কোয়ালিশন বাহিনী আবার এসে হাজির হয়। শাকিরাদের পরিবার পেছনের উঠোনের পরিখার দিকে ছুটে যায়। কয়েক বাড়ি পরে প্রয়াত আবদুস সালামের স্ত্রী এবং সন্তানরাও একই কাজ করে। কিন্তু একটি মর্টারের আঘাতে তার পনেরো বছর বয়সী মেয়ে বোর জানা নিহত হয়। ২০১০ সালে সাংগিনে গ্রামবাসীদের ভিড়ের উপর ন্যাটোর রকেট হামলায় বাহান্নজন নিহত হয়। কিন্তু বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হামলায় কেবল একজন বা দুজন মারা যেত। এসব বেনামী ব্যক্তির মৃত্যুর কথা কোনো রিপোর্টে উঠে আসত না, সরকারি সংস্থাগুলো দ্বারা কখনও নথিভুক্ত হতো না এবং এর ফলে যুদ্ধের বেসামরিক হতাহতের সংখ্যার অংশ হিসেবেও এসব মৃত্যু কখনও গণ্য হতো না। মুহাম্মদ নামে তার পনেরো বছর বয়সী এক কাজিন ছিল। এক বন্ধুর সাথে গ্রামের মধ্য দিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর সময় বাজবুজ্জাক তথা ড্রোন হামলায় সে নিহত হয়। মুহাম্মদ ওয়ালি নামে তার আরেকজন বয়স্ক কাজিন ছিল। এক অপারেশন চালানোর সময় কোয়ালিশন বাহিনী গ্রামবাসীদের তিন দিন পর্যন্ত ঘর থেকে বের না হতে নির্দেশ দেয়। কিন্তু দ্বিতীয় দিন পার হওয়ার পর খাওয়ার পানি শেষ হয়ে যায়। পানি আনার জন্য বাইরে গেলে ওয়ালিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সাত বছর বয়সী কাজিন খান মুহাম্মদের পরিবার গাড়িতে করে একটি সংঘর্ষের স্থান থেকে পালানোর চেষ্টা করছিল। ভুল করে তাদের গাড়ি কোয়ালিশন বাহিনীর অবস্থানের কাছাকাছি চলে গেলে গাড়ির উপর আক্রমণ করা হয় এবং তাকে হত্যা করা হয়। বারো বছর বয়সী কাজিন বোর আগা সন্ধ্যার সময় হাঁটতে বেরিয়েছিল। আফগান ন্যাশনাল পুলিশের ঘাঁটি থেকে আসা গুলিতে বিদ্ধ হয়ে সে মারা যায়। পরদিন সকালে তার হতবিহ্বল বাবা ঘাঁটিতে যান উত্তর খুঁজতে। তাকে বলা হয়, তার ছেলেকে এর আগেও ঘাঁটির কাছাকাছি যাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছিল। "তাদের কমান্ডারের নির্দেশে তাকে হত্যা করা হয়," তার বাবা স্মরণ করেন। ষোল বছর বয়সী কাজিন আমানউল্লাহ যখন আফগান সেনাবাহিনীর স্নাইপারের গুলিতে নিহত হয়, তখন সে ক্ষেতে কাজ করছিল। কেউ ঐ ঘটনার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। সেনা ঘাঁটির কাছে যেতে ভয় পাবার কারণে তাদের পরিবারও কাউকে জিজ্ঞাসা করতে পারেনি। প্রাপ্তবয়স্ক আরেক কাজিন আহমেদ সারাদিন ক্ষেতে কাজ করার পর যখন বাসায় ফিরছিল, তখন কোয়ালিশন বাহিনীর গুলির আঘাতে সে নিহত হয়। সেসময় তার হাতে ছিল একটি বহনযোগ্য চুল্লী। কোয়ালিশন বাহিনী তার হাতের চুল্লীকে আইইডি বিস্ফোরক বলে মনে করেছিল। আহমেদের ভাই নিয়ামতউল্লাহ যখন একদিন ক্ষেত থেকে আফিম তুলছিল, তখন কাছাকাছি কোনো জায়গায় গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। যখন সে পালাতে চেষ্টা করে, তখন একটি বাজবুজ্জাক থেকে গুলি করে তাকে হত্যা করা হয়। এক চাচা শ্বশুর গুল আহমেদ ভোর বেলা ক্ষেতে কাজ করার জন্য বেরিয়ে গিয়েছিলেন। ছেলেদের তিনি বলে গিয়েছিলেন বেলা বাড়লে তার জন্য নাস্তা নিয়ে যেতে। নাস্তা নিয়ে ক্ষেতে পৌঁছার পর ছেলেরা দেখতে পায়, সেখানে তার মৃতদেহ পড়ে আছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তিনি কোয়ালিশন বাহিনীর টহলের সামনে পড়েছিলেন। সব মিলিয়ে শাকিরা তার পরিবারের ষোলজন সদস্যকে হারিয়েছিল। দৈব-চয়নের ভিত্তিতে এই সাক্ষাৎকারটি নেয়া সাংবাদিক গ্রামের এক ডজন পরিবারের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন। অন্যান্য গ্রামেও তিনি একইরকম অনুসন্ধান করেছিলেন, যেন নিশ্চিত করা যায় যে পান কিল্লায়ের ঘটনা বিচ্ছিন্ন কিছু ছিল না। প্রতিটি পরিবারের ক্ষেত্রে তিনি মৃতদের নাম নথিভুক্ত করেন, ঘটনার বিবরণের সাথে ডেথ সার্টিফিকেট এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য মিলিয়ে দেখেন। তিনি দেখতে পান যুদ্ধে গড়ে প্রতিটি পরিবার দশ-বারোজন করে বেসামরিক সদস্য হারিয়েছে। কাবুলের মতো ব্যস্ত মহানগরে, যেখানে নাগরিকরা তুলনামূলক নিরাপত্তা উপভোগ করত, সেখানে মানুষ গ্রামাঞ্চলের দুর্ভোগের এই ব্যাপক মাত্রা সম্পর্কে জানত না। কিন্তু সাংগিনের মতো বিচ্ছিন্ন গ্রামাঞ্চলে নিরন্তর বেসামরিক নাগরিক হত্যা অনেক আফগানকে তালেবানদের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। ২০১০ সাল নাগাদ ইসহাকজাইদের গ্রামগুলোর অনেক পরিবারের ছেলেই তালেবানদের সাথে যোগ দেয়। এদের অধিকাংশই তালেবানে যোগ দেয় শুধুমাত্র নিজেদের রক্ষার জন্য অথবা প্রতিশোধ নেয়ার জন্য। তালেবানরা এবার সাংগিনবাসীর জীবনের সাথে নব্বইয়ের দশকের চেয়েও ভালোভাবে মিশে যেতে পেরেছিল। পে-ফোন ব্যবসার মালিক আহমেদ নূর মোহাম্মদের দুই যমজ ছেলে অসুস্থ থাকার কারণে তিনি বাড়ি ছাড়ার আগে আরেকটু অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেন। তার পরিবার যখন ঘুমাতে যায়, তখন দূর থেকে কামানের আওয়াজ ভেসে আসছিল। সেই রাতে জমজ বাচ্চা দুটো যে ঘরে ঘুমিয়েছিল, একটি আমেরিকান বোমা এসে সেই ঘরে আছড়ে পড়ে এবং ছেলে দুটোকে হত্যা করে। দ্বিতীয় একটি বোমা পাশের রুমে আঘাত হানলে মোহাম্মদের বাবাসহ আরও অনেকে নিহত হয়, যাদের মধ্যে আটজনই ছিল শিশু। পরের দিন জানাজার নামাজের সমাবেশে আরেকটি বিমান হামলায় ছয়জন নিহত হয়। একই দিন কাছের একটি গ্রামে গানশিপের আক্রমণে নিহত হয় তিনটি শিশু। পরের দিন আরও চার শিশুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সাংগিনের আরেক জায়গায় একটি মাদ্রাসায় বিমান হামলা চালালে এক শিশু নিহত হয়। এক সপ্তাহ পর একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে বিমান হামলা চালালে নিহত হয় বারোজন অতিথি। বোমা হামলার পর মুহাম্মদের ভাই কান্দাহারে যান গণহত্যাগুলোর ব্যাপারে জাতিসংঘ এবং আফগান সরকারের কাছে বিচার চাইতে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কোনো ন্যায় বিচার না পাওয়ায় অবশেষে তিনি তালেবানে যোগ দেন।
ইয়াখ চাল গ্রামে এই সাংবাদিক তালেবানদের হাতে দখল হওয়া একটি আফগান সেনা চৌকির ধ্বংসাবশেষ দেখেছিলেন। সেখানে টুকরো ধাতু, দড়ি, চুল্লি আর নুড়ি পাথর ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না। চৌকিটি যেদিন দখল হয়েছিল, তার পরদিন সকালে গ্রামবাসীরা বিক্রি করার মতো জিনিস কুড়ানোর জন্য সেখানে ছুটে গিয়েছিল। আব্দুর রহমান নামের একজন কৃষক যখন তার ছোট ছেলেকে নিয়ে সেখানকার আবর্জনার মধ্য দিয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে হাঁটছিলেন, তখন দিগন্তে আফগান সেনাবাহিনীর গানশিপ এসে উপস্থিত হয়। গানশিপটি এত নিচু দিয়ে উড়ছিল যে, "কালাশনিকভ দিয়েও এতে গুলি চালানো যেত," আব্দুর রহমান স্মরণ করেছিলেন। সে সময় আশেপাশে কোনো তালেবান ছিল না, ছিল শুধু বেসামরিক মানুষ। কিন্তু তারপরেও গানশিপ গুলি ছুঁড়তে শুরু করে এবং গ্রামবাসীরা ডানে-বামে পড়ে যেতে শুরু করে। সামনে চলে যাওয়ার পর গানশিপটি আবারও ফিরে এসে আক্রমণ অব্যাহত রাখে। আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “অনেক মানুষ মাটিতে পড়ে চিৎকার করছিল। তাদের শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাদের মধ্যে অনেকে ছিল ছোট বাচ্চা।" গ্রামবাসীদের হিসাব অনুযায়ী সেদিন কমপক্ষে পঞ্চাশজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। পরে ঐ সাংবাদিক সেই আফগান আর্মি হেলিকপ্টারের পাইলটের সাথে ফোনে কথা বলেছিলেন। তিনি তাকে বলেছিলেন, "আমি আমার ক্রুদের জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন তারা সেখানে গুলি করেছিল। তারা বলেছিল, 'আমরা জানতাম তারা বেসামরিক নাগরিক, কিন্তু ক্যাম্প ব্যাস্টিয়ন আমাদের নির্দেশ দিয়েছিল তাদের সবাইকে হত্যা করতে।” ক্যাম্প ব্যাস্টিয়ন ছিল একটি সাবেক ব্রিটিশ ঘাঁটি যা আফগানদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছিল। তারা যখন ফোনে কথা বলছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তেও আফগান আর্মি হেলিকপ্টারগুলো গেরশ্কের জনবহুল কেন্দ্রীয় বাজারের উপর গুলিবর্ষণ করে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করছিল। হেলমন্দে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা বলেন, "যখন সরকারি বাহিনী একটি এলাকায় পরাজিত হয়, তখন তারা বেসামরিক জনগণের উপর তার প্রতিশোধ নেয়।" হেলিকপ্টারের পাইলটও এটি স্বীকার করেছিলেন। তিনি যোগ করেন, "আমরা সামি সাদাতের নির্দেশে এগুলো করেছি।" এই সাংবাদিকের হেলমন্দ সফরের সময় সাদাতের অধীনস্থ ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারগুলো প্রায় প্রতিদিন গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছিল: সাংগিনের বাইরে একটি সাবেক ঘাঁটিতে পুরাতন ধাতু কুড়ানোর সময় বারোজন আফগানকে হত্যা করা হয়, সেনাবাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্প ওয়ালিদে প্রায় একইরকম একটি ঘটনায় হত্যা করা হয় চল্লিশজনকে; গেরেশ্ক বাজারে বিমান হামলায় হত্যা করা হয় বিশজনকে, যাদের অধিকাংশই ছিল নারী ও শিশু; তালেবানদের হাতে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বন্দী আফগান সৈন্যদের তাদের নিজেদের কর্মীরাই বিমান হামলা চালিয়ে হত্যা করে। ইয়াখ চাল গণহত্যার কয়েকদিন পর লস্করগাহের নিকটবর্তী একটি গ্রামের ফেরিওয়ালা মোহাম্মদ ওয়ালির এলাকার সরকারি মিলিশিয়ারা তালেবানদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। এর পরপরই জেনারেল সাদাতের ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারগুলো এলোপাথাড়িভাবে মানুষের বাড়িঘরে আক্রমণ শুরু করে। তারা ওয়ালির বাড়ির উপর গুলি চালালে মাথায় গুলির টুকরোর আঘাতে তার মেয়ে মারা যায়। তার ভাই মেয়েটির নিথর শরীর কোলে নিয়ে উঠোনে ছুটে গিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকে, "আমরা বেসামরিক মানুষ!" কিন্তু হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে তাকে এবং ওয়ালির ছেলেকেও হত্যা করা হয়। ওয়ালির স্ত্রী হেলিকপ্টারের গুলিতে পা হারায় এবং তার অন্য একটি মেয়ে কোমায় চলে যায়।





Comments