সরস্বতী ও শিক্ষা - সুকুমারী ভট্টাচার্য [পর্ব-দুই]

 


সঙ্ঘ পরিচালিত 'সরস্বতী শিশু মন্দিরে'র চতুর্থ শ্রেণীর ইতিহাসের পাঠ্যবই হলো 'গৌরব গাথা'। এতে সমগ্র ভারতবর্ষের ইতিহাসকে দেখানো হয়েছে, আলেকজান্ডার থেকে শুরু করে একের পর এক বিদেশী আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের দেশ রক্ষার সংগ্রাম হিসেবে। এতে আছে মহম্মদ ঘোরীকে পৃথ্বীরাজ হত্যা করেন, কুতুব মিনার নির্মাণ করেন সমুদ্র গুপ্ত, এটি আদিতে নাকি বিষ্ণু স্তম্ভ ছিল। মুহম্মদ তুঘলক নাকি দিল্লি থেকে দেবগিরিতে রাজধানী সরিয়ে নেন হিন্দুদের ভয়ে। দেবগিরিতে হিন্দু ছিল না? পুরো দিল্লির সুলতান রাজের ইতিহাস নাকি এমন এক বিদেশী রাজতন্ত্র যার বিরুদ্ধে হিন্দুরা ক্রমাগত যুদ্ধ করেছিল! পঞ্চম শ্রেণীর ইতিহাস পাঠ্যগ্রন্থের নাম 'ইতিহাস গা রহা হৈ', এতে আছে মুসলিমরা এদেশে এক হাতে কোরান ও অন্য হাতে তলোয়ার নিয়ে এসেছিল। অগণ্য হিন্দুকে বল প্রয়োগের দ্বারা ধর্মান্তরিত করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে একটি সুদীর্ঘ ধর্মযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, তাতে ধর্মের জন্যে অসংখ্য হিন্দু আত্মত্যাগ করেছিল। যদিও 'আমরা একটির পর একটি যুদ্ধে জিতে যাচ্ছিলাম। আমরা বিদেশীদের এখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে দিইনি। যদিও ধর্মান্তরিত ভাইদের আর ফিরে পাইনি।' অশোকের শিলালিপি শুধুমাত্র ব্রাহ্মী (লেখা আছে Brahri) লিপিতে এবং কেবলমাত্র প্রাকৃত-সংস্কৃতে রচিত (লেখা আছে Pakti Sanskrit) হয়েছিল। অথচ অন্য বহু লিপি, এমনকি গ্রিক ও আরামাইক লিপিতে ও অন্য ভাষাতেও তাঁর শিলালিপি পাওয়া যায়, যায় না শুধু সংস্কৃতে।

'ঐ হাজার বছরের মধ্যে লক্ষ লক্ষ বিদেশী আক্রমণকারী এদেশে এসেছিল...কিন্তু তাদের সকলকেই পরাজয়ের অপমান সইতে হয়েছে...যখন আমরা বিচ্ছিন্ন ছিলাম তখন কে বিদেশী শত্রু কে মিত্র, বুঝতে পারিনি, তখন তাদের আমরা 'হজম' করতে পারিনি, যারা কোনো চাপে বাধ্য হয়ে আমাদের থেকে পৃথক হয়েছিল তাদেরও 'হজম' করতে পারিনি। আজকে এইসব লোক হলো মোগল, পাঠান আর খ্রীস্টান।' এই বছরেরই (১৯৯৮) এপ্রিল মাসে এক বিদ্বৎ সমাবেশে উত্তর প্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী বলেন, 'ভারতবর্ষের কাছে যা কিছু অত্যন্ত প্রাচীন বর্তমান জগতে তাই হলো আধুনিকতম।' আরও বলেন, 'অতীতকালে ভারতবর্ষ বিজ্ঞান ও গণিতে যে বিদ্যা আয়ত্ত করেছিল তা এখনো পৃথিবীর কোনো দেশ আয়ত্ত করতে পারেনি।' শুনলে মনে হয় বাতুলের প্রলাপ।

এ কেমন শিক্ষা? পৃথিবীর সাত-আট হাজার বছরের যে ইতিহাস জানা গেছে তার মধ্যে বিজ্ঞানে মানুষের কোনো উন্নতি ঘটেনি। প্রাচীন ভারতবর্ষ দুহাজার বছর আগে বিজ্ঞানেও শেষ কথা বলে গেছে? এরা মনে করে, লেখে, বলে এবং প্রচার করে ভারতীয় আর্য সভ্যতা পৃথিবীর উন্নততম এবং প্রাচীনতম সভ্যতা। প্রথমত যেখানে বীজগণিতের চর্চা বহুকাল আগেই স্থগিত হয়ে গিয়েছিল, সেখানে উন্নততর বিজ্ঞানের চর্চা হওয়া সম্ভবই ছিল না। বর্তমান জগতে জীববিদ্যা, ভেষজ, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, উন্নত গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, কম্পিউটার কারিগরি এসবে যতটা উন্নতি হয়েছে সবই প্রাচীন ভারতে ছিল বলা কোন ধরনের অন্ধ মূর্খতা? প্রাচীন ভারতবর্ষ বিজ্ঞানেও বেশ কিছু স্মরণীয় কীর্তি স্থাপন করেছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই, কিন্তু তার পরে একসময়ে সে চর্চা থেমে যায় ও থেমে থাকে। আরব দেশে আরও পরেও উন্নত বিজ্ঞান চর্চা হয়েছিল, কিন্তু একটা সময়ে সেটা থেমে যায়। ঊনবিংশ শতকের ভারতবর্ষে ইংরেজরা তাদের উন্নততর বিজ্ঞানচর্চা এখানে নিয়ে আসে, তখন বীজগণিতের উন্নত চর্চার দ্বারা পদার্থবিদ্যার প্রচুর অগ্রগতি ঘটেছে এবং বিমান তৈরি হয়েছে ঐ উন্নত পদার্থবিদ্যা ও রসায়নের সাহায্যে, যে দুটি ঐ উন্নতির স্তরে না থাকার ফলে প্রাচীন ভারতে বিমান থাকা একেবারেই অসম্ভব ছিল। রামায়ণের পুষ্পক রথ থেকে যাঁরা প্রাচীন ভারতে বিমানের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চান তাঁদের মূর্খ বললে কম বলা হয়। উত্তর প্রদেশে এদের ও অন্যান্য কিছু স্কুলে ছাত্রদের বেদের গণিত বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হয় এবং শিখতে হয়। এই গণিতই পৃথিবীর তাবৎ গণিতের জননী। বিশেষজ্ঞের যা পথ্য তা কিশোর ছাত্রের অপথ্য, যথোপযুক্ত পুষ্টি তাতে মেলে না। বেদ পাঠশালা, যজ্ঞ, গোহত্যা নিবারণ, বন্দেমাতরম্, ভুল তথ্য পরিবেশন ছাড়াও গোলওয়ালকর, শ্যামাপ্রসাদ ও অন্যান্য কিছু কিছু সাম্প্রদায়িক নেতার জীবনীপাঠ স্কুলের কোনো কোনো শ্রেণীতে এরা বাধ্যতামূলক করেছে। সাহিত্যের পাঠের মধ্যেও হিন্দুত্বের বিস্তর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ভুগোলের ক্ষেত্রে এরা ভারতবর্ষের যে মানচিত্র রাজস্থানের পাঠ্যগ্রন্থে ছাপিয়েছে তাতে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, তিব্বত ও ব্রহ্মদেশের কিছু অংশ সবই পূণ্যভূমি ভারতের অন্তর্গত বলে দেখানো হয়েছে। এটি কারাদণ্ডযোগ্য অপরাধ। ইচ্ছাপূর্বক এই মানচিত্র দেখে যারা ভূগোল শিখতে বাধ্য হচ্ছে তারা তথ্যে বঞ্চিত হচ্ছে, তথ্যের নামে বিকৃতি সেবন করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে ক্ষতি আমার দেশের ভাবী প্রজন্মের। দেশের বাইরে এই জ্ঞান নিয়ে গেলে শুধু উপহাসিত নয়, নির্বোধ বলেও প্রতিপন্ন হবে এরা। বিজ্ঞানে এরা শেখে বর্তমানে বিজ্ঞানের যে উন্নতি ঘটেছে পাশ্চাত্যে, তার সবেরই সূত্র ছিল প্রাচীন আর্য শিক্ষায়। এমনকি এরা বলে প্রাচীন ভারতে এরোপ্লেনও ছিল, নইলে পুষ্পক রথের কথা মহাকাব্য, পুরাণে রইলো কী করে? মূর্খেরা কি জানে না যে মানুষের কল্পনাশক্তি বলে একটা ক্ষমতা আছে, তাই যেহেতু পৃথিবীতে মৎস্যও আছে কন্যাও আছে তাই মৎস্যকন্যার কল্পনা করা সম্ভব হয়েছে। ঠিক তেমনই উঁচু পাহাড়ের চূড়োয় উঠে নিচের পৃথিবীকে যেমন দেখায়, পুষ্পক রথের ইচ্ছাপূরক কল্পনায় ঠিক তেমনই বর্ণনা করা সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানের বর্তমান অগ্রগতির মূলে যে বীজগণিত, ভারতবর্ষে বহু শতাব্দী আগেই তার চর্চা স্থগিত হয়ে গিয়েছিল বলেই একটা সময়ের পরে আর পদার্থবিদ্যার অগ্রগতি সম্ভব হয়নি। ফলে এরোপ্লেন তৈরি করা একেবারেই সম্ভব ছিল না। গণিতে, বিজ্ঞানে ভারতবর্ষ আরবদেশ থেকে প্রচুর ঋণ গ্রহণ করেছিল, গ্রিস থেকেও জ্ঞান মননের বহু উপাদান পেয়েছিল, এদের কোনো পাঠ্যগ্রন্থে তার কোনো উল্লেখ থাকে না। এরা এতই অজ্ঞ যে জানে না, সত্যিকার বুদ্ধিমান জাতই অন্যদের কাছ থেকে শ্রেয়তর জ্ঞান গ্রহণ করতে পারে, নির্বোধ জাত পারে না। চিকিৎসা, রসায়ন, ধাতুবিদ্যা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, চারুকলা, কারুবিদ্যাতে ভারতবর্ষ যথেষ্ট উন্নত ছিল, দর্শনচিন্তাতেও - এগুলি যথার্থই গর্বের বস্তু। কিন্তু তাতে এদের মন ভরে না। এদের বলতেই হয়, সর্ববিদ্যাতেই ভারতবর্ষ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল। এই অতি লোভেই এদের তাঁতি নষ্ট হলো। পণ্ডিত মহলে এরা বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারলো না, সঙ্গে সঙ্গে মিথ্যা বিকৃত ইতিহাস শিখিয়ে নিজের দেশের ছেলেমেয়েদের মূর্খ করে রাখলো, এর দায় কত পুরুষ ধরে চলবে তা কে জানে। এর ওপর এদের নতুন বাহানা হলো দেশে অনেক সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। এছাড়া এদের স্থাপিত স্কুলগুলিতে সংস্কৃত আবশ্যিক পাঠ্য। সংস্কৃত প্রাচীন ভারতের একটি গৌরব। বিপুল, বিচিত্র ও সমৃদ্ধ এর সাহিত্য, বহু চিন্তা গবেষণা ও মননের ফসল এ ভাষায় সম্ভূত। এসব সত্য হলেও সংস্কৃতকে স্কুল-কলেজে সব ছাত্রের পক্ষে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষণীয় করে তোলার কোন যুক্তি নেই। যে ছাত্র বায়োফিজিক্স, ডাক্তারি বা নৃতত্ত্ব অথবা সমাজবিজ্ঞান পড়বে, প্রয়োজন হলে সংস্কৃত ভাষায় রচিত প্রয়োজনীয় বস্তু যেন সে ব্যবহার করতে পারে তার জন্য ভাষাটা সর্ব স্তরে আবশ্যিক না করে অনায়াসেই এমন একটা পাঠক্রম কলেজে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা যেতে পারে যেটা সপ্তাহে তিনদিন পড়ে এক বছরের মধ্যে প্রাথমিক ব্যাকরণ ও শব্দ সম্ভারের সঙ্গে ছাত্রের পরিচয় হয়। একে তো প্রাচীন পন্থা শব্দরূপ-ধাতুরূপ মুখস্থ করিয়েই আজও সংস্কৃত পড়ানো হয়, তার ওপর পাঠ্যবই থাকে তত্ত্বকথায় ঠাসা। কোনো ভাষার প্রতি যথেষ্ট বিদ্বেষ উদ্রেক করার পক্ষে পর্যাপ্ত আয়োজন আমাদের সংস্কৃত পাঠ পদ্ধতিতে। কাজেই অনীহা ও বিরাগ উৎপন্ন হয় প্রাথমিক স্তর থেকেই। তারপরেও যেসব ছাত্র-ছাত্রীর সহজাত অনুরাগ আছে ভাষাটি সম্বন্ধে এবং স্বভাবতই তারা সংখ্যায় কম - শুধু তারাই স্বেচ্ছা প্রবৃত্ত হয়ে ভাষাটির চর্চা করবে। সকলের ওপরে জোর করে এটা চাপানো একটা অত্যাচার। পৃথিবীর কোনো দেশেই এখন ধ্রুপদী ভাষা আবশ্যিক নয়। অথচ স্বল্প যে কজন প্রাচীন মিশরীয়, সুমেরীয়, ব্যাবিলনীয়, গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষার চর্চা করেন তাঁদের সে চর্চার মান আমাদের গড়পড়তা পণ্ডিতদের চর্চার মানের থেকে অনেক উন্নত। এর একটা কারণ, কেবলমাত্র অনুরাগীরাই এ চর্চা করে থাকেন। দ্বিতীয়ত, ইতিহাস, ভূগোল, সমাজতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, প্রত্নতত্ত্ব, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি নানা সম্পৃক্ত বিষয়ের পটভূমিকায় সে চর্চা ঘটে নির্ব্যক্তিক, ঐতিহাসিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি চর্চাকে জ্ঞানের জগতে মোহনীয় করে তোলে। সঙ্ঘ পরিবার সংস্কৃতকে সর্বস্তরে অবশ্যপাঠ্য করতে চায়, এরা ভুলে যায় যে, শিবসেনার উপাস্য শিবাজির রাজত্বে রাষ্ট্র ব্যবহারের ভাষা ছিল ফারসি, সংস্কৃত নয়। এদের সংস্কৃত প্রবর্তনের চেষ্টার পিছনে একটি উদ্দেশ্যই সক্রিয় - সংস্কৃত হিন্দুত্বের বাহন। প্রথমত, সেই যুক্তিতে আরবি, ফারসি, উর্দু ইত্যাদি আরও নানা ধ্রুপদী ভাষাও অবশ্যপাঠ্য করতে হয়। কারণ ভারতবর্ষ বহু জনগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক সংমিশ্রণের উত্তরাধিকারী; ভারতীয় সংস্কৃতি শুধু হিন্দু সংস্কৃতি নয়। এটি একটি মিশ্র সংস্কৃতি এবং ঠিক সেই কারণেই একটি অতি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, যা হতো না যদি এটি শুধু হিন্দু সংস্কৃতি হতো। দ্বিতীয়ত, সংস্কৃত হিন্দু ধর্মের বাহন নয়, এতে নানা জাতীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের উপাদান বিধৃত আছে; হিন্দুত্ব বিরোধী নাস্তিক্যপন্থী সাহিত্যও সংস্কৃততেই রচিত হয়েছিল এবং হিন্দুত্ব কেন্দ্রিক বহু রচনা ইংরাজি ও অন্যান্য ভাষাতে লেখা হচ্ছে এখনো। কাজেই ন্যায়শাস্ত্রে যাকে 'অব্যাপ্তি' ও 'অতিব্যাপ্তি' দোষ বলে, তাই ঘটে সংস্কৃত ও হিন্দুত্বকে সমান করে দেখলে। তৃতীয়ত এবং মূল সেই প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হবে ভারতীয় ছাত্র-ছাত্রীদের - কেন বাধ্যতামূলকভাবে সংস্কৃত শিখতে হবে এবং তার জন্য সাধারণ করদাতা যাদের মধ্যে বেশ বড় একটা অংশ অহিন্দু, তাদের রাজস্বের অপব্যয় কেন হবে সব ছাত্র-ছাত্রীকে সংস্কৃতের মাধ্যমে হিন্দুত্বে শিক্ষিত করে তোলার জন্য?

পরিশেষে এই হিন্দুত্বের স্বরূপ কী? শিক্ষার ক্ষেত্রে তার ভূমিকা এ পর্যন্ত যা দেখলাম তা হলো সম্পূর্ণ অনৈতিহাসিক, অবৈজ্ঞানিক একটি মনোভাব সৃষ্টির প্রয়াস। হিন্দু ধর্ম পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম - তা বোঝাবার জন্য এই বিচিত্র আয়োজন। এদের 'সংস্কৃতিজ্ঞান প্রশ্নোত্তরী' নামের পাঠ্যগ্রন্থে ভুল তথ্য অসঙ্কোচে পরিবেশনের উদ্যম। এদের শিক্ষক-শিক্ষিকারা বাধ্যতামূলকভাবে পাঁচ মাস ধরে যে সংস্কৃতি জ্ঞানের পাঠ নেয় পাঠদানের পূর্বে, তা তো ভুলে ভর্তি হিন্দু আত্মম্ভরিতার পাঠ। যা শেখায় যে, ভারত হিন্দু রাষ্ট্র, অহিন্দু এখানে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক এবং তার কোন অধিকার রক্ষার দায় নেই সরকারের। কারণ, তার জন্মভূমি ও কর্মভূমি ভারতবর্ষ হলেও তার পুণ্যভূমি নয় এদেশ। যে কোটি কোটি নাস্তিক অথবা সর্ব ধর্ম সম্বন্ধে উদাসীন মানুষ জীবন সংগ্রামেই তাদের সর্বশক্তি ব্যয় করছে প্রতিনিয়ত, যাদের পুণ্যভূমি এদেশ বা বিদেশ কোনটিই নয়, তাদের ভূমি কোথায় এই হিন্দু রাষ্ট্রে? এদের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষাও একটি অংশ। কী সেই নীতি? যা দেশের বেশ বড় একটি অংশকে - যার মধ্যে নাস্তিক হিন্দু ও ধর্মে উদাসীন হিন্দুও আছে - হিন্দু শ্রেষ্ঠত্বে অবিশ্বাসী সেই অংশকে যে নীতি ঊনমানব জ্ঞান করে তা তো দুর্নীতি। নারীর পাঠ্যক্রমে যারা গৃহধর্ম সম্বন্ধে শিক্ষাকে আবশ্যিক করে, তাদের নারী-পুরুষে ভেদদৃষ্টি শিক্ষাব্যবস্থা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এদের নীতি প্রাচীনপন্থী ও পুরুষতান্ত্রিক। হিন্দু ধর্ম সংস্কৃত ভাষার মাধ্যমে সংস্কৃতির প্রধান বিষয়রূপে সব ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষে অবশ্য শিক্ষণীয়। মুশকিল হলো হিন্দুধর্মের স্বরূপ কী, তার স্পষ্ট কোন সংজ্ঞা কেউ কোনোদিন দিতে পারেনি। এ ধর্মের কোনো একটিমাত্র সর্বজনস্বীকৃত শাস্ত্র নেই, কোনো একটি কেন্দ্রীয় সংস্থা এ ধর্মাবলম্বী জগৎকে পরিচালিত করে না। চার শঙ্করাচার্যদের নির্দেশ বহু হিন্দু প্রস্থান মানে না এবং তাদের নির্দেশ মাঝে মাঝেই পরস্পরবিরোধী হয় এবং শেষ পর্যন্ত তারা হিন্দুত্বের স্বনির্বাচিত প্রতিনিধি। নামে হিন্দু বহু ভারতীয় নাস্তিক অথবা সর্ব ধর্মে সমদর্শী, এছাড়া বৃহৎ সংখ্যক আদিবাসীর যে সমাজকে আর্যীকরণের সুদীর্ঘ চেষ্টা সত্ত্বেও তাদের আদিম ধর্ম বিশ্বাস অনুসারেই চলে - ওপরে হিন্দুত্বের ক্ষীণ প্রলেপ সত্ত্বেও এরা সকলে কোন যুক্তিতে হিন্দুত্বের আওতায় পড়বে? এছাড়াও হিন্দুদের মধ্যে নানা সম্প্রদায়, তারা সকলেই শঙ্করাচার্যদের প্রণীত বেদান্ত মতের অনুগামী নয়। স্বীকৃত পঞ্চোপাসনাতেই সৌর, শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব ও পাণপত্য প্রস্থান আছে; এর বাইরে অজস্র আঞ্চলিক সম্প্রদায় ও উপাসন প্রস্থান আছে যারা শঙ্করাচার্যের প্রাধান্যতা বা অনুশাসন স্বীকার করে না। জন্মান্তরবাদ, কর্মবাদ, জাতিভেদ ও আত্মার অস্তিত্ব - এ ক'টিই হিন্দু ধর্মের স্বীকৃত মূল স্তম্ভ। মুশকিল, এর সব ক'টাই প্রাচীন ভারতের আর্য-ব্রাহ্মণ্য যুগেও সকলে মানতো না এবং এর বাইরের বহু অন্য কিছু অনেকেই মানতো। কোনো কেন্দ্রীয় মূল শাস্ত্রগ্রন্থ ছাড়াই এখন মৌলবাদ সৃষ্ট হয়েছে। এই মৌলবাদের মূল কী? এর কোন দ্বিধাহীন সদুত্তর নেই। ফলে বেশ বড় একটা অস্পষ্ট ধোঁয়াটে এলাকায় যে যা বিশ্বাস করে তাকেই স্থাপন করে হিন্দুত্বের জয়জয়কার করছে। শিক্ষা ব্যবস্থায় এই অস্পষ্ট মৌলবাদের অনুপ্রবেশের কোন কেন্দ্রীয় তত্ত্ব না থাকলেও কিন্তু বেশ একটা স্পষ্ট চেহারা আছে। তা হলো - আর্য শ্রেষ্ঠত্ব, বেদ শ্রেষ্ঠত্ব, সংস্কৃত শ্রেষ্ঠত্ব এবং পরবর্তীকালে 'হিন্দু' বলে যা কিছু চালিত হয়েছে তার শ্রেষ্ঠত্ব। আজ আমরা জানি আর্যদের বহু পূর্বে সুমের, এসিরিয়া, ব্যাবিলন, চীন ও গ্রিসে এমন উঁচু মানের সংস্কৃতি আবির্ভূত হয়েছিল যার তুলনায় অর্বাচীন আর্যরা অনেকাংশে হীন। 

বেদ একটি সমৃদ্ধ ও বিপুল সাহিত্য, কিন্তু শিক্ষার জগতে বেদ চর্চা যেমনভাবে হবার কথা অর্থাৎ নৈর্ব্যক্তিক, ঐতিহাসিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে; তা এই সংঘীদের অভিমত নয়, ফলে বেদের বহুবচন যে আজ সমাজের পক্ষে ক্ষতিকর, অতএব গ্রহণযোগ্য নয়, তা এরা স্বীকার করে না। অতএব এদের অন্ধ বেদ নিষ্ঠা ভাবী প্রজন্মের ক্ষতিই করবে। সংস্কৃত নিঃসন্দেহে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষা সাহিত্যের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ ও সম্মানিত ভাষা বলে স্বীকৃত। কিন্তু শুধু এই কারণেই এ ভাষাকে স্কুল-কলেজে সর্বজনের অবশ্যপাঠ্য করে তোলা তো অন্যায় জুলুম, এমন জুলুম পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নেই।

পরিশেষে, হিন্দু বলে যা কিছু পরিচিত তার শ্রেষ্ঠত্ব গোলওয়ালকার থেকে আরম্ভ করে হিন্দুত্বের আরও বহু ধ্বজাধারীরা ক্রমান্বয়ে বলে আসছে সম্পূর্ণ বিনা যুক্তিতে, এই মতকে স্বীকার করা যায় না নানা কারণে। প্রথমত, শ্রেষ্ঠত্ব একটি আপেক্ষিক শব্দ। কার চেয়ে শ্রেষ্ঠ? পৃথিবীর অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতা, ধর্ম, দর্শন ও সংস্কৃতি সম্বন্ধে এদের জ্ঞান এত শোকাবহভাবে নিম্নমানের যে, এ ধরনের আপেক্ষিক শব্দ প্রয়োগে এদের অধিকার নেই। সম্পূর্ণ ভ্রান্ত স্বকপোলকল্পিত 'তথ্যে'র ওপরে প্রতিষ্ঠিত যে শ্রেষ্ঠত্বের কল্পনা তা-ই পরিবেশিত হচ্ছে এদের পাঠ্যপুস্তকে ও প্রচার গ্রন্থে। তাই সরলমনে গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে শিশু-কিশোর-কিশোরী। তথ্যের স্থান নিচ্ছে রাশি রাশি ভ্রান্ত মত। এর ফলে তাদের মনে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এমন একটি শ্রেষ্ঠত্বের বোধ সৃষ্টি করছে যার ফলে বাইরের পৃথিবীর চক্ষুষ্মান পণ্ডিতেরা এদের এখনই উপহাস করছেন। শিক্ষা ব্যবস্থার বহুধা বিকারের ফলে আগামী বহু প্রজন্ম অকারণে সম্পূর্ণ বিনা দোষে তাচ্ছিল্য ও উপহাসের পাত্র হবে। তার চেয়েও বড় কথা, তারা ভুল শিখছে, ভুল শিখবে, সর্বক্ষেত্রে, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, বিজ্ঞান, সাহিত্য সর্বত্রই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যার সংশ্লেষ গৈরিক করে তুলছে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকেই।

এই সুপরিকল্পিত ভ্রান্তির জগতের কাছে আমরা তুলে দিচ্ছি আগামী প্রজন্মকে, দেশের ভবিষ্যতকে। এরা অন্য ভিন্ন সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ উপাদানকে শ্রদ্ধাভরে গ্রহণ করতে শিখবে না, কারণ মিথ্যা শ্রেষ্ঠত্বের অহমিকায় এদের দৃষ্টি রুদ্ধ থাকবে এবং এরা নিজের ঐতিহ্যের দোষ-ত্রুটি চিনতে, জানতে ও মানতে পারবে না; ফলে দেশের ভাবী উন্নতির এবং আত্ম সংশোধনের দ্বারা শ্রেয়তর উৎকর্ষলাভ, তাও ঘটবে না। জাতিভেদের নানা ব্যাখ্যা দিয়ে সমর্থন করতে শিখবে, ফলে ভারতবর্ষের এই কলঙ্ক অক্ষয় হয়ে থাকবে। অপ্রমাণিত এবং অপ্রমাণসহ জন্মান্তরবাদ, কর্মবাদ এরা নির্দ্বিধায় গলাধঃকরণ করবে, কারণ হিন্দু ধর্মকে সংঘীরা বিচারের ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছে। ফলে এ দু'টি ভ্রান্ত ধারণাও কায়েম হয়ে থাকবে শিশু-কিশোরের মনে এবং নিয়তিবাদ পুরুষকার ও আত্মপ্রত্যয়ের তলা ক্ষইয়ে দেবে ধীরে ধীরে। তাই বলে এরা শান্ত, সুস্থিরচিত্ত বা নির্জীব একেবারেই নয়। আশৈশব এদের শেখানো হচ্ছে শত্রু চারটি - মুসলমান (তথা পাকিস্তান), চীন, কমিউনিজম এবং যারা ধর্মান্তরীকরণ করে থাকে তারা (অর্থাৎ মুসলমান, খ্রীষ্টান)। হিন্দু ও আর্য সমাজীরাও যে ধর্মান্তরীকরণ করে থাকে সেটা অপ্রাসঙ্গিক। কারণ হিন্দু যখন ধর্মান্তরীকরণ করে, তখন ধর্মান্তরিত মানুষ হিন্দু হয়, কিন্তু অন্য কেউ করলে ধর্মান্তরিত মানুষ হিন্দুত্বের এলাকার বাইরে চলে যায়। হিন্দুত্ববাদীরা হিন্দুধর্মের মূল্যায়ন আগেই করে রেখেছে, ঘোষণা করে রেখেছে এটিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং এর আওতায় গড়ে ওঠা সংস্কৃতিই শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি। ফলে বহু সংশ্লিষ্ট বিষয়, যেমন- ইতিহাস, সাহিত্য, অর্থনীতি, সমাজনীতি, প্রত্নতত্ত্ব, শিল্পতত্ত্ব, ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন - মননের ইতিহাসের পরিপ্রেক্ষিতে নৈর্ব্যক্তিক বৈজ্ঞানিক ভঙ্গীতে বিচার করলে যে স্বরূপটি ধরা পড়বে তার দোষগুণ নিয়ে, সেটি হবার জো রইলো না, কারণ শ্রেষ্ঠত্বের ফতোয়া আগে থেকেই দেওয়া হয়ে গেছে। এর একটা কুফল হলো, ভারতীয় সংবিধানে মানবিকতার সপক্ষে যেসব অংশ আছে, যেমন- সকল ভারতীয় অধিকারে সমান, এগুলি এদের দম্ভের দাপটে চাপা পড়ে যাবে, ভাবী প্রজন্ম মানবিক মর্যাদা অর্জন করতে পারবে না, ভারতবাসী মাত্রকেই আপনজন বলে ভাবতে শিখবে না। জাতপাত তো ছিলই; এখন বিধর্মী, মুসলমান, খ্রীষ্টান, আদিবাসী বা নাস্তিক ভারতবাসীকে এরা অভারতীয় বা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে ভাবতে শিখবে। ভারতীয় সংস্কৃতির সুস্থতম প্রকাশ ঘটেছিল, শান্তিপর্বে ভীষ্ম যুধিষ্ঠিরকে বলেছিলেন, 'ন মানবাশ্রেষ্ঠতরং হি নিঞ্চিৎ', 'মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছুই নেই'। এই মানুষের মধ্যে মুসলমান, খ্রীষ্টান, ম্লেচ্ছ, চণ্ডাল আছে; নারীও আছে। হিন্দুত্বের নীতিতে এদের মধ্যে বহির্বিভাগ আছে, ফলে জাতিভেদের অভিশাপ প্রচ্ছন্নভাবে এর মধ্যে আত্মগোপন করে থাকে সাম্প্রদায়িকতায়, প্রকাশ্যে ও সদস্তে। এই বাতাবরণের মধ্যে যে তরুণ-তরুণীর মানসিক গঠন হবে তারা একটি অসুস্থ এবং প্রকারান্তরে দুর্নীতির পরিবেশে লালিত হবে। তারা হিন্দু হবে ঠিকই, কিন্তু পুরো মানুষ হয়ে উঠবে না। 

শিক্ষা জগতের সামনে সমস্যাটা জটিল ও কঠিন। আমরা বহু মূল্যবান দশক নষ্ট করেছি, শিক্ষার মানবিকীকরণ করতে পারিনি বলেই আজ তার গৈরিকীকরণ হয়ে চলেছে। পুরো গোবলয় আজ সংঘীদের অধীনে, দিল্লির মসনদে এখনো তারা আসীন এবং সেই ক্ষমতাটা চিরকাল তাদের নাও থাকতে পারে এটা জানে বলেই যত দ্রুত সম্ভব তারা গৈরিকীকরণ সমাধা করতে চায়। একটুখানি থেমে ভেবে দেখুন, ষাট বছর আগে জার্মানিতে নাৎসি শক্তি যখন ক্ষমতা দখল করে তখন ইহুদি ও কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে এই ধরনের জেহাদ ঘোষণা দিয়েই তার শুরু হয়েছিল। তথ্যের বিকৃতি, জার্মান জাতির জাতিগত শ্রেষ্ঠতা ঘোষণা, রক্তের জাত নামে অবৈজ্ঞানিক মিথ্যার ভিত্তিতে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপাদন, সারা পৃথিবীকে তৃতীয় রাইখের পদানত করার কর্মসূচী, জার্মান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা - এসবই সেদিন পরবর্তী কয়েক বছরের বিভীষিকার সূচনা করেছিল। আমরা জানি বহু শিক্ষাব্রতীকে প্রাণ দিতে হয়েছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে, শুধুমাত্র তারা নাৎসিবাদের সহযোগিতা করতে অস্বীকার করেছিল বলেই; আরও বহু জ্ঞান তপস্বী, শিল্পী, বৈজ্ঞানিক ও মনস্বীকে দেশত্যাগ করে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছিল। বই পোড়ানো, বইকে বেআইনি ঘোষণা করা এর একটা অঙ্গ ছিল। এটা সংঘীদের আমলে এখনই সূচনারূপে পরিদৃশ্যমান। চিন্তা ও মননের, জ্ঞানের ও তথ্যের জগতে বিকৃতি এনে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করা এর আর একটা অংশ। এই আগতপ্রায় ফ্যাসিবাদের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত পণ্যমুখী সভ্যতা ও বিশ্বায়ন। একে ঠেকাবার জন্য হিন্দুত্বকে ব্যবহার করার চেষ্টা ব্যর্থ হতে বাধ্য। ভাবী যুগের মানুষ সামনের দিকে তাকাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য শুধু নয়; তার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হবে যুক্তি। হিন্দুত্বের পাঠ্যক্রম বা পরিকল্পনার মধ্যে যুক্তির স্থান নেই। অতীতে যা ছিল তাকেই শ্রেষ্ঠ আদর্শ মনে করার মধ্যে বশ্যতা ও আনুগত্য আছে, বুদ্ধি বা স্বাধীন বুদ্ধি প্রয়োগের অবকাশ নেই। শিক্ষা বিধানে আমরা যে নাগরিক তৈরি করতে চাই সে অতীতকে চোখ বুজে মেনে নেবে না, খোলা চোখে বুদ্ধি দিয়ে যাচাই করতে শিখবে। যুক্তির কষ্টিপাথরে যা টিকবে শুধু তাকেই স্বীকার করবে এবং সে স্বীকৃতিও চিরকালের জন্য নয়। সামাজিক পরিবেশে যতদিন তার যথার্থ উপযোগিতা আছে ততদিনের জন্যই মেনে নেবে। তারপর যেদিন তা প্রাসঙ্গিকতা হারাবে সেদিন সেটা ভারতীয় বলেই বা অতীতে তা চালু ছিল বলেই তাকে আঁকড়ে থাকবে না। আমাদের ভাবী প্রজন্মের শিক্ষা হবে প্রকৃত সমাজ কল্যাণের অভিমুখী। চিন্তাবৃত্তিকে অলস, অসাড় করে রেখে গুরু পরম্পরায় লব্ধ জ্ঞানকে চিরকাল অবিকৃত রেখে মেনে নেওয়া তো জাতির মৃত্যুর লক্ষণ। এর থেকে বাঁচতে হলে আকৈশোর সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীকেই স্বাধীন চিন্তায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যাতে বড় হয়ে তারা দেশের কর্ণধার হবার যোগ্য হয়।






Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

চাড্ডিগণ [এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]