ইউক্রেনের তথাকথিত হলোদোমোর
https://en.wikipedia.org/wiki/James_Mace
এই জাতীয় প্রমাণগুলো চরম পর্যায়ের সামঞ্জস্যহীন এবং প্রায়শই ১৯৩০ এর দশকের আমেরিকার ফ্যাসিবাদী প্রেস, এমনকি নাৎসি উৎস নির্ভর। এরপরও বিষয়টিকে ঘিরে বানোয়াট তথ্যগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বারবার সামনে নিয়ে আসা হয়েছে, বিশেষত ১৯৮০ এর দশকে ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীরা দুর্ভিক্ষের পঞ্চাশতম বার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে রিগ্যান এর শাসনামলে শীতল যুদ্ধকে আরও উস্কে দিয়েছিল। সেই একই পুরোনো ছবিগুলো দিয়ে বছরের পর বছর ধরে সারাবিশ্বকে বোঝানো হয়েছে, অথচ এগুলো ছিল ১৯২২ সালের বা তারও আগের দুর্ভিক্ষের সময়ের। অথচ খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু পাবলিক সার্ভিস নেটওয়ার্ক বস্তুনিষ্ঠতার অভাব থাকায় এগুলো প্রচারে রাজি না হলেও যুক্তরাজ্যের টেলিভিশনগুলোতে ‘Harvest of Despair’ চলচ্চিত্রের পাশাপাশি এই ছবিগুলো দেখানো হয়েছিল।
https://www.youtube.com/watch?v=IHm_1uN80s0
কানাডা এবং অন্যান্য দেশের ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলো অনবরত স্তালিন কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্ভিক্ষ ঘটানোর বিষয়টি প্রচার করে যাচ্ছে যা তাদের সেমিটিক-বিরোধী, নাৎসিপ্রীতির ঐতিহ্যের প্রতিই ইঙ্গিত করে।
https://www.garethjones.org/tottlefraud.pdf
১৯৩৪ সালের শরতকালে এক আমেরিকান থমাস ওয়াকার নাম ব্যবহার করে সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রবেশ করেছিল। মস্কোয় এক সপ্তাহেরও কম সময় থাকার পর তার ১৩ দিনের অবস্থানের বাকি অংশটুকু মাঞ্চুরিয়ান সীমান্তের ট্রানজিটে কেটেছিল, যেখান থেকে সে সোভিয়েত ইউনিয়ন ত্যাগ করেছিল। চার মাস পর আমেরিকার হার্স্ট প্রেসে থমাস ওয়াকার দ্বারা একাধিক নিবন্ধ লেখা শুরু হয়েছিল, যেখানে তাকে সম্বোধন করা হয়েছিল "প্রখ্যাত সাংবাদিক, ভ্রমণকারী এবং রাশিয়া বিষয়ক গবেষক, যিনি বেশ কয়েক বছর সোভিয়েত রাশিয়া সফর করেছেন।" নিবন্ধগুলোতে ইউক্রেনের দুর্ভিক্ষের বর্ণনা দিয়ে ৬ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যুর দাবি করা করেছিল, যেখানে মৃতদেহ এবং অনাহারী শিশুদের ছবি যুক্ত করে দেয়া হয়েছিল! সেখানে বলা হয়েছিল ওয়াকার বদমাইশটা নাকি "সবচেয়ে কঠিন এবং বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে" একটি ক্যামেরা দিয়ে এসব ছবি তুলেছে!!!! সেসময় মস্কোয় অবস্থানরত লুইস ফিশার নামে এক আমেরিকান লেখক এ বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেছিলেন কেন হার্স্ট প্রেস চাঞ্চল্যকর এই খবরগুলো প্রকাশের আগে দশ মাস দেরি করেছিল?
https://en.wikipedia.org/wiki/Louis_Fischer
তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়নে ওয়াকারের সংক্ষিপ্ত সফরে তার বর্ণিত অঞ্চলগুলোতে যাওয়া কিংবা ঐ ছবিগুলো তোলা মোটেও সম্ভব না। তিনি এটাও উল্লেখ করেছিলেন যে, ওয়াকারের ছবিযুক্ত প্রমাণগুলো স্পষ্টতই অদ্ভুত। কারণ ছবিগুলো কেবল আগের দশকেরই ছিল না (ফিশার ১৯২১ সালের ভোলগা দুর্ভিক্ষের কথা উল্লেখ করেছেন), এগুলো ছিল গ্রীষ্ম এবং শীত উভয় ঋতুর সংমিশ্রনের জগাখিচুড়ি ছবির পাহাড়। ফিশার আরও উল্লেখ করেছিলেন যে, ১৯৩৩ সালে ইউক্রেনের ফসল উৎপাদন ভালো পর্যায়ে ছিল। পরবর্তীকালে বের হয়ে আসে যে এসব ছবির কয়েকটি ছিল অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্য এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের!!!! আর হার্স্ট এর সংবাদপত্রগুলো এসব পুরানো ছবিগুলোর উপর ঐ আমলের ফটোশপ থিওরি(!) প্রয়োগ করে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছিলো। কখনো দাবী করা হতো ছবিগুলো রাশিয়ায় তোলা হয়েছে, আবার অন্য সময়ে একই ছবি ইউক্রেন থেকে তোলা হয়েছিল বলে দাবী করা হতো! ছবিগুলো আর ইউক্রেনের তথাকথিত ভ্রমণই কেবল জালিয়াতি ছিল না, খোদ থমাস ওয়াকার নিজেই ছিল এক মহা জোচ্চোর, যে কিনা ছিল জালিয়াতি মামলার পলাতক আসামী এবং যার আসল নাম রবার্ট গ্রিন। পুনরায় গ্রেফতারের পর বিচারে এই বদমাইশ স্বীকারও করেছিল যে, হার্স্টের পত্রিকার নিবন্ধগুলোতে ব্যবহৃত ছবিগুলো নকল এবং ইউক্রেন থেকে সেগুলো তোলা হয়নি। এতো প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও একই ছবিগুলো এখনো বিভিন্ন ওয়েব সাইটে ব্যবহৃত হয় মগজ ধোলাইয়ের উদ্দেশ্যে।
ওয়াকার বদমাইশটার কেলেঙ্কারি প্রকাশ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও হার্স্টের প্রেস তথাকথিত দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত প্রোপাগান্ডা ছড়ানো অব্যাহত রেখেছিল। হার্স্ট নিজেই লক্ষ লক্ষ আমেরিকানের কাছে "আমেরিকার এক নম্বর ফ্যাসিস্ট" হিসাবে পরিচিত ছিল। ১৯৩০ এর দশকের গোড়ার দিকে মুসোলিনির অন্যতম প্রধান আয়ের উৎস ছিল হার্স্ট প্রেস, কারণ সে ছিল সেখানকার বেতনভুক্ত সংবাদদাতা।
https://www.christies.com/en/lot/lot-4728738
https://scholarship.richmond.edu/cgi/viewcontent.cgi?article=2231&context=masters-theses
১৯৩৪ সালে হার্স্ট নাৎসি জার্মানি সফরে এসে হিটলারের সাথে দেখা করেছিল। এই সফরের পর হার্স্ট প্রেস ইউক্রেনের তথাকথিত দুর্ভিক্ষ নিয়ে নিবন্ধ প্রচার করতে শুরু করে। অথচ তৎকালীন ফরাসি প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হেরিয়ট যিনি সম্প্রতি ইউক্রেন ভ্রমণ থেকে ফিরে এসেছিলেন, এই কথাটি বলে সবার সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরেছিলেন যে তিনি কোনও দুর্ভিক্ষের প্রমাণই পাননি।
https://en.wikipedia.org/wiki/%C3%89douard_Herriot
ওয়াকারের নিবন্ধগুলোর মাধ্যমে হার্স্ট আমেরিকানদের বোঝাতে চেষ্টা করেছিল যে সোভিয়েত ইউনিয়ন অনাহার, গণহত্যা এবং নৃশংসতার দেশ। সেসময় তাদের এসব বদমাইশি অনেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রোপাগান্ডা হিসেবে ধরে নিতো, কিন্তু বছরের পর বছর ধরে এই মনগড়া বিষয়গুলোই তথাকথিত প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে এবং ফলস্বরূপ আজ এত বছর পরও সাধারণ মানুষ এগুলোই সত্য ভেবে স্তালিনকে ঘৃণা করে যাচ্ছে। হার্স্ট কর্তৃক ১৯৩৫ সালে মনগড়া নিবন্ধগুলো প্রকাশ শুরু করার সাথে সাথেই জার্মানির নাৎসি প্রেস এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশের এসব বদমাইশদের প্রতি সহানুভূতিশীল পত্রিকাগুলোও একই ধরণের রূপকথা প্রকাশ করা শুরু করে দেয়। এসময় "রাশিয়ায় মানুষের জীবন" শিরোনামে ড: ইওয়াল্ড আম্মেন্দের একটি বই প্রকাশিত হয়।
https://en.wikipedia.org/wiki/Ewald_Ammende
https://www.amazon.com/Human-Life-Russia-Ewald-Ammende/dp/1406737690
যারা তথাকথিত দুর্ভিক্ষের কাহিনীগুলো প্রচার করতো তাদের উপর বইটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল এবং ১৯৮৪ সালে এটি পুনরায় প্রকাশ করা হয়। বইটি মূলত হার্স্টের তথাকথিত সংবাদদাতাদের নাৎসি জার্মানি এবং ফ্যাসিস্ট ইতালি থেকে প্রাপ্ত ভুয়া তথ্যগুলোর বস্তুনিষ্ঠতা প্রমাণে (!!) ব্যবহৃত হয় যা কিনা নামবিহীন ‘ভ্রমণকারী(!)’ এবং ‘বিশেষজ্ঞদের(!)’ কথায় ভর্তি আবর্জনা ছাড়া আর কিছু না। তথাকথিত দুর্ভিক্ষ বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের(!) বেশিরভাগ ছবিগুলো আম্মেন্দের বই থেকে কিংবা থমাস ওয়াকারের কাছ থেকে হুবহু নেয়া হয়েছে। ছবিগুলোর উৎস উল্লেখ করা হয়নি বইটিতে, অথচ অম্মেন্দে নিজেই ১৯২১-২২ সালের দুর্ভিক্ষের ত্রাণ কাজে জড়িত ছিল! দাবী করা হয় যে ছবিগুলো ১৯৩৩ সালের গ্রীষ্মে খারকভের রাস্তা এবং স্কোয়ারগুলো থেকে তোলা হয়েছিল, অথচ ২৬টি ছবির মধ্যে মাত্র ১০টি ছিল শহরাঞ্চলের!
https://en.wikipedia.org/wiki/Kharkiv
তাদের দাবীর সত্যতা প্রমাণের জন্য ছবিগুলো ছিল আসলেই অসঙ্গতিপূর্ণ। "রাশিয়ায় মানুষের জীবন" বইটিতে যেসব অতিরিক্ত ছবি যোগ করা হয়েছিল সেগুলো আবার জার্মান সংস্করণে প্রকাশিত হয়নি। ছবিগুলো উত্তর ককেসাসে নিযুক্ত জার্মান সরকারের কৃষি উন্নয়ন বিষয়ক পরিচালক ডঃ ডিটলফ তুলেছে বলে দাবি করা হয়। যে কেউ সন্দেহ করবে যে, কীভাবে একজন নাৎসি কর্মকর্তা ইউক্রেনের চারপাশে ছবি তোলার জন্য অবাধে ঘুরে বেড়াতে পেরেছিল। অথচ প্রতিটি প্রকাশনার ক্ষেত্রেই ঘুরেফিরে একই ছবিগুলো হয় একই কিংবা ভিন্ন উৎসের নামে চালিয়ে দেয়া হয়। এমনকি কিছু ছবি ১৯২২ সালের দুর্ভিক্ষের বলে পরবর্তীতে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং কিছু ছবিতে গ্রীষ্মের, আবার কিছু ছবিতে শীতকালের দৃশ্য দেখা গেছে! অন্যান্য প্রকাশনাগুলোও কোনও উৎস না দেখিয়ে কিংবা থমাস ওয়াকারকে ক্রেডিট দিয়ে একই ছবিগুলোই ১৯৩২-৩৩ সালের ঘটনাকে চিত্রিত করতে ব্যবহার করেছিল। অথচ ওয়াকার দাবি করেছিল যে, সে এগুলো ১৯৩৪ সালের বসন্তে তুলেছে!এটি স্পষ্ট যে ছবিগুলো প্রতারণামূলক এবং এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের সুনামহানি করার প্রোপাগান্ডার অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও আজও এসব তথাকথিত প্রমাণের ব্যবহার অহরহ করা হয়। ১৯৩০ এর দশকের দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত ডানপন্থী বদমাইশদের ব্যাপক প্রচারণা সত্ত্বেও সেসময় মূলধারার ইতিহাসবিদরা এসব গ্রহণ করেননি, এমনকি বামপন্থী কিছু ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদী সত্যকে দমন করার জন্য এসব ক্রিমিনালদের ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে সোভিয়েতদের পাশে ছিল। ১৯৫০ এর দশকে এই পশ্চিমাদের দালাল জাতীয়তাবাদীরা নিজেদের মতো করে ইতিহাসের ব্যাখ্যা করার জন্য “The Black Deeds of the Kremlin” এর মতো বই প্রকাশ করেছিল। বইটির একাংশে আবার ১৯৩০ এর দশকে ভিন্ন্যাৎসিয়ায় সোভিয়েত ইউনিয়ন কর্তৃক গণ মৃত্যুদণ্ডদানের বিষয়টি রঙচঙিয়ে বর্ণনা করা হয়।
https://www.amazon.com/Black-Deeds-Kremlin-White-Testimonies/dp/B000EGMA4O
https://en.wikipedia.org/wiki/Vinnytsia
১৯৪৩ সালে নাৎসি আক্রমণের সময় এই কবরগুলো খুঁড়ে একটি নাৎসি কমিশন দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং প্রোপাগান্ডা প্রচার করার সময় ব্যবহার করা হয়েছিল। যুদ্ধের পর আটককৃত জার্মান সৈন্যরা সত্যিটা স্বীকার করে সাক্ষ্য দিয়েছিল যে, এটি ছিল নাৎসিদের প্রোপাগান্ডার অংশবিশেষ এবং এসব ইহুদীরা এসএস ও ইউক্রেনীয় মিলিশিয়া কর্তৃক খুন হয়েছিল।
https://en.wikipedia.org/wiki/Schutzstaffel
https://en.wikipedia.org/wiki/Ukrainian_People%27s_Militsiya
https://en.wikipedia.org/wiki/Ukrainian_Insurgent_Army
“The Black Deeds of the Kremlin” বইটির ২য় খণ্ডে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে বানানো ভয়াবহ বর্ণনাগুলোর জন্য এটিকে "ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের কুকবুক" হিসাবে ধরা হয়! দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত তথাকথিত তাত্ত্বিকরা ইউক্রেনে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল, এই গুজবটি প্রতিষ্ঠা করতে সর্বদা তৎপর ছিল। তাদের পদ্ধতিটি যথারীতি ছিল অত্যন্ত সন্দেহজনক। ১৯৬৪ সালে "সোভিয়েত স্টাডিজ" এ ডানা ডাল্রিম্পলের একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছিল ২০ জন পশ্চিমা সাংবাদিকের অনুমানের গড় ভিত্তিতে ৫.৫ মিলিয়ন লোকের মৃত্যুর বিষয়ে।
https://scholar.google.com/citations?user=SH4J9CMAAAAJ&hl=en
এদের মধ্যে অন্যতম হলো আমাদের কল্পিত চরিত্র থমাস ওয়াকার। ডাল্রিম্পল জানায় যে ওয়াকার সরকারী মনিটরিংয়ের আওতাধীন একটি সফর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তার সমীক্ষা চালিয়েছিল এবং এর আগে বেশ কয়েক বছর রাশিয়া ভ্রমণে অতিবাহিত করেছিল। ক্যান্টারবেরির তথকালীন আর্চবিশপও অনুরূপ সংখ্যক মৃতের কথা বলেছিল; হিটলারের এই উৎসাহী সমর্থক ১৯৩৪ সালে হাউস অফ লর্ডসে দুর্ভিক্ষের বিষয়টি উত্থাপন করার চেষ্টা করেছিল। অথচ তাদের পররাষ্ট্র পর্যন্ত দফতর জানিয়েছিল যে সোভিয়েত সরকারের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগকে সমর্থন করার মতো কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ১৯৩৩ সালের গ্রীষ্মে ইউক্রেন সফরকারী খ্যাতনামা দুর্ভিক্ষ বিশেষজ্ঞ স্যার জন মেনার্ড দুর্ভিক্ষের বানানো কাহিনী প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, কিন্তু ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীরা তার সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করে।
https://drive.google.com/file/d/19Qn0rf24gjUJzFmFOGXdQyqU-8HxXhQP/view?usp=sharing
১৯৮০-র দশকে শীতল যুদ্ধের প্রচারণার পুনরুত্থান ঘটেছিল যথেষ্ট প্রচার এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউক্রেন বিষয়ক গবেষণা ইনস্টিটিউটের পন্ডিতদের (!) সমর্থন নিয়ে। প্রতিষ্ঠানটি কমিউনিস্টবিরোধী প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর জন্য কুখ্যাত।
https://en.wikipedia.org/wiki/Harvard_Ukrainian_Research_Institute
১৯৮৩ সালে “The Ninth Circle” বইটি পুনরায় প্রকাশিত এবং সম্পাদিত হয় হার্ভার্ডের ড. জেমস ম্যাস দ্বারা। বইটি ১৯৫৩ সালে ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়েছিল।
https://en.wikipedia.org/wiki/James_Mace
বইটির একটি পর্যালোচনায় এটিকে "বিতর্কিত, দলিলবিহীন এবং পান্ডিত্যের অভাব" বলে বর্ণনা করা হয়েছে। লেখক ইউক্রেনের নাৎসিদের আক্রমণের সময় তার কার্যকলাপ সম্পর্কে কোনও বিবরণ দিতে ব্যর্থ হয় এবং নাৎসিদের সম্পর্কে একটাও অবমাননাকর মন্তব্য করেনি। অধিকন্তু লেখক নিজেকে দুর্ভিক্ষের প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করার পাশাপাশি থমাস ওয়াকারের মতো অনেক কাল্পনিক সত্তাও সৃষ্টি করেছিল। অন্যদিকে ড. জেমস ম্যাস ওয়াকারের উপাদানগুলোর ব্যাপারে বলেছিলেন, "থমাস ওয়াকারের মতো আমেরিকান সংবাদকর্মী ১৯৩৩ সালে ইউক্রেনে তারা যা দেখেছিল তার উপর ভিত্তি করে দুর্ভিক্ষের সুস্পষ্ট এবং গ্রাফিক্যাল ব্যাপারগুলো লিখেছিলেন"। পাঠক মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন যে, নিজেদের সুবিধার্তে ওয়াকারের ভ্রমণের সাল হিসেবে ১৯৩৩ উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৩৪ নয়। তথাকথিত এই দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত আরেকটি সাহিত্যকর্ম হচ্ছে ওয়াল্টার দুশনিকের “50 years ago: the Famine Holocaust in Ukraine”।
https://www.amazon.com/years-ago-holocaust-instruments-imperialism/dp/B0006EE68M
আর এই বইয়ের অবতরণিকা লিখেছে ডাল্রিম্পল! দুশনিকের শেকড় ইউরোপের যুদ্ধ-পূর্ব ফ্যাসিবাদী আন্দোলনে সনাক্ত করা যায়, যখন সে ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের সংগঠনে সক্রিয় ছিল। এক পর্যালোচক মন্তব্য করেছিলেন যে, “বইটি পান্ডিত্যপূর্ণ বিশ্লেষণের পরিবর্তে অত্যধিক আবেগের বিরক্তিকর বিতর্কিত বিষয়ের উপাদানে ভর্তি। প্রকৃতপক্ষে এর পান্ডিত্যের সাথে খুব একটা সম্পর্ক নেই এবং নিঃসন্দেহে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব রয়েছে"। আবারো একই ভুয়া ছবিগুলোই বইটিতে ব্যবহার করা হয়। দুশনিক শয়তানটা ১৯৩৯ সালের আদমশুমারির পরিবর্তে ১৯২৬ সালের আদমশুমারির হিসাব দেখানোয় ৭.৫ মিলিয়ন লোকের শূন্যস্থান সৃষ্টি হয়; আর এই শূন্যস্থান পূরণ করতে বানানো হয় দুর্ভিক্ষের ফলে মৃত কাল্পনিক লোকেদের! এই ফালতু পদ্ধতির সাথে কানাডার তুলনা করা যেতে পারে, সেসময় প্রকাশ করা হয়েছিল যে ১৯৩০ এর দশকের গ্রেট ডিপ্রেশনের সময় নাকি কানাডার সাসকাচোয়ানের ২৫% জনগোষ্ঠী গায়েব হয়ে গেছে!
https://en.wikipedia.org/wiki/Saskatchewan
https://esask.uregina.ca/entry/great_depression.jsp
বাস্তবে ইউক্রেনের জনসংখ্যা ১৯২৬-৩৯ সালের মধ্যে প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১৯৮৬ সালে রবার্ট কনকুয়েস্টের বই “Harvest of Sorrow” প্রকাশ এবং সেন্ট ভ্লাদিমির ইনস্টিটিউটের দুর্ভিক্ষ গবেষণা কমিটি কর্তৃক প্রযোজিত “Harvest of Despair” ফিল্মটি প্রচারিত হওয়ার মাধ্যমে হলোদোমোর সংক্রান্ত প্রোপাগান্ডা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছিল।
ফিল্মটি সেই পুরোনো ভুয়া ছবিগুলোতেই পূর্ণ ছিল এবং প্রধানত প্রাক্তন নাৎসি এবং ইউক্রেনীয় রাজাকারদের পাশাপাশি সোভিয়েত ইউনিয়নের দলত্যাগী বেঈমানদের সাক্ষাৎকারের উপর নির্ভর করে তৈরি হয়; এমনকি ম্যালকম মাগেরিজ এর মতো মহান ব্যক্তির(!) একটি সংক্ষিপ্ত উপস্থিতিও দেখা যায়।
https://en.wikipedia.org/wiki/Malcolm_Muggeridge
ফিল্মটির প্রযোজকরা ব্যবহারের জন্য মাত্র ৭২০ ফুট বাছাই করার আগে ফিল্মটির এক মিলিয়ন ফুটের চেয়ে বেশি স্টক ফুটেজ দেখেছিল। দুর্ভিক্ষের কোনও নথিভুক্ত প্রমাণ উপস্থাপনের পরিবর্তে ওয়াকার আর ডিটলফের ছবি, ১৯২১-২২ এর দুর্ভিক্ষের ছবি এবং নাৎসিদের প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে প্রকাশিত মাধ্যমগুলোর ভুয়া স্থিরচিত্রগুলোই ফিল্মটিতে দেখানো হয়েছে।
https://en.wikipedia.org/wiki/Documentary_evidence
https://www.youtube.com/watch?v=IHm_1uN80s0
সত্যের প্রতি চরম অবজ্ঞা প্রদর্শন করে ফিল্মের কিছু দৃশ্য আবার গৃহযুদ্ধ বিষয়ক ফিল্ম এবং ১৯২০ এর দশকের সোভিয়েত ফিল্ম থেকে হাস্যকরভাবে মেরে দেয়া হয়েছে। রুশ না জানা অজ্ঞ পাবলিকরাও ভালোমতোই গিলেছে তাদের টোপ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। নির্মাতারা আর্কাইভগুলো থেকে পুরোনো যুদ্ধ আর অনাহার সংক্রান্ত শটগুলোর টুকরো খুঁজে খুঁজে বের করে ফিল্মটিতে শুধুমাত্র জোড়া দেয়া ছাড়া আর কিছুই করেনি ইউক্রেনবাসীদের জন্য বিশ্বমানবতার হৃদয়কে বিগলিত করে কান্না বের করিয়ে ছাড়ার মহান দায়িত্ব পালন করতে! আবার এই ক্রিমিনালরা নিজেদের ধারাভাষ্য আর পার্টিশানদের বিচ্ছিন্ন সাক্ষাৎকারগুলো একসাথে ফিল্মে মিক্স করতে গিয়ে জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলেছে। অপরাধী ছোটখাটোই হোক আর রাঘববোয়াল, সে একটা না একটা নিশানা রেখে যাবেই। এই চোরদের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। এমনকি এই ফিল্ম এর সাথে জড়িতদের কেউ কেউ পরবর্তীতে তাদের এসব ছাগলামি স্বীকারও করেছে, তা সত্ত্বেও ফিল্মটি ব্রিটিশ টেলিভিশনে ব্যাপকভাবে প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হয়! এরাই নাকি আবার বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থেকে শুরু করে আরও অনেক গালভরা শব্দ নিয়ে চিৎকার করে গলা ফাটায়। নির্মাতারা এমনকি কানাডার জাতীয় চলচ্চিত্র বোর্ড এবং সরকারী অর্থায়নে পরিচালিত সংস্থা মাল্টিকালচারালিজম কানাডা’র কাছ থেকে অনুদান এবং সমর্থন পেয়েছিল। সব শিয়ালের এক রা কিনা! এক কাকের মাংস তো অন্য কাক খাবে না!
https://www.canada.ca/en/services/culture/canadian-identity-society/multiculturalism.html
“Harvest of Despair” ফিল্মটি স্পষ্টতই শীতল যুদ্ধের প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবে উদ্দেশ্যমূলক বদমাইশি ছাড়া আর কিছু না। কনকুয়েস্ট এর “Harvest of Sorrow: Soviet Collectivization and the Terror famine” বইটি হলোদোমোর বিশারদদের তথাকথিত গবেষণাগুলোর মধ্যে সবগুলোকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল মিথ্যা প্রচারের প্রতিযোগিতায়। কনকুয়েস্ট এর গোমর ফাঁস করা হয়েছে এই আর্টিকেলে-
https://iskrathespark.blogspot.com/2020/03/blog-post_31.html
একসময় সে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিসের প্রোপাগান্ডা সংক্রান্ত প্রকল্পের অধীনে তথ্য গবেষণা বিভাগে নিযুক্ত ছিল, যেটির মূল লক্ষ্য ছিল তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এবং রাশিয়ানরা। কনকুয়েস্ট তার “The Great Terror” বইটিতে অভিযোগ করেছিল যে ১৯৩২-৩৩ সালের মধ্যে ৫-৬ মিলিয়ন লোক মারা গিয়েছিল এবং এদের মধ্যে অর্ধেকই ছিল ইউক্রেনীয়। ১৯৮৩ সালের মধ্যেই কনকুয়েস্ট তার অনুমানকে রাতারাতি ১৪ মিলিয়নে উন্নীত করে এবং দুর্ভিক্ষের সময়কাল রাবারের মতো টেনে লম্বা করে ১৯৩৭ সালে নিয়ে যায়! তার এই বিশাল কাল্পনিক ফিগার আবার দুর্ভিক্ষের ৫০ তম বার্ষিকী স্মরণে প্রকাশিত ফিগারের সাথে হুবহু মিলে যায়। কনকুয়েস্ট বিভিন্ন জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করে যারা কিনা রুশ গৃহযুদ্ধের সময় ইউক্রেনের কিছু অংশের দখল নিয়েছিল এবং বিদেশী হস্তক্ষেপের সময় ইউক্রেনের ক্ষমতা আরামে ভোগ করেছিল। বইটিতে ১৯১৮-১৯ সালে এসব জাতীয়তাবাদীর দ্বারা ইউক্রেনীয় ইহুদিদের গণহত্যা মাত্র তিনটি শব্দে খারিজ করা হয়েছে। ইউক্রেনে নাৎসিদের জবরদখলকে সোভিয়েত ‘সন্ত্রাস’ এর ব্যর্থতা এবং নাৎসিদের কাছ থেকে মুক্তি পাওয়াকে সোভিয়েত এর পুনর্দখল হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল বইটিতে। কনকুয়েস্টের এই বইয়ে এমন আরও অনেকগুলো ছাগলামির উদাহরণ রয়েছে। যেমন- বইটিতে যেই বিদেশী সংবাদদাতার বিবরণী উদ্ধৃত করা হয়েছে সে হচ্ছে আমাদের থমাস ওয়াকার সাহেব! এই গর্ধব এমনকি তাদের অন্যতম দোস্ত হার্স্ট এর প্রবন্ধের তারিখ ১৯৩৫ থেকে সরিয়ে ১৯৩৩ সালের ফেব্রূয়ারীতে নিয়ে যায়। আমেরিকান ইতিহাসবিদ জে আর্ক গেটি বলেছিলেন-
“Grand analytical generalizations have come from second hand bits of overheard corridor gossip. Prison camp stories (my friend met Bukharin’s wife in a camp and she said…) have become primary sources on Soviet central political decision making ….the need to generalize from isolated and unverified particulars has transformed rumors into sources and has equated repetition of stories with confirmation”.
https://en.wikipedia.org/wiki/J._Arch_Getty
যেখানে প্রখ্যাত ঐতিহাসিকরা জনশ্রুতি আর গুজবকে ঐতিহাসিক সত্য হিসাবে স্বীকার করেন না, সেখানে কনকুয়েস্টের মতো ছাগলরা তাদের বেকুব মুরিদদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে সত্য কেবল জনশ্রুতি আর গুজব আকারেই ঘুরে বেড়াতে পারে এবং রাজনৈতিক বিষয়ক প্রোপাগান্ডা ছড়াতে এই পদ্ধতি এসব ক্রিমিনালদের কাছে সর্বোত্তম। আর প্রকৃত সত্য পরবর্তীতে হয়ে যায় গুজব!
দুর্ভিক্ষ মূল কারণগুলো, অর্থাৎ সমবায়করণ প্রক্রিয়া চলাকালীন খরা ও নাশকতার দিকে ডানপন্থী ঐতিহাসিকরা ইচ্ছাকৃতভাবেই খুব কম মনোযোগ দিয়েছে। মজার বিষয় হচ্ছে, মিখাইলো হ্রূশেভস্কি রচিত “A History of the Ukraine” লেখা আছে-
(জাতীয়তাবাদীরা যাকে "ইউক্রেনের শীর্ষস্থানীয় ঐতিহাসিক" হিসাবে বর্ণনা করেছে)
"আবার এক বছরের খরা বিশৃঙ্খল অবস্থার কৃষিক্ষেত্রের সাথে যুক্ত হলো ; আর ১৯৩২-৩৩ এর শীতকালে সোভিয়েত ইউক্রেন জুড়ে ১৯২১-২২ এর মতো একটি মহা দুর্ভিক্ষ বয়ে গেছে।”
https://en.wikipedia.org/wiki/Mykhailo_Hrushevsky
এই বইয়ের কোথাও উল্লেখ নেই যে দুর্ভিক্ষটি ইচ্ছাকৃতভাবে এবং ইউক্রেনীয়দের বিরুদ্ধে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং বইটিতে ১৯২১-২২ সালের দুর্ভিক্ষের ব্যাপারেই অধিক আলোচনা করা হয়েছে। ১৯৩১ এবং ১৯৩২ সালে ইউক্রেনের খরার পরিস্থিতি সম্পর্কে এমন আরও অনেক রেফারেন্স আছে। এমনকি আম্মেন্দে তার “Human Life in Russia" বইটিতেও দুর্ভিক্ষের কারণস্বরূপ জলবায়ু ও প্রাকৃতিক কারণের উপর গুরুত্ব দিয়েছিল। খরা অন্যতম ফ্যাক্টর হলেও সেসময় দুর্ভিক্ষের মূল কারণ ছিল গ্রামাঞ্চলে সমবায়করণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে সংগ্রাম। ১৯২৮ সালে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র কৃষক খামার ছিল, তিন-চতুর্থাংশ জমি কেবল হাত দিয়ে বপন করা হয়েছিল, ফসলের এক তৃতীয়াংশ sickle আর scythe এর সাহায্যে কাটা হয়েছিল, ফসলের ৪০% Flail দিয়ে মাড়াই করা হয়েছিল। এক-চতুর্থাংশের বেশি কৃষক পরিবারে কোনও হালচাষের পশু বা খামার সরঞ্জাম ছিল না; কেবল ৪৭% এর লাঙল ছিল। ১৯২৯ সালের প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সমবায়করণ প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন। ধনী কুলাক কৃষকরা কৃষিক্ষেত্রকে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে নিয়ে আসার বিরোধিতা করেছিল এবং সংগঠিত প্রচারণা ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে সমবায়করণের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল।
https://en.wikipedia.org/wiki/Kulak
ইউক্রেন সহ কয়েকটি জায়গায় এই লড়াই গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। এসময়ে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের পর্যবেক্ষণের রিপোর্টে বের হয়ে আসে যে কুলাকরা নিজেদের গবাদি পশু ও ঘোড়াকে কৃষি কাজে লাগানোর পরিবর্তে ইচ্ছাকৃতভাবে জবাই করতো। কুলাক বদমাইশদের কারণে ১৯২৮-৩৩ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়নে ঘোড়ার সংখ্যা ৩০ থেকে ১৫ মিলিয়নে, গবাদি পশু ৭০ থেকে ৩৮ মিলিয়নে, ভেড়া ও ছাগল ১৪৭ থেকে ৫০ মিলিয়নে নেমে আসে। কুলাকরা সমবায়ী কৃষকদের সম্পদ পুড়িয়ে দিতো; এমনকি তাদের নিজেদের ফসল এবং বীজও ইচ্ছাকৃতভাবে পুড়িয়ে দিতো সেসময়। অথচ দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত তথাকথিত তাত্ত্বিকরা কুলাকদের নাশকতার কথা ভুলেও তাদের গবেষণায় (!) উল্লেখ করেনা, উল্টো সোভিয়েত ইউনিয়নের এই সমবায়করণ প্রক্রিয়ার বিরোধিতাকারী বদমাইশদের অতি উৎসাহ আর নির্লজ্জতার সাথে পক্ষ নেয়। এছাড়া দুর্ভিক্ষের সাথে যোগ হয়েছিল টাইফাস মহামারী, যা নিঃসন্দেহে অনেকের প্রাণহানি ঘটায় তখন। অন্যদিকে ১৯৩৩ সালের মধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়নের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইউক্রেনে বিশাল পরিমাণে ফসল কাটা হয়েছিল, আর যৌথ খামারগুলোর উন্নতি সাধনে যান্ত্রিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়েছিল প্রচুর। পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনে কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন এসব ক্রিমিনালদের আনিত ৭-১৫ মিলিয়ন লোকের অনাহারে মৃত্যুর অভিযোগকে শুধু ভুলই প্রমাণ করেনি, সেই সাথে এসব শয়তানদের প্রকৃত চরিত্র আর উদ্দেশ্য সবার সামনে চলে আসে। তাছাড়া ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা নাৎসিদের সহায়তার বিরুদ্ধে সাধারণ ইউক্রেনীয়দের প্রতিরোধের প্রমাণ তো আছেই। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর অংশ সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি আন্তরিকভাবে অনুগত ছিল। সেখানে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি সংগঠিত সোভিয়েত গেরিলারা ছিল এবং সাড়ে চার মিলিয়ন ইউক্রেনীয় লাল ফৌজের পক্ষে অত্যন্ত বীরত্বের সাথে লড়াই করেছিল। ইউক্রেনীয় কৃষক, শ্রমিক এবং পেশাদাররা সোভিয়েত ব্যবস্থার অধীনে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সুবিধাদি লাভ করেছিল সেসময়। স্তালিনের দৃঢ় নেতৃত্বে মূল ইউক্রেনে সুবিধা করতে না পেরে নাৎসিদের দখলের সময় জাতীয়তাবাদীরা কেবল ১৯৩৯ সালে পোলিশ গ্যালিসিয়ায় সুবিধাজনক অবস্থান খুঁজে পেতে সক্ষম হয়; কারণ সেখানে নাৎসিরা ফ্যাসিবাদী পুলিশ এবং এসএস ইউনিটের জন্য তাদের বেশিরভাগ রাজাকার নিয়োগের কাজ সম্পাদন করেছিল।
https://en.wikipedia.org/wiki/Galicia_(Eastern_Europe)
১৯৪১ সালের জুনে নাৎসি সেনাবাহিনী পশ্চিম ইউক্রেনের রাজধানী লভিভে প্রবেশ করে।
https://en.wikipedia.org/wiki/Lviv
অগ্রবর্তী সহায়ক দল হিসেবে এসেছিল জার্মান ইউনিফর্ম পরিহিত ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের নাচটিগল ব্যাটালিয়ন।
https://en.wikipedia.org/wiki/Nachtigall_Battalion
জুলাইয়ের প্রথম তিন দিনের মধ্যেই নাচটিগল ব্যাটালিয়ন লভিভের আশেপাশে সাত হাজার ইহুদিকে হত্যা করে। নাৎসি বিরোধী অ-ইহুদি লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং পেশাদারদেরও এসময় হত্যা করা হয়েছিল। নাৎসি দখলের প্রথম আট মাসে গ্যালিশিয়ান ইহুদিদের ১৫% (এক লক্ষের মতো) জার্মান এবং ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীরা যৌথভাবে হত্যা করে।
https://en.wikipedia.org/wiki/Galician_Jews
এসব হাজার হাজার জাতীয়তাবাদী রাজাকার পরবর্তীতে জার্মানি এবং অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছিল মাতৃভূমির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা এবং ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত অপরাধকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে। এমনিতেই ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ইতিহাস জুড়ে সেমিটিক বিরোধী এবং ফ্যাসিবাদপ্রীতি চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। হিটলার সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করার আগে ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের নেতারা নাৎসি দলের বেতনভুক্ত সদস্য ছিল। ইউক্রেনের জাতীয়তাবাদী ব্যাটালিয়নদের যুদ্ধের আগে জার্মানিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল এবং কিছু কিছু ব্যাটালিয়নকে পোল্যান্ড আক্রমণের সময়ও ব্যবহার করা হয়েছিল। নাচটিগল এবং ইউক্রেনের অন্যান্য রাজাকাররা জার্মান সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করেছিল এবং ১৯৪১ সালের শেষদিকে তাদের দিয়ে পুলিশ ব্যাটালিয়ন পুনর্গঠন করে বেলারুশিয়ায় নিযুক্ত করা হয়।
https://en.wikipedia.org/wiki/Ukrainian_People%27s_Army
https://en.wikipedia.org/wiki/Byelorussian_Soviet_Socialist_Republic
এত অন্যায় সত্ত্বেও পুঁজিবাদী ক্রিমিনালরা এসব ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের ব্যাপারে প্রচার করে যে, এরা নাকি হিটলার এবং স্তালিন উভয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল! আবার এদের তুলনা করা হয় ফরাসীদের প্রতিরোধের সাথে! একইভাবে উপস্থাপন করা হয় ১৪ তম ওয়াফেন এসএস গালিজিয়েন ডিভিশনের ভূমিকাকেও।
https://en.wikipedia.org/wiki/14th_Waffen_Grenadier_Division_of_the_SS_(1st_Galician)
১৯৪৩ সালে গঠিত সংগঠনটির মূল কাজ ছিল পার্টিজান বিরোধী নানা নির্মমতা। এমনকি ইউক্রেন থেকে জার্মানরা চলে যাওয়ার পরও এসব জাতীয়তাবাদী রাজাকাররা সোভিয়েত সাপ্লাই লাইনের উপর হামলা চালাতে থাকে। নিজেদের মাতৃভূমির সাথে বেঈমানী করা এসব রাজাকার ইউক্রেন, পোল্যান্ড, বেলারুশিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি এবং যুগোস্লাভিয়ায় হিটলারের সেবা করে মহান দায়িত্ব পালন করে তৎকালীন সময়ে। তাছাড়া এরা ট্রেবলিংকা, সোবিবোর, জানোস্কা এবং ট্রনিকির মতো শিবিরগুলোতে হাজার হাজার মানুষকে হত্যায় সহায়তা করেছিল।
https://en.wikipedia.org/wiki/Treblinka_extermination_camp
https://en.wikipedia.org/wiki/Sobibor_extermination_camp
http://www.deathcamps.org/occupation/janowska.html
https://en.wikipedia.org/wiki/Trawniki_concentration_camp
অথচ পশ্চিমা বিশ্বের জোঁকেরা এদের "জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা", "ইউক্রেনীয় জনগণের বীর" এবং "দেশপ্রেমিক যারা একটি স্বাধীন ইউক্রেনের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন" হিসাবে উপস্থাপন করে যাচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। মিত্রবাহিনীর জয়ের পর অনেক রাজাকার উত্তর আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশে ঠিকই আশ্রয় পেয়েছিল। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সহযোগিতার চুক্তিতে জন্মভূমির সাথে গাদ্দারি করা এসব কুকুরকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি তাদের কৃতকর্মের প্রমাণ মুছে ফেলতে সহায়তা করেছিল। আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থার পাশাপাশি মার্কিন বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের কমিশন প্রথমদিকে ইউক্রেনীয় নাৎসিদের ভিসার জন্য অযোগ্য বলে বিবেচনা করে।
https://en.wikipedia.org/wiki/International_Refugee_Organization
https://en.wikipedia.org/wiki/Displaced_Persons_Act
কিন্ত এসব পদক্ষেপ আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কর্তৃক ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের সংগঠনটির নাৎসি বিরোধী লড়াইয়ে অংশগ্রহণের বিষয়টি নানা ভুজুংভাজুং উপস্থাপন করে সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই করা আটকাতে পারেনি। পরবর্তীতে অভিবাসন কর্তৃপক্ষকে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য করা হয়। পূর্ব ইউরোপীয় রাজাকারদের রেডিও ফ্রি ইউরোপ-রেডিও লিবার্টি, ভয়েস অফ আমেরিকা এবং মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের পূর্ব ইউরোপীয় ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
আবার কাউকে কাউকে সোভিয়েত ইউনিয়নে নাশকতা অভিযানের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল এবং অন্যরা সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর সময় তথাকথিত ভুক্তভোগী সাক্ষী হিসাবে নিযুক্ত হয়। সেসময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে এটা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল যে, আশ্রয় পাওয়ার জন্য নাৎসি সহযোগী হওয়ার চেয়ে কমিউনিস্ট হওয়া বেশি অপরাধের কাজ! আজ থেকে বহু বছর আগেই আমেরিকান সাংবাদিক লুইস ফিশার প্রকাশ করে দিয়েছিলেন হার্স্টের শয়তানী। যারা আজ দুর্ভিক্ষ সংক্রান্ত প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে তাদের রেকর্ড পরীক্ষা করে ফিশার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন-
“The attempt is too transparent, and the hands are too unclean to succeed.”
Comments