হুজুর সাইদাবাদী: মন্তরে সন্তান লাভ! [প্রবীর ঘোষ-পর্ব দুই]
হোটেল থেকে বেরুতেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা সমিতির অনেকেই টুক টাক খসে পড়লেন লাইন থেকে। আমরা সকলে মিলে একটু হেঁটে ঢুকলাম একটা চায়ের দোকানে। কবচটা খুললাম। বেরিয়ে এল সোনার গুলি। তিন ঘণ্টা নয়, পনেরো মিনিট পরেই। ফ্ল্যাটে ফিরে আমরা কয়েকজন পরবর্তী পদক্ষেপের কথা আলোচনা করছি এমনি সময়ে হুজুরের ফোন পেলাম। তিনি নরম মিষ্টি গলায় জানালেন, আমার চ্যালেঞ্জ জানানো চিঠি পেয়েছেন। কিন্তু আমি কী পেয়েছি কবচটা খুলে? লোহা কি সোনা হয়নি? হলে এখনও হাজির হইনি কেন? জানালাম হোটেল থেকে বেরিয়েই তাবিজ খুলেছি। তখনই তাবিজে লোহার বদলে সোনার গুলি। হাত সাফাই করে গুলি বদলে সোনার গুলি আপনি পুরে দিয়ে থাকলে তিন ঘণ্টা আর তিন মিনিট একই ব্যাপার। খুললে সোনাই পাবো। এ-সব শোনার পরও হুজুর আকাশের মত উদার গলায় জানালেন-আমার সহযোগিতা চান। সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক থাকলে যেন আগামিকাল সকালে হীরা হোটেলে দেখা করি। দেখার পক্ষে জায়গাটা আমার পছন্দ না হলে এয়ারপোর্টেও দেখা করতে পারি। প্লেনের সময় জানিয়ে দিলেন। এও জানাতে ভুললেন না-সহযোগিতা করলে সোনার গুলি গোলা হয়ে যাবে, এক সেরি গোলা। হুজুর দরাজ গলায় হাসলেন। না। দেখা করিনি। পরিবর্তে দেখা করেছিলাম কলকাতাস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে। তবে তা এপ্রিলের ২৪ তারিখে। ইতিমধ্যে হুজুর সাইদাবাদীকে নিয়ে আমার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়ে গেছে। ডেপুটি হাইকমিশনারের হাতে যুক্তিবাদী সমিতির প্যাডে লেখা একটি চিঠি তুলে দিই। চিঠির সঙ্গে আজকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের কপি, হুজুর সাইদাবাদীর দেওয়া বিজ্ঞাপনের কপি ও যুক্তিবাদী সমিতির তরফ থেকে হুজুরের হাতে তুলে দেওয়া চিঠির কপি যুক্ত করে দেওয়া হয়।
ডেপুটি হাইকমিশনারকে লেখা চিঠির কপি এখানে তুলে দেওয়া হলো-
শ্রদ্ধেয়
বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার
৯, সার্কাস এভিনিউ
কলকাতা-৭০০ ০১৭
সম্প্রতি আমরা গভীর দুঃখ, শঙ্কা ও তীব্র ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, আপনার দেশের নাগরিক 'হুজুর দেওয়ান মোহম্মদ সাইদুর রহমান চিশতি সাইদাবাদী' নামধারী জনৈক ব্যক্তি মাঝে-মাঝেই আমাদের দেশে আসছেন এবং এ-দেশের পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন-তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার দ্বারা নিঃসন্তান রমণীকে মা করে দেবেন, রোগীদের রোগমুক্ত করবেন এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দেবেন। এই মিথ্যা বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ করে হুজুর সাইদাবাদী আমাদের দেশের অসহায়, বঞ্চিত, অজ্ঞ ও অন্ধবিশ্বাসী মানুষদের প্রতারিত করছেন। হুজুরের আসল আকর্ষণী ক্ষমতা-দুয়া পড়ে কাঁচা ডিমকে সিদ্ধ করে দেওয়া। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি হুজুর কলকাতায় ছিলেন। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমি গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হুজুরের সঙ্গে দেখা করি। সে সময় হুজুর দাবি করেন, তাঁর অলৌকিক ক্ষমতায় যে কোনও রোগীকে রোগমুক্ত করতে সক্ষম এবং মা হতে ইচ্ছুক মহিলার আনা কাঁচা ডিম 'দুয়া' পড়ে সিদ্ধ করে দেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি হুজুরের কাছে আমরা তিনজন রোগীকে হাজির করি। তিনি রোগীদের 'দুয়া' দেন। তা সত্ত্বেও রোগীদের অবস্থা গত দু'মাসে ভালো হয়নি। এক দম্পতিকে হাজির করেছিলাম। মহিলাটির হাতে ছিল একটি কাঁচা ডিম। হুজুর দুয়ায় ডিম সিদ্ধ না করে কাঁচা ডিমটি একটি সিদ্ধ ডিমের সঙ্গে পাল্টে দিয়েছিলেন। এই সিদ্ধান্তে আসার কারণ-কাঁচা ডিমে ডট্ পেন দিয়ে যে চিহ্ন করে দেওয়া ছিল, সিদ্ধ ডিমে তা ছিল না।
১৭ ফেব্রুয়ারি তারিখেই আমাদের সমিতির তরফ থেকে হুজুরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। চিঠিতে হুজুরকে প্রকাশ্যে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ রাখতে আহ্বান জানান হয়েছিল। হুজুর তাঁর দাবিমত আমাদের সমিতির পক্ষ থেকে হাজির করা তিন রোগীকে রোগমুক্ত করতে না পারলে আমরা অবশ্যই ধরে নেব তাঁর দাবিগুলো চূড়ান্ত মিথ্যা এবং তিনি একজন প্রতারক মাত্র। আমরা গভীরভাবে আশা রাখি এবং সুনিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি-আপনারা একজন প্রতারককে আমাদের দেশে আসার পাসপোর্ট দিয়ে আমাদের দেশে তাঁর প্রতারণা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সক্রিয় সহযোগিতা করবেন না। আমাদের হাজির করা তিন রোগীকে ও দম্পতির বিষয়ে আপনাকে অবগত করতে ৭ এপ্রিল ১৯৯১ তারিখের আজকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এই সম্বন্ধীয় একটি লেখার জেরক্স কপি ও ১৮.৪.৯১ 'বর্তমান' পত্রিকায় প্রকাশিত হুজুর সাইদাবাদীর বিজ্ঞাপনের একটি জেরক্স কপি পাঠালাম। হুজুরের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁর সম্বন্ধে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদন পড়ে জেনেছি, তিনি প্রতি দু'মাস অন্তর ভারতে জনসেবার নাম করে জনগণকে স্রেফ প্রতারিত করতে আসছেন। আমরা আশা রাখি, আপনাদের দেশ এমন একজনকে আমাদের দেশে আসার অনুমতি দেবেন না, যিনি আমাদের দেশের জনগণের বিশ্বাস ও সরলতার সুযোগ নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে তাঁদের স্রেফ প্রতারিত করে যাবেন। আবারও এই আশা রেখে শেষ করছি, আপনি বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধাসহ
প্রবীর ঘোষ
সাধারণ সম্পাদক
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
যাঁদের চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হচ্ছে:
এক: স্বরাষ্ট্র সচিব
পশ্চিমবঙ্গ সরকার
মহাকরণ
কলকাতা
দুই: পুলিশ কমিশনার
লালবাজার
কলকাতা
----
হুজুর সাইদাবাদীকে যে চিঠি সমিতির প্যাডে দেওয়া হয়েছিল, তা হলো-
হুজুর সাইদাবাদী,
হীরা হোটেল,
কলকাতা।
ইতিপূর্বে আপনি বাংলাদেশ থেকে কলকাতা এসেছিলেন এবং বিপুল সাড়া জাগিয়েছিলেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আপনার খবর ও বিজ্ঞাপন পড়েছি। আপনি নিঃসন্তান দম্পতিকে ডিম ও কলার কিছু অলৌকিক ক্রিয়াকলাপ করে সন্তান দেন ও অন্যান্য রোগ মুক্ত করেন এবং বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকেন বলে পত্র-পত্রিকা পাঠে মনে হয়েছে।
আমাদের সমিতি অলৌকিক ক্ষমতার বিষয় জানতে অত্যন্ত আগ্রহী। কোনও অলৌকিক ঘটনা বা কোনও ব্যক্তির অলৌকিক ক্ষমতা বিষয়ে শুনলে আমরা যথাসাধ্য সত্যানুসন্ধান চালিয়ে থাকি। আশা রাখি আমাদের এই ধরনের সত্যানুসন্ধানের প্রয়াসকে প্রতিটি সৎ মানুষের মতই আপনিও স্বাগত জানাবেন এবং সেই সঙ্গে আপনার অলৌকিক ক্ষমতার সত্যানুসন্ধানে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। আপনার সামনে আমরা হাজির করতে চাই পাঁচজন রোগী ও দুটি নিঃসন্তান দম্পতি। আপনি আপনার অলৌকিক ক্ষমতায় রোগীদের এক বছরের মধ্যে রোগ মুক্ত করতে পারলে এবং দুটি দম্পতিকে সন্তান দিতে পারলে আপনার অলৌকিক ক্ষমতা স্বীকার করে নেব এবং প্রণামী হিসেবে আপনাকে ভারতীয় অর্থে পঞ্চাশ হাজার টাকা দেবো, সমিতি ভেঙে দেবো। আপনি আমাদের সত্যানুসন্ধানে সহযোগিতা না করলে অবশ্যই ধরে নেব এবং আপনি একজন প্রতারক মাত্র।
নমস্কারান্তে-
প্রবীর ঘোষ
সাধারণ সম্পাদক
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
----
আমাদের এই সমস্ত কাজ-কর্মের ফলশ্রুতি হিসেবে এইটুকু হলো যে, ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট-এর 'চিটিং অ্যান্ড ফ্রড' সেকশনের অফিসার ইনচার্জ আমাকে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে চিঠি দিয়ে জানালেন, হুজুর সাইদাবাদীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আপনারা বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনারের কাছে করেছেন এবং সেই চিঠির যে প্রতিলিপি অন্যদের দিয়েছেন, সেই প্রেক্ষিতে আমি উচ্চতর মহল থেকে তদন্ত করার আদেশ পেয়েছি। এখন এই তদন্তের জন্য আপনার পরীক্ষা ও মতামত জানা এই তদন্তের পক্ষে খুবই জরুরী। আপনাকে ভবানী ভবন, কলকাতা ২৭-এ ১৩.৫.৯১ দুপুর ১২টায় নিম্ন স্বাক্ষরকারীর সঙ্গে দেখা করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
এরপর অফিসার ইনচার্জের সঙ্গে আমাদের সমিতির কয়েকজন গিয়ে দেখা করেছি। বিস্তৃতভাবে সব জানিয়েছি। উনি আমাদের বলেছেন শ্যামলী, মিতালী, ননী, তিমিরবরণ ও জয়াকে তাঁদের কাছে হাজির করতে। শ্যামলী ছাড়া অন্যান্যদের হাজির করেছি। অনুরোধ রেখেছি শ্যামলীর ঠিকানায় গিয়ে তদন্তের প্রয়োজনীয় কাজ করতে। এরপর পুলিশের তরফ থেকে কোনও সাড়া পেলাম না। কিন্তু হুজুর আবার এলেন। বিজ্ঞাপন দিয়েই এলেন। তবে একটু দেরি করে। সেই হীরা হোটেলেই উঠলেন। এ বার সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরালো। আমাদের ছেলেরা তারই মধ্যে প্রচুর পোস্টারে ভরিয়ে দিল হীরা হোটেল ও তার সংলগ্ন স্থান। দেওয়ালে দেওয়ালে সাঁটা হলো আজকাল পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি। পোস্টারে দাবি জানানো হলো হুজুরের গ্রেপ্তারের। হুজুরের ভাড়াটে সেনারা আমাদের দৃঢ়তা দেখে পিছু হটলো। হুজুরের ব্যবসাটা সেবার জমলো না। হুজুর আবার এলেন। তবে আরও বড় একটা গ্যাপ দিয়ে। স্থান পাল্টে গেলেন পার্ক সার্কাসের হীরা ইন্টারন্যাশন্যাল হোটেল। আমাদের ছেলেরা পিছু ছাড়লো না। কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি বিখ্যাত ইংরেজি দৈনিকের এক মহিলা সাংবাদিক পার্ক সার্কাসে হুজুরের ডেরায় যাবেন ঠিক করে আমার সঙ্গে দেখা করলেন, আমার অনেক দুষ্প্রাপ্য ছবি নিলেন তাঁর পত্রিকাটিতে ছাপার জন্য। বললেন, কপি করে ফেরত দেবেন। আমাদের ছেলেরা এখানেও পোস্টারিং করেছে। হোটেল হীরা ইন্টারন্যাশনালে সাংবাদিক গেলেন। হুজুরের সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে হুজুরের চামচাদের সাক্ষাৎকার দিতে দিতে শেষ পর্যন্ত তিনি পালাতে বাধ্য হলেন। পত্রিকা দপ্তরে ফিরে তিনি আমাকে ফোন করে গায়ের ঝাল মেটালেন, ভয়ংকর এক বিপদের মুখে তাঁকে ঠেলে দেওয়ার জন্যে। আমি নাকি বাস্তব ভয়ংকর চিত্রটা ঠিক মত তুলে না ধরায় তাঁর জীবন বিপন্ন পর্যন্ত হতে পারতো। হুজুরের লোক নাকি গাড়ি ফলো করে তাঁর পত্রিকার অফিসটিও দেখে গেছে। এখন তাঁকে নাকি এসকর্ট নিয়ে কিছু দিন চলতে হবে। আর এইসব মুশকিলের কারণ নাকি আমি। শুধু ওই মহিলাই নন, তাঁর সহকর্মী এক সাংবাদিক বন্ধুও ফোন করলেন, হুজুরের ভয়ংকর চরিত্রটা আমি তাঁর সহকর্মীকে নাকি জানাইনি। এটা নাকি আমার পক্ষে গর্হিত অন্যায় হয়েছে। ফল-পত্রিকায় আমাকে নিয়ে লেখার পরিকল্পনা বিসর্জন এবং আমার কোনও নথি এবং ছবি ফেরত না দেওয়া। যাই হোক, এ তো গেলো একটা সাইড স্টোরি। কিন্তু আসল স্টোরি সব সময়ই তার চেয়ে অনেক বেশি রোমাঞ্চকর হয়ই। আমরা আমাদের কাজ করে গেছি। লাগাতার ভাবে ঘটনাটা কলকাতা পুলিশের নজরে এনেছি। অবশ্য কলকাতা পুলিশের নজর আমাদের কাজ-কর্মে এমনিতেই আকর্ষিত হচ্ছিল। কারণ হুজুর সাইদাবাদীর বিরুদ্ধে আমাদের পোস্টার অভিযানের ছবিসহ খবর ইতিমধ্যেই আজকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। যে কোনও সময় একটা বড় রকমের ঘটনা যে ঘটতে পারে তাও পুলিশের অজানা ছিল না। পুলিশ কমিশনার পাল্টেছেন, ডিসি ডিডি পাল্টেছেন। আমরা আমাদের স্ট্যান্ড পাল্টাইনি। প্রত্যেকের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছে 'ড্রাগ ও ম্যাজিক রেমেডিস অ্যাক্ট' ভঙ্গকারী প্রতারক হুজুর সাইদাবাদীকে গ্রেপ্তার করার জন্য। আমরা এও জানিয়েছি-হুজুরের দোয়ায় কলকাতার যে সব দম্পতি সন্তান লাভ করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে, তার সত্যতা জানতে আমরা অনুসন্ধান চালিয়েছি। ওইসব দম্পতির ঠিকানার কোনও হদিস পাইনি।
লাগাতারভাবে লেগে থাকার ফল পেলাম ২১ ফেব্রুয়ারি '৯৭। ঐতিহাসিক ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু বুজরুকি, প্রতারণা ও ড্রাগ অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিস অ্যাক্ট ভঙ্গ করার দায়ে গ্রেপ্তার হলেন। গ্রেপ্তার হলেন হীরা হোটেল থেকেই। এ-বারও আসার আগে কলকাতা থেকে প্রকাশিত দুটি বাংলা দৈনিকে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হয়েছিল, হুজুরের দোয়ায় নিঃসন্তান দুই দম্পতির সন্তান লাভের গপ্পো। এক দম্পতির কলকাতার ঠিকানা ছিল।গোয়েন্দা দপ্তরের অফিসাররা বিজ্ঞাপন দেওয়া দম্পতির ঠিকানার কোনও হদিস পাননি। ২২ ফেব্রুয়ারি শনিবার ছিল হুজুরকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করার দিন। সকালে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা দপ্তরের ডেপুটি কমিশনার নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলো। জানালাম আমরাও হুজুরের বিরুদ্ধে পার্টি হতে চাই। ওকে শাস্তি দেওয়ার মতো অনেক তথ্য আমাদের কাছে আছে। ২২ ফেব্রুয়ারি বিচারক রায় দিলেন ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ লকআপে রাখার।
পুলিশ সূত্রে খবর পেলাম ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশ বিষয়টি জানিয়েছেন বাংলাদেশ মিশন, বিদেশ মন্ত্রক ও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে। একজন আই পি এস এও জানালেন, আমাদের হাতে যতই তথ্য-প্রমাণ থাক সাইদাবাদীকে আমাদের ছেড়ে দিতেই হবে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়করা ফোন করবেন, আমাদের দেশের রাষ্ট্রনায়করা ছেড়ে দেবেন। ধর্মীয় নেতা, সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় নেতা, বিদেশি রাষ্ট্রনায়কদের কাছে ধর্মীয় নেতাকে শাস্তি দেওয়ার সাধ্য গদি বাঁচাতে সদা তৎপর শাসক গোষ্ঠীর নেই। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও দেশের গণতন্ত্র শক্তিমানেরা নিজের পকেটে রেখে ঘোরেন। তাই হুজুর হয়তো অবাঞ্ছিত বিদেশি হিসেবে এদেশ থেকে বহিষ্কৃত হয়ে শাস্তি এড়াবেন। তবু পাল্টা স্রোতে চলে যা করা গেলো তাই বা কম কী? মহাবৃক্ষের বীজ তো পোঁতা গেলো। সেরুলোর মতো হুজুরকেও বড়সড় একটা আঘাত হেনে বোঝানো গেলো এ-দেশে বুজরুকি চালানো সম্ভব নয়। বন্ধ করা গেলো এ-দেশে ভবিষ্যতে পা রাখার সম্ভাবনা।
Comments