মহান স্তালিন

 

স্তালিনের বিরুদ্ধে হাজারটা বানানো অভিযোগের অন্যতম হচ্ছে তিনি নাকি বিরুদ্ধ মতের লেখা সহ্য করতেন না!! অথচ শলোকভের লেখা 'ধীরে বহে ডন' এর সমালোচনা করলেও তিনি তা নিষিদ্ধ করেনি।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Mikhail_Sholokhov

মিকুলিনার 'Emulation and Labour Enthusiasm of the Masses' এর বাতিলের প্রস্তাব তিনি হাস্যকর বলে উড়িয়ে দেন। স্তালিনের মত ছিল পুস্তিকাটি বাজার থেকে তুলে দিয়ে লেখক অথবা পাঠককে শাস্তি দেয়ার কোনো যুক্তিই নেই, বইটির আচ্ছারকম সমালোচনা করা যেতে পারে, কিন্তু নিষিদ্ধকরণ কক্ষনো নয়। 

https://www.marxists.org/reference/archive/stalin/works/1929/05/11.htm

বিল বেলোতসারশ্লোভস্কি'কে ১৯২৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি লেখা চিঠিতে স্তালিন বলেছিলেন "সমালোচনা করা এবং অপ্রলেতারীও সাহিত্য নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা খুবই সহজ ব্যাপার। কিন্তু যা সহজ তাকে সর্বোত্তম মনে করা উচিত নয়।"

https://www.marxists.org/reference/archive/stalin/works/1929/02/02.htm

....................................................................................

স্তালিনের অফিসের টাইপরাইটার মেরি এস বুরভ লাল ফৌজের কর্নেল ভ্লাদিস্লাভ শেরস্তুকভকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন বাসিল শিক্ষাদপ্তরে স্তালিনের মেয়ে আসলে তাকে কেক আর চা দিয়ে এক কর্মকর্তা কর্তৃক অভ্যর্থনা করা হলে স্তালিন এই ধরনের তোষামোদে রেগে গিয়েছিলেন। এর পরের দিনই তাকে ক্রেমলিনে ডেকে পাঠিয়ে সতর্ক করা হয় এই ব্যাপারে। তিনি আরো বলেছিলেন ক্রেমলিনের ক্যান্টিনের রাঁধুনি থেকে শুরু করে সাফাই কর্মী, গাড়ি চালকও যখন-তখন স্তালিনের সঙ্গে দেখা করতে পারতেন যেকোনো প্রয়োজনে। মেরি ছাড়াও মেলেনিকোভা নামের আরেক টাইপিস্ট উচ্চশিক্ষার জন্য নাইট কলেজে পড়তেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই। অধিক পরিশ্রমে মেলেনিকোভা অসুস্থ হয়ে পড়লে স্তালিন তা জানতে পেরে উনার ছুটির ব্যবস্থা করেছিলেন। সাক্ষাৎকারে তিনি আরো বলেন মস্কোতে এক পার্টি নেতার বিশাল বাড়ি আবিষ্কৃত হওয়ার পর স্তালিনের নির্দেশে বাড়িটির বাইরে বোর্ড টাঙিয়ে দিয়ে 'প্রাথমিক বিদ্যালয়' লিখে দেয়া হয়। জার্মানরা স্তালিনের ছেলেকে বন্দি করে তাদের ফিল্ড মার্শাল ফ্রেডরিক পউলাসের সাথে বন্দি বিনিময় করতে চেয়েছিল। তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন-

"I will not trade a Marshal for a Lieutenant."

......................................................................

স্তালিন লেনিন সম্পর্কে বলেছিলেন "লেনিন এক পর্বতারোহী ঈগল পাখি, যে অনায়াসে মাটি ছুঁতে পারে আবার সকলকে ছাড়িয়ে আকাশে উঠে যেতে পারে।" স্তালিন লেনিনকে কতটা ভালোবাসতেন ও সম্মান করতেন সেটা বোঝা যায় স্তালিন রচনাবলীর ত্রয়োদশ খন্ডে মার্কিন কর্নেল রবিনস এর সঙ্গে তাঁর কথোপকথনে। তিনি ইয়াঙ্কি কর্নেলকে বলেছিলেন "লেনিনের সঙ্গে আমার কি করে তুলনা হয়?" স্তালিনের সোভিয়েত আর্মেনিয়ার এক সহকর্মী মিকোইয়ান (Anastas Mikoyan) ১৯৪৯ সালের এক ভাষণে স্তালিনকে 'আজকের লেনিন' বলে উল্লেখ করে। এই সুবিধাবাদী স্তালিনের শুদ্ধি অভিযানের সময় সোভিয়েত ক্রিমিনালদের সাহায্য করেছিল এবং স্তালিনের মৃত্যুর পর ক্রুশ্চেভ এর সাথে সমান তালে স্তালিন বিরোধী প্রোপাগান্ডায় অংশ নিয়েছিল। স্তালিন আরও বলতেন যে তিনি 'লেনিনের শিক্ষার বিশ্বস্ত অনুগামী ও অনুলেখক'।

অথচ ১৯৫৬ সালের পার্টি কংগ্রেসে ক্রুশ্চেভ স্তালিনের বিরুদ্ধে ভাষণে বলেছিল স্তালিন নাকি নিজেকে 'আজকের স্তালিন' বলে উল্লেখ করতেন! বিখ্যাত জার্মান লেখক এমিল লুডভিক এর সাথে কথোপকথনের সময় স্তালিন বলেছিলেন "আমি লেনিনের একজন ছাত্র মাত্র এবং আমার জীবনের লক্ষ্য হলো লেনিনের যোগ্য ছাত্র হয়ে যাওয়া।" এই সাক্ষাৎকারটির বিবরণ আছে স্তালিন রচনাবলীর ত্রয়োদশ খন্ডে।

https://en.m.wikipedia.org/wiki/Emil_Ludwig

............................................................................

"প্রয়োগবিহীন তত্ত্ব হলো বন্ধ্যা, আর তত্ত্ববিহীন প্রয়োগ হলো অন্ধ প্রয়োগ।"

- স্তালিন

.............................................................................

১৯২৫ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট পার্টির চতুর্দশ কংগ্রেসে স্তালিন বলেছিলেন- 

"অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর, স্বাধীন এবং দেশীয় বাজারের ওপর ভিত্তি করে আমাদের দেশকে তৈরি করা উচিত। আমাদের অর্থনীতি আমাদেরই নির্মাণ করা উচিত যাতে আমাদের দেশ পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার লেজুড় না হয়; পুঁজিবাদী উন্নয়নের সার্বিক প্রকল্পের মধ্যে এটি ছিল না, তার সহযোগী সংস্থাগুলি আমাদের অর্থনীতিকে উন্নত করেনি, যেমন করেছে বিশ্ব পুঁজিবাদে; এটি ছিল আমাদের দেশের শিল্প ও কৃষি অর্থনীতির জোটবন্ধনের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন অর্থনৈতিক ইউনিট।"

ঐদিন তিনি আরও বলেছিলেন-

"উন্নত দেশগুলির তুলনায় আমরা পঞ্চাশ থেকে একশ বছর পিছিয়ে আছি। আগামী দশ বছরের মধ্যে আমাদের এই দূরত্ব অতিক্রম করতেই হবে। হয় এটা আমাদের করতে হবে, নাহলে ওরা আমাদের গুঁড়িয়ে দেবে।"

এবং স্তালিনের সোভিয়েত তা করে দেখিয়েছিল। স্তালিনের নেতৃত্বে সোভিয়েতে প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার (১৯২৮-৩২) প্রথম চার বছরেই কৃষি, শিল্প, শিক্ষাসহ সবকটি মৌলিক ক্ষেত্রে দেখা যায় গড়পড়তা ৯৩ শতাংশ সাফল্য। এই চার বছরে সোভিয়েতে শিল্পোৎপাদন বেড়ে যখন দ্বিগুণ তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তা কমে ৫৭ শতাংশ, ব্রিটেনে ১৮ শতাংশ, জার্মানিতে ৪০ শতাংশ এবং ফ্রান্সে ৩০ শতাংশ।

.............................................................................

“সঙ্কটগ্রস্ত পুঁজিবাদের অবস্থাটা হলো সেই কাদায় আটকে যাওয়া পাখির মতো। কাদায় জড়ানো লেজ ছাড়াতে গিয়ে ঠোঁট ডুবে যাচ্ছে কাদায়, আবার কাদা থেকে ঠোঁট তুলতে গেলে কাদায় জড়িয়ে যাচ্ছে লেজ।”     

- স্তালিন

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

চাড্ডিগণ [এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]