দলাই লামার ভণ্ডামি উন্মোচন

 

‘দলাই লামা’ শূন্য থেকে সৃষ্টি হননি। একটু একটু করে তৈরি হয়েছেন। এখন যিনি ‘দলাই লামা’, তিনি চতুর্দশ দলাই লামা। প্রথম দলাই লামা’র সৃষ্টি জানতে আসুন আমরা একটু পিছনের দিকে তাকাই।

তিব্বতে প্রথম বৌদ্ধধর্মের প্রচার শুরু হয় অষ্টম শতাব্দীতে। শুরুতে বৌদ্ধধর্ম সীমাবদ্ধ ছিল রাজপরিবার ও কিছু উচ্চবর্ণের মধ্যে। ১০৪২ খ্রিস্টাব্দে ভারত থেকে তিব্বতে এলেন বৌদ্ধধর্ম প্রচারক অতীশ। অতীশই প্রথম বৌদ্ধ ভাবনাকে জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেন। তিব্বতের জনপ্রিয় ধর্মনেতা সং থাপা’র নেতৃত্বে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা নিজেদের নিয়ে একটি নতুন সম্প্রদায় তৈরি করেন, ‘গোলুগপা’। গোলুগপা’রা সাধারণভাবে ‘হলদে টুপি’ নামে পরিচিত ছিল। ৎসং-এর জীবনকাল ১৩৫৭ থেকে ১৪১৭ খ্রিস্টাব্দ। তিনিই প্রথম অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের একত্রিত করে ‘হলদে টুপি’র নেতৃত্বে আনার চেষ্টা করেন।

ৎসং থাপার মৃত্যুর পর ‘হলদে টুপি’ বা ‘গোলুগপা’র ধর্মীয় নেতার পদে বসেন তাঁরই ভাই টুপ্পা গেডুন। টুপ্পার জন্ম ১৩৯৯ সালে। পণ্ডিত হিসেবে টুপ্পার খ্যাতি যেমন ছিল, তেমনই ছিল জনপ্রিয়তা। বৌদ্ধরা বিশ্বাস করতেন টুপ্পা তথাগত বুদ্ধের অবতার। (এই বৌদ্ধদের একটি ক্ষুদ্র অংশ অবশ্য মনে করেন টুপ্পা ছিলেন অবলোকিতেশ্বরের অবতার, বুদ্ধের অবতার নন। অবলোকিতেশ্বর এক অর্ধনারীশ্বর, আধা তারা আধা শিবের রূপ।)

১৪৭৫ সালে টুপ্পা গেড়ুন মারা গেলেন। তিব্বতবাসী বৌদ্ধরা বিশ্বাস করেছিলেন, তথাগত বুদ্ধ ভক্তের রক্ষার্থে ও পৃথিবীর কল্যাণে বারবার ওঁদের ধর্মগুরু রূপে জন্ম নেবেন। ফলে ওঁরা বিশ্বাস করলেন টুপ্পা আবার জন্ম নেবেন। এই বিশ্বাস থেকে খুঁজতে খুঁজতে ওঁরা পেলেন গেড়ুনকে। গেড়ুনকে তুলে এনে করলেন ‘গ্যাটসো’ বা ধর্মগুরু। গেড়ুন গ্যাটসো একদিন সময়ের কাছে হার মেনে মৃত্যুকে বরণ করলেন। তিব্বতবাসী বৌদ্ধরা এবারও ধরে নিলেন, গেড়ুন গ্যাটসো তাঁদের ধর্মীয় নেতৃত্ব দিতে নব কলেবরে আবার জন্ম নেবেন। শুরু হলো খোঁজ। খুঁজে পেলেন শিশু সোনামকে। ওঁরা বিশ্বাস করলেন, গেড়ুনই জন্ম নিয়েছেন সোনাম রূপে।

সোনাম গ্যাটসো ছিলেন বুদ্ধিমান ও পণ্ডিত। ১৫৭৮ সালে সোনাম মঙ্গোলিয়া যান ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে। মঙ্গোলিয়ার রাজা আলতান খাঁ পরিবার ও অমাত্যবর্গসহ বৌদ্ধধর্মে দিক্ষিত হন। রাজা আলতান খাঁ সোনামকে ‘দলাই লামা’ উপাধিতে ভূষিত করেন। ‘দলাই’ শব্দের অর্থ ‘সমুদ্র’।

মজাটা হলো, সোনাম গ্যাটসো যদিও প্রথম ‘দলাই লামা’ উপাধি পান এবং ‘দলাই লামা’ নামে পরিচিত হন, কিন্তু এই ‘দলাই লামা’ উপাধি সোনামের দুই পূর্বসূরী ধর্মগুরু গেডুন গ্যাটসো এবং গেড়ুন টুপ্পার উপরও প্রযুক্ত হয়। সোনামের ইচ্ছেতেই প্রযুক্ত হয়। ফলে সোনাম হলেন তৃতীয় দলাই লামা। গোড়ায় দলাই লামারা ছিলেন গোলুগপা বা ‘হলদে টুপি’ ধর্ম সম্প্রদায়েরই ধর্ম প্রধান। ১৬৬২ সালে তিব্বতের অধিপতি মঙ্গোলিয়ার রাজা গুরসি খাঁ অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের লামা বা ধর্মগুরুদের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সেই সময়কার দলাই লামাকে (পঞ্চম দলাই লামা) গোটা তিব্বতের প্রধান ধর্মগুরুর পদে বসান। পঞ্চম দলাই লামার নাম ছিল নাগাওয়া লোলজান।

১৯৬৫-তে রাজা গুরসি খাঁ মারা গেলেন। তাঁর বংশধরেরা রাজনীতি অতটা বুঝতেন না। সেই সুযোগে দলাই লামাই হয়ে উঠলেন তিব্বতের সর্বেসর্বা - কি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে, কি সামাজিক ক্ষেত্রে। এই ক্ষমতা ভোগ করে গেছেন ত্রয়োদশ দলাই লামা থুমটেন। থুমটেনের জন্ম ১৮৭৬ সালে। মৃত্যু ১৯৩৩ সালে।

ত্রয়োদশ দলাই লামা দেহ রাখতেই তাঁর পুনর্জন্মের খোঁজ শুরু হয়ে গেলো। এই খোঁজার পদ্ধতিটি বড়ই বিচিত্র। মৃত দলাই লামার দেহ ‘পোটালা’ ভঙ্গিতে দক্ষিণ দিকে মুখ করে বসিয়ে রাখা হয়। ‘পোটালা’ ভঙ্গির অর্থ বুদ্ধদেবের মূর্তিগুলোতে প্রচলিত আসনে উপবিষ্ট ভঙ্গি। কত দিন ধরে এই নির্বিকল্প সমাধিতে দালাই লামা থাকবেন, সেটা পুরোপুরি দলাই লামারই ইচ্ছাধীন (এখানকার বালক ব্রহ্মচারীর নির্বিকল্প সমাধির মতই ব্যাপার)। তারপর হঠাৎই একদিন দেখা যায় দলাই লামার মৃতদেহ পূব দিকে মুখ করে বসে আছেন। তিব্বতের ধর্মবিশ্বাসী মানুষেরা মনে করেন বুদ্ধ অবতার দলাই লামার মৃতদেহ স্ব-ইচ্ছায় দক্ষিণ থেকে পূব দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসেন। এমনটা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে রাজ জ্যোতিষীকে গণনা করে জানাতে বলা হয়, কোথায় বুদ্ধ অবতার দলাই লামা এখন জন্ম নিয়েছেন বা নিতে চলেছেন। রাজ জ্যোতিষী ভর গ্রস্ত হন। (তাঁর উপর কে ভর করে? মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের গোলমাল না বদমাইসি? কে জানে? তিব্বতের হতদরিদ্র সাধারণ মানুষ যখন রোগমুক্তির একমাত্র উপায় হিসেবে দলাই লামার শুকনো গু খেয়েছেন, তখন রাজজ্যোতিষী-রাজপরিবার-রাজঅনুগৃহীত ধনীরা অসুখ সারাতে গু ছেড়ে চিকিৎসকের সাহায্য নিয়েছেন। এই দ্বিচারিতাই স্পষ্ট করে দেয় ওঁরা মুখে দলাই লামাকে বুদ্ধের অবতার বলে যতই শোরগোল তুলুক, নিজেরা কিন্তু সে কথায় একটুও বিশ্বাস করেন না। কেন করেন না? সবচেয়ে দামী প্রশ্ন এটাই! কারণ ওঁরা জানেন বুদ্ধের অবতারের পুনর্জন্মের ব্যাপারটা কি বিশাল রকম ভাঁওতা।)

ত্রয়োদশ দলাই লামার মৃত্যুর পরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। অনুসন্ধান চললো দু’বছর ধরে। বহু শিশুকেই পরীক্ষা করে দেখা হলো। কাউকেই তেমন মনে ধরলো না ধর্মের গুরুদের অর্থাৎ লামাদের। এই খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে যেহেতু বিশাল প্রভাব ও অর্থের প্রশ্ন জড়িত, তাই খুঁজে পাওয়াটা দরকষাকষির মধ্য দিয়ে এগুবে - এটাই স্বাভাবিক। তিব্বতের মানুষদের মধ্যে বেশির ভাগই বিশ্বাস করেন ‘চো-খোরগাই’ হ্রদের জলের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করলে ভবিষ্যতের অনেক ঘটনা দেখতে পাওয়া যায়। অনেকের অনুরোধে রাজা বেরুলেন হ্রদের জলে আগামী দলাই লামার হদিস পেতে। তারপর লাসার রাজপ্রাসাদে ফিরে ঘোষণা করলেন, তিনি দেখতে পেয়েছেন দলাই লামা জন্মেছেন একটি কুঁড়েঘরে। হ্রদের জলে অলীক দর্শন না হলেও এছাড়া আর কি বা বলতে পারতেন প্রজাদের শ্রদ্ধা আকর্ষণ করতে চাওয়া রাজা! এমন দেখলে-টেখলে প্রজাদের কাছে রাজার সম্মান বাড়ে। রাজাও এক লাফে আধা অবতার বনে যান।

অনুসন্ধানের কাজে নতুন উদ্দমে ঝাঁপিয়ে পড়লেন লামারা। বহু দলে বিভক্ত হয়ে দিকে দিকে বেরিয়ে পড়লেন ওঁরা। প্রত্যেক দলের সঙ্গেই একজন করে রাজকর্মচারী ও ত্রয়োদশ দলাই লামার ব্যবহৃত কিছু জিনিস। একটি দল গিয়ে হাজির হলো চিনের চিখাইং প্রদেশের অমদোং জেলায়। প্রথম দলাই লামা’র দাদা এবং ‘গোলুগপা’ বা ‘হলদে টুপি’ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা ৎসং থাপা এখানেই জন্মেছিলেন।

এই জেলাতে পৌঁছে অনুসন্ধানকারীরা সেইসব পুরুষ শিশুদের পরীক্ষা করতে শুরু করলেন, যাদের জন্ম ১৯৩৪ সালের পর। এরই মধ্যে পাওয়া গেলো একটি শিশুকে। গরিব কৃষক পরিবারের ছেলে। জন্ম ১৯৩৫-এর ৬ জুলাই। শিশুটি যে ত্রয়োদশ দলাই লামারই নব কলেবর, অনেক পরীক্ষা-টরীক্ষা করার পর নাকি এ বিষয়ে অনুসন্ধানকারীরা প্রায় নিশ্চিত হলেন। সাংকেতিক লিপিতে এ খবর পাঠালেন রাজধানী লাসায়। লাসা থেকে উত্তর এলো - তোমরা শিশুটির বাবার সঙ্গে কথা বলে ওদের আর্থিক দাবি-দাওয়া মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করো, তবে খুবই গোপনে। একই সঙ্গে ওই অঞ্চলে তোমাদের অনুসন্ধান কাজ প্রকাশ্যে চালিয়ে যাও। এতে শিশুটির বাবা ও পরিবার চাপে থাকবে এবং তোমাদের সঙ্গে টাকা-কড়ি লেনদেনের ব্যাপারটা তাড়াতাড়ি মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। মিটে গেলে শিশুটি ও তার পরিবারবর্গকে নিয়ে রওনা দেবে লাসার উদ্দেশে। লাসায় আরও কিছু শিশুও হাজির হবে ইতিমধ্যে। এদের ভিতর থেকেই আমরা খুঁজে নেবো আমাদের চতুর্দশ দলাই লামা’কে।

শেষ পর্যন্ত চার লক্ষ চিনা মুদ্রায় রফা হলো। এই মুদ্রা নিলেন শিশুটির পরিবার ও চিখাইং প্রদেশের শাসনকর্তা। তারপর ১৯৩৯ সালের গোড়ায় অনুসন্ধানকারীর দল শিশুটিকে ও তার পরিবারবর্গকে নিয়ে রাজধানী লাসার উদ্দেশে রওনা হলেন। এই দলে ছিলেন চারজন লামা, একজন সরকারি কর্মচারী ও তাদের ডজন দু’য়েক চাকর-বাকর। তারপর এই শিশুই পেলো রাজার স্বাক্ষর সম্বলিত সরকারি স্বীকৃতিপত্র - ইনিই চতুর্দশ দলাই লামা, তিব্বতের ভাগ্য নিয়ন্তা! ১৯৪০ এর ফেব্রুয়ারির নববর্ষে চতুর্দশ দলাই লামার অভিষেক হলো। পরীক্ষকরা ইতিমধ্যে নাকি নানাভাবে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছিলেন ইনিই পূর্বজন্মের ত্রয়োদশ দলাই লামা থেকে প্রথম দলাই লামা পর্যন্ত সবই। ইনিই বারবার নব কলেবরে ফিরে এসেছেন তিব্বতবাসীদের রক্ষা করতে, বিশ্ববাসীকে শান্তি দিতে।

চতুর্দশ দলাই লামাকে অভিষেকের সময় বিভিন্ন উপাধিতে ভূষিত করা হয়; যেমন : ‘অখণ্ডজ্ঞানী’, ‘সর্বদুঃখের পরিত্রাতা’, ‘সর্বরোগের পরিত্রাতা’ ‘বিশ্বনিয়ন্তা’, ‘সর্বোত্তম’, ‘পবিত্রতম’, ‘পরমকরুণাময়’ ইত্যাদি। চতুর্দশ দলাই লামাও কিন্তু অতিমাত্রায় সচেষ্ট ছিলেন, যাতে জনগণ মনে করেন একই অঙ্গে বুদ্ধের অংশ ও অবলোকিতেশ্বরেরও অংশ। তাঁর মধ্যে এই দু’য়ের অংশের সহাবস্থানের কথা তিনি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাৎকারেই স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু তিনি কি বাস্তবিকই যা জনগণকে বিশ্বাস করাতে চাইতেন, তাতে আদৌ নিজে বিশ্বাস করতেন? তিনি সত্যিই কি নিজেকে তথাগত বুদ্ধ বলে বিশ্বাস করতেন? মনে করতেন অবলোকিতেশ্বর বলে? এ বিষয়ে যাচাই করার মতো যে কিছু তথ্য আমরা হাতের কাছে পাচ্ছি, আসুন সেগুলো একটু নেড়েচেড়ে দেখি।

‘সর্বরোগের পরিত্রাতা’ দলাই লামা নিজের রোগমুক্তির জন্য আপন বিশ্বনিয়ন্ত্রক শক্তি প্রয়োগে বিরত থাকতেন। চিকিৎসার জন্য বিদেশেও দৌড়তেন। এই তথ্য প্রমাণ করে দলাই লামা জানতেন, বিশেষণগুলো নেহাতই বিশেষণমাত্র। বাস্তবে তাঁর ওইসব ক্ষমতা নেই।

ওসব ক্ষমতা যে আদৌ তাঁর নেই, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়া গেলো ১৯৬৯ সালে, ‘বিশ্বনিয়ন্তা’ দলাই লামা নিয়ন্ত্রণ হারালেন তাঁর লীলাক্ষেত্র তিব্বতের উপর থেকে। তিব্বতের জনগণের পরিত্রাতা দলাই তখন ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’ ধরনের একটা স্থূল তত্ত্বে প্রগাঢ় আস্থা রেখে পালিয়ে এলেন ভারতে। নিয়ে এলেন তিব্বতের রত্নভাণ্ডার কাচিয়ে যতেক ধন-রত্ন; রেখে এলেন ছোবড়া জনগণকে। দলাই লামার তথাকথিত অসীম ইচ্ছে শক্তির এই পরাজয় স্পষ্টতই প্রমাণ করে দিলো তাঁর উপর আরোপিত বিশেষণগুলো কত অসার। দলাই লামার খুব ভালোমতই জানা ছিল, তাঁর অলৌকিক ক্ষমতার দৌড় কত দূর। একজন বৌদ্ধ হওয়ার সুবাদে দলাই লামা বাস্তবিকই যদি বিশ্বাস করতেন - তথাগত বুদ্ধের ও অবলোকিতেশ্বরের ছিল অসীম অলৌকিক ক্ষমতা, তবে নিজের অলৌকিক ক্ষমতার ছিটেফোঁটাটুকু নেই, এই বোধোদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিশ্চয়ই এটুকুও বুঝেছিলেন - তিনি তথাগত বুদ্ধ বা অবলোকিতেশ্বর নন।

‘পরম করুণাময় দলাই লামা'র সাধ্য নেই গোটা পৃথিবীর নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষদের করুণা করেও বঞ্চনামুক্ত করার। গোটা বিশ্বের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। তিনি কি পেরেছিলেন তিব্বতের জনগণের শোষণ মুক্তি ঘটাতে? না, পারেননি। কারণ তিনি স্বয়ং এক আড়ম্বরপ্রিয়, ভোগসর্বস্ব এবং একই সঙ্গে বঞ্চনাকারী ও বঞ্চনাকারীদের হাতিয়ার।

এবার একটু ‘অখণ্ডজ্ঞানী’ দলাই লামার জ্ঞানের বহরের দিকে তাকানো যাক। ১৯৯৪ সালের ১২ অক্টোবর, বুধবার ‘সংবাদ প্রতিদিন’ পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয়।

এতদিন পর্যন্ত প্যারাসাইকোলজিস্টদের মাথাজাত কলমের মধ্য দিয়ে যেসব পুনর্জন্ম হয়েছে, সেসবই মানুষ। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মগুরুদের চিন্তায় আমরা যেসব পুনর্জন্মের কথা পাই, সেসব জায়গায় মনুষ্যেতর বিভিন্ন জীব রূপে জন্ম নেওয়ার কথা থাকলেও জড় রূপে জন্মের একটিও দৃষ্টান্ত মেলেনি। সেদিক থেকে দলাই লামা একটা দারুণ তত্ত্ব আমাদের জানালেন - জীব থেকে জড় পদার্থ হয়ে প্রাণীর জন্ম। অর্থাৎ প্রাণী প্রাণ নিয়ে জন্মালেও প্রাণ থাকবে না, জড় থাকবে। একেবারে দারুণ রকম অদ্ভুতুড়ে তত্ত্ব! কিন্তু ঘোরতর সন্দেহ হয়, এই তত্ত্ব প্যারাসাইকোলজিস্টরা খাবেন কি না! কিন্তু দলাই লামার এমনতর কথাই কি প্রমাণ করে না, দলাই লামা পূর্বজন্মে কখনই তথাগত বুদ্ধ ছিলেন না! বুদ্ধ যদি পাথর হয়েই জন্মে থাকেন, তবে তো চতুর্দশ দলাই লামা হয়ে জন্মাননি!

হে চতুৰ্দশ দলাই লামা, আপনার প্রিয় ও বিশ্বস্তদের কাছ থেকে জেনেছি, আপনার একান্ত ইচ্ছে ‘ইনস্টিটিউট অফ টিবোটিয়ান প্যারাসাইকোলজি’ নামে একটা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের। এও জেনেছি এই ইনস্টিটিউট কাজ করবে আপনারই নেতৃত্বে এবং আপনারাই পরামর্শে। ইনস্টিটিউট কাজ শুরু করলে ব্যাপারটা দারুণ জমবে। এতাবৎকালের প্যারাসাইকোলজিস্টদের সঙ্গে আপনার মতাবলম্বী প্যারাসাইকোলজিস্টদের দস্তুরমত ঠোকাঠুকি শুরু হয়ে যাবে। মজাটা কি জানেন, প্যারাসাইকোলজিস্টদের হুদো হুদো, গাদা গাদা বইতে দেখতে পাবেন - দলাই লামাদের চোদ্দ জনই এক্কেবারে খাঁটি জাতিস্মর। নিক, এবার জাতিস্মরের হাতের মার সামলাক প্যারাসাইকোলজিস্টরা।

- 'অলৌকিক নয়, লৌকিক (চতুর্থ খণ্ড)', প্রবীর ঘোষ 

Comments

Popular posts from this blog

শিবিরনামা [পর্ব-এক]

চাড্ডিগণ [এক]

পশ্চিমাদের পুতুল সরকার [পর্ব-এক]