হিন্দু ধর্মে নারী ও শূদ্র

 

মনুসংহিতা [৯:৩]

নারীকে-

"পিতা রক্ষা করবে কুমারীকালে, স্বামী রক্ষা করবে যৌবনে।

বার্ধক্যে রক্ষা করবে পুত্ররা, স্ত্রী স্বাধীনতার যোগা নয়।"


মনুসংহিতা [২:৬৭]

"বিয়েই নারীর বৈদিক উপনয়ন।

পতিসেবাই গুরুগৃহবাস, গৃহকর্মই হোমস্বরূপ অগ্নিপরিচর্যা।"


মনুসংহিতা [৫:১৫৪]

"পতি সদাচারহীন, পরস্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কযুক্ত বা গুণহীন হলেও সতী স্ত্রী সেই পতিকে দেবতার মতই পুজো করবে।"


মনুসংহিতা [৫:১৫৫]

"স্ত্রী'র স্বামী ছাড়া পৃথক যজ্ঞ নেই, পতির অনুমতি ছাড়া ব্রত বা উপবাস নেই। নারী স্বর্গে যেতে পারে কেবলমাত্র স্বামী-সেবার সাহায্যেই।"


তৈত্তিরীয় সংহিতা [৬/৬/৮৫]

"যজমান, দীক্ষার দিনে গণিকা সাহচর্য বর্জন করবেন, তার পরদিন পরস্ত্রীর সাহচর্য এবং তৃতীয় দিন নিজ স্ত্রীর সাহচর্য বর্জন করবেন।"


মনুসংহিতা [৯:৪]

"নিঃসন্তান স্ত্রীকে বিয়ের দশ বছর পর ত্যাগ করা যায়, যে স্ত্রী শুধুমাত্র কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় তাকে ত্যাগ করা যায় বারো বছর পরে, মৃত সন্তানের জন্মদানকারী স্ত্রীকে ত্যাগ করা যায় পনের বছর পরে।"


মনু [৯:১৪] ঝগড়ুটে স্ত্রীকে তক্ষুনি ত্যাগ করার অধিকার দিয়েছেন। কিন্তু ঝগড়ুটে শুধু নয়, অত্যাচারী স্বামীকেও দেবতা জ্ঞানে পুজো করতে বলেছেন।


মহাভারত অনুশাসনপর্ব: ৩৮

"তুলাদণ্ডের একদিকে যম, বায়ু মৃত্যু, পাতাল, বাড়বানল, ক্ষুরধার বিষ, সর্প ও বহ্নিকে রেখে অপরদিকে নারীকে স্থাপন করলে ভয়ানকত্বে উভয়ে সমান সমান হবে।"


দেবীভাগবত [৯:১]

"নারীরা জোঁকের মত সতত পুরুষের রক্তপান করে থাকে। মূর্খ পুরুষ তা বুঝতে পারে না, কেননা তারা নারীর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। পুরুষ যাকে পত্নী মনে করে, সেই পত্নী সুখসম্ভোগ দিয়ে বীর্য এবং কুটিল প্রেমালাপে ধন ও মন সবই হরণ করে।"


মনুসংহিতা [৯:১৫]

"পুরুষ দেখামাত্রই তারা মেতে ওঠে বলে তারা চঞ্চলচিত্ত ও স্নেহশূন্য; তাই সুরক্ষিত রাখা হলেও তারা স্বামীর বিরুদ্ধে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়।"


বৃহদারণ্যক উপনিষদ [১:৯:২:১৪]

"লাঠি দিয়ে মেরে নারীকে দুর্বল করা উচিত, যাতে নিজের দেহ বা সম্পত্তির উপরে আর কোনও অধিকার না থাকে।"


মনুসংহিতা [৯:২২]

"নদী যেমন সমুদ্রের সঙ্গে মিলনে নোনা হয়, নারীও তেমন; যেমন পুরুষের সঙ্গে বিবাহ হয়, তেমন পুরুষের গুণযুক্ত হয়।"


মহাভারতে ঋষি কুণির কন্যা সারাজীবন ধর্মপথে থেকে মৃত্যুশয্যায় জানতে পারলেন, চূড়ান্ত ধর্মপালনও একজন নারীর স্বর্গলাভের পক্ষে যথেষ্ট নয়। স্বর্গ প্রাপ্তির জন্য তাকে বিয়ে করতেই হবে। পুরুষদের কিন্তু স্বগে যেতে 'চিরকুমার' থাকা কোনও বাধা নয়।


মনুসংহিতা [৫:১৫৭]

"পতির মৃত্যুর পর পত্নী ফলমূলের স্বল্পাহার দ্বারা দেহ ক্ষয় করবে, তবু পর পুরুষের নাম করবে না।"


মনুসংহিতা [৫ঃ১৬৮] 

"পত্নীর মৃত্যু হলে দাহ ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে পুরুষ আবার বিয়ে করবে।"

..................................................................................

মনুসংহিতা [১: ৯৯]


"ক্ষুন্ন না হয়ে, প্রসন্নমনে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের সেবা করা শূদ্রগণের প্রধান কর্তব্য, এই নির্দেশ ব্রহ্মা দিলেন।"


'শূদ্র' নামের এই দাসদের পারিশ্রমিক বা বেতন দিতে হতো না। মনু বলেছেন - দাসত্বের কাজ নির্বাহ করার জন্য বিধাতা শূদ্রকে সৃষ্টি করেছেন[৮ঃ৪১৩]। কিন্তু দাসদের বাঁচিয়ে তো রাখতে হবে, বেগার খাটাবার জন্যই বাঁচিয়ে রাখতে হবে। শিল্প ও কৃষির দ্বারা নিজেদের ভোগকে চরিতার্থ করার জন্য এসব শিল্প দাস ও কৃষিদাসদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সেজন্য মনু বিধান দিয়েছেন - শূদ্র ভৃত্যকে উচ্ছিষ্ট অন্ন, জীর্ণ বসন, জীর্ণ শয্যা বা ঘর দান করিবে [১০:১২৫]।


প্রায় বিনাখরচে শ্রমশক্তি বিনিয়োগের প্রয়োজনেই উচ্চবিত্তরা সৃষ্টি করেছিল 'শূদ্র' নামের বর্ণটি। আর সেই সৃষ্টির কাজে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিল 'ঈশ্বর-নির্ভর ধর্ম'। ধর্মের নামে, ঈশ্বরের নির্দেশের নামে সেদিন শূদ্রদের 'মানুষ' বলে বিবেচিত হওয়ার সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল। 


শূদ্রদের ধন উপার্জনের অধিকার ছিল, কিন্তু সেই ধন ভোগের কোনও অধিকার ছিল না। সব উপার্জিত ধনই দাস-মালিক গ্রহণ করবে, এই ছিল মনুর বিধান [৮:৪১৬ এবং ৪১৭]।


শূদ্রদের আর তিন বর্ণ থেকে আলাদা করে যাতে চেনা যায় এবং শূদ্ররা যেন প্রতিটি মুহূর্তে মনে রাখে তিন বর্ণের মানুষদের ক্রীতদাস হয়ে সেবা করার জন্যই তাদের জন্ম, তিন বর্ণের মানুষদের থেকে তারা ভিন্নতর জীব, মনুষ্যেতর জীব; সেজন্য শূদ্রদের প্রতি মাসে কেশ মুণ্ডনের নির্দেশ দিয়েছেন মনু। [৫:১৪০]


কথিত ঈশ্বরের নির্দেশে শূদ্রের না ছিল নাগরিক অধিকার, না ছিল ধর্মীয় অধিকার, না অর্থনৈতিক অধিকার।



Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]

দেশ যখন ইসলামাইজেশন এর পথে [পর্ব-এক]