বাম রঙ্গ [পর্ব-আট]

 


একটি ঘটনা। ১৯৯৩-এর সেপ্টেম্বর। রামকৃষ্ণ মিশন 'বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন'-কে রাজনৈতিক স্টার মেগাস্টারের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ধর্মের সঙ্গে রাজনীতির মেলবন্ধনকে নতুন মাত্রা দিতে সচেষ্ট। শহর কলকাতার হোর্ডিংগুলো দাঁড়িয়ে আছে ধর্ম সম্মেলনে রাষ্ট্রনেতাদের উপস্থিতির সদম্ভ ঘোষণা নিয়ে। ভারতীয় সংবিধানে দেওয়া 'ধর্মনিরপেক্ষতা'-র ব্যাখ্যাকে পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্রীয় পদাধিকারিদের 'বিশ্ব ধর্ম সম্মেলন'-এ অংশগ্রহণ থেকে বিরত করতে যুক্তিবাদী সমিতি তখন জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলেছে। আমাদের সমিতি সম্মেলনে যোগ না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের কাছে, এবং দল ও নেতাদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পেয়ে আমরা বাস্তবিকই আপ্লুত। ঠিক এমনি সময়ে বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনের আহ্বায়ক স্বামী লোকেশ্বরান্দ'র সুরে সুর মিলিয়ে 'পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ'-এর সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য প্রকাশিত হলো বাংলা দৈনিক 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর পাতায় (৮ সেপ্টেম্বর ১৯৯৩)। মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আমাদের আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করলেন। এ'ভাবে তিনি ধর্মের পিঠে জুড়ে দিতে চাইলেন বিজ্ঞানের পাখা। ১৯৯৫ এর ডিসেম্বরে মঞ্চের নেতৃত্বে বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ জাঠা অনুষ্ঠিত হলো। খড়গপুরে জাঠার উদ্বোধন হলো ঈশ্বরের প্রার্থনা সংগীতের মধ্য দিয়ে।

- 'আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না', প্রবীর ঘোষ

মঞ্চের আঞ্চলিক স্তর থেকে কেন্দ্রীয় স্তর পর্যন্ত সর্বত্রই তাই পুজোকমিটি-তাগা তাবিজ-বিজ্ঞান আন্দোলন ইত্যাদি স্ববিরোধিতা পরম নিশ্চিন্তে সহাবস্থান করে। '৯৪-এর কলকাতা পুস্তক মেলায় মঞ্চ বইয়ের দোকান দেয়। নানা বইয়ের পাশে কুসংস্কারের ধারক-বাহক বইও স্টলে সহাবস্থান করে। এবং তা যে অনবধানতায় নয়, এটা বুঝতে পারি, যখন আমাদের সমিতির তরফ থেকে তাদের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার পরও দেখি যথা পূর্বং তথা পরং।

[ঐ]

ভারতীয় যুক্তিবাদী সংসদ

প্রতিষ্ঠা ১৯৯৪ সালে। প্রতিষ্ঠাতা নেতারা প্রত্যেকেই পশ্চিমবঙ্গের একটি জব্বর মার্কসবাদী রাজনৈতিক দলের বা তার কোনও না কোনও গণসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। রাজনৈতিক দলটি ইতিমধ্যেই বিজ্ঞান আন্দোলন ও যুক্তিবাদী আন্দোলনে জনগণকে সামিল করতে একটি 'বিজ্ঞান মঞ্চ' খুলেছে। তারপর একই কাজে বকলমে আবার একটা গণসংগঠন খোলা - একটি নজিববিহীন দৃষ্টান্ত। যুব-ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক-মহিলা-রাজ্য সরকারী কর্মচারী-লেখক-শিল্পী ইত্যাদি প্রত্যেকটি পরিধিতে কাজ করতে রাজনৈতিক দলটির একটি করেই গণসংগঠন। শুধুমাত্র বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ নিয়ে আন্দোলনের ক্ষেত্রে দুটি গণসংগঠন কেন? রাজনৈতিক দলটি রাজ্য সম্মেলনে স্বীকার করেছে, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী আন্দোলনের ক্ষেত্রে জনগণের উপর তাদের গণসংগঠনের প্রভাব খুবই সামান্য।

'ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি' বিজ্ঞান আন্দোলনকে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ গড়ার আন্দোলন হিসেবে জনমানসকে প্রভাবিত করায় এবং যুক্তিবাদী আন্দোলনে জনগণকে বিশালভাবে সমাবেশিত করে মূলস্রোত তৈরি করায় সরকারি বা বিদেশি সাহায্য পুষ্ট কোনও ভাড়াটে আন্দোলকদের পক্ষে আমাদের পাল থেকে হাওয়া কেড়ে নেওয়া ছিল একান্তই অসম্ভব। তাই কি আমাদের সমিতির কাছাকাছি নাম রাখা হয়েছে জনগণকে বিভ্রান্ত করে ফায়দা তুলতে?

'ভারতীয় যুক্তিবাদী সংসদ'-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ডঃ বেলা দত্তগুপ্তের 'কুসংস্কার' প্রসঙ্গে রাখা একটি সাম্প্রতিক বক্তব্যের দিকে প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের নজর আকর্ষণ করছি।

"শিশুদের কোমরে তামার পয়সা বাঁধার চল আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। অনেকেই তা কুসংস্কার বলে চিহ্নিত করেন। কিন্তু এ'কথা এখন চিকিৎসা শাস্ত্রে সর্বজনবিদিত যে মানুষের দেহে তামা একটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ধাতু এবং সুস্থ স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য তা অত্যন্ত দরকারও। তাই কুসংস্কারের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করতে গিয়ে অনেক সময়ই যা বলা হয় তা নিতান্তই অসার, অনেকটাই বৃটিশদের কাছ থেকে যান্ত্রিকভাবে ধার করা চিন্তার পরিণতি।"

বক্তব্যটি প্রকাশিত হয়েছিল ২ সেপ্টেম্বর '৯৪-এর 'যুগান্তর' দৈনিক পত্রিকায়। যে প্রতিবেদনে বক্তব্যটি প্রকাশিত হয়েছিল, তার লেখক 'ভারতীয় যুক্তিবাদী সংসদ'-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক শমিত কর। অতএব বক্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ এখানে খাটে না।

আসুন, এবার আমরা দেখি ডঃ দত্তগুপ্তের বর্ণিত 'চিকিৎসা শাস্ত্রে সর্বজনবিদিত' বাস্তবিকই কতটা 'সর্বজনবিদিত'।

তারিখটা ২৬জুন। সাল ১৯৮৬। কলকাতার রাজাবাজারে অবস্থিত 'সাইন্স কলেজ'-এ দীর্ঘ আলোচনার পর ভারতের বিশিষ্ট ১৮ জন বিজ্ঞানী একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছিলেন। প্রস্তাবটির একটি অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি:

"আমাদের শরীরে রক্ত আছে। প্রয়োজনে বাহির হইতে সংগ্রহ করিয়া রক্ত দেওয়া হয়। কিন্তু কোনও ব্যক্তি যদি হঠাৎ দাবি করিয়া বসেন - পশু বা মানুষের রক্ত গায়ে মাখিয়াই শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর করা সম্ভব, তাহা হইলে তাহার মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে সন্দেহ জাগে। কেহ যদি প্রশ্ন করিয়া বসেন - রক্তস্বল্পতার ক্ষেত্রে চিকিৎসা শাস্ত্রে আয়রণ ট্যাবলেট-ক্যাপসুল ইত্যাদির প্রয়োগবিধি আছে, অতএব লৌহ আংটি ধারণে ওই একই কার্য সমাধা হইবে না কেন? - তবে প্রশ্নকর্তার কাণ্ডজ্ঞান বিষয়ে সন্দিহান হই। এইরূপ প্রশ্নকর্তা তাঁহার নিজের রক্তস্বল্পতা দেখা দিলে ভারি লৌহখণ্ড শরীরের সর্বত্র বাঁধিয়া রাখিয়া পরীক্ষা করিলেই তাঁহার প্রশ্ন ও বক্তব্যের অসারতা বুঝিতে পারিবেন।"

[ঐ]

যুক্তিবাদের বিশাল উত্থানে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে ও কেন্দ্রে
শাসকের ভূমিকায় থাকা দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দর্শনের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে ১৯৯২-এ এককাট্টা হলো। যুক্তিবাদী দর্শনের বিজয় রথের গতি প্রতিহত করতে ভাববাদী দর্শনের ব্যাপক প্রচারের জন্য বিবেকানন্দকে সামনে রেখে 'রাষ্ট্রীয় চেতনা বর্ষ' পালনের পরিকল্পনা নিল কংগ্রেস, বিজেপি, সি পি এম, সি পি আই, জনতা দল সহ তথাকথিত বিপরীত মেরুর দলগুলো। সঙ্গে যোগ দিলেন বিপান চন্দ, হাবিব তনবির প্রমুখ তথাকথিত প্রগতিশীলতার শীলমোহর দাগা বুদ্ধিজীবীরা। বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে বিশ্বধর্ম সম্মেলনকেও রাষ্ট্রীয় চেতনা বর্ষের কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হলো।

১৯৯৩-এর সেপ্টেম্বরে ১১, ১২, ১৮ ও ১৯ তারিখ ছিল কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বিশ্বধর্ম সম্মেলন। উদ্যোক্তা - রাজনীতিকদের বলে বলীয়ান রামকৃষ্ণ মিশন। চার দিনের সম্মেলনের বাজেট ১ কোটি টাকা। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় প্রচারে নামলো। প্রচারের সবটুকু জুড়েই প্রায় স্থান পেলো রাজনৈতিক নেতা ও রাষ্ট্রীয় নেতাদের উপস্থিতির কথা। রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, কেন্দ্রের ও রাজ্যের মন্ত্রীদের উপস্থিতির কথা জানিয়ে রাজ্য জুড়ে হোর্ডিং, পত্রিকায় বিশাল বিজ্ঞাপন - হই হই ব্যাপার। ধর্ম সম্মেলনে ধর্মীয় নেতারাই রইলেন অপাঙক্তেয়।

[ঐ]



'সত্য সাই বাবা' নামক টাউটের সাথে আজাদ সাহেব! এই ভন্ড বিশেষ করে দার্জিলিং এর পাহাড়ি বাসিন্দাদের লুটেছে ইচ্ছামতো বাম ফ্রন্টের আমলে। এর চামচারা প্রচার করতো এই লোকের ছবি থেকে নাকি অটোমেটিক বিভূতি ঝরে। কিন্তু চামচারা ছবির কাচে ল্যাকটিক অ্যাসিড ক্রিস্টাল লাগিয়ে রাখতো। এই ল্যাকটিক অ্যাসিড ক্রিস্টাল বাতাসের সংস্পর্শে এলে মিহি ছাই হয়ে ঝরে পড়ে। এভাবে তারা পাহাড়ি সরল মানুষগুলোর মগজ ধোলাই করতো। চ্যানেল ফোর এর গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল সাই বাবা কার হাত থেকে কীভাবে হার ও লকেট নিচ্ছে এবং হাত সাফাই করে শূন্য থেকে সৃষ্টির অভিনয় করছে। ১৯৯৪ সালে গুরুবাস্টার্স পৃথিবী জুড়ে রিলিজ করতেই প্রায় চল্লিশটি দেশের কোটি কোটি মানুষ দেখলো এই লোকের বুজরুকি।


"পশ্চিমবঙ্গে যে সব বিজ্ঞান সংগঠন আছে, তাদের অনেকেরই নানা সীমাবদ্ধতা আছে। সি পি আই (এম)-এর একটি শাখা 'পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ'। এস ইউ সি আই-এর বিজ্ঞান সংগঠনের নাম 'ব্রেকথু'। সি পি আই এবং আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞান সংগঠন আছে। কাজে না থাকলেও সাইনবোর্ডে ওরা আছে। ওরা রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞান সংগঠন। রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু নির্বাচন নির্ভর দল, সেহেতু ভোটারদের খুশি রাখার কথা ভাবতে হয়। ভোটারদের ধর্মীয় আবেগকে গুরুত্ব দিতে হয়।"

- 'যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা', প্রবীর ঘোষ

[ছবিতে ব্যানারে যেই সংগঠনের নাম দেখা যাচ্ছে সেটা বাংলাদেশের নির্বাচনপন্থী বামদল বাসদের কথিত বিজ্ঞান সংগঠন, অন্যান্য নির্বাচনপন্থী বামেদের অবস্থাও একই। এরা লেখাগুলো ছাপানোর আগে অত্যন্ত সতর্ক থাকে কোনো লেখা বিশেষ করে মুসলিমদের উগ্রতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে গেলো কিনা। এরা ঈদ কিংবা পূজার সময় সেমাই বিলি করে আর পূজায় অংশ নিয়ে বিপ্লব করে! আবার মৌলবাদীদের লেজ ধরে দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদীদের নীতি বাস্তবায়নে সহায়তা করে। ড. তারেক শামসুর রেহমান আরব দেশগুলোতে এদের কুকীর্তি বিস্তারিত লিখে গেছেন।]

ইউনুস কাক্কুকে প্রধান অতিথি করার দাবি জানাচ্ছি🤣


পোল্যান্ড এর টাউট ক্লাইভ হ্যারিস এর বিশাল সংস্থার নাম 'দ্য ক্লাইভ হ্যারিস ফাউন্ডেশন'। এই ফাউন্ডেশন এর সম্পত্তির পরিমাণ সেই নব্বই দশকেই ছিল ৬০ হাজার কোটি স্টার্লিং পাউন্ড! সে নব্বই এর দশকে পাশের দেশ ভারতে এসেছিল তিন মাসের জন্য। কেবল মুম্বাইয়েই দেখেছিল ৪০ হাজার রোগী। প্রত্যেক রোগীকে কমপক্ষে দুই হাজার রুপি ডোনেশন দিতে বাধ্য করা হয়েছিল কলকাতা শহরে। আর তখন ক্ষমতায় ছিল নির্বাচনপন্থী বামেরাই! বাকি শহরগুলোতে এর চেয়ে বেশি পরিমাণে অর্থ নেয়া হয়েছিল, অথচ সে ডোনেশন আদায় করলেও দাবি করতো সে কোনও 'ফি' নেয় না। ভারতের আইন অনুযায়ী এই ধরনের ফাউন্ডেশনে থাকা ডোনেশনের অর্থের উপর কোনও ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় না। এই পোলিশ টাউটের মতোই উপমহাদেশের বিভিন্ন ধর্মের গুরুরা এভাবে দরিদ্র জনগণের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে এবং আইনের ফাঁকফোকরকে ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা আয় করে এখনো।


পাথর বিক্রেতা পাথর ছাড়া আরও একটি জিনিস নিয়ে বসে। সেটা রাখে ভের্তার ক্রেতার চোখের আড়ালে। জিনিসটা হলো এক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য - ফেনলফথ্যালিন (Phenolphthalein)। ফেনলফথ্যালিন এর গুঁড়ো দেখতে সাদা পাউডারের মতো। পানি রঙিন করার এই কেমিক্যাল দর্শকদের নজর এড়িয়ে রাখতে কিছু কৌশল নেয় পাথরওয়ালা। এরা পোশাকের ভাঁজে, হাত ও পায়ের ভাঁজে, ঘাড়ে ফেলে রাখে ফেনলফথ্যালিন পাউডার।

বাটিতে থাকে পানি। একটা চামচ দিয়ে পানি তুলে দেয়া হতে থাকে। ওই পানি কিন্তু সাধারণ পানি না। বিশেষত্ব আছে। পানিটা চুনের পানি। পানিতে চুন ডুবিয়ে রাখলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে চুন কাদা কাদা হয়ে যায়। কাদা চুন পানির তলায় থিতিয়ে পড়ে থাকে। ওপরে থাকে টলটলে পানি।

পাথর বিক্রেতা যখন পানির রং বেগুনি করতে চায়, তখন আঙুলের ডগায় তুলে নেয় ফেনলফথ্যালিন। তারপর পাথরটা ক্রেতার হাতের তালুবন্দি পানিতে রাখার সময় ওই বিশেষ আঙুলটি পানিতে ছুঁইয়ে দেয়। চুন পানিতে ফেনলফথ্যালিন মেশার সঙ্গে সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পানির রং হয়ে যায় বেগুনি। 

এই পুরো প্রক্রিয়া চলাকালীন টাউটরা বলে পাথরই নাকি সঠিক মানুষ চিনে নেয় এভাবে! নির্বাচনপন্থী বাটপারদের সময়ে পশ্চিমবঙ্গে এদের ব্যবসা ছিল তুঙ্গে।


নির্বাচনপন্থী বামেদের অবস্থা দেশে দেশে যে একই তা আবারো প্রমাণিত। মে দিবসে রুশ নির্বাচনপন্থী টাউটরা গনফালন (Gonfalon) এর ভিতর ইম্পেরিয়াল যীশুর ছবি ফিট করেছে! তাদের হাতে ধরা ব্যানারে সিরিলিক অক্ষরে যা লেখা আছে সেটার বাংলা অনুবাদ -

"সাম্যবাদ -

খ্রিস্টের অমর শিক্ষা"



কয়েক মাস আগে এই বাম লুইচ্চা মামুনুল হক এর সাথে একই মঞ্চে বক্তৃতা দিয়েছে।

..................................................................................

এক মার্কসবাদী খুদে নেতা তাঁর বাড়িতে এক প্ল্যানচেট চক্রে আমাকে ও আমার বন্ধু শম্ভুনাথ চক্রবর্তীকে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। খুদে নেতাটির দাদা সেই সময় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রভাবশালী সচিব। ঠিক হলো চক্রে উপস্থিত থাকবো আমি, শম্ভু এবং নেতা ও তাঁর স্ত্রী। শম্ভু কলকাতা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশনে কাজ করে এবং একটি বামপন্থী ইউনিয়নের কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত হলেও সাহিত্য ও সাহিত্য সৃষ্টিতে যথেষ্ট আগ্রহী। চক্রে বসার দিন সময়ও ঠিক করে ফেললাম নেতা, আমি ও শম্ভু। শম্ভু সর্বজন শ্রদ্ধেয় এক সাহিত্যিকের নাম করে বললেন, "ওঁর আত্মাকে সেদিন নিয়ে আসতে হবে।"

নেতাটি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ হাসিটি মুখের চারপাশে ছড়িয়ে বললেন, "ওঁকে অনেকবার আমরা এনেছি। কোনও প্রবলেম নেই।"

শম্ভু এবার বললেন, "ওঁর এক অবৈধ সন্তান ছিল। সন্তানটির নাম গবেষক ছাড়া কারওরই খুব একটা জানার কথা নয়। লেখকের আত্মা নিজের অবৈধ সন্তানটির নাম লিখে দিলেই আমি চূড়ান্তভাবে প্ল্যানচেটকে স্বীকার করে নেব।"

আমাদের সেই প্ল্যানচেটের আসর আজ পর্যন্ত বসেনি। সম্ভবত নেতাটি এখনও সাহিত্যিকের অবৈধ সন্তানটির নাম জেনে উঠতে পারেননি।"

- 'অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড)', প্রবীর ঘোষ 


Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]