তুরস্ক


 
নয়া খলিফা এরদোয়ান 'ইসলাম', 'মুসলিম' শব্দগুলো বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলার শো অফ করলেও তার দেশের স্ট্রিটগুলোতে আর তুর্কিদের ঘরের ভিতরেই নিয়মিত শুয়োরের মাংস রান্না করা হয় বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করতে।

............................................................................................

কামাল পরবর্তী প্রজন্ম মোটেও ধর্ম নিরপেক্ষ মনোভাবের ছিল না। এরা দেশটির নব্য ধনী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছিল, যারা আপাতদৃষ্টিতে ধর্ম নিরপেক্ষ দেশটির সব সেক্টর ধীরে ধীরে দখলে নিচ্ছিল। এরা ছিল অত্যন্ত উগ্র মুসলিম। এদের প্রতি সহানুভূতি ছিল দেশটির শ্রমজীবী মানুষদের, যারা কিনা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মতো সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোর বৈজ্ঞানিক ধাপটি ছাড়াই ধর্ম নিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠার অজুহাতে জবরদস্তিমূলক বিভিন্ন আইনের উপর রেগে থাকতো। পুরানো শিক্ষিত বুর্জোয়া শ্রেণী এজন্যই সামরিক শাসনের পক্ষে ছিল মৌলবাদীদের কবল থেকে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে। ওরহান পামুক চমৎকারভাবে ব্যাপারটা বিশ্লেষণ করেছেন। তাছাড়া দেশটির কথিত ধর্ম নিরপেক্ষ বুর্জোয়ারা লোক দেখানো আধুনিকতা প্রদর্শনে ব্যস্ত থাকলেও ভিতরে ভিতরে মেন্টাল কমপ্লেক্স এ আক্রান্ত থাকে এখনো ধর্ম সংক্রান্ত ব্যাপারে। এজন্য এরা রোজা না রাখলেও ইফতার করে, ভেড়া কোরবানি দেয়। তাদের মধ্যবিত্ত শিক্ষিত যুবকরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নির্বাচনপন্থী বামগিরির রোমান্টিকতায় কিছুদিন আক্রান্ত থাকে উপমহাদেশের মতোই, এরপর শুরু হয় কর্পোরেট চাকর হওয়া এবং শেষ বয়সে ধর্মে ফিরে যাওয়া। এটা কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষিত বুর্জোয়াদের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। তারা রাজনৈতিক ইসলামের আতঙ্কে পাশের দেশটির কিংবা সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক আধিপত্য, আঞ্চলিক মোড়লগিরি, প্রক্সি ওয়ার ইত্যাদি বিষয়গুলো জানলেও অন্ধভাবে চোখ বন্ধ রাখে কিংবা উটপাখির মতো মাথা লুকিয়ে রাখে। অন্যদিকে রাজনৈতিক ইসলামের ধারকরা বিভিন্ন জুজুর ভয় দেখিয়ে সাধারণ মুসলিমদের টিস্যু পেপারের মতো ব্যবহার করে। উভয় ক্ষেত্রেই লাভবান হয় উঁচু শ্রেণী, কখনোই আমজনতা নয়।

"শহরের প্রতিদিনকার জীবনের বর্ণনাকারী হিসাবে এই শহরের 'কলাম' লিখিয়েরা ইস্তাম্বুলের রূপ-রস-বর্ণ-গন্ধ-শব্দ, এর মজাদার রসিকতা আর রসবোধের প্রতিফলনগুলো ধরে রাখতেন এবং তাঁরা ইস্তাম্বুলের রাস্তায়, পার্কে, উদ্যানে, দোকানে, জাহাজে, সাঁকোয়, ময়দানে, টার্মওয়েতে ভব্যতার রীতিনীতি প্রবর্তন করাতেও সাহায্য করেছিলেন। যেহেতু সুলতানকে, রাষ্ট্রকে, পুলিশকে, মিলিটারিকে, ধর্মীয় নেতাদের বা আরো ক্ষমতাশালী কাউন্সিলরদের সমালোচনা করা ধৃষ্টতার পরিচায়ক ছিল, তাই এইসব বনেদি সাহিত্যিকরা তাঁদের তিরস্কারের পাত্র করে তুলেছিলেন অসহায়, নামগোত্রহীন জনতাকে, সেইসব ক্ষুদ্র মানুষগুলোকে, যারা নিজেদের কাজ করে চলে আর দুবেলা দুমুঠো জুটাতে প্রাণপণ লড়াই করে চলে। এইসব শিক্ষিত কলাম-লিখিয়ে সাংবাদিক আর শিক্ষিত সংবাদপত্র-পড়ুয়াদের মতো শিক্ষিত নয় যে সব হতভাগ্য ইস্তাম্বুলবাসী, তাদের সম্বন্ধে যাবতীয় যা কিছু, গত ১৩০ বছরে তারা শহরের রাস্তায় কী করছে, তারা কী খেয়েছে, কী বলেছে, তারা কী হৈ-হট্টগোল, গন্ডগোল করেছে-সব কিছু আমরা আজ জানি; তার জন্য-প্রায়শই খিটখিটে, কখনো সহানুভূতিশীল, কিন্ত সব সময়েই দোষদর্শী কলাম-লিখিয়েদের ধন্যবাদ, কারণ তাঁরাই এদের সম্বন্ধে লেখাটা নিজেদের কর্তব্য বলে মনে করেছিলেন।"

- 'Istanbul', Orhan Pamuk

...............................................................................................

আগের শতকগুলোর বিভিন্ন পশ্চিমা লেখকের লেখায় উঠে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভ্রমণকারী, কূটনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ইত্যাদি পেশার লোকেরা তুরস্কে আসতো। এজন্য দেশটির রাস্তায় তুর্কি ভাষা ছাড়াও গ্রিক, আর্মেনিয়ান, ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ এবং ইংরেজি ভাষা শোনা যেতো। আবার ইউরোপের মৌলবাদী খ্রিস্টানদের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে অনেক ইহুদি তুরস্কে চলে এসেছিল। এই ইহুদিরা ল্যাডিনো ভাষায় কথা বলতো।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Judaeo-Spanish

কিন্তু প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর আরবি সংস্কৃতি সরাতে গিয়ে সরকার তুর্কিকরণ এর অজুহাতে বেশ কিছু ব্যাপারে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছিল। এগুলোর মধ্যে ছিল অন্য ভাষাভাষীদের ভাষার উপর আক্রমণ। ফলে তুর্কি ছাড়া অন্যান্য প্রায় সব ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যায় দেশটিতে। যখন কেউ রাস্তায় এসব ভাষায় কথা বলতো, তখন উগ্র জাতীয়তাবাদী তুর্কিরা তাকে বলতো-

"হে নাগরিক, দয়া করে তুর্কি ভাষায় কথা বলুন।"

এই বাণী লিখিত আকারে সর্বত্র ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছিল।

........................................................................................

"শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে শাসক অটোমান পাশারা অন্যান্য ধনী ব্যক্তিদের, যাদের বেশির ভাগই শক্তিশালী পাশা ছিলেন, নিজেদের আসন্ন বিপদ বলে মনে করতেন, আর তাই সুযোগ পেলেই যে কোনো অজুহাতে তাদের খুন করে তাদের সমস্ত ধনসম্পদ বাজেয়াপ্ত করে নিতেন। আর ইহুদিদের ক্ষেত্রে, যারা অটোমান সাম্রাজ্যের শেষ শতাব্দীগুলোতে রাজ্য সরকারকে টাকা ধার দেওয়ার মতো অবস্থায় ছিলেন এবং গ্রিক ও আর্মেনিয়ানরা, যারা ব্যবসায়ী এবং কারিগর হিসাবে অনেক ওপরে উঠেছিলেন, তারা সবাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে শাস্তিমূলক সম্পদ কর তাদের ওপর ধার্য করা হয়েছিল, তার তিক্ত স্মৃতি বহন করতেন এবং পরবর্তীকালে তাদের সমস্ত জমি ও কারখানা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল এবং ১৯৫৫ সালের ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বরের দাঙ্গায় তাদের অসংখ্য দোকান লুটপাট করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।...

যাই হোক আমার ছোটবেলার ইস্তাম্বুলের ধনী ব্যক্তিদের ওপর যে দুশ্চিন্তা ভর করেছিল, তা কিন্তু অমূলক ছিল না এবং তাদের চিন্তা ভাবনাও ভুল ছিল না। সরকারি আমলাতন্ত্র সমস্ত রকমের উৎপাদনের ওপর লোভী নজর রাখত এবং যেহেতু রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে চুক্তি না করে সত্যিকারের ধনবান হওয়া অসম্ভব ছিল, সেহেতু প্রত্যেকেই ধরে নিত যে, ভালো মানুষ ধনী ব্যক্তিদেরও অতীত কলঙ্কিত ছিল। আমার দাদাজীর টাকা পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এবং আমার বাবা অনেক বছর ধরে তুরস্কের অন্য একটি অগ্রগণ্য শিল্পপতি পরিবারের কর্তা ভেহবি কক-এর অধীনে চাকরি করার পরেও, বাবা, তার মালিকের প্রাদেশিক উচ্চারণ অথবা তার কম মেধাবী ছেলের বুদ্ধিমত্তার ঘাটতি নিয়ে ব্যঙ্গ করেই সন্তুষ্ট থাকতেন না, উপরন্তু রেগে গেলে বাবা বলতেন যে, ওই পরিবারটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে তাদের ধনসম্পদ উপার্জন করে এবং এদের কারণেই দেশে সেই সময়ে দুর্ভিক্ষ এবং খাদ্যের জন্য লাইন দেওয়া ইত্যাদি হয়েছিল। আমার সারা ছেলেবোয় এবং যৌবনে আমি ইস্তাম্বুলে এমন কোনো ধনী ব্যক্তি দেখিনি, যে নিজের ক্ষমতায় ধনী হয়েছে, বরং তারা অনেকদিন আগে সরকারের আমলাদের সুযোগ সুবিধা মত ঘুষ খাইয়ে বড়লোক হয়েছে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত যখন সরকারের প্রতি ভীতি ধীরে ধীরে কমে গেছে, আমি ধরে নিয়েছিলাম যে, এদের অধিকাংশই খুব দ্রুত টাকা কামিয়েছে এবং বাকি জীবনটা ওই টাকা ভালোভাবে লুকিয়ে রাখার জন্য ব্যয় করেছে এবং নিজেদের সামাজিক প্রতিষ্ঠাকে বৈধ রূপ দেবার চেষ্টা চালিয়েছে। যেহেতু ধনী হবার জন্য বুদ্ধিজীবী হওয়ার দরকার হয় না, সেহেতু এই সমস্ত ধনী ব্যক্তিদের বই-এর প্রতি, লেখাপড়ার প্রতি, কিংবা দাবা খেলার প্রতি কোনো আগ্রহই ছিল না।...

নতুন ধনীরা যখন সরকারকে ভয় পেতে শুরু করল (উপযুক্ত কারণেই), তখন এই ভীত পরিবারগুলোর সামনে অগ্রগতির একটিই রাস্তা খোলা ছিল, তা হলো নিজেরা যা নয়, তার চেয়ে বেশি করে নিজেদের ইউরোপিয়ান দেখানো। সেই জন্যেই তারা তখন ইউরোপে প্রমোদ ভ্রমণে যেতে শুরু করল, দামি কাপড় চোপড়, মালপত্র এবং সর্বাধুনিক গৃহস্থালীর জিনিসগুলো (ফলের রস বানানোর জুইসার থেকে শুরু করে ব্যাটারি-চালিত দাড়ি কামানোর শেভার পর্যন্ত) কিনতে শুরু করল, আর এইসব জিনিসের মালিক হয়ে গর্ববোধ করতে লাগল। কখনো কোনো পুরোনো ইস্তাম্বুলী পরিবার একটা ব্যবসা শুরু করে নতুন করে ধনী হয়ে যেত (যেমন হয়েছিল এক বিখ্যাত খবরের কাগজের মালিক এবং লেখক, যিনি কিনা আমার খালার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন)। কিন্তু তারা ততদিনে শিক্ষা পেয়ে গেছে; যদিও তারা কোনো আইন ভাঙেনি, কোনো সরকারি আধিকারিককে অপমান করেনি এবং সরকারকে ভয় করবার কোনো কারণই ছিল না, তবুও এই ধরনের লোকেদের পক্ষে এটা মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না যে, এরা তাদের সব সম্পদ বিক্রি করে দিয়ে চলে যেত লন্ডনে, কোনো সাধারণ ফ্ল্যাটবাড়িতে, সেখান থেকে তারা হয় উল্টোদিকের প্রতিবেশীর বাড়ির দেওয়াল দেখত, অথবা ইংরেজি টেলিভিশন দেখত যেটা তারা মোটেই বুঝতে পারত না, কিন্তু তবুও কোনো নিজেদের অবোধ্য কারণে, তারা ভাবত যে, ইস্তাম্বুলে বসফোরাসের দৃশ্য দেখা যায় এ রকম একটা অ্যাপার্টমেন্টের অনিশ্চিত আরামের চাইতে তারা বেশি ভালো আছে। এ রকমও হত যে, তাদের এই পাশ্চাত্যগামী আকাঙ্খা থেকে 'অ্যানা কারেনিনা'র প্রতিধ্বনি-সম্পন্ন গল্পও তৈরি হয়ে যেত; একটা ধনী পরিবার তাদের ছেলেমেয়েদের বিদেশি ভাষা শেখানোর জন্য বিদেশি আয়াকে পরিবারে নিয়ে আসত, আর কিছুদিন পরেই পরিবারের কর্তা ওই আয়াকে নিয়ে পালিয়ে যেত। অটোমান সাম্রাজ্যের কোনো বনেদিয়ানার উত্তরাধিকার ছিল না, কিন্তু প্রজাতন্ত্র আসার পর ধনীরা অটোমান বনেদিয়ানার উত্তরাধিকারী হিসেবে নিজেদের দেখাবার অদম্য চেষ্টা চালাত।..."

- 'Istanbul: Memories of a City', Orhan Pamuk

........................................................................................

প্রচারের কল্যাণে কুর্দিদের ব্যাপারে একপেশে ধারণা আছে ডান বাম নির্বিশেষে অনেকের মধ্যেই। এদের একটা নির্দিষ্ট অংশই কেবল বামপন্থী গেরিলা। এই সম্প্রদায়ের অনেকেই অত্যন্ত উগ্র মুসলিম। এদের মাঝে বেশ কিছু কুখ্যাত কাঠমোল্লা নেতা ছিল যারা প্রবল পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করে নারীদের নিপীড়নের মাঝে রেখেছিল। এদের দ্বারা মগজ ধোলাই হওয়া অনেক জিহাদি মূল তুর্কি ভূখণ্ডে ভয়ঙ্কর সব অপরাধ সংগঠিত করেছিল আগের দশকগুলোতে। এমনকি স্বাধীনচেতা নারীদের ভয় দেখাতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে। এদের উগ্র ধর্মীয় নেতারা অনেকগুলো মাদ্রাসা পরিচালনা করে এখনো।

"....আর ইসলামিস্টদের কথা বলতে গেলে, এরা দল বেঁধে এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যাবে, ভেতরে ঢুকবে তারপর মেয়েদের থালাবাসন, কমলার রস বের করার মেশিন, সাবানের বাক্স, পেষা গম আর ডিটারজেন্ট বিলোবে। গরীব পড়শীদের নিশানা করে ওরা, মেয়েদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে, শয়তানের কবল থেকে বাচ্চাদের বাঁচাতে সুতো পড়ানো সুই বের করে বাচ্চাদের কাঁধে সোনার সুতো সেলাই করে দেয়। বলে "প্রসপারিটি পার্টিকে ভোট দাও, এটা আল্লাহর দল। আল্লাহর পথ থেকে সরে যাবার কারণেই আমাদের উপর গযব নাযেল হয়েছে।" পুরুষরা পুরুষের সাথে মেয়েরা মেয়েদের সাথে কথা বলে। ওরা ক্ষুব্ধ আর অপমানিত বেকারদের আস্থা লাভ করে। ওদের স্ত্রীদের সাথে বসে ওরা যাদের জানা নেই আগামী বেলার খাবারের ব্যবস্থা কোত্থেকে হবে। ওদের আশা দেয়, আরও উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়; তার বদলে ওদের কাছে ভোটের কথা আদায় করে।...."

- 'Snow', Orhan Pamuk

.........................................................................................

গ্যুস্তাভ ফ্লোব্যার লেবানন ভ্রমণের সময় সিফিলিস রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন দেশটির এক পতিতার মাধ্যমে। এই রোগ নিয়েই তিনি আবার তুরস্কের একটি পতিতালয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে কর্ত্রী তার নিজের মেয়েকে এই বিখ্যাত সাহিত্যিকের ঘরে পাঠায়। মেয়েটি কোনো রোগ আছে কিনা পরীক্ষা করতে ফ্লোব্যার এর যৌনাঙ্গ দেখতে চাইলে তাকে অপমান করা হচ্ছে এই অজুহাতে চিৎকার করে বেরিয়ে যান। অথচ প্রাচ্য সম্বন্ধে অনেক নেতিবাচক ও আপত্তিকর কথা লিখে গেছেন তিনি নিজের বইগুলোতে।

[সূত্র: 'Istanbul: Memories of a City', Orhan Pamuk]

.......................................................................................

নোবেল বিজয়ী লেখক আন্দ্রে জিদ অত্যন্ত উন্নাসিক পশ্চিমা লেখক ছিলেন। তিনি প্রাচ্যবাসীদের নিচু চোখে দেখতেন। যেমন-
১৯১৪ সালে তুরস্ক ভ্রমণের পর তিনি প্রকাশ্যেই বলেছিলেন যে, তিনি তুর্কীদের ঘৃণা করেন এবং তুর্কীরা যে পোশাক পরে তা কুৎসিত; এই জাতটা নাকি এর চেয়ে ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্যই নয়! তিনি গর্ব করে বলেছিলেন তার এই ভ্রমণ তাকে নাকি শিখিয়েছে পাশ্চাত্য সভ্যতা, বিশেষ করে ফরাসি সভ্যতা অন্য সব সভ্যতার চাইতে অনেক উচ্চ স্তরের! 

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Andr%C3%A9_Gide

অন্যদিকে বিখ্যাত ফরাসি লেখক ও রাজনীতিবিদ লামার্টিন 'হিস্ট্রি অব টার্কি' শিরোনামে আট খন্ডের একটি বই লিখেছিলেন।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Alphonse_de_Lamartine

সেসময় ফ্রান্স ছিল ওসমানীয়দের মিত্র। অভিযোগ আছে তৎকালীন সুলতান প্রথম আব্দুলমেসিড এই লেখককে দিয়ে এই বই লিখিয়ে নেন, যেখানে ওসমানীয়দের প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে ফেলেন লেখক। বইটির সবগুলো খন্ড প্রকাশের খরচ দেয় সুলতান।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Abd%C3%BClmecid_I

............................................................................................

মুসলিমদের নয়া খলিফা এরদোয়ানের প্রশংসায় মুখে ফেনা তুলে ফেলে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত অসচেতন এই সম্প্রদায়। কারণ এই টাউট হাজিয়া সোফিয়াতে নামাজ চালু থেকে শুরু করে ওসমানীয়দের ঐতিহ্যগুলো ফিরিয়ে আনছে! অথচ তার শাসনামলে অর্থনৈতিক বৈষম্য এতো বেশি বেড়ে গেছে যে, ওসমানীয়দের আমলের কামানগুলোর ভেতর গৃহহীন মানুষেরা আর মাতালরা থাকছে বর্তমানে। এই কামানগুলোর ভেতর এখন সিগারেট এর অবশিষ্টাংশ থেকে শুরু করে নানা রকম বর্জ্য দেখা যায় এজন্য।

.........................................................................................

ইসলাম ধর্মে কুকুর অস্পৃশ্য প্রাণী দেখে ওসমানীয় সুলতানরা অসংখ্য কুকুর বিনা কারণে মেরে ফেলেছিল। এমনকি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কায়েমের পরও দেশটিকে পরিষ্কার রাখার অজুহাতে একই কাজ করা হয় জিপসিদের সাহায্যে। জঁ পল সার্ত্র উনার 'এজ অব রিজন' উপন্যাসে এটা নিয়ে ঠাট্টা করেছেন।

.......................................................................................

তুরস্কের মফস্বল অঞ্চলগুলোতে বাল্যবিয়ে, ডমেস্টিক ভায়োলেন্স ইত্যাদি বর্বরতার শিকার মেয়েদের অবস্থা যে কতটা ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে তা বিভিন্ন পরিসংখ্যানের পাশাপাশি উঠে এসেছে বিখ্যাত লেখক ওরহান পামুকের 'Snow' বইটিতে। সারা বিশ্বে নারীদের চেয়ে পুরুষদের আত্মহত্যার হার বেশি হলেও দেশটিতে উল্টো হয়ে গেছে এই হার এসব কারণে। অথচ তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এসব সমস্যা দূর করার পরিবর্তে লিফলেট বিলি করে এটা ছাপিয়ে - 'আত্মহত্যা মহাপাপ'। দেশটিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরিধানে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর যেসব সেক্যুলার শিক্ষক হিজাব পড়া মেয়েদের ক্লাসে ঢুকতে দিতো না তাদের খুঁজে খুঁজে বের করে মৌলবাদীরা গুলি করে খুন করতো। তাছাড়া কামালের দেশটির মেয়েদের অবস্থার আধুনিকীকরণ যে কেবল উচ্চবিত্ত আর মধ্যবিত্তদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল সেটাও উঠে এসেছে বইটিতে। একই ঘটনা ঘটেছিল ইরানে শাহ এর শাসনামলে ও আফগানিস্তানে সোশ্যাল ডেমোক্রেটদের শাসনামলে। অথচ শ্রেণীগত বিশ্লেষণে অক্ষম নির্বাচনপন্থী বামেদের ও কথিত মুক্তমনাদের দৌড় উচ্চ শ্রেণীর তৎকালীন আধুনিক পোশাকের নারীদের ছবি শেয়ার পর্যন্তই।

......................................................................................

তুর্কি ফুটবলার দেমির বে'কে একজন জার্মান নারী রেফারি লাল কার্ড দিয়েছিলেন। কারণ সে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রেফারিকে বলেছিল-

"আপনার রান্নাঘরে থাকা উচিত।"

ফিফা এজন্য দেমির বে'কে পাঁচ ম্যাচের জন্য সাসপেন্ড করে এবং সাজার অংশ হিসাবে তাকে একটি মহিলা ফুটবল ম্যাচের রেফারির দায়িত্ব পালনের আদেশ দেয়। দেমির বে ম্যাচটি পরিচালনার সময় ৮ জন নারী খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেয়। কেন এটি করলো তাকে জিজ্ঞেস করা হলে সে আবারো উত্তর দেয়- 

"কারণ, মহিলাদের রান্নাঘরে থাকা উচিত।"
.....................................................................................


বাংলাদেশি অনেক মুসলিমদের এক ঠ্যাং যেমন পাকিস্তান কিংবা বিভিন্ন আরব দেশে পড়ে থাকে, মধ্য এশিয়ার প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোর 'তুর্কি-তুর্কি ভাই ভাই' তত্ত্বে বিশ্বাসী উগ্র জাতীয়তাবাদী গরুদের অবস্থাও একই। অথচ প্রবলভাবে অর্থনৈতিক শোষণ ও সামরিক আধিপত্যবাদ চালাচ্ছে এরদোয়ান এই বেল্টে। ভিডিওতে বক্তব্য দেয়া লোকটা আজারবাইজান এর। তিনি রুশ এ যা যা বলছেন অত্যন্ত দৃষ্টিকটুভাবে অহংকার প্রদর্শনের মাধ্যমে, সেটার সারমর্ম হচ্ছে তিনি মনে করেন (সেই সাথে এই বেল্ট এর বর্তমান প্রজন্ম) এরদোয়ান নাকি একুশ শতকের সুলতান, প্রকৃত বিশ্ব নেতা ইত্যাদি ইত্যাদি। এই হারামজাদার কারণেই নাকি তুরস্কতে বসবাসরত সিরিয়ান শরণার্থীরা মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাবে এখন!

...........................................................................................

আমেরিকায় যাদের ঠিকমতো ডকুমেন্ট থাকে না, তাদের থেকে শ্বেতাঙ্গরা প্রচন্ড মজুরি শোষণের মাধ্যমে কাজ আদায় করে নেয়। ৮ ডলারের ঘন্টা প্রতি কাজের জন্য দেয় ২ ডলার। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশগুলো (গালফ অঞ্চল) ও তুরষ্ক একই কাজ করে সিরিয়ান, ফিলিস্তিনিদের সাথে। যেই উপমহাদেশবাসী মুসলমানদের এক ঠ্যাং আজীবন মধ্যপ্রাচ্যে থাকে, তাদের শ্রমিকদের সাথেও একই কাজ করে এরা। তাছাড়া নারী গৃহকর্মীদের উপর চালানো বর্বরতার ব্যাপারটা তো আছেই।

তুর্কি দালালরা দরিদ্র আর্মেনীয়দের মূল ভূখণ্ডে নিয়মিত নিয়ে আসে। সারাদিন ওদের দিয়ে কাজ করানো হলেও বিনিময়ে খুব সামান্যই অর্থ প্রদান করে তুর্কি শোষকরা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তুর্কি সরকারগুলো সোভিয়েত ইউনিয়ন এর সাথে বাণিজ্য করতো এমন প্রায় প্রত্যেক বণিকদের গ্রেফতার করেছিল এবং তাদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ এনে অনেককে মেরে ফেলেছিল।

মিলিটারিরা ক্ষমতায় আসার পর দেশটিতে সব ধরনের বামপন্থী নাটক নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।

উগ্র মুসলিম জঙ্গিদের লাশ হত্যার পর বিমান থেকে সাগরে ফেলে দেয়া হয় তুরস্কে।

তুর্কিরা রাস্তায় কুকুরদের দিয়ে 'ডগ ফাইট' এর আয়োজন করে 'কক ফাইট' এর অনুরূপ।

অভাবের কারণে জর্জিয়া আর ইউক্রেনের প্রচুর মেয়ে তুরস্কে আসে বেশ্যাগিরি আর চোরাচালানীর কাজ করতে।

ইসলামে কুকুর স্পর্শ করা হারাম হলেও তুর্কিরা কুকুরের চামড়ার তৈরি দস্তানা ব্যবহার করে।


Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]