বাম রঙ্গ [পর্ব-নয়]

 

"....তখন দিল্লির মসনদে আসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। জ্যোতিষকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যভুক্ত করতে চেয়েছিল। বর্তমানে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারও তাই চায়। কেন্দ্রীয় মানব উন্নয়ন মন্ত্রী অর্জুন সিং সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। সরকারের শরিক সি. পি. আই (এম) তার অবস্থান অস্পষ্ট করে দিয়েছে। ডঃ যোশীর বিরুদ্ধে সোচ্চার সি. পি. আই (এম) অর্জুন সিং-এর বিরুদ্ধে মৌনী।...."

- 'জ্যোতিষীর কফিনে শেষ পেরেক', প্রবীর ঘোষ

......................................................................................

....আমার এক সহপাঠী শ্যামল চক্রবর্তী। ও পরে মন্ত্রী হয়। শ্যামল খুব ভালো বক্তৃতা দিতো। ওর এক ক্লাস ওপরে পড়তেন সুভাষ চক্রবর্তী। তিনিও মন্ত্রী হন পরে। ওরা দু'জনেই সিপিআই ও পরে সিপিএম করতেন। তখন দু'জনেই সিপিআই-এর ছাত্র সংগঠন করতেন আমাদের কলেজে। আর একজন ছিলেন মিহির সেনগুপ্ত। আরএসপি করতেন এবং সুবক্তা। শ্যামল চক্রবর্তী টিপিক্যাল কমিউনিস্ট পোশাক পরে আসতো। পাজামা-পাঞ্জাবি ও কাঁধে ঝোলা ব্যাগ। চোখে-মুখে তীক্ষ্ণতা। দাপুটে বক্তা। সুভাষ চক্রবর্তী ও মিহির সেনগুপ্ত দু'জনেই একই ক্লাসে পড়তেন। চেহারায় রোগা। সুভাষদাও ভালো বক্তৃতা দিতে পারতেন। শ্যামল ও সুভাষদা দু'জনেই দুটো উদ্বাস্তু কলোনিতে থাকতেন। ওঁরা স্বপ্ন দেখতেন ও দেখাতেন কংগ্রেসকে তাড়ালেই বিপ্লবটা সম্পূর্ণ হবে। গরিবরা ধনী হবে। কিন্তু গরিবরা ধনী হোক বা না হোক; শ্যামল ও সুভাষদা ধনী হয়েছিলেন মন্ত্রী হয়ে।....

- 'যৌবনের বজ্রনির্ঘোষ', প্রবীর ঘোষ

.......................................................................................

....বিতর্কিত বাবরি মসজিদ ভাঙার পর পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার হোর্ডিং-এ হোর্ডিং-এ বিজ্ঞাপন দিয়ে রাজ্যবাসীকে জানাতে সচেষ্ট হলো - 'ধর্মনিরপেক্ষতা' শব্দের অর্থ 'সর্বধর্মের সমন্বয়'। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি এই বিকৃত ও অবনমিত ব্যাখ্যার অগ্রগমন রোধ করে 'ধর্মনিরপেক্ষতা'র সংজ্ঞার সঙ্গে জনসাধারণের পরিচয় ঘটিয়ে দিতে ব্যাপক প্রচারে নামলো। প্রচারের গভীরতায় বুদ্ধিজীবী থেকে সাধারণ মানুষ এতটাই প্রভাবিত ও সমাবেশিত হলেন যে, রাজ্য সরকার বাধ্য হয়ে প্রতিটি হোর্ডিং-এ নতুন করে তিনটি শব্দ যুক্ত করলেন - 'আমরা মনে করি'। কারও উলটোপালটা মনে করার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। রাজ্য সরকারেরও আছে। কিন্তু তাদের এই নতুন করে তিনটি শব্দের সংযুক্তি এ-কথাই প্রমাণ করলো, এক: 'ধর্মনিরপেক্ষতা'র সাংবিধানিক অর্থ 'সবধর্মের সমন্বয়' নয়। দুই 'সেকুলারিজম'-এর আন্তর্জাতিক ব্যাখ্যা বিকৃত করে, শব্দার্থে অবনমন ঘটিয়ে জনগণের সামনে হাজির করতে তারা সমান উৎসাহী। ধর্মের সঙ্গে নিজ দলকে সংযুক্ত রাখার স্বার্থেই এই উৎসাহ।....

- 'দুই বাংলার যুক্তিবাদীদের চোখে ধর্ম', প্রবীর ঘোষ

....মার্কসবাদী মন্ত্রীদের স্নেহধন্য পুজোয় মুম্বাই থেকে উড়ে আসছেন স্টার অভিনেতা-অভিনেত্রী। পুজো উদ্বোধনে মার্কসবাদী মন্ত্রীরা হাজির থাকছেন ক্যাডার ও ভোটারদের মন পেতে। সি পি এম-এর দৈনিক মুখপত্র 'গণশক্তি'-তে 'মা নির্মলাদেবী'র ঢাউস বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয় দিনের পর দিন। 'মা' নাকি 'সহজ যোগ' এর মাধ্যমে ঈশ্বর দর্শনের ব্যবস্থা করে দেন।....

[ঐ]

....বিজেপি'র দীর্ঘস্থায়ী কর্মসূচীর পাল্টা কোনও কর্মসূচী বাম বা অ-বিজেপি দলগুলো নেয়নি। বরং আমরা বারবারই দেখেছি বিজেপিকে রুখতে তারা পাল্টা মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেওয়ার খেলায় মেতেছে। ভি. পি. সিং ও তার দল মুসলিম ভোটারদের মন পেতে দলের ঝাণ্ডার রঙ সবুজ করে ছিলেন। ইমাম আবদুল্লা বুখারির মত ধর্মীয় নেতার সমর্থন আদায় করে সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন মুসলিমদের আবেগকে উস্কে দিলেন ভি. পি। যে কোনও মূল্যে বাবরি মসজিদ রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করে ধর্মের তাস-ই খেললেন ভি. পি।....

[ঐ]

....আজ বামফ্রন্ট ও জনতা দল গলার শিরা ফুলিয়ে চেঁচাচ্ছে বিজেপি 'নন-সেকুলার' দল। বামফ্রন্ট ও জনতা দল যখন বিজেপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং-এর নেতৃত্বে কেন্দ্রে ক্ষমতা দখল করেছিল, তখন কি বিজেপির চরিত্র অন্য রকম ছিল?' 'সেকুলার' ছিল? নাকি গদিতে বসার তাড়নায় তখন বিজেপির মধ্যে 'নন-সেকুলার' গন্ধ খোঁজার তাগিদ তামাদি ছিল? এ কথা বলার উদ্দেশ্য বিজেপিকে সমর্থন বা অসমর্থন নয়। উদ্দেশ্য, আমাদের দেশের সংসদীয় রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকৃত স্বরূপ চেনানো, জনস্বার্থেই চেনানো।....

[ঐ]

...................................................................................

বাম নাকি ভাম?

নির্বাচনপন্থী বামেদের তুলোধুনো করেছেন মুরাকামি তাঁর এই বইয়ে। জাপানেও সারা বিশ্বের মতো নির্বাচনপন্থীরা একই আচরণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস চলাকালীন জোর করে শিক্ষার্থীদের মিছিলে নিয়ে যায় এরা। অথচ নিজেরা পাশ করার পর 'বিপ্লব' ভুলে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে চাকরি নিয়ে কর্পোরেট সেবাদাসে পরিণত হয়। এরা কথিত 'বিপ্লবী অফিসে' নারী কর্মীদের হুকুম দেয় বাড়ি থেকে খাবার তৈরি করে আনতে। তাদের বামগিরির অফিসে নিয়মিত যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটে। এছাড়াও বইটিতে শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী বৈষম্য দ্বারা কিভাবে জাপানিরা ভুক্তভোগী হয় সেটাও সামনে আনা হয়েছে। তাছাড়া মার্কিন সংস্কৃতির ভয়াবহ আগ্রাসন কিভাবে দেশটির যুব সমাজকে প্রচন্ড ভোগবাদী বানিয়েছে সেই দিকটা উঠে এসেছে তাঁর লেখায়।

'বাম' দাদাকে চেনা যায়?

প্রথমে পশ্চিমা দালালদের ক্ষমতায় আনতে সহযোগিতা, পরে তুলনামূলকভাবে (১৯-২০) কিছুটা মধ্যপন্থীদের মাঝে আশ্রয় খুঁজে নিজেদের জাস্টিফাই করার চেষ্টা। আরব বসন্তের সময়ও তাই ঘটেছিল। এই হচ্ছে দেশে দেশে নির্বাচনপন্থী বামগিরির একই প্রবণতা। প্রাচীন গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডাইডস একটি বিখ্যাত মতবাদের প্রবক্তা যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে 'থুসিডাইডস ট্র্যাপ' নামে পরিচিত। এই মতবাদ অনুসারে আগে থেকে স্বীকৃতি কোনো মোড়ল কর্তৃক উঠতি কোনো দেশকে দমানোর চেষ্টার মাধ্যমে দ্বন্দ্ব গড়ে উঠে। বিভিন্ন দেশে পশ্চিমারা এটাই প্রয়োগ করেছে যুগে যুগে।

পুঁজিবাদী চীনকে বহু বাম এখনো সমাজতান্ত্রিক মনে করে!

পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনপন্থী বামেরা ক্ষমতায় থাকার সময় বিভিন্ন ক্যাটাগরির ছোট-বড়ো হেলথ সেন্টারগুলোতে তিন ধরনের কথিত চিকিৎসক রাখার আইন করেছিল। এমবিবিএস একজন থাকতো, 'আয়ুর্বেদিক ডাক্তার' একজন থাকতো আর সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির 'হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার' একজন থাকতো।

"....খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের দেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন মিশনারি প্রতিষ্ঠানে দান হিসেবে আসছে গুঁড়ো দুধ, ভোজ্য তেল, গম ইত্যাদি নানা ভোজ্যসামগ্রী। এইসব সামগ্রী খোলা বাজারে পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দেয় মিশনারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বিনিময়ে পায় ভারতীয় টাকা। বাঁশের খুঁটির ওপর টিনের চাল দিয়ে এরা শুরু করে। দু-চার বছর ঘুরতে না ঘুরতেই বিশ পঞ্চাশ বিঘা জমি নিয়ে গড়ে তোলে ফার্ম-হাউস, স্কুল, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, চার্চ অফিস ঘর ইত্যাদি।....

১৯৮৪ সালে ভুপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানায় গ্যাস দুর্ঘটনা ঘটে গেলো। ভারতের সর্বকালের ভয়ংকরতম দুর্ঘটনা। মারা গেলেন ১৬ হাজারের বেশি মানুষ। শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও সারাজীবনের মতো পঙ্গু হয়ে গেলেন ৫ লক্ষের বেশি মানুষ। এই বিপর্যয়ে মানবতার পূজারী চার্চ ও মিশনারিজরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে, ইউনিয়ন কার্বাইডের বিরুদ্ধে এসে দাঁড়াননি। তাঁদের এই নীরবতাই প্রমাণ করে দিলো, খ্রিস্টধর্মীয় মালিকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার মতো হাঁটুর জোর নেই। পরিকল্পনার রূপকারদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।....

ভ্যাটিকানের ইচ্ছেয় প্রায় দু-হাজার সাল পর্যন্ত সূর্য চক্কর কেটেছে পৃথিবীকে। ভ্যাটিকানের সুতোর টানে নাচে অনেক নট-নটী। ভ্যাটিকানরূপী খ্রিস্টধর্মকে নিজেদের স্বার্থে বাঁচিয়ে রেখেছে পশ্চিমী ধনকুবের গোষ্ঠী। পৃথিবী জুড়ে শোষণ প্রক্রিয়াকে মসৃণ রাখতেই খ্রিস্ট ভ্রাতৃত্ববোধের প্রয়োজনে ভ্যাটিকানের রমরমা বেড়েই চলেছে। তবে কতদিন চলবে, কবে ভাঙবে, সময় বলে দেবে। পশ্চিমী ধনকুবেররা শুধু চার্চ, মিশনারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের উপর ভরসা করে নেই। তারা বিপুল অর্থের জাল ছড়িয়ে 'বন্ধু' গড়ে তোলে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, প্রচার মাধ্যমের নামীদামি সাংবাদিক, রাজনীতিকদের সঙ্গে প্রথমে সম্পর্ক স্থাপন এবং পরবর্তীতে 'দিবে ও নিবে' মার্কা একটা পেশাদারী সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। তারই ফলে যখন কোক-পেপসির বিরুদ্ধে জেহাদের দাউদাউ আগুন জ্বলে উঠেছিল ভারতে, তখন সে আগুনে জল ঢালার কাজে ওরা নামাতে পেরেছিল 'বন্ধু' সাংবাদিক ও রাজনীতিকদের। এই বন্ধুদেরই কেউ কেউ 'সাপ হয়ে কাটে, ওঝা হয়ে ঝাড়ে'।...

মিশনারিজ অফ চ্যারিটি কারও কাছ থেকেই কোনও চাঁদা গ্রহণ করে না। দান গ্রহণ করে মাত্র। এই দাতাদের তালিকায় কুখ্যাত একনায়কতন্ত্রী অনেক শাসকই আছে। আছে আন্তর্জাতিক কুখ্যাতির অধিকারী অনেক মাফিয়া ও প্রতারক। মাদার এইসব একনায়কদের দরাজ হাতে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত কিটিং টেরিজাকে দান করায় টেরিজা কিটিং-এর পক্ষে মার্কিন বিচারব্যবস্থার কাছে আবেদন রেখেছিলেন। মিশনারিজ অফ চ্যারিটির বিরুদ্ধে কেউ কেউ এমন অভিযোগ করেন, ওরা গরিবি হটাতে চায় না। এই যে বিপুল অর্থ ওরা সাহায্য হিসেবে পাচ্ছে, তা দিয়ে গোটা দেশে লক্ষ লক্ষ কুটির শিল্প গড়ে তুলতে পারতো, পারতো কোটি কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র থেকে মুক্তি দিতে। কিন্তু তা ওরা করে না।....

মিশনারিজ অফ চ্যারিটির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অনেক আছে যে, তাদের কেন্দ্রগুলোতে ডিসপেনসারি আছে ঠিকই, কিন্তু ডাক্তার নেই। নান বা সন্ন্যাসীরাই রোগীর কাছ থেকে শুনে বড়ি-টড়ি দিয়ে দেন। সর্বাধুনিক চিকিৎসার সুযোগ দেবার মতো কোনও হাসপাতাল-ই মাদার তৈরি করার চেষ্টা করেননি, প্রতুল অর্থ থাকার পরও। মাদার নিজের চিকিৎসা করাতে ভর্তি হয়েছেন অত্যন্ত নামী-দামি বেসরকারি হাসপাতালে। নিজের গড়ে তোলা হাসপাতালকে চিকিৎসার দায়িত্ব দেননি। জানতেন, সামান্য ভরসা করার মতো পরিকাঠামো তাঁর হাসপাতালগুলোতে নেই।....

এইসব দুর্মুখেরা বোঝে না যে-দরিদ্র নারায়ণের সেবা করতে দরিদ্র মানুষের জোগান জরুরি। তার-ই জন্যে জরুরি দারিদ্রকে টিকিয়ে রাখা। গরিব মানুষগুলো গরিবি থেকে মুক্তি পেলে, বাঁচার শর্তে খ্রিস্টান হবে কে? ভ্যাটিকান কোনও দেশের গরিবি হটাবার ঠিকে নেয়নি। ঠিকে নিয়েছে খ্রিস্টধর্ম প্রসারের।...."

- 'যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা', প্রবীর ঘোষ

পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলাগুলোতে উগ্র মুসলিমরা মসজিদ, মাদ্রাসা দিয়ে ভর্তি করিয়ে ফেলেছে। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দল ভারী করতে সমতল থেকে এখনো স্রোতের মতো মূল ধারার জনগোষ্ঠীকে আনা হয়, যাদের অধিকাংশের পুলিশের খাতায় ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে।

অন্যদিকে উগ্র হিন্দুরা টার্গেট করেছে পশ্চিমা বিশ্বের দরিদ্রদের; যাদের থাকার জন্য ঘর নেই, পুঁজিবাদীদের দেশগুলোতে যাদের সামর্থ নেই হেলথ ইনস্যুরেন্স তৈরির। উগ্র হিন্দুদের সংগঠনগুলো এদের বিনামূল্যে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করে হিন্দু ধর্ম গ্রহণের বিনিময়ে। এদের কাছে খেতে হলে গীতা পড়া বাধ্যতামূলক। আমেরিকার অনেকগুলো পাবলিক প্লেসে সাইনবোর্ডে লেখা থাকে - হরে কৃষ্ণ পার্টি নিষিদ্ধ। ভারতের দরিদ্র আদিবাসীদের সাথেও একই কাজ করে এরা।

বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যমান কথিত গেরিলা দলগুলো একদিকে নিজেদের 'বামপন্থী' দাবি করে, আরেকদিকে রাজতন্ত্র কায়েম করতে প্রস্তুত। তাদের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও পাহাড়ের ভয়াবহ পরিসংখ্যান উঠে এসেছে এই ফটোতে। এরা কেবল চাঁদা পেলেই খুশি।


এক নির্বাচনপন্থী বাম ৫-৬ মাস আগে ঘোষণা দিয়ে জামাতে যোগ দিয়েছিল। অথচ তার সংগঠন ঢাকায় বসে বামগিরি করতে এতই ব্যস্ত ছিল যে, মাত্র কিছুদিন আগে তাকে বহিষ্কার করে মহা বিপ্লব কায়েম করে ফেলেছে দেশে। মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম homo sapiens, ল্যাটিন ভাষার শব্দযুগলের বাংলা অনুবাদ 'জ্ঞানী মানুষ'। বামদের সাধারণত মানুষ এই দৃষ্টিতেই দেখে। কিন্তু সলিমুল্লাহ, ফরহাদ মজহার এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা 'ভাম' এ রূপান্তরিত হয়েছে এদেশে। 


রম্যাঁ রলাঁ ১৯৩৩ সালে তার এক বন্ধুকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন-

"বুদ্ধিজীবীরা হলো সরকারের চেনে বাঁধা কুকুর, যারা আসলে ক্ষমতার দাস।"

'মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি বৃদ্ধির রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত' শিরোনামের এক লেখায় এই জ্ঞানপাপী আমাদের জ্ঞান বিতরণ করলেন যে, আমরা যেন বর্তমানের জামাত-শিবিরকে স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতাকারী হিসেবে বিবেচনা করার ভুল না করি! বামগিরির মতো সুবিধাবাদের সাথে একই লেখায় তিনি নকশাল আন্দোলনের বিপ্লবীদের তুলনা করে বললেন-

"বামপন্থী ও বিপ্লবী নকশালবাড়ি আন্দোলনে জোতদার-মহাজন খতম থেকে শুরু করে এরশাদ হটাও আন্দোলনের পরিণতির মধ্যে এ কারণেই এদিক দিয়ে বিশেষ কোন পার্থক্য নেই। অনেক ত্যাগ এবং রক্তদান সত্ত্বেও এ কারণে শত্রুর শারীরিক পরিবর্তন হলেও সমাজকে শ্রমজীবী জনগণের শত্রুমুক্ত করা সম্ভব হয় না।"

............................................................................................

নিচের কথাগুলো লিখেছেন: Prodip Mardi

কমরেড বদরুদ্দীন উমর বহুদিন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এবং নিজেকে কমিউনিস্ট হিসেবেই দাবি করেন। সততা ও নিষ্ঠার জায়গায় তিনি অবশ্যই ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। উনার যে অভিজ্ঞতা, মেধা-মনন সেখান থেকে পরবর্তী প্রজন্মের আরো অনেক কিছু প্রাপ্য থাকে, কিন্তু সর্বশেষ প্রথম আলো পত্রিকায় যে সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয়েছে তা এখানকার কমিউনিস্ট আন্দোলনের কর্মীদের জন্য কোন বার্তা বহন করে না বরং উল্টো অনাগ্রহী করে তোলে, পিছিয়ে দেয় এবং কিছু ইতিহাস লুপ্তও করে। এ ভূখন্ডের কমিউনিস্ট আন্দোলন একনিষ্ঠ কর্মী ও ইতিহাসবেত্তা হিসেবে কমরেড বদরুদ্দীন উমর মহীরুহ কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু তার সাক্ষাৎকারে উঠে আসা অনেক বিষয় পরিচিত মুখটাকে অপরিচিত করে তুলেছে। 

সাক্ষাৎকারের একটি অংশে সমাজে তার সম্পাদিত সংস্কৃতি পত্রিকার প্রভাব নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে তাঁর বক্তব্য ছিলো- 

"আমার লেখালেখি নিয়ে যা আলোচনা ভারতেই হয়েছে। আমি একটি কথা বলি বাঙ্গালী মুসলমানের মননশীলতা নেই।"

তার ভাষ্য শুনে মনে হয়েছে বাংলাদেশে উমর স্যারের লেখালেখি নিয়ে পর্যাপ্ত আলোচনা হলে তিনি বাঙ্গালী মুসলমানকে মননশীল হিসেবে সার্টিফাই করতেন। প্রসঙ্গ হলো একজন কমিউনিস্ট রাজনীতির বর্ষীয়ান নেতার এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করাটা কি আদৌও কাম্য কিছু? তাছাড়া তার সমস্ত সাক্ষাৎকার জুড়ে এই বক্তব্যের বিরোধী কারণকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যেমন ভাষা আন্দোলনের পর নতুন দ্বন্দ্বে কমিউনিস্টদের ভূমিকা নিয়ে তার উত্তর ছিলো-

"কমিউনিস্টরা শুরু থেকে সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী ছিল। কিন্তু সেসময় এখানে কমিউনিস্ট নেতৃত্বের বেশিরভাগ হিন্দু থাকলেন। মুসলমান নেতৃত্ব খুবই কম ছিল। ফলে এ নেতৃত্ব মুসলমানদের মধ্যে সেভাবে যাওয়া, তাদের সংগঠিত করার কাজ- সেগুলো যথাযথভাবে করতে পারলেন না।"

বক্তব্য অনুযায়ী কমিউনিস্ট নেতৃত্বের হিন্দু পরিচয় রাজনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ বাধা ছিল, অথচ তিনি শুরু করছেন কমিউনিস্টদের অসাম্প্রদায়িক বলে। রাজনৈতিক পরিচয়ের এরূপ বিভাজন তার নিজের আবিষ্কৃত পন্থা বলেই মনে হয় যার মূল আসলে সাম্প্রদায়িক উপজাত। সাক্ষাৎকারে তাঁর এরূপ ভাবনা সত্যিই অবাক করার মতো।

সাক্ষাৎকারের আরেক জায়গায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় কমিউনিস্ট আন্দোলনের সংকট সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলছেন-

"...চৌ এন লাইয়ের বিবৃতি দেখানো হলো, যেখানে তিনি পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার কথা বলছেন। আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম।.....এরপর তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও শ্রেণী শত্রু খতমের লাইন নিলেন। যেখানে জাতীয় সংগ্রাম চলছে সেখানে তারা শ্রেণী শত্রু খতম করতে গেলেন।"

এই কথাগুলো তিনি বলেছেন পিকিং ধারার কমিউনিস্ট পার্টিগুলো সম্পর্কে (ইপিসিপি-এমএল, ইবিসিবি-এমএল, পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্টদের বিপ্লবী সমন্বয় কমিটি ইত্যাদি)। অথচ স্বাধীন বাংলার ডাক প্রথম এই ধারার কমিউনিস্ট পার্টিগুলোর মধ্য থেকেই এসেছে। আবার এই পার্টিগুলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছে। যেমন ইপিসিপি-এমএল যশোর-খুলনায়, ইবিসিপি-এমএল সিরাজগঞ্জ, পাবনা, চাঁদপুর, নোয়াখালি, সর্বহারা পার্টি বরিশাল, বিপ্লবী সমন্বয় কমিটি নরসিংদিতে। কমরেড উমরের এই বক্তব্যে আরেকটি ভয়ংকর প্রবণতা হলো তিনি আওয়ামী ও রক্ষীবাহিনীর বর্ণিত মিথ্যা ইতিহাসের পক্ষে সমর্থন রেখে পিকিংপন্থীদের মুক্তিযুদ্ধের ভূমিকাকে শ্রেণীশত্রু খতমের মধ্যে বন্দী করেছেন। তিনি ভুলে গেছেন সিরাজ শিকদারের পেয়ারা প্রতিরোধের কথা; আর কমরেড টিপু বিশ্বাস, ভাষা মতিন, আব্দুল মতিন মূনীর, নূর মোহাম্মদ, আমজাদ হোসেন, ওহিদুর রহমান, বিএম কলিমুল্লাহ, মান্নান ভূইয়া, হায়দার আনোয়ার খান জুনো এমনকি ঢাকা শহর কাপানো গেরিলা বাহিনী ক্রাক প্লাটুনের কথা।

মূলত তাঁর পুরো সাক্ষাৎকারে কমিউনিস্ট পার্টির ভূমিকাকে নাই করে দেয়া হয়েছে। অথচ পূর্বেও পৃথিবীর বহুদেশে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে বড় আন্দোলন হয়েছে, কিন্তু অনেক দেশেই ক্ষমতা দখল করা যায়নি। উলটো কমিউনিস্ট পার্টির সভ্যদের গণহত্যারও শিকার হতে হয়েছে। যেমন- এশিয়ার ইরান বা ইন্দোনেশিয়ায়। সুতরাং ক্ষমতায়ন না হলেই যে কমিউনিস্ট পার্টি কিছুই করেনি এটা বলা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং শাসকের চোখে ইতিহাসকে দেখা। বাংলাদেশের আওয়ামী ন্যারেটিভের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধে কমিউনিস্টদের অবস্থান শুধুমাত্র দুই কুকুরের লড়াই তত্ত্বায়ন ও রাজাকার হিসেবে। কিন্তু ৭১'র যুদ্ধের শুরু থেকে পিকিং ধারার কমিউনিস্ট পার্টিগুলো স্বাধীন বাংলার পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং শহীদও হয়েছে। হ্যাঁ এটা স্বীকার করতে অত্যুক্তি নেই সেখানে পার্টিগুলোর রণকৌশলে ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু পার্টিগুলো যে যুদ্ধ করেনি বা কিছুই করেনি এটা মিথ্যাচার।

বদরুদ্দীন উমর সাক্ষাৎকারে আরো বলেছেন কমিউনিস্টদের উচিত ছিল আওয়ামী লীগের সাথে একত্রে যুদ্ধ করা। কিন্তু সিরাজ সিকদার কি সেই একত্রে যুদ্ধ করার জন্য আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি প্রেরণ করেন নাই? তারপর কী হলো? দেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধরত পিকিংপন্থী কমিউনিস্টদের মারার জন্য মুজিব বাহিনী গঠন করে নাই? ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলোতে কি পিকিং পন্থীদের প্রশিক্ষণ দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয় নাই? 

আবার একটি বিষয় উল্লেখ্য যে বিশ্বের কমিউনিস্ট আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো জনগণ। অথচ উনার সাক্ষাৎকারে জনগণের প্রতি অনাস্থার সুরটা দৃশ্যমান। তিনি যে চৌম্বক, লোহা ও কাঠ বৃত্তান্তের কথা বলেছেন সেখানে চৌম্বক কি তিনি নিজে না জনগণ? আর কাঠগুলোই বা কারা?

তাছাড়া "দেশের সবাই তাকে উপেক্ষা করেছে" এ ধরনের চিন্তার ক্ষেত্রে আগে বিবেচ্য বুর্জোয়া মিডিয়া বা বুদ্ধিজীবীরা একজন কমিউনিস্ট ভাবাদর্শনের তাত্ত্বিক ইতিহাসবেত্তাকে ঠিক কতখানি প্রচারে রাখতে পারে? উপরন্তু তার আলোচনায় 'হিন্দু' পরিচয় কেন্দ্রিক দোষারোপের সরলীকরণ প্রবণতাও অত্যন্ত দৃষ্টিকটু লেগেছে।

সর্বোপরি এত কথা বলার কারণ এই যে কমরেড বদরুদ্দীন উমরের মতো একজন বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মীর কাছে থেকে বর্তমান তরুণ প্রজন্ম আরো পরিশীলিত, সুচিন্তিত ও দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রত্যাশা করে যা আগামীর কমিউনিস্ট আন্দোলনের সহায়ক হবে।

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

চাড্ডিগণ [এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]